আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মান নেই চলচ্চিত্রের গানে

মান হারিয়েছে চলচ্চিত্রের গান। ষাট, সত্তর কিংবা আশির দশকের মতো এখনকার গানের কথা ও সুর দর্শকহৃদয়ে সাড়া জাগাতে পারছে না। তখনকার গানগুলো এখনো গুনগুন করে গায় শ্রোতারা। রোমান্টিক বা আধ্যাত্দিক কিংবা দুঃখের, যাই হোক না কেন সেসব গানের কথা মনে পড়লে আজও নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয় শ্রোতাকুল। গীতিকার কে জি মোস্তফার লেখা এবং তালাত মাহমুদের কণ্ঠে ষাটের দশকে এহতেশাম নির্মিত 'রাজধানীর বুকে' চলচ্চিত্রের গান 'তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে, রাতেরও অাঁধারে দোসরও হয়ে তাই সে আমারে টানে' কিংবা একই গীতিকারের সত্তরের দশকে অশোক ঘোষ নির্মিত 'নাচের পুতুল' চলচ্চিত্রের গান 'আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন কপোলের কালো তিল পড়বে চোখে' আজও বিখ্যাত হয়ে আছে। কে জি মোস্তফা ছাড়াও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, খান আতাউর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আমজাদ হোসেন, রফিকুজ্জামানসহ আরও অনেকের লেখা গান আজও চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কালজয়ী হয়ে আছে। কিন্তু আশির দশকের পর থেকে কৌলিন্য হারিয়েছে দেশীয় চলচ্চিত্রের গান। কিন্তু কেন? এর কারণ বর্ণনা করেছেন কয়েকজন গীতিকার। তাদের কথায় শোনা যাক চলচ্চিত্রের বাংলা গানের বর্তমান দুর্দিনের কথা_

কে জি মোস্তফা

গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাব্যময়তা ও মেলোডি। এখন তা কোথায়? আগে তো গান লিখতে রীতিমতো পড়ালেখা করতে হতো। যারা সাহিত্যচর্চা করত তারাই গান, গল্প লিখত। এখন ইচ্ছা করলেই যে কেউ গীতিকার- গল্পকার হয়ে যেতে পারছে। বিষয়টি যেন একেবারেই সহজ হয়ে গেছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে এ ক্ষেত্রে এখন সাহিত্যনির্ভরতাকে বাদ দিয়ে বাণিজ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে যা হওয়ার স্বাভাবিক তাই হচ্ছে। আগে চলচ্চিত্রের গান-গল্পে জীবনের ছায়া খুঁজে পাওয়া যেত। এখন তো গান মানে ফান। শুধুই মজা করার জন্য গান তৈরি হয়। উচ্চলয়ে যন্ত্র বাজতে থাকে। কিন্তু গানের কথা আর বোধগম্য হয় না। সুরে সুরে কথা বলে তরুণ-তরুণীদের উসকে দেওয়াই হচ্ছে এখনকার গানের আসল চেহারা। তাই শুরুতেই শেষ হয়ে যায় এসব গান। এখন গানের ক্ষেত্রে যন্ত্রই প্রধান যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিৎকার করতে হবে, লাফালাফি করতে হবে, না হলে গান হবে না। এই যদি হয় এখনকার গানের আসল রূপ তাহলে তা আর কালজয়ী হবে কীভাবে। আগে গানের কথা থেকে শিক্ষা নেওয়া হতো। আর এখন শুধু কথা নয় সুরসহ সব কিছুতেই ধস নেমেছে। এককথায় এখনকার গানে মেলোডি, কাব্যময়তা, জীবনবোধ, শিক্ষা এবং গভীরতা বলতে কিছুই নেই। গান লেখা এবং করা বর্তমানে এতটাই সহজ হয়ে গেছে যে, সহজে তা হারিয়েও যাচ্ছে।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

এখন তো সব কিছুই আধুনিক হয়ে গেছে। গানের মধ্যেও এই ছায়া পড়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গানেও পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন মানে মন্দ কিছু নয়। কিন্তু এই পরিবর্তন যেন মনের মধ্যে মন্দ প্রভাব না ফেলে। কারণ গান হচ্ছে মনের খোরাক। এ বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়া হচ্ছে না বলেই গান আগের আর মতো স্থায়িত্ব পাচ্ছে না। এ ছাড়া গানের স্থায়িত্ব হ্রাসের আরও কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে_ ভিনদেশি সংস্কৃতির অনুকরণ, গানকে সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য করে তোলা, গানের কথায় জীবনবোধের অভাব, সুরের চেয়ে যন্ত্রের আধিক্য, দ্রুত উচ্চলয়ে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে সব শ্রেণীর মানুষের মনের মতো করে যেন গান তৈরি করা হয়। তাহলে গান সহজবোধ্য হবে এবং স্থায়িত্ব পাবে। এককথায় গানকে আবার সাধারণ মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হলে কথা, সুর আর গায়কীতে জীবনের ছায়া ফেলতে হবে।

আমজাদ হোসেন

বর্তমানে গানের মৌলিকত্ব দুঃখজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। তাই এখনকার গান আর শ্রোতাদের মনে স্থায়ী আসন গড়ে নিতে পারছে না। এর অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে_ যোগ্য গীতিকার ও সুরকারের অভাব। গানের কথা ও সুরে এখন মেলোডি এবং জীবনবোধের অভাব, গভীরতা নেই। এ অবস্থায় শ্রোতারা এসব গান গ্রহণ করবে কেন? এখন তো সানাই, সেতার, বাঁশি, তবলা, হারমোনিয়ামসহ কোনো অ্যাকোয়িস্টিক ব্যবহার করা হয় না। এখন সবই কী-বোর্ডনির্ভর হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া এখনকার ছেলেমেয়ে যারা গান লিখে ও করে তারা তো ফেসবুকনির্ভর। ফেসবুক নিয়ে তারা এতই ব্যস্ত থাকে যে, গান সম্পর্কে নূ্যনতম জ্ঞানার্জনের সময় তাদের নেই। এখন যে কেউ ইচ্ছা করলেই গান লিখে ফেলতে পারছে। ভেবে দেখে না তাতে ব্যাকরণের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কিনা। মানে গান লেখা, সুর করা এবং কণ্ঠ দেওয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে। চাইলেই যে কেউ করতে পারছে। মনে রাখতে হবে, কোনো কিছু সহজলভ্য হয়ে গেলে তার মান আর থাকে না। এখন চলচ্চিত্রের গানের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.