আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধুর ক্যান্টিন

রাজনীতির হাতেখড়ি যেখানে

প্রাচ্যের অঙ্ফোর্ড-খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের পাশে অবস্থিত ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার 'মধুর ক্যান্টিন'। নামে ক্যান্টিন হলেও রাজনীতি চর্চা, জ্ঞানচর্চা, সংগীত চর্চা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, বিভিন্ন সংগঠনের মিটিং, সংবাদ সম্মেলন কী হয় না এখানে? এ দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের প্রায় সবারই রাজনীতির হাতেখড়ি এই মধুর ক্যান্টিনে।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে তার সঙ্গে এই ক্যান্টিন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা হয় এখানে। প্রচলিত রয়েছে, মধুর ক্যান্টিনে না এলে ভালো রাজনীতিবিদ হওয়া যায় না।

এ কথার প্রমাণ মেলে বর্তমান ছাত্র সংগঠনগুলোর 'মধু'কেন্দ্রিক কার্যক্রমে। ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই সকাল-বিকাল জমায়েত হন এই ক্যান্টিনে। দেশের সংকট থেকে উত্তরণ ও গণমানুষের অধিকার আদায়ে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার ডাক দেওয়া হয় এখান থেকে। যে কারণে ক্যান্টিনটি ক্রমেই ছাত্র রাজনীতির মূল খুঁটিতে রূপান্তরিত হয়। '৪৮-এর ভাষা আন্দোলন, '৪৯-এর বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলন, '৫২-র ভাষা আন্দোলন, '৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, '৭০-এর সাধারণ নির্বাচন ও সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধের সময় বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আসে এ ক্যান্টিন থেকেই।

'৬৯ থেকে '৭১ পর্যন্ত বহু বৈঠক মধুর ক্যান্টিনে হয়েছে।

মধুর ক্যান্টিনের বিভিন্ন নাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে এটি ছিল নবাবদের বাগানবাড়ির নাচঘর। অনেকের মতে এটি ছিল বাগানবাড়ির দরবার কক্ষ। এখানে নবাবরা আনন্দ-ফুর্তি করত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর আদিত্য চন্দ্র নামের ব্যবসায়ী প্রথম এখানে ক্যান্টিন স্থাপন করেন।

তখন এটি 'আদিত্য ক্যান্টিন' নামে পরিচিত ছিল। এ ছাড়াও এটি মধুর স্টল, মধুর টি-স্টল নামেও পরিচিত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কার্যক্রম শুরু হয়। ১৩৭৯ বঙ্গাব্দের ২০ বৈশাখ ডাকসুর উদ্যোগে এই ক্যান্টিনের নাম করা হয় 'মধুর রেস্তোরাঁ'। বর্তমানে সবার কাছে এটি 'মধুর ক্যান্টিন' নামে পরিচিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এটিকে সংক্ষেপে 'মধু' নামে ডাকে।

যেভাবে ক্যান্টিনের প্রতিষ্ঠা

উনিশ শতকের প্রথম দিকে বিক্রমপুরের শ্রীনগরের জমিদারদের সঙ্গে মধুদার পিতামহ নকরী চন্দের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ব্যবসা প্রসারের উদ্দেশ্যে নকরী চন্দ তার দুই পুত্র আদিত্য চন্দ ও নিবারণ চন্দসহ ঢাকায় আসেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর নকরী চন্দের পুত্র আদিত্য চন্দ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যবসা প্রসারের দায়িত্ব নেন। এ সময় তিনি নবাবদের বাগানবাড়ির দরবার ঘরে ক্যান্টিন স্থাপন করেন। শুধু ব্যবসা করা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের সেবা করাও ছিল তার উদ্দেশ্যে।

ক্যান্টিনের বিবরণ

ক্যান্টিনের সামনে যেতেই চোখে পড়ে শহীদ মধুদার স্মৃতি ভাস্কর্য। ভেতরে রয়েছে কাঠের তৈরি টেবিল আর চেয়ার। রয়েছে দুটি টয়লেট ও একটি রান্নাঘর। এই ক্যান্টিনের মিষ্টি দেশখ্যাত। এখানে চা, সিঙ্গারা, চমুচা, রুল, রুটি, ডিম ইত্যাদি বিক্রি করা হয়।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।