আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৃত্তিম উপায়ে হাসুন…

Consistency is the last refuge of the unimaginative. –Oscar Wilde (ইহা হইল আমার কনসিসটিন্সি না থাকিবার একটি গ্রহণযোগ্য অজুহাত)


অফিসের গার্ড একদিন আচমকা জিজ্ঞেস করলো: “স্যার, ফটো তোলার সময় সবাইকে ‘ইসমাইল’ বলে ডাকে কেন?” বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝলাম: ওটা ছিলো স্মাইল। স্মাইল বলে কিন্তু হাসি আনা যায় না। ইংরেজি ভাষাভাষীরা ফটো তোলার সময় মাংসপেশীতে হাসির ভঙ্গি আনার জন্য ‘চিজ’ বলে। কোরিয়ানরা বলে ‘কিমছি’ (তাদের ঐতিহ্যবাহী ডিশ)। বাঙালিরা অবশ্য ‘তরকারি’ বলতে পারেন।



সামাজিক জীবনে হাসি একটি প্রত্যাশিত বিষয়। কারও কারও মুখের মাংসপেশী শক্ত থাকার কারণে যখন তারা হাসতে পারেন না, তখন সে বিষয়ে আর কিছু বলার থাকে না। আমার গ্রামের বাড়িতে জনৈক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের এক সমস্যা দেখা দিলো মেম্বার থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের সময়। ফটোতে কোন ভাবেই মুখের রাগী ভাব কাটানো যাচ্ছে না। তখন ফটোশপের আশীর্বাদও ছিলো না।

তাই অনেক চেষ্টা করে হতভাগা আলোকচিত্রী উক্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মুখে হাসির আকৃতি সৃষ্টি করেন। সেটি কেমন হাসি হয়েছিল সেটা না দেখলে বর্ণনা করা অধম ব্লগারের কর্ম নয়। বলাবাহুল্য চেয়ারম্যান তিনি হয়েছিলেন।


হাসি একটি শারীরিক বিষয়! (প্রথাবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি)

বাংলার সক্রেটিস হুমায়ুন আজাদের মতে, নারীর মুখের হাসির সৌন্দর্য নাকি পুরোটাই তাদের মাংসপেশীর কৃতীত্ব। এটি এখন আর নারীর মধ্যে নেই, পুরুষের হাসিও এখন শারীরিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্মস্থল বা সামাজিক পরিবেশের ‘অত্যাবশ্যক উপাদান হাসি’ এখন অপ্রসাঙ্গিক এবং ক্ষেপাটে বলে মনে হয়। অথচ মুখের হাসি যে কোন পরিবেশকে পক্ষে এনে দিতে পারে। হাসি হারিয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। এভাবে হাসি কমে যেতে যেতে বিলুপ্ত হয়ে গেলে এক সময় দেখা যাবে ‘সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের’ মতো হাসি একটি মহাজাগতিক বিষয় হয়ে যাবে। কবে যে সকলে এক সাথে হেসেছিলাম, সেটি তখন রেকর্ড করে রাখতে হবে।

হাসি সৃষ্টির জন্য তখন কৃত্তিম মেশিনের প্রচলন আসতে পারে।

বাঙালি যে হাসতে জানে না, তা ধরা পড়ে যায় নাচ অথবা গান পরিবেশনের সময়। গোমড়া মুখে নাচের দৃশ্য কল্পনা করলেও হাসি পায়। নৃত্য পরিবেশনকারী যদি গোমড়া মুখে থাকে, তবে নৃত্যের সৌন্দর্য ওখানেই শেষ! ফটো তোলার সময় ‘বেজার মুখ’ নিয়ে ফটোগ্রাফারকে কী হিমসিম খেতে হয়, তা তো বলেছিই। এঅবস্থা দেখে সত্যিই মনে হয়, হাসি একটি শারীরিক বিষয়।




ছোটবেলার কথা...

আমার মনে পড়ছে, ছোটবেলায় কোন এক অনুষ্ঠানে দলীয় গানের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মুখের হাসি তো উধাও হয়েছেই, উপরন্তু মনে হচ্ছে কেউ আমাদেরকে জোড়পূর্বক গান গাওয়াচ্ছে। অথবা পেছনে কেউ লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, না গাইলেই মাথায় বাড়ি! এ অবস্থায় দর্শকদের ভিআইপি সাড়ি থেকে এক ভদ্রলোক তার দু’হাতে নিজের মুখ প্রসারিত করে আমাদেরকে হাসির ইশারা করেছিলেন। দৃশ্যটি যথেষ্ট হাস্যকর হলেও আমরা হাসি নি! আসলে ভয় পেয়েছিলাম, দর্শক দেখে।


হাসি মিলিযে গেলে যা নিয়ে ভাবি...

বিভিন্ন কারণে মুখের হাসি মিলিয়ে যায়, হালকা বিষয় হয়ে যায় ‘গম্ভীর’ এবং বিরক্তিকর।

আবেগের উষ্ণতায় আসে শীতলতা - সম্পর্কগুলো ছিঁড়ে যেতে চায়। অথচ একটু কৃত্তিম হাসিতেও অনেক কিছু বদলে যেতে শুরু করে। সংসার, কাজ, মানসিক চাপ, হতাশা - ইত্যাদি কারণে হাসি হারিয়ে যায় মুখমণ্ডল থেকে। হাসি ফিরিয়ে আনার জন্য নিচের বিষয়গুলোতে আমি অনেক প্রেরণা পেয়েছি। পাঠকদেরকে এর সাথে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছি:


1) আপনি হাসেন না, কারণ বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন; আপনি বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন, কারণ আপনি হাসেন না।

-মরিস চেবালিয়ার
2) যখন সম্ভব হাসুন, কারণ এটি হলো সবচেয়ে সস্তা ঔষধ। -লর্ড বায়রন
3) হাসুন, দেখবেন সকলেই হাসছে; নাক ডাকুন, দেখবেন আপনি নিজেই ঘুমাচ্ছেন। -এনথনি বারগেস
4) স্বর্গে হাসির অনুমতি না থাকলে, আমি স্বর্গেও যেতে চাই না। -মার্টিন লুথার
5) নেতিবাচকতাকে এড়িয়ে চলার উত্তম পথ হলো প্রচুর হাসা এবং আনন্দে থাকা। -ডেভিড ইক
6) যাদের সাথে হাসবেন, তাদের সাথে রাগ করতে পারবেন না।

রসিকতা সহনশীলতা শেখায়
। -উ. সমারসেট মম
7) হাসলে জীবন সহজতর হয়। (বেনামী)
8) প্রতি মুহূর্তে বাঁচুন, প্রতি দিন হাসুন এবং বর্ণনার অতিরিক্ত ভালোবাসুন। -বেনামী
9) জীবন এতো ছোট যে সব সময়ে ‘সিরিয়াস’ হওয়া উচিত নয়। নিজেকে নিয়ে হাসতে না পারলে, আমাকে ডাকুন।

আপনাকে নিয়ে আমি একটু হেসে দিয়ে আসবো। -বেনামী
10) যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে বাঁচুন, যতক্ষণ বেঁচে আছেন ভালোবাসুন। জনি ডেপ
11) একটি নির্মল হাসি এবং গভীর একটি ঘুম দু’টি মহাঔষধ যা যেকোন রোগ সারতে পারে। আইরিশ প্রবাদ
12) হাসি ছাড়া একটি দিন হলো একদিনের অপচয়। -ই ই কামিংস
13) যখনই আপনি কারও দিকে তাকিয়ে হাসেন, তা হয় ভালোবাসার প্রকাশ।

এটি তার প্রতি একটি উপহারের মতো সুন্দর একটি বিষয়। মাদার তেরিজা
14) পৃথিবীর সকল মানুষ একই ভাষায় হাসে। প্রবাদ
15) সব অবস্থায়ই হাসির কারণ থাকে – শুধু খুঁজে পেতে হয়। বেনামী
16) শক্ত থাকুন, যাতে সকলে আপনার হাসি দেখে সকলে বিস্মিত হয়। (বেনামী)
17) হাসুন আর সকলকে বুঝিয়ে দিন যে, আপনি গতকালের চেয়ে আজ শক্তিশালী।

বেনামী
18) হাসতে ভুলে যাবেন না। বেনামী
19) জীবনে আমার অনেক সমস্যা আছে, কিন্তু আমার ঠোঁটগুলো তা জানে না। তারা সব সময় হাসতে থাকে। চার্লি চ্যাপলিন
20) নীরবতা এবং হাসি হলো দু’টি চরম শক্তিশালী অস্ত্র। হাসি অনেক সমস্যার সমধান করে দেয় এবং নীরবতা অনেক সমস্যাকে এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে।

বেনামী
21) হাসতে থাকুন, কারণ জীবন সুন্দর এবং এখানে হাসির অনেক কিছুই আছে। ম্যারিলিন মনরো
22) হাসি দিয়ে অন্যদেরকে বদলে দিন, অন্যকে আপনার হাসি বদলে দিতে দেবেন না। বেনামী
23) আপনি যখন হাসেন, তখন এটি আপনার মস্তিষ্ককে এমনভাবে নাড়া দেয় যে তা সত্যিই আপনার মেজাজকে আনন্দিত করে। বেনামী
24) হাসুন, তাতে যারা আপনার ধ্বংস চায় তারা ঈর্ষান্বিত হবে। বেনামী
25) হাসলে আপনাকে অধিকতর ভালো লাগে।

বেনামী
26) আপনি কেন বিষণ্ন সেটি বলার চেয়ে হাসা অনেক সহজ। বেনামী
27) হাসি বন্ধ করবেন না, তাতে হতাশাগুলো হতাশ হয়ে আপনাকে আর বিরক্ত করবে না। বেনামী
28) সুখ হলো পথ চলা, এটি কোন গন্তব্য নয়। বেনামী
29) হাসি দিয়ে জীবনকে সুন্দর করা যায়। বেনামী
30) অনেক হাসিই অন্যের হাসি থেকে সৃষ্ট হয়।

বেনামী
31) হাসির কারণ বের করুন। বেনামী
32) যারা আপনার ধ্বংস চায়, তাদেরকে ক্ষেপাতে চাইলে হাসুন। বেনামী
33) হাসি ছাড়া আপনার সুন্দর পরিচ্ছদের পূর্ণতা নেই। বেনামী
34) পৃথিবী একটি আয়না: হাসুন, পৃথিবী আপনার দিকে হাসবে; মেজাজ খারাপ করুন, সেও আপনার দিকে মেজাজ খারাপ করবে। বেনামী
35) হাসির পটভূমিতে পৃথিবীকে উজ্জ্বলতর দেখায়।

বেনামী
36) ইতিবাচক মনোভাব> ভালোবাসা> ক্ষমা> হাসি> সুস্বাস্থ্য> শান্তি



মুখে হাসি রাখার অব্যর্থ পদ্ধতি (নিজ দায়িত্বে ব্যবহার্য)

হাসার জন্য মজার পদ্ধতিটি হলো, অকারণে হাসার আয়োজন করা। ‘আয়োজন করা’ মানে হলো, একদম দিন তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে বন্ধুরা বা সহকর্মীরা হাসতে পারেন। আমরা এটি করে দেখেছি – খুব মজার। আমাদের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা একবার আমার কর্মস্থল পরিদর্শনের সময় সহকর্মীদের সাথে মিলিত হলেন। তিনি খুবই মজার মানুষ ছিলেন এবং সবকিছুতে হাস্যরস খুঁজে বের করতেন।

হাস্যরসে গুরুগম্ভীর এবং জটিল বিষয়কে তিনি এমনভাবে হালকা করে দিতেন যে, সহকর্মীরা সকলে আনন্দের সাথে সে সমস্যার সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তিনি আজও বেঁচে আছেন, যদিও আমাদের সঙ্গে নেই। তার মজাদার উপদেশটি আমার মনে আছে। সেটি হলো “অকারণে হুহু করে হেসে ফেলুন – তারপর দেখবেন সেখান থেকেই আরও হাসির কারণ পাবেন। ” ভেবে দেখলাম, ‘কারণ’ আমি না পেলেও আমার নিকটবর্তী ব্যক্তিটি নিশ্চয়ই হাসির কারণ পাবে আমার মধ্যে।



সংবিধিবদ্ধ পরামর্শ: বিপরীতলিঙ্গের মানুষের সাথে যথানিয়মে হাসুন!



হাসির দাবিতে সহব্লগার এবং ব্লগপতির কাছে ছয় দফা প্রস্তাব

ব্যাপারটি হাসির হলেও গুরুত্বপূর্ণ। হাসি বিষয়ে সহব্লগারদের ‘হাস্যপূর্ণ’ একাত্মতা একান্ত জরুরি। জাতির গম্ভীর ভাবটি কাটিয়ে তুলতে অবিলম্বে একটি হাসি সম্মেলনে আমাদের মিলিত হওয়া উচিত। আপাতত জনস্বার্থে হাসির দাবিগুলো তুলে ধরছি:

::::১ ব্লগের হাস্যরসাত্মক পোস্টগুলো নিয়ে নিয়মিত সংকলন বের হোক;
::::২ বাঙালির হাসির গল্প এবং রম্য ঘটনাগুলোকে হাসি-বিমুখ জাতির সামনে তুলে ধরা হোক বিভিন্ন রকমের লেখার মাধ্যমে;
::::৩ মাসে অন্তত একটি হাসি বিষয়ক পোস্টকে স্টিকি করা হোক;
::::৪ সমাজের ইতিবাচক এবং সুখবরদায়ক পোস্টগুলোকে সংকলনে আনা হোক;
::::৫ মাসিক সাহিত্য/ ব্লগ আড্ডায় হাসি বিষয়ক লেখাকে ‘নিয়মিত বিষয়’ হিসেবে গ্রহণ করা হোক; এবং
::::৬ হাসি বা রম্য লেখার মাধ্যমে যারা ব্লগের গম্ভীর পরিবেশকে হালকা করে রাখে তাদেরকে বার্ষিক ব্লগ দিবসে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।



জাতীয়/ আন্তর্জাতিক হাসি দিবসের প্রস্তাব

প্রতি বছর ৭ নভেম্বরে ইথিওপিয়ায় জাতীয় হাসি দিবস উদযাপিত হয়।

পৃথিবীর অনেক ‘বেহুদা’ দিবসের থাকলেও হাসি দিবসটি আমার কাছে সবচেয়ে দরকারি দিবস বলে মনে হয়। বিশ্বে শান্তি রক্ষার জন্য জাতিসঙ্ঘ অনেক কিছু করে যাচ্ছে এবং তাদেরও বিভিন্ন দিবস আছে। তারা কি পারে না একটি আন্তর্জাতিক হাসি দিবসের ব্যবস্থা নিতে? এবিষয়ে ব্লগারদের সম্মতি পেলে একটি ‘হাসি বিপ্লবের’ ডাক দেবার বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করতে পারি।






--------------------------------------

বিশেষ দ্রষ্টব্য ১: আমি অন্তত আধা ডজন সহব্লগারের নাম বলতে পারবো, যারা লেখায় ও মন্তব্যে চমৎকার রসাত্মক আবহ সৃষ্টি করতে পারেন। ছয় দফা তৈরিতে তারা ছিলেন আমার প্রেরণা।



বিশেষ দ্রষ্টব্য ২: পোস্টটির জন্য উপযুক্ত কোন থিম ফটো পেলে তা মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবার অনুরোধ রইলো দয়ালু সহব্লগারদের কাছে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।