আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বহুকর্মের অর্থনৈতিক ক্ষতি

একটি বৈষম্যহীন, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়ীক ও ঐক্যবদ্ধ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি

এক

মাল্টিটাস্কিং বহুকর্ম বা একই সাথে অনেক কাজ করা আধুনিক প্রযুক্তিবান্ধব সমাজে অতি সাধারন একটি বিষয়। এই যে আপনি অফিসের কাজ করতে করতে ব্লগ পড়ছেন লিখছেন বা ফেসবুকে সময় দিচ্ছেন অথবা মন চাইলে হাতের স্মার্ট ফোনে থাকা কোন জটিল গেম খেলছেন এগুলো তো সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির উন্নতি আর ইন্টারনেটের ব্যপক প্রসারের কারনেই।

প্রযুক্তি মানুষকে আগের চাইতে অনেক অনেক গুন বেশি যুক্ত করেছে। একটি গবেষনায় দেখা গেছে ফেসবুকে থাকা একজন মানুষ আপনার থেকে সর্বোচ্চ ছয়টি সম্পর্ক দূরে আছে; তা সে যে দেশেরই হোক, যে বর্ণের হোক কিংবা হোক যে ধর্মের। যদিও মিউচুয়াল ফ্রেন্ডের উপর ভিত্তিতে এই গবেষনা করা হয়েছে তারপরও এ থেকে কি কানেক্টিভিটির অবস্থা প্রকাশ পাচ্ছে না ?

প্রযুক্তির এই বিকাশমান ও বিকশিত পরিস্থিতিতে আপনি চাইলেও এর বাইরে থাকতে পারবেন না।

আপনাকে যুক্ত হতেই হবে। অথচ এই যুক্ত হওয়ার জন্য আপনার হয়ে যাচ্ছে বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি আর যেহেতু আপনি যে দেশের নাগরিক সে দেশের অর্থনীতি আপনার কাজের উপরও নির্ভর করছে তাই ব্যাস্টিক অর্থনীতির পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতিরও হচ্ছে বিশাল ক্ষতি। ক্ষতি হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতিরও।

দুই

একটা নির্দিষ্ট সময়ে একজন কর্মজীবীকে আপনি দেখতে পাবেন হয়ত সে ব্লগ পড়ছে বা ফেসবুকে কারো পোস্ট লাইক-কমেন্ট দিচ্ছে, হয়ত টুইট করছে, কাউকে টেক্সট করছে। এরকম কয়েক রকমের কাজের সাথে তারা যুক্ত থাকছে একই সাথে।

এগুলো সম্ভব হচ্ছে স্মার্ট ফোন, ট্যাবলেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের কারনে। আপনি জেনে অবাক হবেন একজন স্বাভাবিক মানুষ দিনে গড়ে দেড়শবার তার মোবাইল ফোনটা চেক করেন এবং এই কাজটা করতে গিয়ে প্রতিবারই তার স্বাভাবিক কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে করতে হচ্ছে এবং পুনরায় যখন সে আগের কাজে মনোযোগ দিচ্ছে তার মধ্যে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সময়।

প্রযুক্তির এত এত সুবিধার কারনে মানুষকে বিশ্বাস করানোই কঠিন যে প্রযুক্তি যতটা দিচ্ছে তার চাইতে নিয়ে নিচ্ছে অনেক কিছু আর তার সাথে যখন যুক্ত হয় মাল্টিটাস্কিং তখন সেটা উৎপাদনবিমুখী, আর্থিক ক্ষতি এবং মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে ! একই সাথে অনেকগুলো কাজের সাথে যুক্ত থাকলে প্রথমত আপনার উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। এতে আপনার কর্ম দক্ষতা এমনকি মানসিক দক্ষতাও কমে যায়।

গবেষনায় দেখা গেছে যে সকল মানুষ একই সাথে অনেক কাজ করেন তাদের উৎপাদন ক্ষমতা কমে ৪০ শতাংশ এবং কাজের মধ্যে ভুল বৃদ্ধি পায় ৫০ শতাংশ।

একই সাথে কাজ সম্পন্ন করতে তাদের ৫০ শতাংশ বেশি সময় লাগে।

ধরেন আপনি আপনার অফিসের কোন গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ করছেন। হঠাত নিজেকে একটু চাপমুক্ত করতে আপনি ব্লগে ঢু মেরে গেলেন বা ফেসবুকেই গেলেন। মজার ব্যাপারটা হচ্ছে এখানে এসে আপনি কিন্তু সময় দিচ্ছেন। এতে ক্ষতি হচ্ছে দু'টো।

প্রথমত, এই কাজে আপনার আদতে কিছুই উৎপাদন হচ্ছে না এবং এই কাজটা শেষ করে আপনি যখন পুনরায় অফিসের কাজটা করতে যাবেন তখন আপনার মনোযোগ আনতে এবং আগের সেই চিন্তার পর্যায়ে যেতে অন্তত গড়ে পঁচিশ মিনিট সময় লাগবে। আর যারা একই সাথে দু'টো কাজই করবেন তাদের কথা তো আগেই বলেছি।

আরো খারাপ সংবাদ যেটা তা হচ্ছে মাল্টিটাস্কিং আপনার চিন্তাক্ষমতা এবং মানসিক দক্ষতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে আপনার আইকিউ কমে যেতে পারে পনের পয়েন্ট যা কিনা নিয়মিত গাঁজা সেবনের ফলে হওয়া ক্ষতির তুলনায় তিন গুন বেশি !!! মাল্টিটাস্কিং এমনকি অফিসিয়াল মিটিংগুলোতেই ব্যাপক হারে প্রভাব ফেলে। মানুষজন মিটিং এর মাঝেই স্মার্ট ফোনে বিভিন্নজনের সাথে বিভিন্ন ধারার কাজে যুক্ত হয়ে যায় যার ফলে মিটিং এর উদ্দেশ্যটাই ভেস্তে যেতে পারে মাঝে মাঝে।



বৈশ্বিক পর্যায়ে এত বেশি মানুষ মাল্টিটাস্কিং এর সাথে যুক্ত যে এর একটা বড় প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পরে। অনুমান করা হয় মাল্টিটাস্কিং এর ফলে বিশ্বে প্রতি বছর ৪৫০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ কর্ম ঘন্টা। এই যে ক্ষতি এই ক্ষতিটা কিন্তু আপনারও। তাই সব কাজ একসাথে না করে সময়ের সময়ে করুন, কারণ প্রযুক্তি আমাদের জীবন অনেক সহজ করে দিয়েছে কিন্তু আমাদের ক্ষুধা এত বেশি যে আমরা সব কিছু একসাথে করতে চাই এবং সমস্যাটা বাঁধে ওখানেই।



এরপর থেকে এক সাথে একাধিক কাজ করার আগে কিংবা সময়ে অসময়ের কাজ করতে হাত নিশপিশ করলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন এর ফলে যে ক্ষতিটা হবে আপনি কি সেটা মেনে নিতে প্রস্তুত। আপনার চিন্তা শক্তি যদি আপনার রুটি রুজি হয় তাহলে আরো বেশি করে চিন্তাটা করুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.