আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণশুনানি বিইআরসির 'লোক দেখানো নাটক'

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানিকে 'লোক দেখানো নাটক' ও 'প্রহসন' বলে মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি আরও বলেন, বিইআরসি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এটি সরকারেরই 'সম্প্রসারিত হস্ত'। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। আনু মুহাম্মদ বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে সরকার এমন সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রেখেছিল।

এরপর দেশের বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো সরকারের নির্দেশে দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসির কাছে প্রস্তাব জমা দেয়। বিইআরসিও দাম বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করে। এটি স্পষ্ট যে, বিইআরসি মূল্যায়ন কমিটি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য যে গণশুনানি করেছে তার পুরোটিই একটি 'নাটক'। নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের পর বিইআরসিকে দাম বাড়ানো যৌক্তিক কিনা সে ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে গণশুনানির আগেই নিয়ম না থাকলেও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেন।

পাঁচটি বিতরণ সংস্থা অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তাদের উপস্থাপিত প্রস্তাবে ভুল ছিল। সেই প্রস্তাব মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। যেখানে অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, মন্ত্রীদের জনগণের প্রতি কোনো সম্মানবোধ নেই।

তারা সব সময়ই নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যস্ত। সে কারণেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের ওপর নতুন করে বোঝা চাপানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ নিয়ে বর্তমান সরকারের গৃহীত নীতি, চুক্তি ও বিইআরসির কার্যক্রম দেখে বুঝে নিতে কষ্ট হয় না যে, বিদ্যুৎ খাতের কারণে যে লোকসান হবে তা সরকার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের পকেট কেটে আদায় করবে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, যারা পরিমাণে বেশি ও অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তারা বিদ্যুৎ বিল ফাঁকি দেন। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা যারা কৃষক ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত তারা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলেও তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক বেশি বৃদ্ধি করে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার আরও বাড়ানো হচ্ছে।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হলে বিত্তশালীদের কিছু আসে যায় না। কারণ বিত্তশালী অনেকেই আছেন যারা ফাঁকিবাজি করে এবং ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় দরিদ্র-ধনীদের মধ্যে যে তারতম্য করা হয়েছে তার মধ্য দিয়ে সরকারের অনিয়ম, অস্বচ্ছতা ও জনস্বার্থবিরোধী চরিত্র স্পষ্ট হয়।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কেন এত বৃদ্ধি পাচ্ছে বিইআরসির উচিত তা অনুসন্ধান করা। যে ভুল নীতি ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে তা চিহ্নিত করে সরকারকে সচেতন করার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানটির।

কিন্তু এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি স্বাধীন নয়।

এটি কেবলমাত্র সরকারের 'সম্প্রসারিত হস্ত'। মূলত সরকার আইএমএফ ও দেশি-বিদেশি কিছু বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষার জন্য মরিয়া। এ কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, যৌক্তিক কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলে সে দাম দিতে আপত্তি হওয়ার কথা নয়।

অথচ ২০০৯ সালে যেখানে আমাদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ছিল ২ টাকা তা বর্তমানে প্রায় ৭ টাকা। অর্থাৎ তিন গুণের বেশি। আর এর কারণ বিদেশি কোম্পনিগুলোর প্রতি নির্ভরশীলতা। এ ছাড়া রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মাধ্যমেও ক্রমাগত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে যেগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই সরকারের কাছ থেকে বিল পাচ্ছে।

কিছু কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ দাঁড়াচ্ছে ১০০ টাকা। এদের অনেকে অচল যন্ত্রপাতি দিয়ে উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় জড়িত। সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কিছু দেশি কোম্পানির লুটপাটের কারণে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাড়ছে। যার চাপ পড়ছে জনগণের ওপর।

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।