আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাসা, জর্জ ও আমি

আমরা একই শহরে থাকি। আমার ছোট্ট মেয়ে বন্ধু ও আমি। সে অষ্টাদশী হবে। আমার বয়স তার চার-পাঁচগুণ বেশি। মোবাইলেই পরিচয়, কোনোদিন দেখা হয়নি গতকাল পর্যন্ত।

অসচরাচর কুয়াশা ছিন্ন করে রাত ১১টায় শরীরে ঢেউ নিয়ে ঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছি। দরজা খোলার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র চালিয়ে ঢুকে পড়লাম।

অবাক বিস্ময় আর কাকে বলে! আমার বিছানায় শুয়ে আছে একটি স্রোতস্বিনী। পেছন ফিরে। ফুরফুরে অন্তর্বাস গায়ে।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত উষ্ণ ঘর। অন্তর চোখ বলল, তোমার অষ্টাদশী মোবাইল বান্ধবী। শয্যা ছাড়া সারা ঘর বইয়ে ঠাসা। দুখানা চেয়ার। টেবিলও বই-কলম-ওষুধ ইত্যাদিতে জনাকীর্ণ।

জ্যাকেটের বুকপকেট থেকে মোজাইক বের করে এক ঢোক খেয়ে নিলাম মাথাটা খোলতাই করে নিতে।

কাজ হলো। ঘরের সঙ্গে ছোট্ট রান্নার জায়গা কাচের দেয়ালে ঢাকা। অস্বচ্ছ কাচের দেয়ালের আড়ালে শৌচাগার। সাসা স্নান সেরে শুয়ে পড়েছে বোঝা গেল ওর পোশাক ও তোয়ালে রাখা দেখে।

গভীর ঘুমে পরিচ্ছন্ন তাও বোঝা গেল। ওর নদী-শরীরের পেছনটা বয়ে একবার পায়ের গোড়ালিতে ছুটছে। সেখান থেকে আবার শুরু করে আলুলায়িত সৌম্য চুলে। শিরদাঁড়ার নদীখাত কোমরে গিয়ে অন্তর্বাসের ভাঁড়ার ঘরে ঢুকে প্রবল গিরিখাত সৃষ্টি তো করবেই। ইচ্ছা হলো ঘুরে শয্যার ওপাশে যাই।

সেদিকে জায়গা নেই, শুতে পারব না। এ পাশটাতেই শুতে হবে। আমার বহু দিনের ইচ্ছা এরকম কোনো ষোড়শীকে এভাবে দেখা। কোনো একজনকে এই বাসনা প্রকাশও করে থাকব। সেটা এভাবে ঘটমান বর্তমান হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।

ও যে সাসা তা বুঝতে পারলাম আর এক ঢোক পান করে ওর সামনের দিকে যাওয়ার অলঙ্ঘনীয় ইচ্ছা পূরণের পর পর। ওর নাভির একটু নিচে উল্কিশোভা দেখে। মোবাইলে একদিন আলতো নিশ্চয়তা দিয়ে সে আমাকে শুনিয়েছিল। একেবারে প্রত্নপুরান ভঙ্গিতে। দেখতে পাব ভাবিনি।

এভাবে তো নয়ই।

এখন সাসা ঘুমুচ্ছে জীবন্ত ভাস্কর্য হয়ে। আমার ঘররক্ষক ও রান্নার মালিক সাবির কাকা সন্ধের সময় চলে যায়। আসে সকালে। সাবির কাকা বয়সে ছোট হলেও আমরা দুজন দুজনকে কাকা ডাকি।

আমি বুঝতে পারছি সাবির কাকা থাকতেই সাসা এসেছিল। আমি বুঝতে চেষ্টা করছি মোবাইলে সাসার এসএমএস-এর অজস্র বার্তার গোপন অর্থগুলো।

সাসার পেছনে শুয়ে পড়লাম হঠাৎ করে পাওয়া তীব্র সুগন্ধে। অনেক প্রজাপতি ওড়ার বেগে ওর শরীর থেকে বেরিয়ে এল। এক সময় সত্যিই ওরা নানা রঙের প্রজাপতি হয়ে গেল।

আমাকে ওরা নিয়ে গেল সাসার ঘুমের কাছে। আর আমাকে ঘুমপাড়ানি গান শোনাতে লাগল মাসি-পিসির মতো। ওর আশ্চর্য সুন্দর শ্যামল নদী শরীরের স্থির তরঙ্গে। তরঙ্গ নাকি হীরক কামনায়। স্নিগ্ধতা অথবা বিধ্বংসী ভালোবাসার ভাস্কর্য! আর ঘুমের মধ্যে সে পাশ ফিরে গেল।

ওর বুকের অন্তর্বাস উন্মুক্ত। আমি চোখ বন্ধ করলাম জাগ্রত স্বপ্নে। জাগ্রত স্বপ্ন যদি বঞ্চনা করে সে আশঙ্কায়। তখন ওর এসএমএস ভেসে এল চোখে ...

চাঁদ এনে দেব তোমাকে। দেব অনেক ফুল।

শান্ত-উদ্দাম নদী, নীল সাগরের ঢেউয়ের তীর। আর প্রজাপতি (প্রজাপতিরা তখন ঘর ভরে দিয়েছে)। সুরের পাখি। আমি তোমার বন্ধু হব। ... তুমি হবে কি?

সঙ্গে সঙ্গে আমি জানালাম, ও ময়ূরী, এত সব ফুল, পাখি, নদী, ঊর্মিমালা কোথায় রাখব... ও বন্ধু, আমার...

কেন? আপনার বিশাল মনে, বুকে।

আর তা যদি না হয় তবে আমাকে নিয়ে যদি গল্প লেখেন সেখানে... মনের মধুতে...।

দারুণ, দারুণ! স্বপ্নের দুয়ার খুলে দিলে। আমার লেখায়? আর কোথায়?

শরীরে... সারা অঙ্গে বাঁশি বাজাবে। অনেক ভালো ইচ্ছা রাখলাম তোমার জন্য। ... অনেক স্বপ্ন জমা করবেন।

আপনি তো স্নান জমিয়ে রাখেন শুনেছি।

 

ঘুমের মধ্যে ও স্বপ্ন-হাসি দিল, যেন বলল, তোমার কথাই আমি ভাবছি...। আর আমি স্বপ্নে দেখছি বিশাল এক বাগান। ক্যামেলিয়া ফুলের বাগান। ক্যামেলিয়া তো প্রায় গোলাপের মতো।

মুঠো থেকে বড়। লাল, সাদা, গোলাপি। আচ্ছা, কালো নীল ক্যামেলিয়া কি আছে? নয়তো স্বপ্নে দেখছি কেন? আমার খুব ইচ্ছা হলো উড়তে। প্রজাপতিদের মতো। সারা আকাশে, সারা ঘরে।

আর আমি ভাবছি ওর স্তোকাভ্রনম্র স্তনযুগল, যা আমি কখনো দেখিনি, স্পর্শ তো সুদূরের পিয়াসী। মায়া মরীচীকা।

অনাঘ্যাত, অন্যের স্পর্শ বর্জিত। দেবকান্তি এবং দুর্লভ বাস্তব। খুব ভোরে ও সূর্যালোকে টলটলে শিশিরের মতো।

আমি দেখলাম আর নতুন কবিতা খুঁজে পেলাম। চলতে চলতে কখনো নিজের ছায়া ফেলে যাওয়া দুর্লভ জায়গায় ছায়ার মতো থমকে পড়ার মতো। চলতে চলতে আমাকে স্বপ্ন দেওয়ার মতো মুহূর্তের সুখে ফুর্চি ফুল ছড়ানো পথের ওপর। নাকি পলাশ-পারিজাত। অথবা নির্জন ঝরনাতলার আরণ্য পরিবেশে।

কোনো উপমাই এর যোগ্য নয়, কোনো কামনাই এর সমকক্ষ নয়, কোনো পবিত্রতাই এর যোগ্য পূর্ব বা উত্তরসূরি নয়। আমার গায়ে ছিল মালতি ফুল অাঁকা বুক-খোলা রাত্রিবাস। ওর গায়ে ছিল মলি্লকা মাধবীর সুবাসের স্ফুরণ। দেখে দেখে আশ মেটে না, স্পর্শ করার সাহস সংহত হয়ে থাকে। আবার আহ্বানের সাড়াও দুর্দমনীয় থমকে থাকে...।

আর ওর প্রবহমান শরীরের ঝরনাধারা একইসঙ্গে থমকে থাকে ও বয়ে চলে।

সারা রাত ও ঘুমোল। অথবা ঘুমের মধ্যে জীবন্ত জেগে থাকল। অনেক কথা বলে গেল। জানি না এতসব কী বলেছে প্রেমের কথা, কী তার প্রকৃত চাওয়া, মনের চেয়ে দেহের, দেহের বেশি মনের, দেহ ও মন উলঙ্গ করে, ফাঁদ পেতে, ফাঁদ থেকে পিছলে সরে গিয়ে, পাহাড়ি ঝরনাধারার বুনো স্রোতস্বিনীর মতো, পেছন ও সম্মুখ মেলে কথা বলে, সুরেলা আর্তনাদে গভীর গভীরে তলিয়ে যেতে যেতে যেতে... অথবা প্রেম-ভালোবাসা নয়; নির্জনতা।

একইসঙ্গে দ্বিতীয় গল্প শুরু

সব জেনে-শুনে সারা রাত ঘুমহীন অভিনয় করে গেল আমার অষ্টাদশী ছোট্ট বন্ধু! একদম কথা না বলে কী করে এমন ঘুমের ভান করা যায়। পাশে একজন পুরুষের একমাত্র নিরাপত্তা হয়ে। প্রজাপতির এমন সম্মোহিত সৌন্দর্যের উস্কানিমূলক ঘোরাঘুরিতে, নাকি সেটাই একমাত্র নিরাপত্তা। হয়তো সাসার সাহস দেখে আমি লোকটি ভয়ে কামনাহীন হয়ে গিয়েছিলাম নিরাপদ সুরক্ষিত ঘরে।

 

সমাধান

এর একমাত্র উত্তর দুজনেই একই চরিত্রের।

আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা কোনো ষোড়শী-অষ্টাদশীর সঙ্গে একা রাত্রিযাপন। সেটা পূরণ হতে চলল প্রায় বিনা আয়োজনে। কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই। একের পর এক চেষ্টা ও চিন্তায় যা সম্ভব হয়নি তা স্বপ্নের মতো ঘটে গেল।

মেয়েটি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।

দু-দশ দিন পর পরীক্ষা শুরু হবে। ফেব্রুয়ারির শুভ উত্তাল সময় এসে গেছে। একুশে ফেব্রুয়ারির। এ সময় কি কোনো পরীক্ষা চলা উচিত! একদিকে পরীক্ষা, আরেকদিকে বসন্ত বাতাসের উত্তাল উন্মাদনা। ফুল, কচিপল্লব, কোকিল, দোয়েল কাকে বারণ করে বেঁধে রাখা যায়।

প্রেমের দেবতার পুষ্পশর আম্র মুকুলকে কে বারণ করে বিরত রাখে! কোকিলকে কে বেঁধে রেখে ডাক বন্ধ করবে! সিংহ, কর্কট, মিথুন, বৃষ, মেষ ও মীন রাশির তারারা রাতের আকাশে এখন। সুন্দরী এনড্রোমিড়াকে সমুদ্রের অধিপতি পোসেইডন কতদিন নাঙ্গা করে শৃঙ্খলিত রাখবেন? ওদিকে বীর পারসিয়াস তাকে দেখে উতলা। স্কুলের ছেলেমেয়েরা একুশের গান মকসো করছে প্রাণপণে। মাধবী ফুটেছে। পলাশ।

মাঝ রাত পেরিয়ে গেছে। সাত ভাই বা কৃন্তিকা নক্ষত্রের বিনতা, উমা, দেবসেনা, সমভূতি, অনুসয়া, প্রীতি, সন্নতি ও লজ্জা পশ্চিম আকাশের দিগন্তে ঢলে পড়েছে। ঘুমের মধ্যে (!) সাসা আমার হাত নিয়ে কোলে লুকিয়ে নিল। এমন সময়, এমন সময় বিস্ফোরক কাণ্ডটি ঘটতে শুরু করল। আকাশে যেমন নক্ষত্র মরার সময় ঘটে।

মর্তে পারমাণবিক যেমন।

কীভাবে!

দরজায় করাঘাত পড়ল। আমার হাত তখন সাসার উষ্ণ-কোমল কোলের বঙ্গোপাসাগরে। দরজা খুলে দিলাম হাতে পিস্তল নিয়ে। চোখ না মুছে; ঘুমের কণামাত্র ধুলো নেই বলে।

দরজার বাইরে আমার প্রিয় একমাত্র যুবক-ছেলে জর্জ।

বলল আমার হৃৎপিণ্ডের টুকরা, এখানে সাসা আছে, আমি হোস্টেলে একটু আগে স্বপ্নে জেনেছি। ওকে নিয়ে ঘরে ঢুকলাম।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।