আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাকিস্তানের শিরোপা কেড়ে নিল শ্রীলঙ্কা

শুরুর সঙ্গে শেষের অদ্ভুত সাযুজ্য। অদ্ভুত মিল। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন লাহিরু থিরিমান্নে। ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ল্যাসিথ মালিঙ্গা। ম্যাচ জিতেছিল দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা।

কাল ফাইনালেও সেঞ্চুরি করেন থিরিমান্নে। ৫ উইকেট নেন মালিঙ্গাও। এবারও জিতল দ্বীপরাষ্ট্র। ৫ উইকেটে জয়ী হয়ে ৬ বছর পর আবারও এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন হলো শ্রীলঙ্কা। এ নিয়ে এশিয়া কাপের ১২ আসরে পঞ্চমবার চ্যাম্পিয়ন হলো শ্রীলঙ্কা।

পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারতও। শ্রীলঙ্কা প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। সবশেষ ২০০৮ সালে। মধ্যে দুইবার শিরোপা জিতেছিল ১৯৯৭ ও ২০০৪ সালে।

এশিয়া কাপে পাকিস্তানের সাফল্যের তীর্থভূমি বাংলাদেশ।

যে দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইমরান খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়াসিম আকরামের পাকিস্তান, তার দুটির আয়োজকই ছিল এই গাঙ্গেয় পাললিক মাটির ব-দ্বীপটি। গত আসরে মিরপুরে মাত্র ২ রানে স্বাগতিক বাংলাদেশকে হারিয়েছিল পাকিস্তান। ১৪ বছর আগে ২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ৩৯ রানে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। এবার তৃতীয়বার বাংলাদেশের মাটিতে ফাইনাল খেলতে নেমেছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। খেলতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় মালিঙ্গা ঝড়ে।

১৮ রানে হারিয়ে বসে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে। এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় মিসবাহবাহিনী। ঘুরে দাঁড়াতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন প্রায় চার বছর পর দলে ডাক পাওয়া ফাওয়াদ আলম। সঙ্গী হিসেবে পান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক ও উমর আকমলকে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে অধিনায়কের সঙ্গে ফাওয়াদ যোগ করেন ৩২.১ ওভারে ১২২ রান।

মিসবাহ আসরের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে সাজঘরে ফিরেন ৬৫ রান করে। এরপর আকমলকে নিয়ে ফাওয়াদ দ্রুতলয়ে ব্যাট চালিয়ে ১৩ ওভারে ১১৫ রান যোগ করেন পঞ্চম উইকেট জুটিতে। আকমল ৫৯ রান করেন মাত্র ৪২ বলে। তবে চাপের মুখে, খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে কতটা দৃঢ়তায় ব্যাট করতে হয়, কাল মিরপুরে তারই প্রদর্শন করলেন ফাওয়াদ ১৩৪ বলে অপরাজিত ১১৪ রানের ইনিংস খেলে। যদিও ৪০ ও ৯২ রানে দুবার জীবন পেয়েছিলেন এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান।

কিন্তু জীবন দুটিকে খেলার অংশ হিসেবে ধরে নিয়ে ফাওয়াদের ইনিংসটিকে মিরপুরের অন্যতম সেরা ইনিংসও বলা যায় নিঃসন্দেহে। ২০১০ সালে দুবাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শূন্য করার পর বাদ পড়েছিলেন ফাওয়াদ।

এরপর গত চার বছরে অনেক সিরিজ খেলেছে পাকিস্তান, কিন্তু নির্বাচকদের নজর কাড়তে পারেননি ফাওয়াদ। মনে হচ্ছিল ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেই ইতি টানতে হবে ক্যারিয়ারের। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে ফিরেন দলে।

যদিও এশিয়া কাপের প্রথম তিন ম্যাচে বসেছিলেন সাজঘরে। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নেমেই করেন ৭৪ রান। আর কালতো খেললেন গল্পের এক ইনিংস। তার সেঞ্চুরিতেই ৫ উইকেটে ২৬০ রান করে পাকিস্তান। মালিঙ্গা আসরের প্রথম ম্যাচের মতো ফাইনালেও ৫ উইকেট নেন।

আশ্চর্য হলেও সত্যি, দুই ম্যাচেরই প্রতিপৰ পাকিসত্দান। এর আগে দুই দল দুবার পরস্পরের বিপৰে ফাইনাল খেলেছে এশিয়া কাপে। প্রথমবার ২৮ বছর আগে, ১৯৮৬ সালে দ্বীপরাস্ট্র শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে হারিয়েছিল পাকিসত্দানকে। এরপর ২০০০ সালে পাকিসত্দান এশিয়া কাপের প্রথম শিরোপা জিতেছিল শ্রীলঙ্কাকে ৩৯ রানে হারিয়ে। কাল ছিল এগিয়ে যাওয়ার লড়াই।

লড়াইয়ে দ্বীপরাস্ট্রের এগিয়ে যাওয়ার টার্গেট ছিল ২৬১ রান। দুই ওপেনার কৌশল পেরেরা ও লাহিরম্ন থিরিমানে ১০ ওভারে ৫৬ রান যোগ করে শক্ত ভিত দেন দলকে। এগারো নম্বর ওভারে এসেই ঝলক দেখান সাঈদ আজমল। পরপর দুই বলে তুলে নেন কৌশল কুমার সাঙ্গাকারাকে। বিনা উইকেটে ৫৬ রান থেকে ২ উইকেটে ৫৬ রান! কোনঠাসা হয়ে পড়ে দ্বীপরাস্ট্র।

সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন থিরিমানে ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। আসলে ৪১২ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মাহেলা তরম্নন থিরিমানেকে নিয়ে ২৭ ওভারে ১৫৭ রান যোগ করেন। মাহেলা ক্যারিয়ারের ৭১ নম্বর হাফসেঞ্চুরি করে যখন সাঝঘরে ফিরেন, তখন জয়ের জন্য দরকার ৪৯ রান। অভিজ্ঞ মাহেলা ফিরলেও তরম্নন থিরিমানে শেষ পর্যনত্দ দলকে জয়ী করেই ফিরেছেন। হঠাৎ করেই সুযোগ পান থিরিমানে।

বাংলাদেশের বিপৰে ওয়ানডে সিরিজে আঙ্গুলে ব্যথা পেয়ে মাহেলা এবং তিলকরত্নে দিলশান দেশে ফিরে গেলে পরিবর্তিত খেলোয়াড় হিসেবে আসেন থিরিমানে। প্রথম ম্যাচে টাইগারদের বিপৰে ১৮ রান করেন। কিন্তু এশিয়া কাপ শুরম্ন হতেই আলো ছড়াতে থাকেন। পাকিসত্দানের বিপৰে আসরের প্রথম ম্যাচেই করেন ১০২ রান। পরের ম্যাচে ভারতের বিপৰে ৩৮, আফগানিসত্দানের বিপৰে ৫ এবং বাংলাদেশের বিপৰে ৩৩ রান করেন থিরিমানে।

ফাইনালে এসে আবারও জ্বলে উঠেন। জ্বালিয়ে দেন পাকিসত্দানের সকল বোলিং প্রতিরোধ। খেলেন ১০১ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস। ১০৮ বলের ইনিংসে রয়েছে ১৩টি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারী। তার ইনিংসে মস্নান হয়ে যায় ফাওয়াদের সেঞ্চুরি।

স্বপ্ন অধরা হয়ে যায় পাকিসত্দানের শিরোপা অৰুন্ন রাখার।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.