বেড়ে ওঠার চেষ্টা করছি
খুলনা । আমাদের শহর তাই আমরা ভালো জানি এ শহর কতটা বঞ্চিত। প্রত্যেকবার আমাদের এখান থেকে না দিলেই নয় তাই একজন প্রতিমন্ত্রি দেওয়া হয় । সেই প্রতিমন্ত্রীরা সংসদের নিজেদের দাবী উত্থাপন করতে বিভিন্ন সময়েই নাকাল হন। সে যাই হোক , খুলনা কি পেয়েছে আর কি দেশকে দিয়েছে সে তর্কে না যাই , আমি কিছু কথা বলতে এখানে এসেছি।
আমাদের খুলনার একটি উপজেলা হচ্ছে ডুমুরিয়া। ডুমুরিয়ার চুকনগর গণহত্যার জন্য বিখ্যাত কিন্তু ওই পর্যন্তই। হয়ত খুলনার অন্যান্য জিনিসের মত অবহেলা করা হয় বাংলাদেশ তথা বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম বড় এই হত্যাকাণ্ড। কেন এত ঘৃণ্য ঘটনা এত মানুষের অজানা তার উত্তর আমার জানা নেই।
সেদিন ছিল সোমবার।
সেদিন থেকেই পাক হানাদারদের ভয়ে মানুষ চুকনগরে আসতে থাকে। মঙ্গলবার যায় বুধবার যায় অতঃপর আসে সেই বৃহস্পতি বার। ২০ মে ১৯৭১। চুকনগর থেকে ভারতীয় সীমান্ত ছিল খুব কাছে এবং অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। ভদ্রা নদী পার হয়ে খুলনা আর বাগেরহাট থেকে সেদিন লক্ষ লোক সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যাবার জন্য চুকনগরে জড় হয়েছিল।
উদ্দেশ্য ছিল খুবই সাধারণ। জীবনকে বাঁচানো। জমায়েত হওয়া মানুষের প্রায় সবাই ই ছিল সংখ্যালঘু। ব্যাস ! হিন্দু হওয়াটাই ওদের পাপ হয়েছিল। ২০শে মে সকাল ১০/১১টার মধ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চুকনগর বাজারের ঝাউতলায় (তৎকালীন পাতখোলা) এসে থামে।
যে হত্যাযজ্ঞ তারা শুরু করে সেখানে তাকে যদি এখন নির্মম বলে আখ্যা দেই তবেও হয়ত ঠিক যথার্থ হবে না । ১০টা থেকে শুরু হওয়া নিধনযজ্ঞ চলতে থাকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। এর হানাদার বাহিনী চলে যায়। পাশের ভদ্রা নদীর পানির রঙ ততক্ষণে লাল হয়ে গিয়েছে। খালে লাশ, মাঠে লাশ , ক্ষেতে লাশ ,চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ ! মায়ের বুক জুড়ে আছে মৃত শিশু,বৃদ্ধ , যুবতী নারী , নাহ ! কিছুই বাদ যায় নি সেদিন ! এমন কি জীবন বাঁচাতে কত মানুষ ভদ্রা নদীতে লাফ দিয়ে মরেছে তার ইয়ত্তা নেই ।
ঠিক কত লোক সেদিন মারা গিয়েছিল কেউ সে সংখ্যা বলতে পারে না । ধারণা করা হয় ১০ হাজার । কেউ কেউ বলে লক্ষাধিক। আজও সেখানকার জমি খুঁড়লে মেলে মৃত মানুষের হাড়গোড় , অলংকার , আরও অনেককিছু।
কেন তুললাম আজ এই প্রসঙ্গ ? বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলপত্রে লিপিবদ্ধ হয় নি এই গণহত্যা।
শহীদদের জন্য একটা স্মৃতিসৌধ হয়েছে বটে কিন্তু ওই পর্যন্তই । বিজয় দিবস হোক কিংবা স্বাধীনতা দিবস , কোনও মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীকে এখানে দেখা যায় না শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে। তবে অবহেলিত এই দক্ষিণ অঞ্চলের মত এখানকার মানুষের জীবনদাণও অবহেলিত থাকবে ? কে জানে হয়ত মৃত আত্মারা আমাদেরকে অভিশাপ দেয় এহেন অবহেলার জন্য। কতভাগ প্রজন্মই বা জানে এত বড় আত্মত্যাগের কথা ? কেন এই প্রজন্ম জানে না চুকনগরের ভয়াবহতাকে ? কেন তারা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে ৪২ বছর আগের সেই আর্তচিৎকার ? কেন এত বড় ঘটনার স্থান হল না বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলে ?তবে কি জাতি হিসেবে আমরা অকৃতজ্ঞ ? উত্তর দাও বাংলাদেশ , এ প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় হয়ত চলে এসেছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।