আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেজিস্ট্রেশনবিহীন ৭০ লাখ সিমের সন্ধান পেয়েছে বিটিআরসি :নিরাপত্তার স্বার্থে সিমগুলো অকেজো করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা বড় দরকার



বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি রেজিস্ট্রেশনবিহীন ৭০ লাখের ওপরে মোবাইল সিমের সন্ধান পেয়েছে। এসব সিমের বড় অংশ রয়েছে অপরাধীদের হাতে। অপরাধ ঠেকাতে মোবাইল সিম ইচ্ছে করলেই গ্রাহক কিনতে পারবেন না এমন নির্দেশ জারি করেছেন কর্তৃপক্ষ। বিটিআরসি বলেছে, গ্রাহকের নাম ঠিকানা পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করার পর সিম এ্যাক্টিভ বা চালু করতে হবে। যাচাই-বাছাই করার পর গ্রাহকের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই সিম চালু করা যাবে।

সম্প্রতি বিটিআরসি অপারেটরদের প্রতি এই নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ অমান্য করে সিম বিক্রি করলে প্রতি সিমে ৫০ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মোবাইলে অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিটিআরসি এমন নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে বর্তমানে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সিম কোন প্রকার রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই যত্রতত্র বিক্রি বন্ধের একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিম বিক্রি বন্ধের ব্যবস্থা নেবে।

বিটিআরসি এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থাই নিতে পারেনি।

বিটিআরসি জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের প্রায় ১১ কোটি গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ৭০ লাখের বেশি সিম ব্যবহার হচ্ছে কোন প্রকার রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই। নীতিমালা অনুযায়ী কোন মোবাইল অপারেটর রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সিম বিক্রি করতে পারবে না। বিটিআরসির নীতিমালাকে কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে অপারেটররা অলিগলি থেকে শুরু সর্বত্র (ফ্লেক্সিলোডের দোকানে) বিক্রি হচ্ছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিম।

ফলে একদিকে সরকার বিরাট অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে মোবাইল অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। এখান থেকে উত্তরণের জন্য বিটিআরসি বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কোন পদক্ষেপেই ফলপ্রসূ কিছু হয়নি। বিটিআরসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ কমিটি করেও এর প্রতিকার করতে পারেনি। এবার কর্তৃপক্ষ নতুন কৌশল নিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নতুন কৌশলে মোবাইল ফোনের সিম কেনার সঙ্গে সঙ্গে আর তা চালু হবে না। সিম কেনার সময় ক্রেতার নাম-ঠিকানাসহ বাধ্যতামূলক তথ্য যাচাই-বাছাই করে সংযোগ চালু করতে পারবে মোবাইল অপারেটররা। এর আগে কোনভাবেই মোবাইল সিম সংযোগ দিতে পারবে না অপারেটররা। এই সিদ্ধান্তের বাইরে সংযোগ দেয়া হলে জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যালয়ে মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অপারেটরদের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হলেও তারা নিজেরাই এটা মানছে না। রেজিস্ট্রেশনবিহীন বা নাম-ঠিকানা ছাড়া সিম বিক্রিতে অপারেটরদের বেশি লাভ হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন করতে গেলেই সরকারের কর-ভ্যাট দিতে হয়। কর-ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে অপারেটররা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিমের কারণে মোবাইল ফোনে অপরাধ প্রবণতা বহু গুণে বেড়ে গেছে।

অপরাধীরা সহজে সিম কিনে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করে তা ‘ইনএ্যাক্টিভ’ করে ফেলে অথবা ওই সিম ধ্বংস করে দিচ্ছে। নতুন করে আবার তারা সিম কিনে ব্যবহার করছে। এটা ঠেকাতেই সিম বিক্রির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সিম কিনে কেউ সঙ্গে সঙ্গে চালু করতে পারে না। তাদের নাম-ঠিকানা-পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সিম চালু করে না কোন মোবাইল অপারেটর।

সে দেশে ন্যাশনাল আইডি ছাড়া কোন অপারেটর সিম বিক্রি করে না। অথচ বাংলাদেশে পথেঘাটে সিম বিক্রি হয়। বিটিআরসি বলছে এটা আর হতে দেয়া হবে না।

সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা মোবাইল বিক্রি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশে যেভাবে সিম বিক্রি হচ্ছে তাতে অপরাধী কার্যক্রমে মোবাইলের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।

এটা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে অপরাধীরা চরম আকারে মোবাইলের সাহায্যে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপরাধ কার্যক্রম চালাবে। মোবাইলে অপরাধ প্রবণতা বাড়লে ‘ট্র্যাকিং’ করেও সামাল দেয়া সম্ভব হবে না। এরপর সম্প্রতি চালু হওয়া থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্মের) আধুনিক প্রযুক্তির মোবাইল ফোন। এই ফোন ট্র্যাকিং করার যন্ত্রপাতি এখনও গোয়েন্দাদের হাতে নেই। থ্রিজিতে অপরাধ করার জন্য অপরাধীদের জন্য আরও সহজ।

কারণ থ্রিজি প্রযুক্তি ট্র্যাকিং করতে যতসংখ্যক দক্ষ জনবল দরকার তত দক্ষ জনবল দেশে এখনও তৈরি হয়নি। বিটিআরসি এ জন্য সুইজারল্যান্ডের একটি কোম্পানির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে। ওই প্রতিষ্ঠান তিন মাস ট্র্যাকিংসহ আধুনিক প্রযুক্তির থ্রিজি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেবে। তবে এই আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

বিটিআরসি গত বছর রেজিস্ট্রেশনবিহীন ১০ লাখের বেশি সিম বাতিল করেছে।

কিন্তু ওই সিমগুলো আবার গ্রাহকদের ব্যবহারের মধ্যে চলে এসেছে। এর আগে বিটিআরসি অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছিল বাজার থেকে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সব চালু সিম তুলে নেয়ার জন্য। কিন্তু কোন অপারেটরই ওই সিমগুলো তুলে নেয়নি। গত বছরের অক্টোবরে এমন নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। সেই নির্দেশের পর বিভিন্ন অপারেটরকে আরও কয়েক দফা চিঠি দিলেও কোন লাভ হয়নি।

অপারেটররা গণমাধ্যমে রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিচ্ছে বন্ধ সিম চালু করার। বিভিন্ন অফারও ঘোষণা করছে। রেজিস্ট্রেশনবিহীন চালু সংযোগ সিম বা রিম পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে ৫০ ডলারের সমপরিমাণ জরিমানা করা হবে। একই সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন কথা বলেই দায়িত্ব শেষ করছে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোসের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, বাজারে বিপুলসংখ্যক সিম রেজিস্ট্রেশনহীন রয়েছে। এই সিমগুলো বাতিল করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এ জন্য বিটিআরসি উদ্যোগ নিয়েছে। সিমগুলো বন্ধ করতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।