আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলিচ্চত্র - নৃ'র অফিসিয়াল টিজার এখন সামুতে



জানেন তো, সামুরই ব্লগার নির্মাতা রাসেল আহমেদযাদুকর... নিকের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই সংগ্রামী মানুষটির প্রথম চলচ্চিত্র নৃ । আজ প্রকাশিত হয়েছে এর টিজার।



চিত্রায়নের মাত্র ১৫ ভাগ কাজ বাকি। তবু স্বস্তিতে নেই নৃ’র নির্মাতা ও তার ইউনিট।

কারণ - আবারো অর্থসঙ্কট। আটকে গেছে কাজ। অবশ্য দ্রুতই এ সঙ্কট কাটানোর চেষ্টা করছে প্রযোজক সংস্থা থিম থিয়েটার উইজার্ড ভ্যালী। শুদ্ধতার অঙ্গিকার আর বিভেদ ছাপিয়ে মাখামাখি হওয়ার গল্প নিয়ে নির্মানাধীণ এ চলচ্চিত্র এর আগেও একই সঙ্কটে পরেছিলো।

উইজার্ড ভ্যালীর কর্ণধার ও নির্মাতা রাসেল আহমেদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির টাকায় ২০১২ সালের আগস্টে শুরু হয়েছিলো নৃ’র কাজ।

প্রাথমিক মূলধন হিসাবে ওই টাকা ছিলো নিতান্তই অপ্রতুল। ছয় মাসের প্রস্তুতির পর ২০ দিনের স্যুটিংয়ে (গত বছরের এপ্রিলে) তা শেষ হয়ে যায়। তীব্র অর্থসঙ্কটে পরে নৃ ইউনিট। ওই সময়ে উইজার্ড ভ্যালী’কে আর্থিক সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসেন সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ি ডা. আরিফুর রহমান। আমাদের বরিশাল ডটকম নাকম একটি অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদ দেখেই তিনি নৃ সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন।

পরে ফেসবুক পেইজের কল্যাণে তার সাথে নৃ টিমের যোগাযোগ হয়। আর ‘বরিশাইল্যাইজম’ তাকে এই টিমের পাশে এনে দেয়। মূল ভিত্তি বরিশালকেন্দ্রিক হওয়ার কারণেই চলচ্চিত্রটির পাশে দাঁড়াবার ইচ্ছা পোষণ করেন বরিশালের সন্তান ডা. আরিফ। তার সহায়তায় গত ২৫ অক্টোবর বরিশালের বানারীপাড়ার নরোত্তমপুর গ্রামে পুনরায় চিত্রায়নের কাজ শুরু হয়।

এর আগে প্রথম দু’দফায় (গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে) মোট ২০ দিনে সিনেমার ইনডোরের অধিকাংশ কাজ শেষ করেছিলো নৃ ইউনিট।

তাই শেষ দফার বেশিরভাগ কাজই ছিলো আউটডোর নির্ভর। প্রথম দু’দিন বৈরি আবহাওয়ায় বিঘ্নিত হয় কাজ। তৃতীয় দিনে বৃষ্টি কমলেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। টানা ৬০ ঘন্টার হরতালে বিঘ্নিত হয় স্যুটিং। এ সময় পুলিশী হয়রানিরও স্বিকার হন নৃ ইউনিটের সদস্যরা।

এসব বাঁধা পেরিয়েই বানারীপাড়াসহ বরিশাল মহানগরীর এপিফানী গির্জা, মহা-শ্মশান, নগর উপকণ্ঠের ঐতিহাসিক জলাধার দূর্গাসাগর এবং এর আশেপাশের এলাকায় কাজ চলেছে। তবে বেড়েছিলো খরচ। এরই প্রেক্ষিতে নভেম্বরে আবারো টাকা শেষ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় চিত্রায়নের কাজ। পুনরায় অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা শুরু করে উইজার্ড ভ্যালী।

সাংবাদিকদের তারা জানিয়েছে, শিগগিরই চলচ্চিত্র নৃ’র ‘টাইটেল স্পন্সর’ ও ‘কো-স্পন্সর’ চূড়ান্ত করা হবে। নতুন কো-প্রডিউসারও খোঁজা হবে। এছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছেও সহায়তা চাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

নৃ ইউনিটের সদস্যরা জানান, তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হলেও কেউই হতাশ নন। তাদের প্রত্যাশা, ‘চলতি মাসের মধ্যেই আর্থিক সঙ্কট কেটে যাবে।

সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মূল্যবোধ জাগানিয়া গল্পের এই সিনেমাটি দ্রুত শেষও হবে। ’

আলাপকালে নির্মাতা রাসেল আহমেদ বলেন, ‘চলচ্চিত্রটি শুরু করেই আমি টের পেয়েছি- এ অঞ্চলে স্বকীয়তা ও নিজস্ব ভাষা শৈলী নিয়ে একটি আন্তর্জাতিকমানের পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র পরিস্ফূটনে রয়েছে বিস্তর প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু সাথে সাথে আমি এটাও বুঝতে পেরেছি- লাগামছাড়া দু:সাহস ও চলচ্চিত্রের জন্য নিজস্ব উৎসর্গ ব্যতিরেকে একটা পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্রের বিকাশ সম্ভব না। তাই জেনেবুঝেই ঝাঁপ দেয়া। প্রতিবন্ধকতাকে পথের অংশ মেনেই আগাচ্ছি।

যাই হোক, অনেকখানি পথ পেরিয়ে শেষ পর্যায়ে এসে আমাদের আত্মবিশ্বাসের কোনো অভাব আছে, এটা কেউ বলতে পারবে না। ’

রাসেল আরো বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের ভিজুয়াল সম্পাদনার কাজ অনেকখানি এগিয়েছে। সাউন্ড ডিজাইন, গানসহ পূর্ণাঙ্গ মিউজিক ডিজাইনের কাজও চলছে। কালার গ্রেডের জন্য ইংল্যান্ডের এক কালারিস্টের সাথে কথাবার্তা চলছে। সবকিছু মিলিয়ে চলচ্চিত্র নৃ’র কাজ থেমে নেই।

অনেক প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এগিয়ে চলছি আমরা। ’

গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের রহমতপুরে নৃ’র চিত্রায়ন শুরু হয়। প্রায় দেড়শো মিনিটের মত হবে এ চলচ্চিত্রের শরীর। চলচ্চিত্রের মুখ্য চরিত্র বিশুর ভূমিকায় অভিনয় করছে বরিশাল জিলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ইয়াসিন। পুরানো এ নগরের কাউনিয়া এলাকার মহাশ্মশানের দুই চণ্ডাল দিলীপ কুমার পাল ও রাঁধা বল্লভ শীল ছাড়াও এতে আরো আছেন তাসনুভা তামান্না, সিরাজুম মুনীর টিটু, হিরা মুক্তাদির, এসএম তুষার, দুখু সুমন, হ্যাভেন খান, ওয়াহিদা রহমান আভাসহ শতাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রী।



ওই চণ্ডাল জুটির জীবন দর্শন ও ভাবনা নিয়ে অর্ধযুগ আগে শুরু হওয়া গবেষণার প্রেক্ষিতে প্রসূত এ চলচ্চিত্রে বরিশালের মাধবপাশার ঐতিহাসিক জলাধার দূর্গাসাগরের প্রচলিত মিথ আর বাংলার সহজিয়া, দরদিয়া এবং মরমিয়া বোধ মাখামাখি হয়েছে। গণমানুষের কাছে এ চলচ্চিত্রের বার্তা পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে গত জুনে আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে নির্মাতা দাবি করেছিলেন, বাবা-মা-দাদা-দাদী-মামা-চাচা-খালা-খালু-বন্ধু-বান্ধব-আরশী-পরশী-আন্ডা-বাচ্চাসহ পরিবারের সকলকে নিয়ে হলে গিয়ে বাদামভাজা চিবুতে চিবুতে নিশ্চিন্তে উপভোগ করার মত সিনেমা হবে নৃ।

নৃ চিত্রায়নে তিনটি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। মূল চিত্রগ্রাহক- ড্যানিয়েল ড্যানি। সাথে আছেন ক্যামেরা সঞ্চালক শ খি আ ঈয়ন ও দঈত আন্নাহাল।

সিনেমার শিল্প নির্দেশক হিসাবে আছেন থিওফিলাস স্কট মিল্টন। শব্দগ্রহণ করছেন- এমআই সাইফ। পোষাক ও পরিচ্ছদ দেখছেন শাহরিয়ার শাওন। এছাড়া সম্পাদনার দায়িত্বে আছেন- সামির আহমেদ।



প্রাসঙ্গিক তথ্য
মনুষ্যত্ব রক্ষার যুদ্ধে বোধ প্রকাশের সবচেয়ে প্রভাবসঞ্চারী মাধ্যম চলচ্চিত্রকে হাতিয়ার হিসাবেই বেছে নিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থিম থিয়েটার উইজার্ড ভ্যালী।

তারা মনে করে, এ দেশের সিনেমাও একদিন পৃথিবী শাসন করবে। গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে বরিশালের বিএম কলেজ এবং কলেজ রোড (বর্তমানে আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ সড়ক) কেন্দ্রীক সৃজনশীল আড্ডায় উইজার্ড ভ্যালীর জন্ম। স্থানীয় প্রযুক্তির সাহায্যে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, নাটিকা বা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পাশাপাশি এ বিষয়ক তাত্ত্বিকচর্চায় সীমাবদ্ধ ছিলো এর প্রাথমিক কর্মকা-। প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১০ সালে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলে সিনেমা নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এটি নিবন্ধিত হয়।

কে এই রাসেল আহমেদ
বরিশাল নগরীতেই ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ে রাসেল আহমেদের জন্ম।

নগরীর কলেজ রোড এলাকাতে বেড়ে উঠেছেন কর্কট রাশির এ জাতক। প্রগতিশীল মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসাবে অনুশাসনের পাশাপাশি পেয়েছেন এক সুস্থ সাংস্কৃতিক বলয়। বই পড়া আর আঁকাআঁকির অভ্যাস হয়েছে তখনই। খেলাঘর করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছে মঞ্চ নাটকের সাথে। কৈশোর কেটেছে ব্যান্ড মিউজিক আর সাহিত্য পত্রিকা করে।

তারুণ্যে এসব চর্চা অব্যাহত রেখেই মেতেছেন ক্যামেরা-কম্পিউটার নিয়ে। ফটোগাফী-ভিডিওগ্রাফীর পাশাপাশি এডিটিং, গ্রাফিক্স ও এনিমেশন চর্চা করেছেন, করিয়েছেন। এরই ফাঁকে দৈনিকে শিল্প নির্দেশক ও সাংবাদিক হিসাবেও কাজ করেছেন। সংগঠক আর আয়োজকের ভূমিকায়ও তাকে দেখা গেছে বহুবার। ক্লাবের কাজ থেকে শুরু করে ফিল্ম ফ্যাস্টিভেল আয়োজন, সব জায়গাতেই সবচে কাজের মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

এসব করতে করতেই কখন যে চলচ্চিত্র নির্মাণের ভূতটা রাসেলে মাথায় চেপে বসেছে, তা কেউ জানতেও পারেনি। বরিশালে বসেই তিনি নিভৃতে অডিও-ভিজুয়াল কাজের উপযোগী একটি দল গড়ে তুলতে শুরু করেন। যাত্রা শুরু করে উইজার্ড ভ্যালী।

২০১০ সালের শুরুতে রাসেল বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় আসেন। তিনি জানতেন, টেলিভিশনে প্রচারিত নাটক বা টেলিফিল্মে বাণিজ্যের চাপে শিল্প ভাবনা আড়ষ্ট হয় যায়।

তবুও চলচ্চিত্র নির্মাণের আগে নিজেকে যাচাইয়ের জন্যই নির্মাণ করেন নাটক ‘ফ্লাই-ওভার’। দেশ টিভিতে প্রচারিত এ নাটকটি প্রচুর প্রশংসা কুড়ালেও তিনি আর নাটক নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হননি। মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে নিজেকে এবং নিজের টিমকে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করেন। চলচ্চিত্র চর্চার সাথে ক্যামেরা, রিগস, লাইটস ও এডিট প্যানেল সমৃদ্ধ স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ইউনিট তৈরি করেন। অবশেষে ২০১২ সালে তিনি নৃ’র কাজে হাত দেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।