আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামী ব্যাংক, সরকার, জাতীয় সংগীত ও উদীচি - সমাধান কোন পথে

২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সরকারী-বেসরকারী প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সততা ফিরে আসুক, এটাই আমার কামনা!!

ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে অনেকেই অভিযোগ করেন যে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ জা’মাআতে ইসলামীর আর্থিক সাহায্যকারী এবং যুদ্ধপরাধীদের রক্ষা করতে সদা ব্যস্ত । তাদের এ দোষারোপের সত্যতা কতটুকু তা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের গঠনতন্ত্র, তাদের আর্থিক যোগান, তাদের কর্মকান্ড বিশ্লেষণ, বাংলাদেশের উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংকের ভূমিকাকে খতিয়ে দেখলে অনেকটা পরিষ্কার হবে । ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে দেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকা এবং জা’মাআতে ইসলামীর সাথে আর্থিক লেনদেনের বিশেষ করে জামাআতে ইসলামীকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার সন্দেহ অনেকদিনের পুরানো ।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যালে দন্ড পাওয়া আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদানের পর ৫ই ফেব্রুয়ারী গঠিত হয় আলোচিত গণজাগরণ মঞ্চ । এ মঞ্চ থেকে দাবী করা হয় কাদের মোল্লাসহ প্রত্যেক মানবতাবিরোধী অপরাধীকেই সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে ।

শাহবাগ অবস্থিত এ গণজাগরণ মঞ্চে অনেকগুলো স্লোগান দেখা হয় । সেখানে একটি উল্লেখযোগ্য স্লোগান ছিল, ‘ইÑতে ইসলামী ব্যাংক তুই রাজাকার তুই রাজাকার’ । গনজাগরণ মঞ্চের এ ধরণের স্লোগানের পর সারা দেশব্যাপী গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থকরা ইসলামী ব্যাংকের অনেকগুলো শাখায় ভাংচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেয় । অনেকগুলো এটিএম বুথে হামলা চালিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের কথাও শোনা গেছে । ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে জা’মাআতে ইসলামীকে সাহায্য করার পক্ষান্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সাহায্য করার যে অভিযোগ করা হয়, সে অভিযোগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহনের আগে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা পরবর্তী তাদের কার্যক্রমের বিশ্লেষণ করা জরুরী ।



ইসলামী শরীয়্হা অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার দীপ্ত শপথ নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৩ ই মার্চ ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয় । ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড একটি যৌথ প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক ব্যাংক যার ৩৬.৯১% স্থানীয় এবং ৬৩.০৯ %বিদেশী বিনোয়োগারদের টাকায় চলে । সেবার উচ্চ মানের কারনে মাত্র ৩২ বছরের মধ্যে ২৮০ টি শাখা ( ২৫০টি শাখা এবং ৩০টি এসএমই/কৃষি শাখা) নিয়ে এ ব্যাংকটি দেশের বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ ব্যাংকে পরিণত হয়েছে । ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ লিমিটেড এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জ লিমিটেড এর তালিকাভূক্ত কোম্পানী যার অনুমোদিত মূলধন ২০,০০০ মিলিয়ন টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৪,৬৩৬.২৮ মিলিয়ন টাকা ।

উল্লেখ্য যে, ইসলামী ব্যাংকের ৫% শেয়ার এর মালিক বাংলাদেশ সরকার ।

বাকি শেয়ার সাধারণ শেয়ার আকারে শেয়ার বাজারে ছেড়ে দেয়া যেগুলোর মালিক সকল ধর্মের মানুষ । এমনকি অনেক নাস্তিকও ইসলামী ব্যাংকের সাধারণ শেয়ারের মালিক হয়েছে । অথচ কোন রাজনৈতিক দলের হাতে ১% শেয়ারও নেই । গ্রামীনফোন এর পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্পোরেট ট্যাক্সপেয়ার হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক । প্রতি বছর কয়েকশো কোটি তারা সরকারকে ট্যাক্স দেয় ।

যে টাকা দিয়ে সরকার দেশের রাস্তাঘাট, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো উন্নয়ণ করে । এমনকি যারা ইসলামী ব্যাংককে দেশের মানবতাবিরোধীদের সাহায্যকারী হিসেবে উল্লেখ করে মাঠ গরম রাখে তাদের সন্তানও যদি উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে তবে তারাও ইসলামী ব্যাংক পদত্ত ট্যাক্সের টাকায় শিক্ষিত হচ্ছে ।


দেশের নিটওয়্যার সেক্টরে মোট বিনিয়োগের ২৫% ইসলামী ব্যাংক একাই করে । বাকী সব ব্যাংক মিলে ৭৫% ! দেশের মোট এসএমই লোনের ১৭% ইসলামী ব্যাংক একাই দেয় । দেশের মোট রেমিটেন্স এর ২৮% ইসলামী ব্যাংক এর মাধ্যমে আসে ।

দেশের সব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর অডিট নজরদারীতে আছে । এই অডিট এর মাধ্যমেই হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের কেলেংকারী ধরা পড়েছে । অন্য ব্যাংকে একবার অডিট হলে ইসলামী ব্যাংকে তিনবার অডিট হয় । অডিট ফাঁকি দিয়ে ১টি টাকাও কোন রাজনৈতিক দলকে দেয়ার সুযোগ ইসলামী ব্যাংকের নাই । ইসলামী ব্যাংক অনেকগুলো সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে ।

তার মধ্যে- ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী, কমিউনিটি হাসপাতাল, মনোরম ঃ ইসলামী ব্যাংক নৈপূণ্য ও ফ্যাশন ঘর, সেবা কেন্দ্র, ইসলামী ব্যাংক প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট, ইসলামী ব্যাংক আন্তর্জাতিক স্কুল ও কলেজ, ইসলামী ব্যাক ফিজিওথেরাপী ও পক্ষাঘাত পূনর্বাাসন কেন্দ্র, বাংলাদেশ সংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।

ইসলামী ব্যাংকের এতসব উন্নয়ণ কর্মকান্ডের পরেও সম্প্রতি দেশের অন্যতম বৃহৎ বামপন্থী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী উদীচি ঘোষণা করেছে,‘যদি সরকার ইসলামী ব্যাংকের টাকা ফেরৎ না দেয় তবে তারা প্যারেড ময়দানের জাতীয় সংগীত গাইতে যাবে না’ । উদীচির এ ঘোষণায় অনেকেই আশ্চার্য হয়েছে । ২০০৪ সালে যশোরে উদীচির অনুষ্ঠানে জঙ্গি কর্তৃক বোমা হামলার পর এমনিতেই তারা প্রতিশোধের জন্য মূখিয়ে আছে । ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের উপর জা’মাআতকে সহযোগীতা করার যে দোষ চাপানো হয়েছে, সেই পথ পরিক্রমায় উদীচিও ইসলামী ব্যাংককে দোষারোপ করে চলছে ।

কেননা ২০০৪ সালে উদীচির উপর হামলার সময় বিএনপি-জা’মাআত জোট ক্ষমতায় ছিল । উদীচির উপর চালানো হামলার পর তারা দাবী করেছিল, এ হামলার পিছনে ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীর হাত রয়েছে । তারা জ’ামাআতে ইসলামীর দিকেও ইশারা করেছিল । যারাই এ ধরনের জঘন্য কাজ করেছে প্রকৃতার্থে তারা ইসলামের মূল শিক্ষা অর্জন করতে পারে নি । কেননা ইসলাম কোন ধরনের হিংসাত্মক কিংবা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের প্রশ্রয় দেয় না ।

বোমা হামলার কিছুদিন আগে উদীচি শিল্পী গোষ্ঠীও চুড়ান্তসীমা অতিক্রম করেছিল । সর্বকালেরর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামনব মানবতার মুক্তির দিশারীকে নিয়ে তারা কটুক্তি করেছিল । এমনকি ইসলাম ধর্মকেও তারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিল । ) (পরে দেখা গেল-হামলাকারী জামায়াত নয় জঙ্গিগোষ্ঠি এবং তারা মিথ্যাবাদীই প্রমাণিত হল। তাহলে এবারেও কি তারা সত্যদাবী করছে নাকি আগের মতি সন্দেহ করছে শুধু ইসলামী লেবেল থাকায়!! )

বিতর্ক বাড়াতে থাকলে চুনইগাংমের মত বাড়তেই থাকবে ।

কোন বিতর্কই যেন আসন্ন মহৎ অর্জনকে ব্যর্থ করার অপচেষ্টা করে সফল হতে না পারে সে ব্যাপারে সরকার এবং দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সজাগৃদষ্টি রাখতে হবে । মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার করতে যে সরকার বদ্ধপরিকর তারা ইসলামী ব্যাংক প্রদত্ত টাকার চেক গ্রহন করার সময় মিডিয়ার সামনে ভ্রুকুঞ্চিত করেনি । সরকার যদি মনে করত ইসলামী ব্যাংক প্রকৃতপক্ষেই মানবতাবিরোধী এবং জা’মাআতের আর্থিক সাহায্যদাতা তবে বিনা প্রশ্নে বলা যায় সরকার তাদের টাকা গ্রহন করত না ।

সরকার উদীচির চেয়ে কয়েকগুনে বেশি জামাআত বিদ্বেষী । মানবতা বিরোধীদের কথা না হয় বাদ দিলাম ।

আসন্ন সমস্যা সমাধানে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে । কেবল সরকারের মধ্যস্থতায় এ সমস্যার সমাধান সম্ভব । সরকারকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে যেমন উদীচির অনেক সদস্য আছে তেমনি ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শুভানুধ্যায়ীর সংখ্যা কম নয় । ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে লিমিটেডের বিরুদ্ধে যদি ভবিষ্যতে জা’মাআতকে অর্থ সহায়তা করার কোন প্রমান পাওয়া যায় তবে তখন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে । কিন্তু যতদিন সেটা না পাওয়া যায় ততদিন ইসলামী ব্যাংকের সকল টাকা দেশের আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে সকল সাধারণ গ্রাহকের টাকা ।



সুতরাং ইসলামী বাংক লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করার জন্য যে টাকাটা স্পন্সর করেছে সেটা ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব টাকা নয় । এ টাকায় যারা মানবতা বিরোধীদের গন্ধ পেয়ে দেশের এক বিশাল অর্জনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে তারা নিঃসন্দেহ অত্যন্ত গর্হিত কাজ করবে । কাজেই উদীচির মত আরও যারা জা’মাআতের টাকা দিয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য নাক সিঁটকাচ্ছেন তারা কোন বিচারেই বুদ্ধিমানের কাজ করছেন না ।
(সংগৃহীত)



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.