আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনাদর অবহেলায় মিন্টো রোডের সেই লাল বাড়ি

দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে অনাদর অবহেলায় পড়ে আছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার জন্য বরাদ্দ রাজধানীর মিন্টো রোডের আলোচিত ২৯ নম্বরের লাল বাড়িটি। ১৯৯১ সালের বিএনপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম বিরোধী দলের নেতা হিসেবে মিন্টো রোডের এ বাড়িতে ওঠেন। টানা পাঁচ বছর কাটান সেখানে। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া প্রধান বিরোধী দলের নেতা হলেও নিজে না থেকে এ বাড়িটিকে তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এখান থেকে চালাতেন। এরপর ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম জিয়া থাকেন এরশাদের দেওয়া ক্যান্টনমেন্টের মঈনুল রোডের বাড়িতে।

আর প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা মিন্টো রোডের এ বাড়িতে না ওঠে থাকেন ধানমন্ডির সুধা সদনে। বাড়িটি বিরোধীদলীয় নেতার জন্য বরাদ্দ থাকলেও ২০০১ সালের পর থেকেই আর কেউই এটি ব্যবহার না করায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় খালি পড়ে আছে। আর বর্তমান প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদও এ বাড়িতে উঠছেন না। তিনি তার গুলাশানের নিজ বাসভবনেই থাকছেন। গতকাল সরেজমিনে মিন্টো রোডের বাড়িটিতে দেখা যায়, বিশাল খোলামেলা জায়গায় বরাদ্দ দোতলা বাড়িটির একেবারেই বেহাল অবস্থা।

দূর থেকে দেখলে মনে হয় না এটি কোনো ভিআইপির বাড়ি। প্রবেশমুখে ছোট্ট একটি গেট। চাইলে যে কেউ অনায়াসে আসা-যাওয়া করতে পারে। বাড়ির গায়েও নেই কোনো চিহ্ন। নেমপ্লেটের পরিবর্তে কংক্রিট দিয়ে হাতে লেখা '২৯'।

আশপাশে জিজ্ঞেস না করলে এটি যে বিরোধী দলের নেতার বাড়ি বোঝার উপায় নেই। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে অপরিচ্ছন্ন সিকিউরিটি বঙ্। বঙ্রে ভেতরে ময়লার স্তূপ। কোনো দরজা নেই। সামনে এগোতেই দেখা যায়, দুই তলা ভবনে ওঠার সিঁড়িতে শুয়ে আছে চার কুকুর।

ঘুরে দেখা যায়, ভেতরে ধুলোবালিতে গাছপালা, দোতলা বাড়ি, বাড়ির বিশাল আঙিনা ও আশপাশের পরিবেশ নোংরা হয়ে উঠেছে। কুকুরের দৌড়াদৌড়ি। একপাশে কোনায় সবজি চাষ। খেত-খামার করে খায় এখানে বসবাসরত বাড়িটির কেয়ারটেকার, মালী ও সুইপার পরিবার। পিডবি্লউডির স্টাফ ক্লিনার কামাল হোসেন জানান, একজন প্লাম্বার, দুজন গার্ড, দুজন ঝাড়ুদার আছেন।

মোট ছয়টি পরিবার বাস করছে। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি সব সুবিধা রয়েছে তাদের। তিনি জানান, এ বাসায় থেকেই তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা তার মেয়ে পুতুলকে বিয়ে দিয়েছেন। তালাবদ্ধ দুই তলা বাড়িটির ভেতরের কক্ষগুলো সর্বশেষ কবে পরিষ্কার করেছিলেন তা বলতে পারেননি ক্লিনার সরস্বতী দাস। বাড়ির পেছনে অবস্থিত একটি বাসায় দীর্ঘদিন ধরে থাকে এখানকার সুইপার সরস্বতীর পরিবার।

তার ছেলে সাধন দাশ বলেন, ৩০ বছর ধরে আমরা এখানে আছি। ১৩ বছর ধরে বিরোধী দলের বাড়িটি এভাবে বন্ধ অবস্থায় খালি পড়ে আছে। গণপূর্ত বিভাগ এটি দেখাশোনা ও সংস্কার কাজ করে থাকে। ১৫ দিন পরপর বাড়িটির সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না দেখা হয়। এখানকার মালী, সুইপাররা সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের দাবি করলেও বাড়িটির চেহারা ভিন্ন।

বাড়ির দেয়ালে চারপাশে জমে আছে ময়লা-আবর্জনা। ভবনের দরজায় সাধারণ তালা ঝোলানো হয়েছে। দেখলে মনে হয়, এখানে কেউ রাত কাটায়। সন্ধ্যা হলেই বাড়িটিতে নেমে আসে ভুতুড়ে পরিবেশ। খবর নিয়ে জানা গেছে, বিরোধী দলের নেতার জন্য বরাদ্দ এ বিশাল বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গণপূর্ত অফিস থেকে নিয়মানুযায়ী একজন মালী ও একজন সুইপার থাকার কথা।

কিন্তু দেখা গেছে তার বিপরীত চিত্র। ১৩ বছর ধরে খালি পড়ে থাকলেও এখানে গণপূর্ত অধিদফতরের স্থানীয় সার্কেলের সাইট সুপারভাইজারের নেতৃত্বে মালী ও সুইপারের তত্ত্বাবধানে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করে। বাড়িটির পেছনে রান্নাঘর দখল করে থাকছে একটি পরিবার। সুইপার সরস্বতীর বাসার পাশে টিনশেড বেশ কয়েকটি কক্ষ অন্যদের ভাড়া দেওয়া হয়েছে। পুলিশের জন্য নির্ধারিত বাসাটিও ভাড়াটিয়াদের দখলে।

এভাবে মালী ও সুইপার ছাড়া এখানে কেউ থাকার কথা না থাকলেও প্রায় ৫-৬টি পরিবারকে বসবাস করতে দেখা গেছে। তবে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এসব অবৈধ বসবাসরত পরিবার বিরোধী দলের নেতার বাড়ি হতে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছে। ১৩ বছর ধরে তাদের অবৈধ বসবাসের কারণে সরকারের বড় অঙ্কের টাকা খরচ হচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পিডবি্লউডির উপসহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানার অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি।

তার মোবাইল নম্বর চাইলে পিয়ন কোরবান আলী বলে স্যারের মোবাইল নম্বর দিতে নিষেধ রয়েছে। শেষে রমনা গণপূর্ত উপ বিভাগ-১ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত উল্লাহর মুঠোফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে রওশন এরশাদ এ বাড়িটি অফিস হিসেবে ব্যবহারের চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে শপথ নেওয়ার পরই এ নিয়ে কথা হয়েছে দলের সংসদীয় ফোরামে। জাপার নির্বাচিত নেতারা তাদের নেত্রী রওশনকে এ বাড়িটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। মূলত দলের কার্যক্রম সঠিকভাবে মনিটরিং করতে সুবিধা হবে এ যুক্তিতে তারা রওশনকে এ পরামর্শ দিয়েছেন।

তবে বর্তমান হালহকিকত জেনে রওশনও এ বাড়ি ব্যবহার করতে চাইছেন না। হেয়ার রোডের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা বা সার্কিট হাউস রোডের সুগন্ধায় রওশন এরশাদ উঠুক এমনটাও চান দলীয় সংসদীয় ফোরামের সদস্যরা। কিন্তু রওশন এরশাদ গুলশানের নিজ বাসভবন ছাড়তে চাইছেন না। জানতে চাইলে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের মিন্টো রোডের বাসভবনে ওঠার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি গুলশানের বাসভবনে বিরোধীদলীয় নেতার সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।

মিন্টো রোডের বিরোধী দলের নেতার এই বাসভবনটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। সেগুলোর মেরামত করা হলে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন।

 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।