আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিয়ানমার পুরো সীমান্তে বসাচ্ছে কাঁটাতার

বাংলাদেশে যেখানে অবৈধভাবে প্রায় পাঁচ লাখ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী বসবাস করছে এবং বারবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না, সেখানে মিয়ানমার এবার উল্টো বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগ এনেছে। মিয়ানমারের পার্লামেন্টে এ অভিযোগ উত্থাপনের পর দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তাতে সুর মিলিয়েছে। প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের মুখপাত্র বলেছেন, বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুরো সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার পাশাপাশি নতুন চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে।

মিয়ানমারের বার্তা সংস্থাগুলোর তথ্য মতে, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্য থেকে নির্বাচিত সদস্য খি স ওয়াই মিয়ানমারের পার্লামেন্টে নতুন মাত্রার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। খি স ওয়াই পার্লামেন্টে দাবি করে বলেছেন, 'সীমান্তে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে বহু অনুপ্রবেশ ঘটছে। যদিও মিয়ানমারের পশ্চিমাংশে বাংলাদেশ-রাখাইন রাজ্যের বেশ কিছু স্থানে সীমান্ত বেড়া আছে, কিন্তু সেগুলো অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে পারছে না। এ অঞ্চলে বাংলাদেশের মানুষ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।' মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের দফতর রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিকল্পনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ও মিয়ানমারের সহকারী তথ্যমন্ত্রী ইউ ইয়ে টাট বলেছেন, 'রাখাইনের স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেই নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নও করবে রাখাইন রাজ্য সরকার। আগের মতো কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে এর নিয়ন্ত্রণ করা হবে না। স্থানীয় প্রশাসন পুলিশকে নিয়ে এ কাজ করবে।' মিয়ানমারের এ ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, মিয়ানমার তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা 'বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের' যে ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে এসেছে তা বিশেষ উদ্বেগজনক। এতদিনের অমীমাংসিত রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে যখন আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে তখন মিয়ানমারের এ বক্তব্য পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। দীর্ঘদিন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কাজ করা ড. ইমতিয়াজ বলেন, 'এখনই রাষ্ট্রীয়ভাবে বক্তব্য প্রদান, তথ্য উত্থাপন বা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। না হলে নিকট ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক কোনো পর্যায়ে নেগোসিয়েশনের (সমঝোতা) চেষ্টা হলে সেখানে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে তাদের দেশে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের অভিযোগ উত্থাপন হতেই পারে।' অন্যদিকে মিয়ানমারে বাংলাদেশের দূতাবাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা টেলিফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বিষয়টি সম্পর্কে দূতাবাস অবগত আছে। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যেই তা জানানো হয়েছে। বিস্তারিত খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলা হবে। বাংলাদেশিদের মিয়ানমারে অনুপ্রবেশের সুযোগ বা আগ্রহ কতটুকু খুঁজতে কঙ্বাজার-টেকনাফ অঞ্চলের প্রশাসন ও বিজিবির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশিদের মিয়ানমারে যাওয়ার পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। কিছু চোরাকারবারির অবৈধভাবে যাওয়া-আসা আছে। কিন্তু তাকে সেই অর্থে অনুপ্রবেশ বলা যায় না। নাফ নদী দিয়ে এখনো মিয়ানমারের নাগরিকরা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। সরকারি হিসাব মতে, প্রায় ২৭ হাজার রোহিঙ্গা স্বদেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। টেকনাফের লেদা এবং উখিয়ার কুতুপালং আন-রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা অবৈধভাবে অবস্থান করছে। এ ছাড়া কঙ্বাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ বসতি গড়ে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.