আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় ইসি

ফের বিতর্কের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। উপজেলা নির্বাচনে ঠিকঠাকভাবে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, সমন্বয়হীনতা, ব্যাপক সহিংস ঘটনাসহ নানা কারণেই ভয়াবহ ইমেজ সংকটে পড়েছে ইসি। এবারের নির্বাচনে ব্যালট বাঙ্ ছিনতাই, জাল ভোট, সংঘাত-সহিংসতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ইসি দেশে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করলেও বর্তমান কমিশন তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

বলা হচ্ছে- বর্তমান কমিশন নিজেই নিজেকে বিতর্কের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতার পেছনে কমিশনের উদাসীনতাকেও দায়ী করছেন অনেকে। এ ছাড়া ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোট ও সংঘাতের এ স্থানীয় সরকার নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ডিসি ও এসপিরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা না মেনে ক্ষমতাসীন সরকারের জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নির্দেশমতে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে কমিশন প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করা সম্ভব। বর্তমানে নির্বাচনী অনিয়ম আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইসি আরও দায়িত্বশীল হলে নির্বাচন সুন্দর হতো। তবে বর্তমান ইসি প্রশাসনকে সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিলে নির্বাচন সুষ্ঠু হতো বলে মনে করেন সাবেক এই কমিশনার। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতাকে অনেকটাই দায়ী করছেন।

তিনি বলেন, প্রশাসনকে কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং দায়িত্ব পালন না করলে কী হবে তা ইসির পক্ষ থেকে সঠিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া উচিত ছিল। অন্যদিকে তিনি বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম চলতে থাকলে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণের মধ্যে যে আস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা নষ্ট হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কমিশনকে আরও দায়িত্বশীর হওয়ার পরামর্শ দেন সাবেক এই কমিশনার। নির্বাচনী সহিংসতায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারের (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পুরো সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। জনগণের মধ্যে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

এটা নিয়ে শুধু কমিশন নয় পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বিতর্কের মুখে পড়ছে। জনগণের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যে আস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তাও হারিয়ে যাচ্ছে। এমনটা চলতে থাকলে একসময় মানুষ ভোট দিতেই যাবে না। নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতার জন্য তিনি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে ইসির কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা পরিষ্কার করা উচিত ছিল।

নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের একটা জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকা উচিত। এ ছাড়া কমিশনের তরফ থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কঠোরভাবে বলা হলেও মাঠ পর্যায়ে তা হয়নি। কেন হলো না তা খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দেন এই সাবেক কমিশনার। এ ছাড়া সারা দেশে উপজেলা নির্বাচন একই দিনে না করে ধাপে ধাপে করাও ঠিক হয়নি বলে মনে করেন তিনি। ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেছেন, ইসির হাতে যে ক্ষমতা আছে, তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করার ক্ষেত্রে তারা জাতির কাছে দায়বদ্ধ।

এ ক্ষেত্রে তারা নির্বাচনী সংঘাত-সহিংসতার দায় এড়াতে পারবে না। এ নির্বাচনকে দলীয় রূপ দেওয়ায় সংঘাত বেশি হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সালের বিভিন্ন নির্বাচনে কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও এ উপজেলা নির্বাচনে প্রায় ৮-১০ জনের প্রণহানি ঘটেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান আর বিতর্কের অবসান না ঘটলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে না।

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সংঘাতের দায় তাদেরই নিতে হবে। এখন নির্বাচন সুষ্ঠু না করতে পারার প্রশ্নের তীর তাদের দিকেই যাচ্ছে। স্বাধীন এ প্রতিষ্ঠানটির যে অধঃপতন হয়েছে তা প্রকট আকারে ধরা পড়ছে। এটা অশনি সংকেত।

অন্যদিকে প্রশাসন পক্ষপাতিত্বে যে সহযোগিতা করছে এ ক্ষেত্রে তাদেরও অধঃপতন হচ্ছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়াটাই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তবে সহিংসতা রোধে কমিশন কেন দায়িত্ব পালন করছে না তা বোধগম্য নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। অন্যদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ বলেছেন, নির্বাচনের মান বাড়ছে না। তবে রাজনৈতিক দলগুলো স্থানীয় নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত করেছে।

স্থানীয় নির্বাচনকে বড় রাজনৈতিক দল যুদ্ধের লড়াই মনে করে। আর বড় দুই দল মনে করে জনপ্রিয়তায় একের চেয়ে, কে বেশি তা প্রমাণ করতে হবে স্থানীয় নির্বাচনেই। তিনি বলেন, এ জন্য উপজেলা নির্বাচনের প্রতিটি ধাপে দুই দল অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ কারণে সহিংসতা বাড়ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো স্থানীয় নির্বাচনকে দলীয়করণ তথা দলীয় রূপ দেওয়ায় সংঘাত তীব্র হচ্ছে।

রাজনৈতিক দলের কোন্দল প্রকাশ পাচ্ছে। তৃণমূলে নেতৃত্ব তৈরির পথ বন্ধ হচ্ছে। তবে তিনি মনে করেন ইসি যদি রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিত তবে নির্বাচন দলীয়করণমুক্ত হতো। পেশিশক্তি প্রয়োগের প্রবণতাই সহিংসতার জন্য দায়ী : প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে তেমন সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে সহিংসতা বেড়েছে। এ জন্য প্রার্থীদের পেশিশক্তি প্রয়োগের প্রবণতাই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ।

গতকাল ইসি সচিবালয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। সবার আশঙ্কা ছিল সেনাবাহিনী নিয়োগ না করলে সহিংসতা ঠেকানো যাবে না। আমরা শুধু সেনা নয়, সব বাহিনীকেই মোতায়েন করেছিলাম। এর পরও কিছু কিছু জায়গায় সহিংসতা হয়েছে।

এর জন্য প্রার্থীদের পেশিশক্তি প্রয়োগের প্রবণতাই দায়ী।

সংরক্ষিত দুই মহিলা আসনের তফসিল ঘোষণা

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত (মহিলা) দুই আসনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৪৮ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বাকি দুই আসনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। গতকাল বিকালে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তফসিল দেওয়া হয়। তফসিল অনুযায়ী ১ এপ্রিল সমর্থক ও প্রস্তাবকের স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

২ এপ্রিল যাচাই-বাছাই। ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকলে ভোট গ্রহণ ১৭ এপ্রিল। এর আগে ৫০টি আসনের জন্য ৫০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলে যাচাই-বাচাইয়ে দুজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। তবে পুনঃ তফসিলের কারণে বাতিল দুজন এবারও প্রার্থী হতে পারবেন।

কেননা ইতোমধ্যে তারা বিল পরিশোধ করেছেন।

আফিল-মনিরুলের শুনানি বৃহস্পতিবার : দশম সংসদ নির্বাচনে সরকারদলীয় দুই নির্বাচিত প্রার্থী শেখ আফিলউদ্দিন ও মনিরুল ইসলামের বক্তব্য বৃহস্পতিবার শুনবে নির্বাচন কমিশন। গতকাল এ দুজনকে শুনানির বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে জানান ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (আইন) মোশাররফ হোসেন। ২৭ মার্চ বেলা ১১টায় ইসি কার্যালয়ে তাদের শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধ তদন্ত কমিটিতে প্রমাণিত হওয়ায় যশোর-১ ও যশোর-২ আসনের এ দুই নির্বাচিত প্রার্থীর গেজেট প্রকাশ আটকে রয়েছে।

তারা আদালতের শরণাপন্ন হলে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে নিষ্পত্তি করার আদেশ দেওয়া হয়। ইসি তাদের বক্তব্য শুনে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.