আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিনদেশের পতাকা, ভিনদেশে প্রতিক্রিয়া, প্রথম আলোর সংবাদ নিরপেক্ষতা

গ্যালারির অগুণতি দর্শকের হাত, গাল, বুক, পিঠ আর জামায় ভর করে পাকিস্তানী পতাকা উড়ে। স্বাধীনতার মাসে, পাকিস্তানীদের চালানো গণহত্যা সূচনার মাসে এ দেখে জীবিত অনেকেরই তেমন প্রতিক্রিয়া হয় না, তবে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো ত্রিশ লাখ শহীদ আর চার লাখ ধর্ষিতার দীর্ঘশ্বাস মনুষ্যত্বের ছিটেফোঁটা থাকলেই টের পাওয়া যায়। একটা পুরো দেশতো আর অমানুষে ভরে যেতে পারে না, তাই স্বজাতির রক্তঋণ অস্বীকারকারী কুলাঙ্গারদের ভীড়েও বাংলাদেশের মাঠে পাকিস্তানী পতাকা উড়ানোয় প্রবল প্রতিবাদ জেগে উঠে দেশ জুড়ে। তড়িৎ ব্যবস্থা নেয় বিসিবি, খেলার মাঠে বাংলাদেশীদের জন্য ভিনদেশের পতাকা উড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়। আমাদের তীব্র কষ্ট আর অপমান বোধের কিছুটা উপশম হয়।

একটা স্বাধীন দেশে পতাকা উড়ানোর নিয়ম আছে, বাংলাদেশের পতাকা আইনে বাংলাদেশের নাগরিকের জন্য ভিনদেশের পতাকা উড়ানো নিষিদ্ধ। নিজের সার্বভৌমত্ব আর আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য একটা দেশ কেমন ব্যবস্থা নেবে সেটা সে দেশের নিজস্ব এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাও নানা দেশ, নানা লোক, নানা কারণে প্রতিক্রিয়া জানাবেই। এবার দেখা যাক বিসিবি'র এই সিদ্ধান্তে ভারত ও পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রথম আলো'র সংবাদ[১]। শিরোনামঃ "বিসিবির পতাকা নিষেধাজ্ঞায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ভারত-পাকিস্তানে"।

শিরোনাম দেখে আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ওদের ক্ষুব্ধ হওয়ার কী আছে, আমরা তো ওদের পতাকার অবমাননা করিনি!

বিস্তারিত জানতে ভিতরে গেলাম। প্রথমেই পাকিস্তানী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াগুলো পড়ার চেষ্টা করলাম।

পাকিস্তানের ক্রিকেট কিংবদন্তি জাভেদ মিয়াঁদাদ এএফপিকে বলেছেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্তে খুবই বিস্মিত হয়েছি। ক্রিকেটের মূল দিকটি হচ্ছে খেলোয়াড়ি চেতনা। এ সিদ্ধান্তে খেলোয়াড়দের চেতনা নষ্ট হবে।

’ পাকিস্তানের আরেক সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত বিসিবি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে। কারণ এটি অযৌক্তিক। আইসিসি নিশ্চয়ই এর ব্যাখ্যা চাইবে। ’ ৯০ টেস্টে খেলা ইউসুফ অবশ্য জানিয়েছেন, প্রতিবার বাংলাদেশে এসে উষ্ণ অভ্যর্থনাই পেয়েছেন। আরেক সাবেক অধিনায়ক ইউনুস খান পুনর্বিবেচনা করতে বলেছেন এ সিদ্ধান্ত, ‘এটি খেলার চেতনাবিরোধী।

যে কেউ তার প্রিয় দলকে সমর্থন করতে পারে, সেটি আপনি বন্ধ করতে পারেন না। ’

এবার ভারতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াঃ

ভারত-পাকিস্তানের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত সংবাদের নিচে পাঠকদের নানা মন্তব্য-প্রতিক্রিয়ায় ভরে উঠেছে। ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবরে বিস্ত নামের এক পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘এতে কাজ হবে না। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও ভারতের সমর্থক ঠেকাতে ইংল্যান্ড এ রকম কিছু একটা করতে চেয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত এটি একটি খেলাই। বাংলাদেশ মাত্রই বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে শুরু করেছে। ’

একই পত্রিকায় ছদ্মনামে এক পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘এটি মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত! সম্পূর্ণ খেলার চেতনাবিরোধী। জোর করে কোনো দলের প্রতি সমর্থন বন্ধ করতে পারেন না। এটি হাস্যকর!’ ভারতের আইবিএনের খবরে বিনু নামে এক পাঠক লিখেছেন, ‘বাংলাদেশি মূর্খ!’ হারুনুর রশিদ নামের আরেক পাঠক বলেছেন, ‘একে বলে বাকস্বাধীনতা হরণ।

জনতা ইচ্ছেমতো যেকোনো দেশের পতাকা ওড়াতে পারে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা উগ্রবাদী আদর্শের নমুনা। জনতা জেগে ওঠো। অন্যদের অধিকারকে সম্মান করো। সবাইকে দেখাও, বাংলাদেশ উদার মানুষের দেশ।

পাকিস্তানের এক সময়ের শীর্ষ খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ভারতের ইস্ত, বিনু আর নাম না জানা পাঠকের বিরূপ মন্তব্যকে সমান ট্রিটমেন্ট দিয়ে প্রথম আলো'র ভারতে এবং পাকিস্তানে একই রকম প্রতিক্রিয়া হয়েছে বুঝাতে চাওয়ার কারণ কী? প্রথম আলো'র ট্র্যাক রেকর্ড কিন্তু বিসিবি'র ভিনদেশী পতাকা উড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরূদ্ধে প্রথম আলো'র প্রপাগান্ডারি ইঙ্গিত দেয়। প্রথম আলো কি একবার সাহস করে তাদের অবস্থানটা প্রকাশ করবে?

সূত্রঃ
১। প্রথম আলোর সংবাদ

সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।