আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

(Monsanto) মনসানটো নবযুগের ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি?

(জেনেটিক মডিফাইড (বিটি) খাবার নিয়ে তিন পর্বের এই সিরিজ শুরু হচ্ছে পৃথিবীর জিএম বীজ সরবরাহের নব্বই ভাগ যার দখলে সেই মনসানটো কোম্পানি দিয়ে। দ্বিতীয় পর্বে থাকবে বিটি খাবার এবং শেষ হবে গোল্ডেন রাইস বা সোনালী ধান দিয়ে। )
(Monsanto) মনসানটো নবযুগের ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি?
মনসানটো কেমিক্যাল ওয়ার্কস নামটি জন ফ্রান্সিস কুইনি নির্বাচন করেন স্ত্রীর নামে। ১৯০১ সালে মাত্র ৫০০০ ডলার পূঁজি নিয়ে কোম্পানিতে নিযুক্ত করেন সানডোসের এক সময়ের কর্মী সুইস কেমিস্ট লুইস ভেইলন-কে। স্যাকারিন তৈরী করার কাঁচামাল আসতে লাগল কেমিস্ট লুইস ভেইলন-এর আগের কোম্পানি সানডোস থেকে।

তখন স্যাকারিন তৈরী করতে পারত কেবল জার্মানরা। মি. কুইনি নিজের কাজ ছেড়ে আসলেন না। ১৯০৪ সাল থেকে উৎপাদিত হতে লাগল কফিইন এবং ১৯০৫ থেকে ভেনিলিন। কোম্পানিতে যুক্ত হলেন গাষ্টন ডুবইস এবং ইউলেস বেবিয়ে নামের আরো দু’জন সুইস কেমিস্ট। প্রথম তিন বছরে কোম্পানি লস করলেও ১৯০৫ সালে লাভ হল ১০৬০০ ডলার।

লাভ জনক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হল কফিইন। ১৯০৮ সাল থেকে মি. কুইনি আগের কাজে ইস্তফা দিয়ে নিজেই নিজের কোম্পানির হাল ধরলেন। ১৯১৫ সালে কোম্পানির বিক্রি উন্নীত হল এক মিলিয়নে।

১৯২৭ সাল থেকে কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচা শুরু হল। মি. কুইনি ১৯২৮ সালে কোম্পানি বুঝিয়ে দিলেন ছেলে এডগার-কে।

১৯৩৩ সালে কোম্পানির নতুন নাম হল মনসানটো কেমিক্যাল কোম্পানি। ১৯৩৬ সালে মনসানটো কিনে নিলেন থমাস এন্ড হোকভাল্ড ল্যাবরেটরিস। এটাই পরে তাদের কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পরিণত হয়।

১৯৪৪ সাল থেকে আরো এগারটি কোম্পানির সাথে মনসানটো লাইসেন্স ছাড়া আমেরিকান সরকারকে ডিডিটি সরবরাহ করার সুযোগ পেয়েছিল। ১৯৬২ সালে ডিডিটি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়।

চল্লিশের দশক থেকে মনসানটো পিসিবি উৎপাদন করে আসছিল। বর্তমানে ডার্টি ডজন নামে খ্যাত মনসানটো ছাড়া আরো এগারটি কোম্পানি যে বিষ উৎপাদন করতো তা স্টক হোম কনভেনশন নিষিদ্ধ করে বাইশে মে ২০০১। মনসানটো অবশ্য তার আগেই ১৯৯৭৭ সালে ঐ বিষ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। ১৬ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে টেক্সাস সিটিতে মনসানটোর কারখানায় একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা ৫১২ জন।

১৯৪৯ সালে আমেরিকান ভিসকোস এর সাথে জয়েন ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠিত হয় নাইলন সূতা তৈরীর উদ্দেশ্য। নতুন শাখার নাম কেমস্ট্রান্ড। ১৯৬১ সালে জয়েন ভেঞ্চারের আমেরিকান ভিসকোসের অর্ধেক কিনে নেয় মনসানটো। তেল এবং গ্যাস উৎপাদনকারী লায়ন ওয়েল কেনে মনসানটো ১৯৫৫ সালে। তাদের বাৎসরিক বিক্রি বেড়ে দ্বারায় ৬৩২ মিলিয়ন ডলার।

১৯৭২ সালে ফিলিং স্টেশন এবং তেল পরিশোধাগার বেঁচে দেন টেস্কোর কাছে।

কেমি থেকে শঙ্কর কোম্পানি;

১৯৬০ সালের দিকে কৃত্রিম সার এবং কীটনাশক উৎপাদন শুরু করে মনসানটো। অনেক রকমের সামগ্রী উৎপাদনের কারণে ১৯৬৪ সালে কোম্পানির নাম হয় মনসানটো কোম্পানি। একই বছর ইতিপূর্বে কেনা কোম্পানির শাখা কেমস্ট্রান্ড উৎপাদন করে কৃত্রিম ঘাস, যার নাম দেওয়া হয় কেমগ্রাস। আস্ট্রডোমে সফল ব্যবহারের ফলে যা পরে আস্ট্রোটার্ফ নামে পরিচিত হয়।

১৯৬৫ থেকে -৭০ পর্যন্ত ভিয়েতনাম যুদ্ধে এজেন্ট অরেঞ্জ নামে পাতা ঝড়ার বিষ মার্কিন সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করতো মনসানটো। ভিয়েতনামের ঐ এলাকার জনগণ এবং ঐ এলাকায় যুদ্ধরত মার্কিন সৈন্যরা এই বিষের সংস্পর্শে এসে চিকিৎসা করে সারানো সম্ভব নয় এমন স্বাস্থগত ক্ষতির শিকার হয়।

আবার সত্তরের দশকে মনসানটো তৈরী করে এলইডি লাইট ইঅড। যার ফলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঘড়ি এবং ক্যালকুলেটর তৈরী সম্ভব হয়।

বায়োটেকনোলজি;
১৯৮০ সালে বিওগেন-এর অংশ বিশেষ কিনে নেয় মনসানটো এবং সহযোগী গবেষণা শুরু করে জিনটেক-এর সাথে।

১৯৮৫ সালে কেনা হয় মিষ্টদ্রব্য তৈরীর কারখানা গি.ডি. সেআর্ল এন্ড কোম্পানি এবং তৈরী করে শাখা কোম্পানি নুটরা সুইট। কিন্তু পুরো মিষ্টিদ্রব্য তৈরীর শাখা কোম্পানি বেচে দেয় ২০০০ সালে।

১৯৮২ সালে মনসানটো পৃথিবীতে প্রথম উদ্ভিদের জিন পরিবর্তনে সক্ষম হয়। ১৯৮৩ সালে তারা প্রথম জিন পরিবর্তিত জীবের জন্য পেটেন্ট জমা দেয়, নাম তার পেটুনি। ১৯৮৭ সালে আমেরিকায় মনসানটো শুরু করে জিন পরিবর্তিত উদ্ভিদ নিয়ে প্রথম মাঠ গবেষণা।

পোসিলাক নামে পৃথিবীর প্রথম জিন পরিবর্তিত পণ্য আসে বাজারে। গাভীর দুধ বাড়ানোর একটা হরমোন । যা তারা ২০০৮ সালে ইলি লিলি নামের অন্য একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়।

জিন পরিবর্তিত টমেটো উৎপাদক কোম্পানি কোলজেন কিনে নেয় মনসানটো। পরের বছর কেনে কারগিল ১৪০ কোটি ডলার দিয়ে।

কারগেল নিজেদের জন্য রেখে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। একই বছর মনসানটো কেনে ডেকাল্ব জেনেটিক কর্পোরেশন। বীজ উৎপাদনকারী দ্বিতীয় বৃহৎ কোম্পানিতে উন্নীত হয় মনসানটো। ২০০৫ সালে তারা কেনে ফল এবং সব্জীর বীজ উৎপাদক কোম্পানি সেমিনিস ১৪০ কোটি ডলার মূল্যে। এই বছর তুলার বীজ উৎপাদক স্টেনভিলে পেডিগ্রীড এবং নেক্সগেন কেনেন ৩শ মিলিয়ন ডলারে।

কয়েকদিন পরে কেনেন ডেল্টা এন্ড পাইন ল্যান্ড ১৫০ কোটি ডলার মূল্যে। ২০০৯ সালে জিন পরিবর্তিত গম বীজ উৎপাদক ওয়েস্টব্রেড কেনেন ৪৫ মিলিয়ন ডলারে। আবার সিনগেনটার কাছে সূর্যমুখী তেলের বীজ উৎপাদন অংশ বেচে দেয় মনসানটো। ২০১১ সালে মনসানটো কেনে RNAi উদ্ভাবনের জন্য নোবেল প্রাইজ পাওয়া Craig Mello –এর বিওলজিক্স। বর্তমানে পৃথিবীর ৯০ ভাগ জিএম বীজ সরবরাহ করে মনসানটো।

মনসানটোর বিরুদ্ধে অভিযোগ:
১৯১২ সালে মার্কিন কৃষিমন্ত্রনালয়ের অভিযোগে সেগারিন স্বাভাবিক খাবারের উপাদান হিসাবে নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ব্যবহার যোগ্য থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে বাজারে আবারো সেগারিন ছাড়ে মনসানটো। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় সরকারের পরিচ্ছন্ন খাদ্য আইনের কর্মীরা। ১৯২৫ সালে অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাখ্যান করে আদালত।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে এজেন্ট অরেঞ্জ নামের বিষে স্বাস্থগত ক্ষতির কারণে মনসানটো সহ আরো এগারটি কোম্পানির বিরুদ্ধে সংযুক্ত অভিযোগ করে সৈন্যরা। ১৯৮৫ সালে ১৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পেয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেয় সৈন্যরা। কিন্তু ঐ একই বিষে ক্ষতিগ্রস্ত ভিয়েতনামদের মামলা খারিজ করে দেয় একটি মার্কিন আদালত।

সয়াবিন-মোজাইক-ভাইরাস রোগের বিরুদ্ধে রেসিস্টেন্স সয়াবিন বীজ বাজার জাত করে মনসানটো। যারা সেই বীজ ব্যবহার করেছে তাদের ফসলের প্রায় ৮০ ভাগ ঐ ভাইরাস নষ্ট করে ফেলে।

তাদের অভিযোগে এক লাখ তেষট্টি হাজার ডলার জরিমানা দেয় মনসানটো।

২০০৩ সালে অ্যালাব্যামার আনিষ্টন এলাকার বিশ হাজার অধিবাসীকে ক্ষতিপূরণ দেয় মনসানটো। কারণ তারা বছরের পর বছর মনসানটোর পিসিবি উৎপাদনের বাই প্রডাক্টের বিষক্রিয়ায় স্বাস্থগত ক্ষতির স্বীকার হন। ঐ এলাকায় পিসিবি উৎপাদন নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় ১৯৭৬ সালে। ত্রিশের দশকেই পিসিবির বিষক্রিয়া মনসানটোর জানা ছিল।

তার পরেও তারা পিসিবি উৎপাদন বন্ধ করেনি। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ঐ শহরের কাছে মিলিয়ন মিলিয়ন টন পিসিবি ফেলে দিত তারা বর্জ্য পদার্থ হিসাবে। অনেক রকমের খরচ মিলিয়ে মনসানটো জরিমানা দেয় ৭০০ মিলিয়ন ডলার।

৬ জানুয়ারি ২০০৫-এ মনসানটো-কে দেড় মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়। কারণ; মনসানটো ইন্দোনেশিয়া সরকারের ১৪০ জন কর্মকর্তাকে শত্তুর হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছেন।

বিটি তুলার বীজ উলগার্ড পরিবেশের জন্য কী রকমের ক্ষতিকর হতে পারে সেই রকমের কোন অনুমান ছাড়াই চাষের জন্য ছাড়পত্র প্রদানের উদ্দেশ্যেই এই ঘুষ দেওয়া। ঘুষের মাধ্যমে বিভিন্ন বই এবং বিল মানিপুলেট করা হয়।

বিটি বেগুনের ছাড়পত্র প্রদানের মামলায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল জ্বাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রায় কুড়ি বছরের মনসানটো ভারতের (শেষ আট বছর প্রধান) “টিরুভারদা জগদিসান”। তিনি প্রমাণ করেছেন: মনসানটো তাদের পণ্য ভারতে ছাড়পত্র সহজে পাওয়ার জন্য পণ্য সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল নিজেদের অনুকূলে মানিপুলেট করেছে।

মনসানটো কীটনাশক বাজারে আনল।

নাম তার রুন্ডআপ। টেক লাগানো হল; (কাজ শেষে) বায়োলজিক্যালি নষ্ট হয়ে যাবে। যা সঠিক নয়। নিউ ইয়র্ক প্রদেশ কীটনাশকে ঐ টেগ নিষিদ্ধ করে। একই কৌশলে রুন্ডআপ বাজারজাত করা হয় ফ্রান্সে।

সেখানে টেগে নতুন যুক্ত হয় পরিবেশ বান্ধব। যা ঠিক নয়। দুটি সংস্থার অভিযোগ সব কোর্ট থেকে প্রমাণ হয়। মনসানটো জরিমানা দেয় ১৫ হাজার ইউরো।

কীটনাশকের নাম লাসো।

ইংল্যান্ড এবং বেলজিয়ামে মানুষের জন্য বিষাক্ত বলে নিষিদ্ধ ঘোষিত। কিন্তু মনসানটো যেখানে পারছে সেখানে তা বিক্রি করেই যাচ্ছে। মানুষের স্বস্থের জন্য লাসো যে বিষাক্ত তা জানা ছিল ৮০-র দশক থেকেই। তার পরেও মনসানটো বাজার থেকে ঐ কীটনাশক প্রত্যাহার করেনি। সেই রকম একটা ড্রামের বাষ্প নিঃশ্বাসের সাথে ঢুকে যায় এক ফরাসী চাষির ফুসফুসে।

প্রথমে বমি, অবসাদ, মাথাব্যথা। পরে দেখাযায় তাঁর প্রধান নার্ভ সিস্টেমও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১২ সালে কোর্ট রায় দিয়েছে চাষির পক্ষে। কিন্তু মনসানটো আপিল করেছে।

চাষিদের বিরুদ্ধে মনসানটোর অভিযোগ:

১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মনসানটো ১৪৭ জন আমেরিকান চাষির বিরুদ্ধে জেনেটিক মডিফাইড বীজের মেধা স্বত্ব অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে।

মনসানটোর থেকে কেনা বীজের ফসলের একটা অংশ চাষিরা পরের বছর নিজের ক্ষেতে বীজ হিসাবে ব্যবহারের করেছে। মনসানটোর চুক্তি অনুযায়ী যা বেআইনি। এই ধরণের চুক্তি ভঙ্গের বিরুদ্ধে মনসানটো প্রতিবেশী চাষিদের সাহায্য কামনা করে। পাশের জমিতে মনসানটোর অবৈধ বীজ বপন করেছে এমন খবর জানার পর মনসানটো এগারজন চাষির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অবৈধ ভাবে মনসানটোর পণ্য ব্যবহার কারী চাষিদের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাৎসরিক দশ মিলিয়ন ডলার বাজেটের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি শাখা রয়েছে মনসানটোর।

১৯৯৮ সালে তারা ৪৭৫ জন চাষির বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাই করে দেখেছে। বছরে কমপক্ষে এই রকমের পাঁচ শত চাষির সন্দেহ জনক বীজ ব্যবহার যাচাই বাছাই করে কোম্পানি। ২০০৫ সালে ৯০ জন চাষির বিরুদ্ধে মনসানটো আদালতে নালিশ করেছে বলে জানায় আমেরিকান খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা। ৯০ জন চাষির মধ্যে কমপক্ষে ছয়জন চাষির সই নকল করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে মনসানটোর বিরুদ্ধে। সেই ছয় জনের এক জন চাষি স্ট্রেটমায়ার আদালতে অভিযোগ করে বলেছে; তাঁর দস্তখত জ্বাল করে বীজের চুক্তি করেছে মনসানটো।

কানাডায় সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়েছে মনসানটো চাষি স্মাইসার-এর বিরুদ্ধে। স্মাইসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ; সে মনসানটোর রুনডআপ-রেডি-কানোলা সরিষা অবৈধ ভাবে বুনেছে নিজের ক্ষেতে। কারণ সে সেই বীজ মনসানটো-র কাছ থেকে কেনে নি। স্মাইসার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলছে; হয়তো ক্ষেতের পাশ দিয়ে মনসানটোর ঐ বীজ বা ফসল বাহী ট্রাক থেকে আমার ক্ষেতে বীজ এসে থাকতে পারে। এমনও হতে পারে পাশের জমির পাকা ফসল বাতাসে আমার ক্ষেতে চলে এসেছে।

(ক্ষেতের আগাছা মারা জন্য স্মাইসার যে ওষুধ ব্যবহার করেছে, তাতে মনসানটোর উদ্ভাবিত ফসলের চাড়া মরে নি। সে সেটাকেই বীজ হিসাবে ব্যবহার করেছে। আমেরিকা, ইউরোপ বা কানাডায় বিশাল বিশাল জমি। সে জমিতে এক দিক দিয়ে বীজ বাহী ট্রাক গেলে এবং বাহিত বীজের কোন বা একাধিক বস্তায় ছিদ্র থাকলে এবং শস্য যদি হয় সরিষা, তা হলে অনেক সরিষা পরে যাবে। তাতে যে ফলন হবে তা দিয়ে পুরো ক্ষেতের বীজ হয়ে যাওয়ারই কথা।

) প্রায় এক হেক্টর জমিতে আগাছা বিনাশী রুন্ডআপ ছিটানোর পরেও প্রায় ৬০ ভাগ গাছ মরে নি। সেই ৬০ ভাগ থেকে বীজ সংগ্রহ করে সে তার ৪০০ হেক্টর জমিতে ব্যবহার করেছে। স্মাইসারকে কোন লাইসেন্স ফি বা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়নি। কারণ সে ঐ বীজ থেকে বিশেষ কোন সুবিধা পায়নি। কিন্তু তাঁর জেনেশুনে ঐ লাইসেন্স করা বীজ ব্যবহার করা ঠিক হয় নি বলে জানিয়েছে আদালত।

ওয়াকুর্ট ডায়েরী তাদের বিজ্ঞাপনে দাবী করেছে যে; তারা মনসানটোর উদ্ভাবিত বর্ধনশীল হরমোন ছাড়া দুধ উৎপাদন করেছে। সে জন্য তা গুনে মানে মনসানটোর বর্ধনশীল হরমোন খাওয়া গাভীর দুধের চেয়ে অনেক অনেক গুন ভাল। ২০০৪ সালে কোম্পানির সুনাম নষ্ট হওয়া ঐ বিজ্ঞাপন বাতিলের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হলে, আদালত মনসানটোর পক্ষে রায় দেয়।

মনসানটো-র রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি:
লিনডা জে. ফিসার ছিলেন আমেরিকান সরকারের পরিবেশ প্রতিরক্ষা এজেন্সি-র কর্মকর্তা, পেস্টিসাইড এবং বিষ বিভাগে। মনসানটোতে এলেন সহ-গণসংযোগ কর্মকর্তা হয়ে।

তারপর আবার গেলেন সরকারের অধীনে। তবে এবার গেলেন পরিবেশ প্রতিরক্ষা এজেন্সির সহ প্রধান হয়ে। আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ বিভাগের এডমিনিস্ট্রেটর উইলিয়াম ডি. রুকেলহাউস অনেক বছর মনসানটোর প্রেসিডিয়াম সদস্য। মারগ্রেট মিলার মনসানটোর কেমিস্ট্রি ল্যাব প্রধান। প্রমোশন পেয়ে হয়ে যান আমেরিকান খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের সহ প্রধান।

মেক্সিকোতে বায়োডাইভারসিটি GVO নামে একটি আইন আছে। অনেকের কাছে তা মনসানটো আইন নামে পরিচিত। কারণ সেই আইনে বড় কয়েকটি মেক্সিকান কোম্পানি ছাড়া ছোট কৃষকদের কোন উপকারে আসে না। তবে সেই আইনে সব চেয়ে বেশী লাভ হচ্ছে মনসানটোর।

জার্মান কৃষিমন্ত্রী ইলসে আইগনার মনসানটোর MON810 জেনেটিক মডিফাইড ভুট্টা জার্মানিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ১৪ এপ্রিল ২০০৯।

আমেরিকান বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জার্মান রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মনসানটোর ভুট্টা জার্মানে চাষের অনুপযোগী ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তথ্য সূত্র, জর্মান ভাষায়

পরের পর্বে থাকবে বিটি খাবার।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.