আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা চিড়িয়াখানায় শূন্য খাঁচার বহর

ঢাকা চিড়িয়াখানাকে ঘিরে আগন্তুকদের আগ্রহের কমতি নেই। প্রতিদিন হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে দেশের সবচেয়ে বড় এই চিড়িয়াখানায়। কিন্তু ঢোকার পরে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি হয় না আগন্তুকদের- এ অভিযোগ অনেকের। কারণ এ চিড়িয়াখানার বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে এখন শূন্য খাঁচার বহর। খাঁচার পর খাঁচা ফাঁকা।

দেয়ালে রঙ পড়েনি অনেক দিন। উৎকট গন্ধ আর জলের প্রাণী জলের অভাবে কাতর যন্ত্রণায় অনেক সময় করে ছটফট। সর্বোপরি সব পশুপাখির শরীর বিবর্ণ ও রোগাক্রান্ত। তবে এই বিশাল এলাকায় আগন্তুকদের প্রশান্তি দেয় লেকটি ও এর টলটলে স্বচ্ছ জল।

তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, এ অবস্থা কাটার চেষ্টা করছেন তারা।

এ জন্য ছয় মাসের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি টাকার ২০০ প্রাণী ও পাখি আনার চেষ্টা চলছে। এ তথ্য জানিয়েছেন ডেপুটি কিউরেটর ডা. মাকসুদুল হাসান হাওলাদার। এর আগে কিছু প্রাণী আনা হয়েছিল ২০১২ সালে। ঢাকা চিড়িয়াখানা ১৯৭৪ সালে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৮৬ একর জায়গার ওপর দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এ প্রাণীশালা।

গতকাল চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেছে, কঙ্কালসার বানরের খাঁচায় পড়ে আছে কাঁচা-পাকা কলা। হনুমান পাউরুটি খেয়ে ঘুমে বুঁদ। খাঁচার ভেতর গোসল করার জন্য চৌবাচ্চা থাকলেও তাতে পানি নেই। তীব্র গরমে বানরগুলোর অবস্থা সংকটাপন্ন। এ ছাড়া পাখির খাঁচার সামনে গিয়ে দেখা গেছে, ফ্লেমিংগো, কানিবক ও কামাক পাখি দাঁড়িয়ে আছে পানিহীন বিরাট খাঁচায়।

অথচ চিড়িয়াখানার মোড়ে মোড়ে সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে 'প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়াতে পাখিকে বাঁচান'। প্রবেশমুখে জু অফিসারের অফিসের সামনে সাইনবোর্ডে লেখা ৫৬ প্রজাতির ১০৬টি পাখি রয়েছে চিড়িয়াখানায়। আদৌ এতগুলো পাখি রয়েছে কী না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে বিকালবেলা ময়ূরের খাঁচার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ভাগ্য সুপ্রন্ন হলে মাঝে মাঝে পেখম তুলতে দেখা যায়। সুন্দরবনের বাঘ ঢাকার চিড়িয়াখানার বড় আকর্ষণ।

গতকাল সকালের দিকে দেখা যায়, স্ত্রী বাঘ বাসমতি ও সুরমা অলস শুয়ে আছে। পুরুষ বাঘ এন্ড্রা দূরে তাকিয়ে। খাঁচার সামনে দর্শকের ভিড়। চিড়িয়াখানায় আগতরা সবচেয়ে বেশি দেখতে পছন্দ করেন বাঘ, সিংহ ও সাপ। সাইনবোর্ডে লেখা 'বাঘ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার ঘণ্টা হাঁটতে পছন্দ করে।

' তার খাবার দরকার প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ কেজি মাংস। তবে সপ্তাহে একদিন অর্থাৎ রবিবার বাঘ ও সিংহকে মাংস না দিয়ে অভুক্ত রাখা হয়। এদিকে বাঘের খাঁচার সামনে গিয়ে দেখা গেছে বাঘ সম্রাট সানী ঘুমিয়ে। বাঘিনী উর্মিলা পায়চারি করছে। খাঁচার চারদিকে সবুজ পানি।

খাঁচার গন্ধ দূর করেছে পাশের বুনোফুলের গন্ধ। এখানে মাংসাশী শাখায় ১০ প্রজাতির ৪০টি প্রাণী রয়েছে। বাঘের খাঁচার কাছেই ভালুকের খাঁচা। উৎকট গন্ধে এখানে কারো থাকা দায়। এরপর দেখা হলো সিংহের সঙ্গে।

পৃথিবীতে দুই জাতের সিংহ আছে- একটা আফ্রিকান, আরেকটা ভারতীয়। ছোট্ট একটি চিতাবাঘও রয়েছে। চিড়িয়াখানায় যে গণ্ডারটি রয়েছে সেটি দেখতে অনেকটাই রোগা। জলহস্তীর পানির আধার যথেস্টই নোংরা। তবে ঢাকা চিড়িয়াখানার অসঙ্গতি ও পশুপাখির প্রতি অবহেলা মানতে নারাজ কিউরেটর ডা. এনায়েত হোসেন।

তিনি বলেন, 'আমরা যথাযথ পরিচর্যা করি। পরিচর্যা না করলে প্রাণিকুল অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমরা প্রাণী ও পাখিদের খাবার প্রদানের বিষয়ে যত্নশীল। এ জন্য একটি কমিটি খাবার প্রদানের বিষয় মনিটরিং করে। এ ছাড়া চিড়িয়াখানায় প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

এ চিড়িয়াখানায় বেশকিছু বিদেশি নামের পশুপাখি রয়েছে। এর মধ্যে একটি ওয়াইল্ড বিস্ট। গরুর মতো বাঁকানো শিংয়ের এ প্রাণীর প্রধান খাবার লতাপাতা। কেনিয়ার এ প্রাণীটি নিজ দেশে শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য শত মাইল এলাকা পাড়ি দেয়। আর চিড়িয়াখানায় যে ঘেরটিতে ঘোড়া রাখা হয়েছে সেখানে ঘাসের কোনো চিহ্ন নেই।

মাটির উপর দাঁড়িয়েই কাটছে তার সময়। পাঁচটি জিরাফের জন্য খাঁচায় ছোট একটি পাত্রে পানি দেখা গেল। জিরাফ পালনকারী ইউনূস জানালেন, ওরা একবারে প্রচুর পানি খায়। তাই পাত্রে কম পানি- পাশেই গাজী ট্যাঙ্ক রয়েছে। পৃথিবীর সুন্দর প্রাণীর অন্যতম জেব্রা দেখতে ভিড় করছে শিশুরা।

সাপের বেষ্টনীতে মানুষের ঢল সব সময় থাকে। কিন্তু সেখানে আহামরি তেমন কোনো সাপ নেই। গোখরার ঘর খালি। অজগর একটি। পাশেই তার খাবার জীবন্ত খরগোস।

সব মিলিয়ে এখানে রয়েছে চার থেকে পাঁচটি সাপ। কর্তৃপক্ষ জানায়, স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ ২২ প্রজাতির ২৪৭টি প্রাণী রয়েছে এখানে।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.