আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জনপ্রিয়তাই কাল হলো সায়াদের!

ছাত্রলীগের নেতা হলেও ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন সায়াদ ইবনে মোমতাজ। শিক্ষার্থীরা জানালেন, এই জনপ্রিয়তাই কাল হয়েছে তাঁর। সহপাঠী ছাত্রলীগের নেতাদের পিটুনিতে অকালে চলে গেলেন না-ফেরার দেশে।
মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শেষ বর্ষের ছাত্র সায়াদ হত্যার ঘটনায় গতকাল বুধবার ক্ষোভে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছাত্রলীগের দুই নেতা সুজয় কুমার কুণ্ডু ও রোকনুজ্জামানকে রাতে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে ছাত্রলীগের কর্মী আনিসুজ্জামান ও নাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কেন এই হত্যা: আশরাফুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সায়াদ ছিলেন ২০১২-২০১৩ সালের নির্বাচিত শ্রেণী প্রতিনিধি। আজ বৃহস্পতিবার অনুষদের ছাত্র সমিতির নির্বাচনে সহসভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল তাঁর।

তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় কুমার কুণ্ডুও নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। অনুষদের শিক্ষার্থীরা জানান, সায়াদের জনপ্রিয়তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল সুজয়ের। এ কারণেই তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত রোববার চতুর্থ বর্ষের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিকস বিভাগের একটি কোর্সের ক্লাস পরীক্ষাটি শিক্ষককে বলে পেছানোর জন্য সায়াদকে চাপ দিয়েছিলেন সুজয় ও রোকন। তাঁদের চাপে একপর্যায়ে তিনি পরীক্ষা হবে না বললেও পরীক্ষা হয় এবং মাত্র দুজন অংশ নেন।

শিক্ষক আবার পরীক্ষা নিতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সুজয়ের সঙ্গে সায়াদের বাকিবতণ্ডা হয়। এর জেরে সোমবার সন্ধ্যায় হলের ২০৫ কক্ষে সায়াদকে ডেকে নিয়ে রড, লাঠি, হকিস্টিক দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়। পিটুনিতে সায়াদ বমি করেন ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। ওই কক্ষে তখন সুজয়, রোকনসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ছিলেন।
ওই রাতে সায়াদকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ময়মনসিংহ শহরের ট্রমা সেন্টারে মারা যান। কে বা কারা তাঁকে ট্রমা সেন্টারে নিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উত্তাল ক্যাম্পাস: সায়াদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে সকাল নয়টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। আজ সকাল ১০টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন।

দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। বিকেল পাঁচটার দিকে বিজয় ’৭১-এর পাদদেশে তাঁরা হত্যাকারীদের প্রতীকী ফাঁসি দেন।
সায়াদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে ১৩ দফা দাবি জানিয়েছেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকেরা। হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বেলা একটার দিকে মৌন মিছিল করে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সোনালী দল।
মামলা ও তদন্ত কমিটি: আন্দোলনের মুখে সায়াদের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মহিউদ্দীন হাওলাদার কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

তবে আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ঘটনাটি তদন্তে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মহসীন আলীকে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ সুজয় ও রোকনকে ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজের মোড় থেকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা বাসযোগে শেরপুরে পালানোর চেষ্টা করছিলেন।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এই হত্যার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করেন।

তবে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম বলেন, এর সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা নেই। ছাত্রলীগই সায়াদকে হত্যা করেছে।
উপাচার্য মো. রফিকুল হক বলেন, ‘যারা খুনি তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। আমি চাই না আমার ক্যাম্পাসে আর কেউ এভাবে প্রাণ হারাক।


রাজশাহীর ভাটাপাড়ার নিজ গ্রামে মঙ্গলবার রাত ১১টায় জানাজা শেষে সায়াদের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।