আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩০ বছরের কলাবাগান

যদি জানতে চাওয়া হয় বছরজুড়ে কোন ফলটি পাওয়া যায়। প্রথম উত্তর হবে কলা। কলা আমাদের অত্যন্ত পরিচিত একটি ফল। বাংলাদেশে আমরা অনেকেই কলা চাষের সঙ্গেও পরিচিত। বাগানে প্রথম বছর চারা রোপণ করার পর দু-তিনবার ফলন বেশ ভালো হয়।

এরপর কলার মান ও উৎপাদনের পরিমাণ কমতে থাকে। তখন কলার বাগান মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দু-তিন বছর বিরতি দিয়ে আবার চারা রোপণ করা হয়। এটাই আমাদের জানা কলা চাষের সাধারণ পদ্ধতি।
কিন্তু একবার চারা রোপণ করে যদি বছরের পর বছর ফল পাওয়া যায়, এমন কথা বলা হলে আমাদের দেশে জংলি কলার কথাই মনে হবে। কিন্তু ফিলিপাইনের কলাচাষিরা আমাদের পরিচিত সাগর কলার মতোই উন্নতমানের কলা একবার চারা রোপণ করে বছরের পর বছর কলা উৎপাদন করছেন।


কিছুদিন আগে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গিয়েছিলাম ফিলিপাইনের দক্ষিণ অঞ্চল মিন্দানাওয়ে। যেটাকে ফিলিপাইনের ফলের ঝুড়ি বলা হয়। দাভাও মিন্দানাওয়ের প্রধান শহর। এর নিকটবর্তী শহর পানাবো। সেখানে আমাদের কিছু কলাচাষি গ্রাহক আছেন।

যাঁদের কলাবাগানের বয়স ৩০ বছরের বেশি। সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলাম সেই কলার বাগান।
সে এক অপূর্ব দৃশ্য। মাইলের পর মাইল শুধু কলাবাগান। এর ভেতরে রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের বিশাল একটি কলাবাগান।

অপেক্ষাকৃত বিশ্বাসী কয়েদিদের দিয়ে চাষ করা হয় এই বাগান। কাজের পাশাপাশি এখানকার কয়েদিরা কিছুটা মুক্তজীবনের স্বাদ পান।
অবশেষে গেলাম আমাদের গ্রাহকের বাগানে। প্রবেশ করার আগে গাড়ির চাকা ও আমাদের জুতায় স্প্রে করে ভাইরাস মুক্ত করা হলো। অনেক বড় বাগান।

৩০ বছর আগে গ্রাহকের বাবা এই বাগান করেছিলেন। এখন গ্রাহক দেখাশোনা করেন। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত ভাইরাস-মুক্ত চারা রোপণ করা হয় প্রথমে। যত্ন ও পরিচর্যায় যখন চারা গাছটি বড় হয়ে তার গোড়ায় কিছু চারা গজায়। অপেক্ষাকৃত ভালো চারাটি রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলা হয়।

কোনো চারা উপড়ানো হয় না। প্রতিটি গাছে ১১ থোকা কলা আসার পর মোচাটি কাটা হয়। কেঁচোমুক্ত রাখার জন্য গাছে কীটনাশক ইঞ্জেকশন করা হয়। তারপর কীটনাশক স্প্রে করে কিছু ছিদ্রযুক্ত পচনশীল পলিথিন দিয়ে কলাগুলোকে ঢেকে দেওয়া হয়। একটি ফিতা বেঁধে সেখানে তারিখ লিখে কলা পরিপক্ব হওয়ার দিন গোনা হয়।

অনেক চাষির জমি পাশাপাশি হওয়ায় সবাই মিলে বিমান দিয়ে কলাবাগানের ওপর ওষুধ স্প্রে করান। এটাকে এরিয়েল স্প্রে বলা হয়। কলা পরিপক্ব হলে কলা কেটে বাগানের মধ্যে করা লোহার রেলিংয়ে ঝুলিয়ে প্যাকিং কারখানায় নেওয়া হয়। কলা কাটার পর মূল গাছটির মাথার দিকের পাতাসহ কিছু অংশ কেটে পুরো গাছ রেখে দেওয়া হয়। পাশের চারা গাছটি এই পুরোনো গাছ থেকে প্রয়োজনীয় পানি শোষণ করে।

ফলে তেমন কোনো সেচের দরকার পড়ে না। কলাগুলো প্রথমে ফিটকারিযুক্ত পানিতে ধুয়ে পানিমুক্ত করে ভ্যাকুয়াম প্যাক করে পলিথিনে ভরা হয়। তারপর কার্টনে পুরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে সাজানো হয়। কনটেইনারে করে বিদেশে রপ্তানি করা হয় অথবা দূরের বাজারে বিক্রির উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। কলা পাকানোর জন্য মেশিন বা প্রচলিত পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়।


পাশের চারা গাছটি একসময় বড় হয়। তার গোড়ায়ও চারা গজায়। এবারও ভালো চারাটি রেখে বাকি চারা কেটে ফেলা হয়। উল্লেখ্য, যে চারাটি রাখা হবে, সেটা একটুও কাটা হয় না। আবার গাছের সারি সোজা রাখার জন্য প্রথমে যে দিকের চারাটি রাখা হয়, পরের বার তার উল্টো দিকের চারা নির্বাচন করা হয়।

এভাবে বছরের পর বছর চলতেই থাকে এই চক্র। কলার গুণগত মান বা পরিমাণের কোনো কমতি হয় না। ৩০ বছরের পুরোনো বাগান দেখেও মনে হয় নতুন বাগান।
মুরাদুল ইসলাম
কন্সালট্যান্ট, কার্ড এসএমই ব্যাংক, ফিলিপাইন
<murad_8226@yahoo.com>

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।