আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনন্দযাত্রা ( রম্য ) ৩

বাস থেকে নেমে কিছুটা পথ হেঁটে ক্যাম্পাসে যেতে হয়। ক্যাম্পাসে ঢোকার মুখেই ঝিলের সাথে কণার দেখা। কণা ঝিলের ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ার আপু। সবাই তাকে চিনে। বিটিভির বিতর্ক প্রতিযোগীতায় পর পর দুবছর শ্রেষ্ঠ তার্কিক হয়েছে।

কণা হেসে বলে,‘কেন এসেছো, আজ ক্লাস হবে না ?’
‘তাই নাকি, কেন ?’
‘স্যারদের ইচ্ছা,’ কণা ঠোঁট উল্টিয়ে চলে যায়। ঝিল তার ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সাবুকে পায়। সাবু দুপা ছড়িয়ে বসে গাচ্ছে,‘বড় বড় গাড়ি থাকতে চালাও রিক্সা ভ্যান, আরে বড় বড় গাড়ি থাকতে চালাও রিক্সা ভ্যান, গরম ভাতের হোগা মারতে ঢাকা আইলা ক্যান ?’ ঝিল হাসবে না হাসবে না করেও হেসে ফেলে, ফাজিলটা এই সব উদ্ভট উদ্ভট গান যে কোথায় পায় !
‘এই গান থামা, ক্লাস হবে না কেন ?’
‘আমিতো তোমারে আগেই বলছি মামা ঢাকা আইলা ক্যান ? স্যাররা সব গ্রামে গেছে গা, তুমি ঢাকা পইড়া রইছ ক্যান ?’
‘আর কেউ আসে নাই ?’
‘আসছে, চল যাই,’ বলে সাবু উঠতে উঠতে আবার গান ধরে,‘বড় বড় গাড়ি..’
‘এই চুপ, একদম চুপ,’ ঝিল ধমকে ওঠে।
‘তোদের মাঝে কোন শিল্প-সাহিত্য নাই। ’
‘হ্যাঁ নাই,’ বলে দুজন কেন্টিনে যায়।

কেন্টিনে সবাই আছে। সাবুকে দেখেই হৈ হৈ করে ওঠে,‘মামা, মামা গান, মামা গান। ’
অমনি সাবু গলা ছাড়ে,‘বড় বড় গাড়ি থাকতে চালাও রিক্সা ভ্যান, বড় বড় গাড়ি থাকতে চালাও রিক্সা ভ্যান,’ সবাই হাসতে হাসতে কোরাস ধরে,‘গরম ভাতের হোগা মারতে ঢাকা আইলা ক্যান ?’
কিছুক্ষণ আগে গানটা বিশ্রি লেগেছে, কিন্তু এখন সব বন্ধুরা মিলে যখন গাচ্ছে তখন ঝিলের কাছে মজাই লাগে, গুন গুন করে সেও গলা মেলায়। কিভাবে যে দুঘন্টা চলে যায় বুঝতে পারে না, হঠাৎ ঘড়ি দেখে,‘যাইরে, ঈদে সবাই বাসায় আসিস,’বলে ঝিল উঠে আসে। পেছন থেকে তপন বলে,‘সত্যি সত্যি আমু কিন্তু ?’
‘আসিস, মিথ্যা মিথ্যা সেমাই খাওয়াবো,’ ঝিল হাসে।


‘দেখছোস, দাওয়াত দেয় আবার একই লগে উপাস রাখনের ফাঁপড়ও দেয়। ’ সবাই হেসে ওঠে।
আজ গরমটা বেশ পড়েছে, বাসে চড়তে ইচ্ছে করছে না। ঝিল রিক্সা খোঁজে। কোন রিক্সা যেতে চাচ্ছে না, হুড তোলে সিটে বসে বিড়ি খাচ্ছে।

ঝিলের রাগ ওঠে, সাবুর গানের কথা মনে পড়ে, রাগের মাঝেই হাসি আসে। সে হেসে পা বাড়ায়, ইচ্ছা এগিয়ে গিয়ে রিক্সা নিবে। কিন্তু কিছু পথ হেঁটে সে ছায়ায় দাঁড়ায়, রোদে হাঁটতেও ইচ্ছা করছে না।
নয়ন কাল বাড়ি যাবে, বাসের টিকেট অগ্রীম কেনা আছে, চিন্তা নাই। সে সকাল দশটায় ঘুম থেকে ওঠে দেখে মেস খালি।

সে আরো কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগাড়ি করে। আজ কোন কাজ নেই, ও না ছোট বোনের জন্য একটা জামা কিনতে হবে। সে ধিরেসুস্থে মুখ ধুয়ে গোছল করে বেরিয়ে হোটেলে নাস্তা করে,ছোট বোনের জামা কিনতে রওয়ানা দেয়। এমন সময় বাড়ি থেকে খালাতো ভাই ফোন দেয়। সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কথা বলতে বলতে হাঁটে,‘হ্যাঁ ফারুক ভাই, আজ আসব না, কাল।

টিকিট কাটা আছে। হ্যাঁ, দেখি। পৌঁছাতে পৌঁছাতে কখন হয় কে জানে ?’ এমন সময় একটা রিক্সা তার পাশ দিয়ে যায়, সে হাত তোলে রিক্সাটাকে থামতে ইশারায় করে,‘জানি না, আমার সাথে যোগাযোগ হয় নাই। ’
একই সময় ঝিলও রিক্সার জন্য হাত তোলে। রিক্সা ঝিলের পাশে থামে।

ঝিল রিক্সা ড্রাইভারকে কিছু না বলে উঠে পড়ে, পাছে ড্রাইভার যেতে না চায়। আর ঠিক তখন রিক্সার অন্য পাশ থেকে নয়ন,‘হ্যাঁ ফোন দিব, বাই,’ বলে রিক্সার উঠে ঝিলের পাশে বসে।
সাথে সাথে ঝিল ধমকে উঠে,‘এ কি করছেন ? কে আপনি ?’
নয়ন ভয়ে লাফ দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে যায়,‘আ-আ-আপনি কোন সময় উঠলেন ? আশ্চর্য !’
‘আপনি কোন সময় উঠলেন, আশ্চর্য !’ ঝিল নয়নকে ভেংচায়, ‘ফাজিল ! মেয়ে মানুষ দেখলেই লাফ দিয়ে রিক্সায় উঠতে ইচ্ছে করে ?’ নয়ন হাঁ হয়ে থাকে। ‘এই রিক্সা চালাও, বলে ঝিল ড্রাইভারকে তাগাদা দেয়। ড্রাইভার রিক্সা চালায়।

নয়ন দাঁড়িয়ে মাথা চুলকায়, ঘটনাটা কী ?
( চলবে )।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।