আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক আলোকিত নারী সাফিয়ার গড়া পাঠাগারের কথা




নিজে বেশীদূর পড়ালেখা না করলেও বইয়ের প্রতি বরাবরই টান অনুভব করেন সাফিয়া বেগম। তার ভাষায়- দূর সময় এলে স্বজন দূরে চলে যায়। বইয়ের সাথে আত্মীয়তা তখন আরো নিবিড় হয়। তাই ভূমিহীন সাফিয়া পোক্ত করে আত্মীতার বন্ধনে বইকে বেঁধেছেন।
ফতুল্লা ডিআইটি মাঠের এক কোণে তার গড়া লাইব্রেরীতে আছে পাঁচ শতাধিক বই।

বাঁশ চাটাইয়ের ঘরে রেজিস্ট্রিকৃত শাপলা পাঠাগার নামে এ লাইব্রেরীতে প্রতিদিন বই পাঠ করে জ্ঞান পিপাসা মিটাচ্ছেন অসংখ্য বইপ্রেমী।

লাইব্রেরীর শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। ৭শ’ টাকার বই নিয়ে প্রথম যাত্রা তার। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বইয়ের সংখ্যা। এখন ৫ শতাধিক বই তার পাঠাগারে, কয়েকবার উচ্ছেদের কবলে না পড়লে সংখ্যাটা আরো বাড়তো বলে জানালেন সাফিয়া।

শাপলা পাঠাগার থেকে বই নিয়ে বাড়িতেও পড়া যায়। এ জন্য প্রতি বইয়ের জন্য দিতে হয় মাত্র পাঁচ টাকা। তবে পাঠাগারে বসে পড়লে কোন টাকা দিতে হয় না।


পাঠাগার গড়া ছাড়াও সাফিয়া বেগম বিভিন্ন আন্দোলন ও সামাজিক কাজে জড়িত আছেন। ১৯৮৮ সালের বন্যায় তিনি রুটি বানিয়ে বন্যাদুর্গতের সহযোগীতা করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া এলাকার মৃত আলী হোসেনের স্ত্রী সাফিয়া ফতুল্লা ডিআইটি মাঠে বাস করেন ১৯৮২ সাল থেকে।
১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি স্বপরিবারে থাকতেন ২নং বাবুরাইল কামালউদ্দিনের বাড়িতে। যুদ্ধ শুরুর প্রথমদিকেই ওই বাড়িটি আগুনে পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানী বাহিনী ও এ দেশীয় দোসররা। এ ঘটনার সময়ে বাবা মা ও দুই ভাই, দুই বোনকে নিয়ে কুঁড়েরপাড় নানার বাড়িতে ছিলেন।

দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর সাথে এক মধুর স্মৃতির কথা জানালেন সাফিয়া।

তিনি তখন ম্যাটেক্সে চাকরী করতেন। মালিক পরিবর্তনের পর কয়েকজনের কাজ চলে যায়। ভাষা সৈনিক শফিউদ্দিন ওরফে বাবু সারোয়ার তাকেসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়িতে। তাদের উপস্থিতির কথা শুনে কাঁধে লাল গামছা, সাদা সেন্টু গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে বের হন বঙ্গবন্ধু। ভরাট কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়েন- বাবু (বাবু সারোয়ার ) কি হইছে ? এরপর তাদের সবার চাকরীই বহাল হয়, বেতনও বাড়ে বেশ।


হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যখন ক্ষমতায় তখন আরো একটি ইতিহাস গড়ে সাফিয়া। তৎকালিন রাষ্ট্রপতি এরশাদের গাড়ি আটকে ফতুল্লার দাপায় কর্মজীবিদের জন্য আদায় করেন পথকলি স্কুল। ওই সময়ের জেলা প্রশাসক আহমদ মাহমুদুর রাজা চৌধুরীর একান্ত চেষ্টায় তিনি পাঠাগারের জন্য ফতুল্লা ডিআইটি মাঠের ১৮ শতক জমি লিজ নিয়েছিলেন। পরবর্তিতে কলেজ করার নামে, রাজউকের দখলের নামে বার বার উচ্ছেদের কবলে পরে এখন সামান্য জায়গায় চলছে তার গড়া শাপলা পাঠাগার।
এই পাঠাগারে সহযোগীতা আছে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভী রহমানের।





৪ ছেলে তিন মেয়ের মা সাফিয়া বেগমের বয়স এখন প্রায় ৬৫। মেয়েদের সবাই স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে আছে। ৩ ছেলেও সংসারী। মানসিক ভারসাম্যহীন এক ছেলেকে নিয়ে তার বাস ফতুল্লা ডিআইটি মাঠে তার গড়া পাঠাগারের পাশে। ছেলে মেয়েরা সবাই তার দেখ ভাল করে।

এ নিয়ে কোন চিন্তা নেই তার। তিনি শুধু ভাবেন, আমি না থাকলে পাঠাগারের কি হবে। তিল তিল করে গড়া এই আলোর রাজ্য কি তবে ধ্বংস হয়ে যাবে।

ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাবে এসে সাফিয়া বেগম কথা বলেন রনজিৎ মোদক ও আনোয়ার হাসানের সাথে। এ সময় তিনি জানান, তার একটি মাত্র চাওয়া অজস্র পাঠকের স্বার্থে ‘শাপলা পাঠাগার’ এর একটি স্থায়ী রুপ যেন দেয়া হয়।


 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।