আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২২ বছর পর ফাইনালে মোহামেডান

এখন আর সেই দিন নেই। মোহামেডান-আবাহনীর লড়াইয়ে উৎকণ্ঠায় সাড়া দেশ কাঁপে না। সমর্থকদের মধ্যে কথায় কথায় মারামারিও হয় না। ফাঁকা পড়ে থাকে গ্যালারি। ফুটবলে যেন এখন পড়ন্ত বিকাল।

কিন্তু কালকের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্ব্বীর লড়াই কি ইঙ্গিত দিল নতুন ভোরের! মাঠে একে পর এক মিস, নিরুত্তাপ সেমিফাইনালে ১-০ গোলে জিতে ২২ বছর পর স্বাধীনতা কাপের ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল সাদা-কালোরা।

মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ সব সময়ই আলাদা। কারণ এই লড়াই তো শুধুমাত্র দুটি ক্লাবের মধ্যে নয়। লড়াই ঐতিহ্যের, লড়াই মর্যাদার। সেই লড়াইয়ে আরেকবার নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখল মোহামেডান।

মতিঝিলের ক্লাবটির হয়ে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন দলীয় অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি। অবশ্য গোলটি মোহামেডানের মিডফিল্ডার বারকিনসো ফাসোর জঙ্গু উসেনির নামের পাশে লেখা হলেই বেশি মানাত। প্রথমার্ধের ৩২ মিনিটে ডান পাশ দিয়ে সাদা-কালোদের সংঘবদ্ধ আক্রমণ। হেমন্ত বিশ্বাসের বাড়িয়ে দেওয়া ক্রস থেকে বল পেয়ে গোলে শট করেন মোহামেডানের জঙ্গু উসেনি। কিন্তু বলটি এমিলির গায়ে লেগে আবাহনীর জালে জড়িয়ে যায়।

সব প্রচেষ্টা জঙ্গুর হলেও গোলের কৃতিত্ব পেয়ে যান এমিলি।

এই একটি মাত্র গোল ছাড়া পুরো ম্যাচে আর কোনো উত্তেজনাই ছিল না। এরপর দুই দলের মিসের মহড়া শুরু হয়ে যায়। মোহামেডান অন্তত আরও ৪-৫টি গোল করতে পারতো। জঙ্গু তিন গোল মিস করেছেন।

একে একে ব্যর্থতার কাতারে নাম লিখিয়েছেন এমিলি, জাহিদ, সবুজ, হেমন্তও।

আবাহনীর জন্য কালকের দিনটি ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। দ্বিতীয়ার্ধে তারা দাপুটে ফুটবলে উপহার দিয়ে স্ট্রাইকারদের মিসে মাঠ ছাড়তে হয় মাথানিচু করে। ঘানার স্ট্রাইকার মরিসন একাই তিন তিনটি নিশ্চিত গোল মিস করেছেন। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে তিনি মোহামেডানের গোলরক্ষক মামুন খানকে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন।

আরও দুটি মিস ৫১ ও ৫২ মিনিটে, একবার বলের সঙ্গে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন, আরে পা লাগাতে পারলেই বল চলে যেত মোহামেডানের জালে। ৭৬ মিনিটে মরিসনের বাড়িয়ে দেওয়া বলে পা লাগাতে ব্যর্থ হন আউডু ইব্রাহিম।

মোহামেডান তৃতীয়বারের মতো স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে উঠল। শনিবার সাদা-কালো শিরোপা লড়াই ফেনী সকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে। তবে ফাইনাল বলেই বেশ খানিকটা এগিয়ে মোহামেডান।

কেননা এর আগেই দুই দুইবার ফাইনালে উঠেছিল মতিঝিলের দলটি, দুইবারই তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৯৭২ সালে প্রথমবার তারা ইষ্টএন্ড ক্লাবকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। শেষবার এ আসরের ফাইনালে ১৯৯২ সালে এই আবাহনীকেই তারা হারিয়েছিল।

মোহামেডান অর্থই তো জাগরণ। ফুটবলের জাগরণ।

জাগরণ সাদা-কালো চেতনার। কাল এমিলিরা মাঠে নেমেছিলেন যেন ফুটবলকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে। কিন্তু পারলেন কোথায়? চিরপ্রতিদ্বন্দ্ব্বী আবাহনীকে তারা হারিয়েছে ঠিকই, মাঝে মধ্যে টিকিটাকাও দেখা গেছে, কিন্তু ক্রিকেটের উন্মাদনার যুগে কি আর এই ফুটবলে মন ভরে? অথচ মোহামেডানের সমর্থকদের চোখে এখনো ভাসে আশির দশকে সেই বিখ্যাত কোচ নাসের হেজাজিকে। নিখুঁত-নিপুণ প্রশিক্ষণে কী দলই বানিয়েছিলেন। আর মাঠে এমেকা, নালজেগার, সাবি্বর, কায়সার, বাদলরা কী জাদুকরি ফুটবলই না উপহার দিয়েছিলেন।

মতিঝিলের দলটি লিগে টানা তিন বছর (১৯৮৬, ১৯৮৭, ১৯৮৮) অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। বিজেন তাহেরীর কথা মোহামেডানের সমর্থকরা কখনো ভুলতে পারবেন না। ৮৮-তে তার পায়ের নান্দনিক ফুটবলে মাতোয়ারা ছিল গোটা দেশ। কিংবা ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সালের সেই মোহামেডান। যারা টানা ৭৫ ম্যাচে অপরাজিত থেকে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছিল।

দেশের ফুটবল ইতিহাসে যা এখনো স্বর্ণাক্ষরে লেখা।

কিন্তু মোহামেডানের বর্তমান কোচ পর্তুগিজ রুই ক্যাপালো তো আর নাসের হেজাজি নন। তাই কাল সুন্দর ফুটবলের চেয়ে জয়কেই তার বড় মনে হয়েছে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'জয়টাই বড় কথা। আমরা আবাহনীকে হারিয়েছি।

ছেলেরা মাঠে আজ (কাল) দারুণ খেলেছে। সবাইকে ধন্যবাদ। ' তবে মোহামেডানের মতো দলের রক্ষণাত্দক কৌশলের সমালোচনা করেছেন আবাহনী কোচ আলি আকবর পৌর মুসলিমি। তিনি বলেন, 'একে কখনো ফুটবল খেলা বলে না। ওরা ৭/৮ জনকে রক্ষণভাগে নামিয়েছে।

জানিনা মোহামেডান একটা ভালো দল হয়েও কেন এমন খেলল। '

তবে আবাহনীর কোচ যাই বলুক না কেন, আবাহনীকে হারিয়ে মোহামেডান শিবিরে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। ম্যাচ শেষে মতিঝিল থেকে ভেসে আসছিল পটকার আওয়াজ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে আবাহনীকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পাওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।