আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেইমারই স্কলারির মেসি

ম্যাচের ১৫ মিনিট বাকি। হঠাৎ করেই কল্লোলিত শব্দপ্রপাতে মুহূর্তের মধ্যে অনৈসর্গিক নীরবতা। ম্যাচের মহানায়ক মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন, দর্শকেরা একটু যেন বিহ্বল। বাকিটা সময় ‘এস্তাদিও মানে গারিঞ্চা’র হলুদের উৎসবটা কেমন যেন ফিকে হয়ে গেল। এর পরও গোল হয়েছে, উদ্যাপনেরও সুযোগ পেয়েছে ব্রাজিল, কিন্তু তুমুল হর্ষধ্বনি আগের মতো উচ্চগ্রামে সেভাবে চড়ল কই? মহানায়কের সাময়িক শূন্যতাই যেন স্তিমিত করে দিয়েছিল জনারণ্যের বিপুল কলরব।


পরশু ব্রাজিল তো আসলে নেইমারেই হাসল, নেইমারেই ভাসল। গোল উদ্যাপনে দুই হাত উঁচিয়ে দর্শকদের যেন চড়িয়ে দিলেন আবেগ-উন্মাদনার রুদ্ধশ্বাস রোলারকোস্টারে। ৪ গোলে এখন দৃষ্টিসীমায় গোল্ডেন বুট, তবে নেইমার শরীরী ভাষাতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, মারাকানায় ট্রফি জয়কেই মোক্ষ মেনেছেন। ২২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডই এখন ব্রাজিলিয়ানদের স্বপ্নের সারথি, যেমন ছিলেন পূর্বসূরি রোনালদো, রোমারিওরা।  অথচ গত কনফেডারেশনস কাপের আগেও সংশয়-দ্বিধা যেন জট পাকিয়েছিল।

এত অল্প বয়সী একটা ছেলে, এখনো তো ইউরোপেই খেলেনি। সে কি পারবে এত বিপুল প্রত্যাশার চাপ নিতে? কনফেডারেশনস কাপেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ছোট্ট গলি থেকে বিশাল রাজপথের চালক হওয়াটা তাঁর জন্য কোনো সমস্যাই নয়। বিশ্বকাপেও ছিল প্রত্যাশার গগনচুম্বী চাপ।
সেটাকে এর মধ্যেই এমনভাবে জয় করে ফেলেছেন কোচ লুইস ফেলিপে স্কলারিকে পর্যন্ত বলতে হচ্ছে, ‘আর্জেন্টিনার জন্য যেমন মেসি, ব্রাজিলের জন্য তেমন নেইমার। আর্জেন্টিনা যেমন মেসির ওপর নির্ভর করে, ব্রাজিল তেমন নেইমারের ওপর।

আসলে কেউ কেউ আছে, যারা বাকিদের চেয়ে আলাদা। ওরাই ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। ’ একজন কোচ যখন প্রকাশ্যে এই কথা বলেন, তখন ভেবে দেখুন, তাঁর হৃদয়ে ছাত্রের অধিষ্ঠান কতখানি ওপরে!
এখন ভাবলে অদ্ভুত লাগে, গত কিছুদিন কী ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধই না গেছে! অনেক নাটকের পর বার্সেলোনায় নাম লিখিয়েছিলেন। ব্রাজিলের পেলব চত্বর থেকে ইউরোপের পাথুরে আঙিনায় হাঁটতে গিয়ে বারবারই পা রক্তাক্ত হয়েছে। দলবদলের অনিয়ম নিয়ে তো কম ভুগতে হয়নি।

বার্সেলোনায় সেভাবে আলোও ছড়াতে পারেননি। কিন্তু বিশ্বকাপে সবকিছু যেন পেছনেই ফেলে এসেছেন। হলুদ জার্সি পরলেই তো তাঁর ওপর অলৌকিক কিছু ভর করে!
পরশু ক্যামেরুনের সঙ্গে জোড়া গোলে ৫২ ম্যাচে ৩৫ গোল হয়ে গেল নেইমারের, ছাড়িয়ে গেছেন রিভালদোকে। সামনে শুধু পেলে, জিকো, রোনালদো, রোমারিও, বেবেতোর মতো বিখ্যাত পূর্বসূরিরা। এভাবে খেললে সব রেকর্ডই একদিন নিশ্চিতভাবে পায়ে লুটাবে।


কিন্তু এত কম বয়সে কি এই চাপটাকে অসহনীয় মনে হয় না? নেইমারের যুক্তিটা পরিষ্কার, ‘আমি কোনো চাপ টের পাই না। সব সময় বলেছি, আমি নিজের স্বপ্ন পূরণ করছি। এটাকে আমি চাপ হিসেবে দেখিই না। এই স্বপ্নটা একদম ছোট থেকেই দেখে এসেছি, এ রকম ম্যাচে খেলার স্বপ্ন সারা জীবন দেখে আসছি। ’ সেনাপতি নিজেই শুধু দক্ষ যোদ্ধা হলে হয় না, বাকি সৈন্যসামন্তদের উদ্দীপ্ত করাটাও সমান জরুরি।

নেইমার এই দলের আনুষ্ঠানিক অধিনায়ক নন, কিন্তু এই দলের অলিখিত নেতা তো বটেই। বয়সের তুলনায় তাই তাঁর কথাও অনেক পরিণত, ‘আমি শুধু চাই আমার সতীর্থরা শুধু গোলই করবে না, বরং দলকে জেতানোর জন্য যা দরকার, তার সবকিছুই করবে। আমরা ঠিক পথেই আছি। পুরো দলটা ধীরে ধীরে আরও ভালো করছে। আমরা লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছেছি।

’ রয়টার্স অবলম্বনে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.