আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক এবং কলাম-লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের জন্ম দিন আজঃ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনপ্রিয় লেখকের জন্মদিনে শুভেচ্ছা

আমি সত্য জানতে চাই জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক এবং কলাম-লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের জন্ম দিন আজ। মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম আগে ছিল বাবুল এবং তাঁর প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ দিনটিতেই তিনি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় শিক্ষকরা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো সেটা করেছেন ১৯৫৩ সালের ৬ অক্টোবর। আর শিক্ষকদের দেওয়া এই তারিখটিই তাঁকে বহন করতে হয়েছে সব সার্টিফিকেটে, পাসপোর্টে এবং সবধরনের দাপ্তরিক কাজে।

সে যাই হোক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের জন্মদিনে শুভেচ্ছা। জাফর ইকবালের পিতা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। জাফর ইকবালের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুরে। নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া থানার বিখ্যাত পীর জাঙ্গির মুনশি'র ছেলে মৌলানা আজিমুদ্দিন মুহম্মদ জাফর ইকবালের দাদা। তিনি ছিলেন একজন উঁচুদরের আলেম এবং মৌলানা।

বাবা ফয়জুর রহমান আহমদের পুলিশের চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। পিতা লেখালেখির চর্চা করতেন এবং পরিবারের এই সাহিত্যমনস্ক আবহাওয়ায় জাফর ইকবাল খুব অল্প বয়স থেকেই লিখতে শুরু করেন। এটিকেই তিনি তার সহজ ভাষায় লিখতে পারার গুণের কারণ বলে মনে করেন। তিনি তার প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখেন সাত বছর বয়সে। ১৯৭১ সালের ৫ মে পাকিস্তানী আর্মি এক নদীর ধারে তার দেশপ্রেমিক পিতাকে গুলি করে হত্যা করে।

বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া জাফর ইকবালকে পিতার কবর খুঁড়ে তার মাকে স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারটি বিশ্বাস করাতে হয়েছিল। সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ তার বড় ভাই এবং রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট, সাহিত্যিক আহসান হাবীব তার ছোট ভাই। সিলেটের কিশোর মোহন পাঠশালায় পড়াশুনার শুরু হলেও সেখানে বেশি দিন স্থির হননি। বাবার বদলির কারণে ঘুরতে হয়েছে বিভিন্ন স্কুলে। বিভিন্ন স্কুল ঘুরে মাধ্যমিক পাশের পর উচ্চমাধ্যমিকে এসে স্থির হন ঢাকা কলেজে।

উচ্চমাধ্যমিক সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এ। ১৯৭৩ সালে অনার্স-এ দুই নম্বরের ব্যবধানে প্রথম শ্রেণীতে ২য় স্থান অধিকার করেন এবং ১৯৭৪ সালে লাভ করেন মাস্টার্স ডিগ্রি। এরপর ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৮২ সালে এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্স অর্জন করলেন PhD ডিগ্রি। তাঁর বিষয় ছিল - 'Parity violation in Hydrogen Atom. আমেরিকাতে পড়ার সময় তিনি তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ইয়াসমিন হকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুই সন্তান - বড় ছেলে নাবিল ইকবাল যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনলজিতে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন এবং কন্যা ইয়েশিম ইকবাল কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন।

ইয়েশিম ইকবাল তার পিতার কিশোর উপন্যাস আমার বন্ধু রাশেদ ইংরেজিতে রূপান্তর করেছেন Rashed, my friend নামে । ১৯৯৪ সালে তিনি আমেরিকা ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন জাফর ইকবাল দম্পতি। ড. ইয়াসমিন হক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল একাধারে লেখক, পদার্থবিদ, ও শিক্ষাবিদ। তিনি বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখা ও জনপ্রিয়করণের পথিকৃত।

এছাড়াও তিনি একজন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক এবং কলাম-লেখক। তিনি কিশোর উপন্যাসের লেখক হিসেবেও অত্যন্ত সফল। এই শাখাতেই তার প্রতিভা সর্বোচ্চ শিখর ছুঁয়েছে। তঁর লেখা অনেকগুলো কিশোর উপন্যাস বাংলা কিশোর-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। একটি জরিপের তথ্য অনুসারে, তিনি বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে লেখক হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

জরিপে ৪৫০ জনের মধ্যে ২৩৫জনই (৫২.২২%) তাঁর পক্ষে মত দিয়েছে। তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। তিনি বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, যদিও তিনি পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড গড়ে তোলার পিছনে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের গণিতে আগ্রহী করার জন্য পরবর্তীতে শুরু করেন 'গণিত অলিম্পিয়াড' কার্যক্রম।

ধীরে ধীরে এই গণিত অলিম্পিয়াড কার্যক্রমটি গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মহা উত্‍সাহ নিয়ে জটিল জটিল অংকের সমাধান করছে। গণিত শিক্ষার উপর তিনি ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছেন। এর মাঝে "নিউরনে অনুরন" বইটি গনিতে আগ্রহীদের কাছে খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাঙালি জাতিকে গল্পের মাধ্যমে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে জাফর ইকবালের অবদান অনস্বীকার্য।

এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি দেশপ্রেমিক, ইতিহাস সচেতন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বল মানুষ তৈরি করার ক্ষেত্রেও এই ব্যক্তিত্বের অবদান আজ সর্বজনবিদিত। যারা মুক্তযুদ্ধ দেখেনি তাদের জন্য জাফর ইকবাল 'মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোন' নামে এক কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত তথ্য নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করাতে, তাদের উপলদ্ধিতে সেদিনের ত্যাগ, বীরত্ব, নির্যাতনের নির্মমতা সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে শুরু করেছিলেন এই অভিনব কার্যক্রম। নতুন প্রজন্ম সেইসব দিন মনের জগতে কল্পনায় সাজিয়ে নেয়, উপলদ্ধি করে। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলীঃ উপন্যাসঃ ১।

আকাশ বাড়িয়ে দাও, ২। দুঃস্বপ্নের দ্বিতীয় প্রহর, ৩। বিবর্ণ তুষার, ৪। সবুজ ভেলভেট, ৫। কাচসমুদ্র, ৬।

মহব্বত আলীর একদিন, ছোট গল্পঃ ১। ক্যাম্প, ২। ছেলেমানুষী, ৩। নুরূল ও তার নোটবই, ৪। মাসুদ রানা সিরিজ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীঃ ১।

কপোট্রনিক সুখ দুঃখ, ২। ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম, ৩। যারা বায়োবট, ৪। টুকুনজিল, ৫। বিজ্ঞানী সফদর আলীর মহা মহা আবিস্কার, ৫।

নি:সঙ্গ গ্রহচারী, ৬। মহাকাশে মহাত্রাস, ৭। অন্ধকারের গ্রহ(২০০৮), ৮। প্রডিজি (২০১১), ৯। কেপলার টুটুবি কিশোর সাহিত্যঃ ১।

দীপু নাম্বার টু (চলচ্চিত্র রূপ), ১৯৯৬, ২। হাতকাটা রবিন ৩। দুষ্টু ছেলের দল, ৪। জারুল চৌধুরীর মানিকজোড়, ৫। আমার বন্ধু রাশেদ (চলচ্চিত্র রূপ), ২০১১, ভৌতিক সাহিত্যঃ ১।

প্রেত, ২। পিশাচিনী, ৩। নিশিকন্যা, ৪। ছায়ালীন ৫। দানব।

টিভি নাটকঃ ১। গেস্ট হাউস, ২। ঘাস ফরিঙের স্বপ্ন, ৩। শান্তা পরিবার, ৪। একটি সুন্দর সকাল মুক্তিযুদ্ধঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রভৃতি।

সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় কৃতিত্বের জন্য তাঁকে ১। বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ২০০৪, ২। শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে ২০০৫ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, ৩। কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক ২০০২, ৪। খালেদা চৌধুরি সাহিত্য পদক বাংলা ১৪১০, ৫।

শেলটেক সাহিত্য পদক ২০০৩, ৬। ইউরো শিশুসাহিত্য পদক ২০০৪, ৭। মোহা. মুদাব্বর-হুসনে আরা সাহিত্য পদক ২০০৫, ৮। মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা পদক ২০০৫, ৯। আমেরিকা এল্যাইমনি এ্যসোসিয়েশন পদক ২০০৫, ১০।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালাইমনি এ্যাসোসিয়েশন পদক '০৫ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। বর্তমানে মুহম্মদ জাফর ইকবাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব ছাড়াও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সেন্টারের পরিচালকের পদে দায়িত্ব পালন করছেন। জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের জন্মদিনে শুভেচ্ছা। তথ্যসূত্রঃ FhireDekha Forum Muhammed Zafar Iqbal  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.