আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাক্তারি ও কিছু কথা!

হয়তো একদিনে হবেনা, কিন্তু একদিন না একদিন হবেই! আমি দৈনিক ১৪-১৫ ঘন্টা ডিউটি করি, কেবল মাত্র এমবিবিএস হওয়ায় ক্লিনিকে বড়লোক রোগীদের গালমন্দ খেয়ে বাবার ড্রাইভারের সমান উপার্জন নিয়ে আসি মাস শেষে, আর খেদোক্তি ঝাড়ি ফেসবুকে! পৃথিবীর সাথে ফেসবুক ছাড়া যোগাযোগের সময় পাইনা, অনেক সময় হসপিটালের টয়লেটে বসেও একবার চোখ বুলিয়ে নেই কি হচ্ছে চারদিকে দেখার জন্য! এবং প্রায় প্রতিদিন ই দেখি ডাক্তার দের নিয়ে জনতার বিষদগার । ১) ডাক্তাররা কষাই , রোগীর গলা কেটে টাকা রাখে, গর্ভবতীকে লেবার টেবিলে রেখে দর কষাকষি করে : আপনি একবার বুকে হাত রেখে বলুন তো পৃথিবীর কোন দেশে হসপিটাল বিল না দিলে/ হেলথ ইন্সুরেন্স না থাকলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস এ / ক্লিনিকে বাচ্চা ডেলিভারি করাবে? বিল কি শুধু ডাক্তারদের পকেটে যায়? ক্লিনিক/ হসপিটাল শেয়ার দিয়ে বিলের বিরাট একটা অংশ চলে যায় নন-মেডিক্যালদের পকেটে, যারা আলু-মুলা ব্যবসায়ী। টাকা খরচ করতে না চাইলে সরকারী হাসপাতাল তো আছেই , কিন্তু সাধারণ নাগরিকের জন্য সরকারের যে ব্যবস্থা , তা আপনাদের পছন্দ হয়না , নোংরা লাগে , কাজেই ভি আই পি ট্রিটমেন্ট - প্রাইভেট ক্লিনিক । এবার বলুন- ভি আই পি সমাদর চান , আবার পয়সা খরচে আপত্তি - আমাদের কি করার আছে? আমাদের ঘরেও বউ / বাচ্চা / স্বামী আছে , তাদের নিয়ে আমাদের খেয়ে পড়ে বাঁচতে হবেনা? আমরা অসুস্থ হলেও তো একই পরিমান টাকা খরচ করে সেবা নিচ্ছি ! আমার পরিবারে একজন লেউকেমিয়া তে আক্রান্ত । প্রতিমাসে বারো হাজার টাকার ওষুধ লাগে , মাঝে মাঝে ওষুধ কেনার টাকা থাকেনা । এদেশের স্বাস্থ্যখাতে যে অনিয়ম , তার ভিকটীম তো আমরাও ! ২ ) ডাক্তার রা রোগীর পেটে ছুরি , কেঁচি রেখে সেলাই করে দেয় : প্রতিদিন যে সারা দেশে লাখ লাখ অপারেশন / সেলাই / ড্রেসিং হয়, তার মাঝে কয়টা কেস এমন শুনেছেন আপনারা? কয়টা সার্জন আসলেই চুরি/ কাঁচি/ গজ রেখেছেন পেশেন্টের পেটে? কেউ হয়ত কার মুখে এমন একটা ঘটনা শুনেছিল , সেটাই মুখে মুখে ঘুরে তিল থেকে তাল হয়ে গিয়েছে! বলছিনা এই ভুলটা জায়েজ , কিন্তু আমেরিকান ডাক্তার রা কি কখনো এরকম ভুল করছেন না? ল স্যুট / লাইসেন্স বাতিল করে ই ওরা ক্ষান্ত হয় , পুরো ডাক্তার জাত টাকে মাটিতে টেনে এনে নাকে খত দেওয়ায় না! হুমায়ুন আহমেদ স্যার আমাদের চিকিৎসায় মারা গেলে পুরো দেশে যে কত ক্লিনিক ভাঙচুর হত , তা চিন্তা করে আমি শিউরে উঠি ! ৩) বিশ্বজিৎ ও ডাক্তার দের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকদের মিথ্যাচার : প্রথমত ডিউটি ডাক্তারের ফার্স্ট এইড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে মিথ্যা, অতঃপর ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে জোচ্চুরি; হলুদ সাংবাদিকতার সবচেয়ে সহজ টার্গেট এখন আমরা! প্রশ্ন উঠতে পারে প্রতিবাদ করিনা কেন? কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হল, কয়জন ডাক্তারের সময় আছে প্রতিটা মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করার? সাংবাদিকদের দুই পয়সা আসে মিথ্যা থেকে, সেই মিথ্যা খবর পড়ে প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের দুই পয়সা আয়ের সময় চলে যায়। এক ঘরে থেকে বাবা মা'র মুখ দেখার ও সময় হয়না! এর মাঝে এই উটকো আপদ ঘাড়ে না চাপালেই কি নয়? ৪) ডাক্তাররা ২ মিনিট রুগী দেখেই ৫০০ টাকা ভিজিট নিয়ে নেন: কেন নেবেন না? আপনারা এটা জানেন; ৫০০ টাকা ভিজিট নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে একজন ডাক্তারকে কত হাজার টাকার বই কিনতে হয়, কত মাস বিনা বেতনে চাকরি করতে হয়, কত বেলা আধাপেটা/নাখেয়ে থাকতে হয়? আর তার আগ পর্যন্ত ৫০০ টাকা আয়ের জন্য উদয়াস্ত ক্লিনিকে কাজ করে যেতে হয়! সিএনজি টেক্সি চালানো শিখতে লাগে ১ মাস, সেটা চালিয়ে দশ মিনিটের পথ নিয়ে একজন ড্রাইভার নেন ১০০ টাকা, আর ২৮ বছর কঠোর পড়াশুনার পর একজন ডাক্তার ৫০০ টাকা নিলে খুব বেশি হয়ে যায়??? আমেরিকায় আমার যতজন বন্ধু আছেন, তাদের সর্দি, কাশি, জ্বর, হাড় ভাঙা- কোন বিপদেই দেখিনি প্রাইভেট ডাক্তারের কাছে যেতে; কেননা ডাক্তারের ভিজিট যে ৫০০ ডলার (৪০,০০০ হাজার টাকার কিছু বেশি) তা বহন করার সাধ্য তাদের কারোই নেই। কাজেই সব ইমারজেন্সিতে জেনারেল/কমিউনিটি হাসপাতালের ইমারজেন্সি রুমেই আমজনতার সাথে তাদের লাইন দেয়া লাগে! যদিও সেখানে রোগী অনুপাতে ডাক্তারের সংখ্যা পর্যাপ্ত এবং ইমারজেন্সি রুমের পরিবেশ অনেক সুন্দর; কিন্তু সে পরিবেশ আমাদের সরকারি হাসপাতালে দিতে না পারার জন্য আমরা তো দায়ী নই, সরকারকে দায়ী করুন! পরিশেষ: এদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতি, তা কি কারো চোখে পড়েনা? ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা যখন লাখ টাকা নিয়ে নেন, সেটা দেখেন না? এদেশে কোন নাগরিক নিজ দায়িত্ব পালন করছেন? একতরফা আমাদের দায়ী করা কেন? এখন গিয়ে গিয়ে সবার পায়ে ধরে ধরে বলতে হবে আমাদের মাফ করে দিতে, যে সিস্টেমের দোষে পুরো দেশ বাসী ভুগছে, তার দায় যেন আমাদের গায়ে না ফেলে?!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.