আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিটাগাংএ আজ থেকে একচল্লিশ বছর আগে এদিনে যারা যারা ছিলেন।

শরীরে শরীর নয়, ঠোঁটে ঠোঁট রাখাও নয়, মূহুর্তের ছোঁয়াও নয়, একটু দেখাতেই লিটার খানেক অগ্নিজলের ঘোর। চিটাগাং শহর স্বাধীন হয়েছিল ১৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ এ। ১৬ ডিসেম্বরের ঢাকায় পাকি বাহিনীর আত্ম সমর্পন আমরা চিটাগাং এ পাকি অধিকৃত ও মীর কাশেম আলী (অধুনা স্বত্তাধিকারী, দিগন্ত টেলিভিশন) কতৃক ভীত, সন্ত্রস্ত ও আতংকিত অবস্থায় প্রত্যক্ষ করি। সামুর নিবন্ধিত ব্লগারের সংখ্যা এখন লাখের কোঠায়, নিবন্ধিত নন এমন অনেকেই এই ব্লগে বেড়াতে আসেন। আমার আজকের এই পোস্ট সেই সব ব্লগার ও ভিজিটারদেরকে উৎসর্গকৃত যারা সেদিন চিটাগাং এ অবস্থান করছিলেন।

"ষোল তারিখ সন্ধ্যায় খবর আসলো ঢাকায় পাকিরা সারেন্ডার করেছে। কিন্তু আমরা সেদিন কোন আনন্দ করতে পারিনি। চিটাগাংএর পাকিরা তখনো বিরাজমান। আর মীর কাশেমের আল বদর বাহিনীর তৎপরতা কথা কানে আসছে ক্রমাগত। সারারাত উৎকন্ঠায় সবাই নির্ঘুম কাটালাম।

সে এক বিচিত্র অনুভূতি। একদিকে প্রচন্ড আনন্দ, যে আনন্দ প্রকাশের কোন ভাষা আমার জানা নেই। অন্যদিকে চরম উৎকন্ঠা-আল বদরের-বিহারীদের-পাকিদের। পরদিন চিটাগাংএ পাকিরা আত্মসমর্পন করলো। হাজী সাহেবের বাড়ির লোকজন ছাড়া আমাদের পুরো পাড়ার সব লোকজন বেড়িয়ে এল রাস্তা।

যারা ছিল নিভৃতচারী, মিত ভাষী, অত্যন্ত সংযত, তাদেরকেও দেখলাম ধেই ধেই করে নাচতে। সে এক অপুর্ব দৃশ্য। জীবনে এত আনন্দের দিন ক'জন মানুষের ভাগ্যে সৃষ্টিকর্তা দিয়ে থাকেন? কত সহস্র বছরে একসাথে এক শহরের সবাই একই কারনে খুশিতে উন্মাদ হয়ে ওঠে? বাবা আমাদেরকে নিয়ে প্রথমেই চলে গেলেন পতেংগা এয়ার পোর্টে। গাড়ী রানওয়েতে উঠিয়ে বল্লেন "দেখা যাক, টেইক অফ করতে পারি কিনা। " গাদাগাদি করে আমরা ছ' ভাই বোন পেছনের সিটে বসা, সামনে মার কোলে দু' বছরের শিশু আমার সবচে' ছোট বোনটি।

গাড়ীর গতিবেগ বাবা ক্রমাগত জানিয়ে যাচ্ছেন রানিং কমেন্ট্রির মত করে। ষাট, সত্তুর আশি.. স্পিডোমিটারের কাঁটা আশি (মাইল) ছাড়ালো। ভারতীয় বিমান বাহিনীর সৌজন্যে রানওয়েতে মাঝারি আকারের অগনিত পুকুরের সৃষ্টি হয়েছিল। হঠাৎ দেখি সেরকম একটা পুকুরের দিকে ধাবমান আমাদের গাড়িটা। তারপর আর কিছু মনে নেই।

যখন হুশে ফিরি, তখন দেখি যে গাড়ি দাঁড়িয়ে। পুকুরটা অনেক পেছনে ফেলে এসেছি। সেদিন আমাদের সবারই কপালে সাক্ষাৎ মৃত্যু ছিল। পরম করুণাময় তাঁর নিজে অপার মহিমায় আমাদেরকে বাঁচিয়ে দিলেন। পতেংগা থেকে আমরা শহর পানে চল্লাম।

সল্টগোলা, ৪(?) নম্বর জেটি, আগ্রাবাদ, পাঠান টুলী দেওয়ান হাট, টাইগার পাস, নেয়াজ স্টেডিয়াম, নেভাল এভিনিউ, লাভ লেইন, ইসমাইলিয়াদের ইবাদত খানা, ডিসি হিল, জুবলী রোড, মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুল, বিপনী বিতান, কর এ্যান্ড কোং (তখনকার প্রসিদ্ধ খাবারের দোকান), মুসলিম হাই স্কুল, আন্দর কিল্লা................ দেব পাহাড়, চন্দন পুরা, চক বাজার, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, মেডিক্যাল কলেজ, মোবারক স্টোর (এখন নেই, তখনকার একটি ল্যান্ড মার্ক), নাসিরাবাদ, ষোল শহর, ও আর নিজাম রোড আবার টাইগার পাস-সবখানেই একই দৃশ্য আত্ম হারা মানুষের উল্লম্ফ কুন্দন, ভারতীয় বাহিনীর সদস্যদের সাথে কোলাকুলি, তাদের ফুলের মালায় বরণ করা- সে এক অভুতপর্ব দৃশ্য। জয় বাংলা ছাড়া আর কোন ধ্বণি, মুখাচ্চোরিত আর কোন শব্দ শুনিনি। এমন কোন ভাষা সৃষ্টিকর্তা মানুষকে দেননি, যে ভাষায় সে আনন্দ প্রকাশ করা যায়। " সুত্রঃ ঊনসত্তর থেকে পঁচাত্তর, ত্রিশোনকু, প্রকাশকঃ ইফতেখার আমিন, শব্দ শৈলী, ৩৮/৪ বাংলাবাজার, ঢাকা, পৃষ্ঠাঃ ১৬৯ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।