আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোল্ডেন রাইস: সোনালী সম্ভাবনা? না-কি সর্বনাশের কৃষ্ণগহ্বর?

আসুন ভালো থাকি গোল্ডেন রাইস নামের এক প্রকার ধানের চাষ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ধান গবেষণা সংস্থা (বিআরআরই) সম্প্রতি এ খবর জানিয়েছে। বিআরআরআই’র প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই ধান বাংলাদেশকে ভিটামিন-এ ঘাটতিজনিত সমস্যা মোকাবেলায় সক্ষম করে তুলবে। আমাদের দেশে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন-এ ঘাটতি জনিত সমস্যা যথেষ্ট প্রকট, আর তাই এ ধরনের সংবাদ নিঃসন্দেহে আশাব্যাঞ্জক। যেহেতেু ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য, সুতরাং সেই খাদ্য গ্রহণ করলে যদি ভিটামিনের অভাবও দূর করা যায়, তবে তো তা সোনায় সোহাগা।

বিষয়টি এরকম সোজাসাপ্টা হলে ভালই হতো। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না নানা কারণে। গোল্ডেন রাইস নামক ধানকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। এই ধান নিয়ে মূলত যে ধরনের বিতর্কের উপস্থিতি দেখা যায়: • প্রথমত এর বৈজ্ঞানিক বিষয় নিয়ে মতদ্বৈততা • দ্বিতীয়ত এর সাফল্য ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মতবিরোধ এবং • তৃতীয়ত এর বাণিজ্যিকীকরণ নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় গোল্ডেন রাইস জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে উদ্ধাবিত এক ধরনের ধান। এই ধান বীজের সঙ্গে ভিটামিন-এ যোগ করে দেওয়া হয়েছে।

আমি বিজ্ঞানের ছাত্র নই, তাই বিজ্ঞানের জটিল ব্যাখ্যা উপস্থাপনে আমি স্বাভাবিকভাবেই অপারগ, কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে আমি জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কিছু বিপদের কথা জেনেছি। এভাবে তৈরি করা বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যের বিপদের কথাও আমি শুনেছি। আমি তাই সেই বিষয়গুলোই শুধু তুলে ধরতে চাই। জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবিত শস্য চাষ করলে যে ধরনের সমস্যা হতে পারে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, সেগুলো হলো: • এসব চাষে প্রচুর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়, ফলে জমির উর্বরতা কমে যায় • উপকারী বিভিন্ন কীট পতঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে • প্রচুর আগাছা নাশক ব্যবহার করতে হয়, ফলে এক সঙ্গে একাধিক ফসল চাষ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে • এসব শস্যের বীজ কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে হয় • অনেক সময় এগুলো চাষের সঙ্গে জড়িতদের নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় • আশপাশের অন্যান্য সাধারণ শস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইত্যাদি। এসব সমস্যার আশংকা যে অনেকটাই সত্যি তার প্রমাণও আছে অনেক।

দুই একটি উদাহরণ দেওয়া যাক: • ভারতের অন্ধ্রা প্রদেশে দেখা গেছে, জিএম জাতের তুলা চাষের সঙ্গে জড়িত কৃষকদের গায়ে বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। • অন্ধ্রা প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব ও হারিয়ানা প্রদেশের কিছু এলাকায়, যেখানে এ ধরনের তুলা চাষ হয় সেখানে পশু পাখির রোগের প্রকোপ ও মৃত্যুহার বেড়ে গেছে। • ভারতে উক্ত তুলা চাষে আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় প্রচুর কৃষক অত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ তাদেরকে প্রচুর ফলনের লোভ দেখিয়ে তাদের কাছে বীজ বিক্রি করা হয়েছিল এবং তারা অনেক ঋণ করে জমিতে সেই তুলা চাষ করেছিলেন। এবারে কয়েকটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনের উদাহরণ দেওয়া যাক: - ১৯৯৩ সালে ব্রাজিলের এক ধরনের সয়াবিনের উপর গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কার কিছু গবেষক। এই সয়াবিনে বাদামের কিছু জিন প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।

তারা দেখতে পান, যেসব লোকের বাদামের প্রতি এলার্জি আছে তারা ঐ সয়াবিনের সংস্পর্শে এলে মারাত্মক এলার্জিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, অর্থাৎ এলার্জির মাত্রা বেড়ে যায়। - ১৯৯৩ সালে ব্রাজিলের এক ধরনের সয়াবিনের উপর গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কার কিছু গবেষক। এই সয়াবিনে বাদামের কিছু জিন প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। তারা দেখতে পান, যেসব লোকের বাদামের প্রতি এলার্জি আছে তারা ঐ সয়াবিনের সংস্পর্শে এলে মারাত্মক এলার্জিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, অর্থাৎ এলার্জির মাত্রা বেড়ে যায়। - ১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যের নিউট্রিশন এবং টক্সিকোলজি বিজ্ঞানী আপ্রাড পুৎসাই জিএম টমেটোর উপর একটি গবেষণা চালান।

তিনি দেখতে পান যে, এই টমেটো খাওয়ানো হলে ইঁদুরের ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে এবং সেগুলোতে অস্বাভাবিক কিছু দৈহিক পরিবর্তন হচ্ছে। - ১৯৯৯ সালে জার্নাল অব মেডিসিন ফুড-এ ড. মার্ক লেপ্প একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, কিছু উপাদান যেগুলো ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে, সেগুলোর উপস্থিতি সাধারণ সয়াবিনের তুলনায় জিএম সয়াবিনে অনেক কম। - জিএম শস্য ও খাদ্যের অন্যতম প্রধান কোম্পানি মনসান্তো। ২০০৪ সালে তাদেরই পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, জিএম ভূট্টা ইঁদুরের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে।

- ২০০৫ সালে কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক এন্ড ইন্ডান্ট্রিয়াল রিসার্চ ওরগানাইজেশন (অস্ট্রেলিয়া) পরিচালিত এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, এক ধরনের জিএম মটর ইঁদুরের ফুসফুসে মারাত্মক জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করছে। - খুব সাম্প্রতিক একটি উদাহরণও দেওয়া যেতে পারে। বিশ্ববিখ্যাত টেলিগ্রাফ পত্রিকায় সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে জিএম সয়াবিন চাষের বিপর্যয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে লুইস গ্রে বলছেন যে, সবুজ সোনা হিসেবে পরিচিত এই সয়াবিন এখন বিষ হিসেবে পরিণত হয়েছে। তিনি বলছেন, জিএম সয়াবিন চাষের ফলে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়েতে এর চাষী ও আশপাশের মানুষ নানা ধরনের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

কয়েকজন এই ধরনের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন বলে উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। লুইস’র আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জিএম সয়াবিনের কিছু উপাদান শিশু স্বাস্থের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করে। এসব কারণে বিশ্বের নানা প্রান্তে জিএম শস্য চাষের মাত্রা কমে আসছে। বিগত ৩ দশক ধরে জিএম শস্য নিয়ে নিয়ে ব্যাপক বিনিয়োগ আর গবেষণা করে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে জিএম শস্যের ভূমিকা এখনও নগণ্যই বলা চলে। এখনও জিএম শস্য চাষ গুটি কয়েক দেশে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কানাডা, ভারত ও চীনে সারা বিশ্বের জিএম শস্যের ৯৫% চাষ করা হয়। বাকি অংশ চাষ হয় অন্যান্য ১৯টি দেশে। সারা পৃথিবিতে বিদ্যমান কৃষি জমির পরিমাণ প্রায় ৪.৯ বিলিয়ন হেক্টর, এর মধ্যে ২০০৯ সালে জিএম শস্য চাষ হয় মাত্র ১৩৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে। যা মোট কৃষি জমির মাত্র ২.৭%। অব্যাহত গবেষণা ও প্রচারণার পরেও বিশ্বব্যাপী জিএম শস্য নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই।

পৃথিবির জিএম চাষের শতকরা ৬০% হয় যুক্তরাষ্ট্রে, দেশটি জিএম শস্যের অন্যতম শক্তিশালী সমর্থক। সেই যুক্তরাষ্ট্রেই নানা সমস্যার কারণে জিএম আলফালা (একধরনের উদ্ভিদ, মূলত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়)-এর বাণিজ্যিক চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্রাজিলে বেয়ার ক্রপ সায়েন্সের জিএম ভূট্টা চাষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ভারতে জিএম ব্রিনজাল (বেগুণ) চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইউরোপেও জিএম চাষ কমে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের তুলনায় পুরো ইউরোপে জিএম চাষের হার ২৩% কমেছে।

জার্মানি ব্যাপকভাবে জিএম শস্য চাষ কমিয়ে দিয়েছে, ২০০৮ সালের তুলনায় দেশটিতে এ ধরনের চাষ কমেছে ৯৯%, রোমানিয়া কমিয়েছে ৮৭%। গোল্ডেন রাইসের উদ্ভাবক বা এর প্রচারক বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক নীতি-নৈতিকতা বিরোধী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আছে। এর ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে গোল্ডেন রাইসও। ২০০৯ সালের একটি ঘটনা এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে। ঐ সময় গোল্ডেন রাইস ক্লিনিক টেস্ট টিমের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক রবার্ট রাসেল।

মানুষের উপর গোল্ডেন রাইসের পরীক্ষা চালানোর প্রতিবাদে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ১৯ জন বিজ্ঞানী তার কাছে একটি খোলা চিঠি পাঠান। বিশ্বজুড়ে আলোচিত ঐ চিঠিতে অভিযোগ করা হয় যে, সাধারণ রীতি হলো কোনও কিছু আগে অন্য কোনও প্রাণীর ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে সফল হলে পরে সানুষের উপর সেই পরীক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু গোল্ডেন রাইসের বেলায় সরাসরি মানুসের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে। শুধি তাই নয়, মানুষের উপর পরীক্ষা চালিয়ে কী ফল পাওয়া গেল তাও এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। সুতরাং গোল্ডেন রাইস আদৌ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ কি-না তাও কিন্তু প্রশ্নের মুখে আছে।

জিএম শস্য নিয়ে বাণিজ্যিকীকরণের প্রশ্ন তো আছেই। বিশ্বব্যাপী জিএম শস্য নিয়ে প্রচারণা চালায় International Service for the Acquisition of Agri-Biotech Applications (ISAAA). এই সংস্থাটি নিজেকে অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করে, কিন্তু এর পৃষ্ঠপোষক কারা? জিএম শস্য ব্যবসার প্রধান দুই কোম্পানি মনসান্তো আর বেয়ার ক্রপ আছে তাদের পৃষ্ঠপোষকদের তালিকায়, আরও আছে ইউএসএআইডি। পৃষ্ঠপোষকদের তালিকায় ভারতের কিছু বীজ কোম্পানিও আছে (Bejo Sheetal Seeds Pvt. Ltd, India, Maharashtra Hybrid Seeds Pvt. Ltd (Mahyco), India, Rasi Seeds Ltd., India)। গোল্ডেন রাইস একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প। প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পের অন্যতম অর্থ যোগানদাতা রকফেলার ফাউন্ডেশন।

বলা হচ্ছে এই অর্থ ব্যয় করার মূল উদ্দেশ্য গরিবের উপকার! আসলে কি তাই? তাহলে গোল্ডেন রাইসের বীজ সংরক্ষণের অধিকার দেওয়া হোক আমার কৃষককে। বিশ্বব্যাপী জিএম শস্যের বিরুদ্ধে উদ্বেগ-আশংকা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এর বিরুদ্ধে জনমত। কিছু দেশ ইতিমধ্যে জিএম শস্য প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করছে। জার্মানি, অস্ট্রিয়া, গ্রিস, হাঙ্গেরি, লুক্সেমবার্গ মনসান্তোর ভূট্টা এমওএন ৮১০ নিষিদ্ধ করেছে। সম্প্রতি এক জরিপের ফলে দেখা যাচ্ছে যে, ইউরোপের ৬১% নাগরিক জিএম শস্যের বিরুদ্ধে।

যেহেতু গোল্ডেন রাইস একটি জিএম শস্য সেহেতু এর বেলাতেও উপরের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। প্রশ্ন হলো উল্লেখিত বিষয়গুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে কি-না? পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইসের চাষের অনুমোদন প্রদান হয়েছে কি-না? এক্ষেত্রে আরও একটি মহা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, গোল্ডেন রাইস-ই কি ভিটামিন-এ ঘাটতি পূরণে একমাত্র উপায়? অন্য কোনও নিরাপদ উপায় বা সুযোগ কি আমাদের কাছে নেই? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা খুবই জরৃুরি। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বজুড়েই ভিটামিন-এ ঘাটতি জনিত স্বাস্থ্য সমস্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএ ও) এর ২০০৯ সালের এক তথ্য অনুযায়ী সে বছর বিশ্বব্যাপী ১.০২ বিলিয়ন মানুষ ছিল যারা অপুষ্টিতে আক্রান্ত। ৫ বছরের শিশুদের প্রায় ৩৩% এবং গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে প্রায় ১৫% কোনও না কোনও ভাবে ভিটামিন-এ ঘাটতিতে ভূগে।

বাংলাদেশে শিশু ও নারীদের অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ ভিটামিন-এ ঘাটতি। শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধিতেও এর অবদান রয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে শিশুদের মধ্যে রাতকানা রোগের প্রকোপ ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী প্রাক স্কুল শিশুদের মধ্যে রাতকানা রোগের প্রকোপ ২০০২ সালে .২%-এ নেমে আসে, ১৯৮২-৮৩ সালে এই হার ছিল ৩.৭%।

২০০৫ সালে এসে এই হার দাঁড়ায় মাত্র .০৪%। অন্য আরেকটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে শিশুদের মধ্যে রাতকানা রোগের প্রকোপও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ১৯৬২-৬৪ সালে ৬ বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুদের ৪.১% রাতকানা রোগে ভূগতো, ২০০২ সালে সেই হার নেমে আসে মাত্র ০.১%-এ। ইউনিসেফ’র রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ৯০% -এর উপরে শিশুদেরকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে গোল্ডেন রাইস ছ্ড়াাই বাংলাদেশ ভিটামিন-এ ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে।

তাছাড়া এটা বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত যে, সবুজ শাক-সবজি, ছোট মাছ ইত্যাদি খুব সস্তা ও সহজ লভ্য খাবারের মধ্যেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-এ পাওয়া যেতে পারে। দেশি জাতের অনেক চালের মধ্যেও ভিটামিন-এ পাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে প্রায় সব ধরনের আতপ চালই ভিটামিন-এর আধার। সুতরাং খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে, এর পরেও গোল্ডেন রাইস কেন দরকার? মনে রাখা দরকার, গোল্ডেন রাইসের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক রকফেলার ফাউন্ডেশন ও আইআরআরআই, যারা আবার বিশ্বজুড়ে ভিটামিন-এ ঘাটতি সৃষ্টির জন্য অভিযুক্ত! রকফেলার ও ফোর্ড ফাউন্ডেশন আইআরআরআই প্রতিষ্ঠা করে এবং আইআরআরআই বিশ্বজুড়ে তথাকথিত সবুজ বিপ্লবের নামের, উৎপাদন বৃদ্ধির নামে ধান চাষের উপর জোর দিতে গিয়ে কৃষি বৈচিত্রের উপর হামলা চালায়। আমাদের দেশের মানুষ ভাত বেশি খায়, ভাতই এখানে প্রধান খাবার।

কিন্তু শুধু ভাতের উপর নির্ভর করে খাবারে বৈচিত্র আনতে পারলে ভিটামিন, মিনারেলস-এর অভাব সহজেই পূরণ করা যায়। ভিটামিন-এ ঘাটতি পূরণের বিশ্বের অনেক দেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে বিভিন্ন সহজ পদ্দতি অবলম্বন করে। সুতরাং, এটা বোধ হয় জোর দিয়েই বলা যায় যে, ভিটামিন-এ-এর অভাবজনিত সমস্যা মোকাবেলা জন্য বিকল্প বেশ কিছু পদ্ধতি সারা বিশ্ব জুড়েই আছে। বাংলাদেশও খুব ভালভাবেই এক্ষেত্রে সফল হয়েছে এবং এই সাফল্য ধারাবাহিক। ফলে, গোল্ডেন রাইসের প্রয়োজন খুব আছে কি-না তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে বৈ-কি।

ধান আমাদের প্রধান খাদ্য শস্য। সুতরাং এই ধানের বেলায় এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট নিরাপদ নয় বলে পরীক্ষিত একটি নতুন জাত নিয়ে আসাটা তাই শংকাই তৈরি করে। যারা জিএম শস্যের ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখেন, তারা জানেন, প্রায় প্রতিদিনই পৃথিবির নানা প্রান্ত থেকে জিএম শস্যের উপর নানা নেতিবাচক খবর আসছে। একারণেই আমাদের জীবনযাত্রার প্রাণভোমরা কৃষি ও কৃষকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটু ভেবে চিন্তে নেওয়াই মঙ্গলজনক। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.