আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুধু দূর্নীতিবাজদের জন্য

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা এখানে প্রকাশিত .............................. আজকের আধুনিক ও সভ্য সময়ে এক ভয়াবহ ব্যধি আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে সর্বত্র। এ ব্যধির নাম দুর্নীতি। এটি এমন এক বিষবৃক্ষ, যার প্রতিটি ডালপালা আজ ঢুকে পড়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রের পরতে পরতে। অসহায় মানুষের আহাজারি আর অস্থিরতায় ঢাকা পড়েছে এ সুন্দর পৃথিবী। আজকের পৃথিবীর প্রথম সমস্যা দুর্নীতি।

দারিদ্র কিংবা জনসংখ্যা নয়, দুর্নীতি আমাদের সর্বগ্রাসী সমস্যা। সামান্য পিয়ন থেকে নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে লোভ-লালসার এ অভিশাপ। বড় দুঃখের বিষয়, সুমহান ধর্ম ইসলামের অনুসারী আমরাও এ থেকে মুক্ত নই। মুসলিম বিশ্বের ২য় বৃহত্তম বাংলাদেশ দুর্নীতিতে এবারও শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর অন্যতম। কোথায় রাখি এ লজ্জা ও কলঙ্ক।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যেদিন থেকে ইসলামকে আমরা শুধু মসজিদে রেখে চলে এলাম, সেদিন থেকেই শুরু আমাদের অধঃপতন। সেই যে শুরু, আজ অবধি আমরা গড়িয়ে চলেছি, এগিয়ে চলেছি অন্ধকারের দিকে। আমরা ভুলে বসে আছি, ইসলাম তো শুধু ইবাদতের ধর্ম নয়, এটি একটি জীবনবিধান। ব্যবসা বাণিজ্য এবং অফিস আদালতের সামান্য টিপ-স্বাক্ষরও এর বাইরে নয়। নয়তো আল্লাহ পাক কেন শুধু মুমিনদের ডেকে বলছেন, ‘‘হে ঈমানদার বিশ্বাসী বান্দারা, তোমরা একে অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে হাতিয়ে নিও না।

তবে নিজেদের সন্তুষ্টচিত্তে ব্যবসা বানিজ্য হলে তা ভিন্ন কথা। নিজেদেরকে তোমরা ধ্বংস করো না। আল্লাহ পাক তো তোমাদের জন্য বড়ই দয়াময়। যে এমন করবে, আমি খুব শিগগিরই তাকে আগুনে ঠেলে দিব, এটি আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। ’’ (সূরা নিসা-২৯) আমি কিংবা আপনি- নিজেদের ইবাদতে সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি কিংবা ছুটে যাওয়া- এসব তো একান্তই আমাদের এবং আল্লাহ পাকের মাঝে সীমাবদ্ধ।

তিনি চাইলে শিরক ছাড়া যে কোন অপরাধ- যা তার ইবাদতের সাথে সম্পৃক্ত- মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের পারস্পরিক লেনদেন কিংবা অফিস আদালতের কায়-কারবার- এ সবকিছূ মানুষের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষের এসব অধিকারের বিষয়ে আল্লাহ পাক ততবেশি কঠোর যতবেশি তিনি নিজের বেলায় দয়ালু। দুর্নীতির কোনো সংজ্ঞা নেই। এটি শিখিয়ে দেওয়ারও কিছু নয়।

যে কাজে মানুষের সুস্থ বিবেকে বাধা আসে, সেটির নামই তো অনৈতিকতা। আর এখান থেকে দুর্নীতির অভিশপ্ত পথচলা। শুধু কি হারাম বলে এর ভয়াবহতা বোঝানো যাবে? রাসূল সা. স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, হারাম উপার্জন থেকে তৈরি হওয়া এক টুকরো মাংস যদি কারো শরীরে থাকে, তবে জান্নাত তার জন্য নয়। তার জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত। (আহমদ) যে দুর্নীতিবাজের অন্যায়ে অতিষ্ঠ অসংখ্য মানুষ- কিভাবে তিনি নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন? অথচ রাসূল সা. বলে গেছেন, সেই তো প্রকৃত মুসলমান যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।

(বুখারী ও মুসলিম)। এ পৃথিবীতে লোভের বশবর্তী হয়ে অহরহ মানুষের কাছ থেকে যারা সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছে, রাসূল সা. তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে জানাচ্ছেন, অন্যায়ভাবে কারো কাছ থেকে অর্জিত সামান্য কিছুও যদি তোমার কাছে থেকে থাকে, তবে তা ফিরিয়ে দাও। তুমি এ থেকে দায়মুক্ত হও। নয়তো কিয়ামতের মাঠে কোথাও দিনার দিরহাম খুঁজে পাবে না। সেদিন তোমার সবগুলো পূণ্য দিয়ে দেয়া হবে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় বেচারাকে, আর যদি তোমার কোন নেকও না থাকে, তবে ঐ বেচারার কৃত সব গুনাহ তোমার মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হবে।

তারপর সেসবসহ তোমাকে ফেলে দেয়া হবে জ্বলন্ত জাহান্নামে। (বুখারী) অন্যান্য হাদীসগ্রন্থ থেকে জানা যায়, এমনও অনেক লোককে কিয়ামতের দিন হাজির করা হবে, যাদের আমলনামা নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত দিয়ে ঠাসা। তবুও তাদেরকে জাহান্নামে ফেলে দেওয়া হবে। কারণ এত ইবাদতগুযার হওয়ার পরও তারা মানুষের সম্পদের প্রতি লোভ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারতো না। এসব তো পরকালের বয়ান।

কিন্তু মানুষের সম্পদ নিয়ে যারা এভাবে লুটোপুটি খেলে, এ পার্থিব জগত থেকেই তো তাদের শাস্তি শুরু। পারিবারিক অশান্তি আর অর্জিত সম্পদে আকস্মিক ক্ষয়ক্ষতি লেগেই থাকে তাদের জীবনে। সমাজের যারা দুর্নীতিবাজ- তাদের কেউ কি সুখে আছেন? কিংবা আদৌ কি তারা চিনেছেন সুখের সন্ধান? পেয়েছেন প্রকৃত সম্মান? পদ-পদবীর বড়াই চিরদিনের নয়, একদিন এর শেষ হবে। এক পরাক্রমশালী বিচারকের সামনে দাঁড়াতে হবে একদিন। দুর্নীতিবাজ নয়, তার আঙুল সেদিন সাক্ষ্য দিবে তার অপকর্মের।

আমরা কেন ভুলে যাই, আমাদের প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাস লিখিত হচ্ছে অদৃশ্য খাতায়। ‘খুব কাছ থেকে আমাকে দেখছেন মহান শক্তিমান’, তার ‘সার্বক্ষণিক উপস্থিতি ও নজরদারি’র ভয় অন্তরে না থাকলে কি হবে এসব সিসিটিভি কিংবা বিশ্বজোড়া দুর্নীতি নির্মূলের আধুনিক গবেষণাপত্র দিয়ে!! আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগে অবতীর্ণ কুরআনের সূরা কাফ’ এর ১৬ নং আয়াতে আল্লাহ পাক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আমিই তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং আমি খুব ভালো করেই জানি, তার মন তাকে কি কি কুমন্ত্রনা দেয়, আমি যে তার ঘাড়ের রগের চেয়েও খুব কাছে থাকি। প্রিয় পাঠক, দুর্নীতি শুধু ‘অন্যায়’ কিংবা ‘হারাম’ নয়, এটি একটি ব্যধি- মানুষের অন্তরেই এর উৎপত্তি। শুধু সংসার জগত নয়, পরকালেরও সব নিঃশেষ হয়ে যায় এর তিক্ততায়। একমাত্র শক্তিমান মহান আল্লাহ পাকের ভয় ও তার সার্বক্ষণিক উপস্থিতির অনুভূতি হৃদয়ে ধারণ করা ছাড়া এর কোন ওষুধ নেই।

এ অনৈতিকতা নিমূর্লের অন্য কোন পন্থাও নেই। তা-ই যদি থাকতো, তবে জ্ঞানে বিজ্ঞানে আধুনিক এ পৃথিবীতে এ অন্যায় থাকার কথা ছিল না। দিনের আলোয় শুধু ভাল থাকা নয়, রাতের অন্ধকারেও সৃষ্টিকর্তা আমাকে দেখছেন, আমার সঙ্গে আছেন, এটিই তো মুসলমানের রক্ষা কবচ। দুর্নীতিবাজদের শিক্ষা নেওয়ার প্রথম সবক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.