আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এভাবেই হয়তো হাজারো রাজীব ঝরে যায়

জেগে, ঘুমিয়ে, আড্ডায়, গল্পে, প্রার্থনায়, কবিতায়, সিনেমায়- সবখানে শুধু স্বপ্ন দেখি। আবদুল কাদেরের কথা মনে আছে তো ?? সেই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগে পড়ুয়া ছেলেটি, যাকে পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে থানা-হাজতে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছিলো। সেই নির্যাতনের প্রতিবাদে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে, মিডিয়ায় ঝড় উঠেছিলো। এখন সেই কাদের এখন অনেকটাই সুস্থ এবং নিয়মিত ক্লাসও করছেন। যদিও তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে মুল্যবান কিছু সময়।

তখন যদি মিডিয়াতে কিংবা রাষ্ট্রীয় দৈনিকগুলোতে এ ব্যাপারে জোরালো প্রতিবাদ না হত তাহলে হয়তো কাদেরের ব্যাপারটা আজীবন অন্ধকারেই থেকে যেত। মিথ্যা অভিযোগে থানায় কাটানো তার প্রথম রাতের দুঃষহ স্মৃতি নিয়ে সে ধুকে ধুকে জীবনটাকে পার করত। এই ঘটনা থেকেই বুঝা যায় যে বাংলাদেশ পুলিশের হাত কত বড় !! আমাদের সবার চোখের অন্তরালে এমনই আরেক "কাদের" মিথ্যা অভিযোগে জেলের ঘানি টানছে। তার পুরো নাম রাজীব হোসেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র।

তাকে গত ৬ নভেম্বর মিরপুর ১ নম্বর থানায় বোমা বিস্ফোরণ এবং ১০ নভেম্বর মিরপুর ২ নম্বর থানায় গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। আসলেই কি রাজীব দায়ী এসবের জন্য ?? প্রথমত, রাজীব ৬ নভেম্বর বোমা বিস্ফোরণের সময় সারাদিন একাডেমিক কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করে। এমনকি সে ডিপার্টমেনটের ক্লাসেও অংশগ্রহণ করে। (বিভাগীয় শিক্ষকগণ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন) দ্বিতীয়ত, গত ১০ নভেম্বর রাজীবের মিডটার্ম পরীক্ষা ছিলো ৪.৩০ টা পর্যন্ত। সে পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বিকাল ৫.৩০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে মিরপুরে নিজ ছাত্রাবাসে ফিরে যায়।

রাতে ছাত্রাবাস থেকে তাকে এবং তার ছোট ভাই নাসিমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তখন রাজীব পরবর্তী দিনে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলো। অন্যদিকে নাসিম ঐ দিন সকালে তার বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য ছাত্রাবাসে আসে এবং সারাদিন বাসাতেই কাটায়। অথচ গাড়ি ভাংচুর হয়েছিলো বিকাল ৫টায়। তখন রাজীব এবং তার ভাই কারোরই সেখানে উপস্থিত থাকার প্রমাণ নেই।

আর সবচেয়ে ভয়ানক অবস্থা হচ্ছে এই যে গ্রেফতারের পর রাজীবকে তার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। থানায় নেওয়ার সাথে সাথে তাকে মারধরও করা হয়েছে। নির্দোষ হওয়ার পরও পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্যের শিকার হয়ে রাজীব এখন কাশিমপুর কারাগারে লোহার শিকলবাধা অবস্থায় দিন পার করছে। এখন তার বন্ধুরা যথাসাধ্য এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। হয়তো রাজীব মুক্তিও পাবে।

কিন্তু রাজীবের অন্যায় গ্রেফতার আমাদের সামনে কিছু প্রশ্ন রেখে যায়। ১) রাজীবের আগামীকাল(১০.১২.১২) সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা। কে জানে সে এটাতে অংশগ্রহণ করতে পারে কিনা !! যদি না পারে, তাহলে এর দায় কার ?? তার শিক্ষাজীবনে এমন ক্ষতির জন্য পুলিশ কি কোন ক্ষতিপুরণ দিবে? ২) প্রথমে লিমন, এরপর কাদের এবং এখন রাজীব। আর কতদিন পুলিশের এমন গ্রেফতার বাণিজ্য চলবে ?? ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে কি তারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে না !! ৩) রাজীব এবং কাদেরের ভাগ্য ভালো যে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ঢাবির ছাত্রদের গায়ে নুন্যতম আচড় পরলেও সেটা নিয়ে প্রতিবাদ করার মানুষের অভাব হয় না।

কিন্তু গ্রামের-মফস্বলের যেসব রাজীবরা বিনা দোষে মিথ্যা অভিযোগে জেলে ধুকে ধুকে মরছে তাদের কি হবে ?? নাকি তারা বাংলাদেশের নাগরিক না ?? হয়তো এভাবেই হাজারো রাজীব আমাদের চোখের আড়ালেই ঝরে যায় !! তথ্যসুত্রঃ ১)News Age ২)কালের কন্ঠ ৩)Banglanews24.com ৪) সামুতে এর আগেই এটা নিয়ে একটা পোষ্ট দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সেই পোষ্টে একমাত্র আমি ছাড়া আর কেউ কমেন্ট করেনি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।