আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এভাবেই শেষ হয়

পরাঞ্জয়ী...

কাছে আছে মোটে ৬৩ টাকা। তাও আবার ২ টাকার একটা কয়েন আর একটা একটাকা সহ। গায়ে জ্বর, ঘরে বসে থাকতেও ভাল লাগছে না। কোথায় যাওয়া যায়। চিড়িয়াখানার দিকে গেলে মন্দ হয়না।

২০ টাকা ২০ টাকা ৪০ টাকা রিকশা ভাড়া, ১০ টাকা টিকেট,১০ টাকার বাদাম। ওহ!! কি সুন্দর হিসেব!! এখনও ৩ টাকা হাতে থাকবে! আমার তো অর্থ মন্ত্রী হওয়া উচিৎ!! যেই ভাবা অমনি রেডী হয়ে বের হলাম। ৫-৬ টা রিকশা ফেল করে একটা রিকশা ২০ টাকায় যেতে রাজি হল। মিরপুর ১ এ চায়নীজের সামনে গিয়ে মনে হল টাকার পার্স টা ফেলে এসেছি। রিকশা ঘুরিয়ে ফেরৎ গেলাম বাসায়।

রিকশা ভাড়া ১০ টাকা বেশি গেল। ১০ টাকাই গচ্চা। ধুর বাদাম খাওয়া হল না আমার। কি আর করা!!! সকাল বেলা ভীড় তেমন থাকেনা। চিড়িয়াখানায় ঢুকে একটু নিরিবিলি দেখে লেকের পাড়টাতে গিয়ে বসলাম।

"শালা এখানেও প্রেমের বাণিজ্য!"। ইদানীং কি যে হয়েছে আমার!! একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে (প্রেমিক-প্রেমিকা) পাশাপাশি বসে ঢং করতে দেখলেই মাথায় রক্ত উঠে যায়। মন চায় ওড়নাটা কোমরে পেচিয়ে জোরসে ঝগড়া না হয় হাতাহাতি করে আসি!!! আমার রক্ত চোখের কটাক্ষ সহ্য না করতে পেরে পাশের খুনসুটি তে ব্যাস্ত থাকা জুটিটা উঠে গেল। "যাক বাঁচলাম" । পা ছড়িয়ে বসলাম।

জ্বর টা বাড়ছে বোধ হয়। রাতে ঘুমানো টা ছেড়েই দিয়েছি প্রায়। গাছে হেলান দিয়ে ছিলাম। আরাম লাগছিল বড্ড। চোখ টা বন্ধ করলাম।

খুব রাগ লাগে সারাদিন কেন জানি। কার উপর তাও জানি না। এখনও রাগ লাগছে। হঠাৎ কানের কাছে মুখ নিয়ে কে যেন বোললো " জান, তুই রাগ করলে তোর বোঁচা নাক টাতে একটা কামড় দিব"! আমি চমকে চোখ মেললাম। নাহ, কেউ নেই আশে পাশে।

তবে যে আমি স্পষ্ট শুনলাম!!!! হাসি পেল। ধ্যাত ঘুম লাগছিল বোধ হয়!! ঘুমের কথাতেই মনে পড়লো "সোনা, তোকে জড়িয়ে একদিন আমি ঘুমাবো আর ঘুমাবো শুধু। কতদিন শান্তিতে ঘুমাই না!!" আমারও ঘুম পায়,চোখ দুটো ভেঙে আসে ঘুমে, তবুও ঘুমাতে পারিনা!! সোজা হয়ে বসলাম। না হলে ঘুমের ঘোর লাগছে চোখে। একটু দূরে দেখি মেয়েটা ছেলেটার পকেটে হাত ঢুকিয়ে কি যেন খুঁজছে।

আমিও আজিজ সুপার মার্কেটে দাঁড়িয়ে....................."তোমার পকেটে কি চকলেট আছে??"........... "ওরে নারে, এটা মোবাইল। খালি চকলেট চকলেট" সাথে মাথা ধরে বেদম ঝাকানি। হাসি পেল আবার। "জান তুই আমাকে ছেড়ে গেলে যাবি, ধরেছি যখন আমি তোর হাত টা কখনও ছাড়বো না"!!!! সেল ফোনটা বের করে এস এম এস গুলো পড়তে থাকলাম, ছোট্ট একটা এক লাইনের এস এম এস " i cant afford loosing u jaan". হাসলাম আবার। মানুষ সব পারে।

মানুষের পারার কোন সীমা নেই বোধ হয়। পারে বলেই সে বাঁচে। আবার ক্লান্ত লাগছে। চোখ দুটো জ্বালা করছে। "তোর যখন জ্বর হবে, বা অসুখ, আমি অফিস যাবো না"।

উহ জ্বলে যাচ্ছে চোখ দুটো। পানির বোতল টা বের করে চোখে পানির ঝাপটা দিলাম। বেশ ভাল লাগছে এখন। কেউ কিন্তু ভাববেন না কোটেশনে লেখা পুরুষের ডায়ালগ গুলো আমার নিজ জীবনের। ওগুলো গত ৩ মাস ধরে করা মঞ্চ নাটকের রিহার্সেলে নায়কের ডায়ালগ!!!! নাটকে তো মানুষ কত কিছুই বলে।

!!! কাল দূপুরে নীচ তলার নীলা বৌদি এলো বাসায়। পূজোয় বাপের বাড়ি যেতে পারেনি। কত কথা বললো এসে। বললো "জানো বোন, সঞ্জয় খুব বদলে গেছে, কলেজে যখন পড়তাম একসাথে কত ভালবাসা, আর বিয়ের পর কি থেকে কি হয়ে গেল। কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে" কাঁদতে শুরু কোরলো।

শান্তনা দেইনি। মনে মনে বললাম "বেশ করে, কে বলেছিল ভালবাসতে?" আমি কি খুব নীষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছি??!! কি জানি। আগামী মাসে আমাকে কোরবানি দেয়া হবে!!!! নিজেকে তাই প্রস্তুত করছি। মন টা বড্ড পালাই পালাই করে এখন। জন্মের যন্ত্রণা, বেঁচে থাকার ব্যাকুলতা দুদিক দিয়ে টানে আমাকে।

একটি অপঘাতের অপমৃত্যু লোভ দেখায় আমাকে। নিজের মাঝে নিখাঁদ লোহার একটা ইঞ্জিন বসিয়ে নিজেকে যন্ত্র বানাতে ইচ্ছে হয়। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও মেনে নেয়া.......................হায় রে জীবন,,,,,,,,জীবন মানেই সমঝোতা!!!!


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।