আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Jab tak hai Jaan (2012) : যতক্ষন শ্বাস, ততক্ষন বাঁশ !!

আমিই হিমু। এই সাধারন বাস্তবের হিমু। দরজার ওপাশে, পারাপার, দ্বিতীয় প্রহর, নীল পদ্ম আর ঝি ঝি পোকার হিমু নই। বন্ধু মহলে একমাত্র ডাউনলোডক্ষম পুরুষ হওয়ায় প্রায়ই বিচিত্র সব আবদারের মুখোমুখি হতে হয়। যেমন, সদ্যমুক্তি পাওয়া কোন হিন্দী মুভি, তা বস্তাপচা হোক কিম্বা উচুমার্গের হোক, নগদে তাদের দেখতেই হবে।

হোক সে ছবি ঘুটঘুটে অন্ধকার, সিটের মাঝ দিয়ে ব্যাস্তভাবে চলাচলকারী মানুষের ছায়া, আর কাশির আওয়াজ সমৃদ্ধ হলপ্রিন্ট’এর। আরে বাবা, মাস দুই এক চেপে থাকলেই তো ঝকঝকে প্রিন্টের মুভি দেখতে পাওয়া যায়! না। তারা যুক্তি দেয়, “ওরে বেকুব, হিন্দী মুভির আবার ঘোলা প্রিন্ট ধলা প্রিন্ট কিরে ?” কথা সত্য। “পাঠা সালমান’এর বই হইলে ধুমায়া পিডাপিডি, ছাগলা শাহ্রুখের এএএএ তোতলামি, নাকউচা আমিরের হইলে কাহিনীর স্টোরী আর ইমরান মামুর বই হইলে, চুম্মা – এগুলা কোনমতে বুঝন গেলেই চলে! বুঝসস? অক্ষন নামায়া দে...। কথা কম, ডাউনলোড বেশি।

এভাবেই গত পরশু ডাউনলোড কিং সামিউল খান কর্তৃক নেমে গেল; রোমান্স কিং যশ চোপড়া পরিচালিত এবং বলিউড কিং শাহরুখ খান অভিনীত; লেটেস্ট সেনসেশন; জাব তাক হ্যায় জান। প্রথম সীন যথেষ্ট কৌতুহল জাগানিয়া। লাদাখের রাস্তায় স্পেসস্যুট পড়া এক এস্ট্রোনাট, চপস্টিক দিয়ে নুডুলস খাওয়ার চেষ্টা করছে। এমন সময় বাইকে করে হাজির হোল খোচা খোচা দাড়িওয়ালা ভবঘুরে টাইপের একলোক। এসেই বল্লো, আমারে দে...! ধীরে ধীরে হলের অন্ধকার চোখে সয়ে এলে বুঝতে পারলাম, বোমা বিশেষজ্ঞ বোমার তারের প্যাচ খোলার চেষ্টা করছিল! ভবঘুরের নাম, মেজর সমর আনন্দ, যিনি হেলাভরে বোমার ইজ্জত হরণ করেন, কোন ‘প্রটেকশান’ ইউজ করেন না।

The Man who cannot Die; যিনি মৃত্যুকে চ্যালেঞ্জ করেন প্রতিদিন...! হঠাত দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ, কিন্তু সেলফ সার্ভিস। আনুশকা নামের ‘রাব নে বানাদি জোড়ি’র সেই সুশীল নববধূটি আজ বিকিনি পড়ে গর্বিত ভঙ্গীতে দাড়িয়ে। চারপাশে সমুদ্র আর মাঝখানে জেগে থাকা এক পাথরের ঢিবিতে একচুলও না ভিজে পৌছুতে পারলে অবশ্য গর্বিত হবারই কথা। যাই হোক, তিনি দিলেন পানিতে ঝাপ, এবং ঠান্ডায় ডেকে উঠলেন, বাপ! তলিয়ে যাওয়া শুরু করতেই নায়িকা আকিরা (কুরোশাওয়া নয়) চিতকার শুরু করলেন এবং দেখলেন নায়ক কফি সহযোগে সুন্দরী নারীর হাবুডুবু খাওয়ার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করছেন। নায়কোচিত ভাবে সাহায্যের জন্য দৌড়ে আসার কোন লক্ষনই নেই! কি তার উদ্দেশ্য? উদ্দেশ্য দিনের আলোর মত পরিস্কার হয়ে গেল পরের দৃশ্যে।

ডুবে যাওয়া নায়িকার বুকে পাম্প করছেন নায়ক!! বলিউডি ফার্স্ট এইড আর লুলামীর রোমান্টিক কম্বিনেশন। Saline mischief in your eyes, Small insolences; laughing in your smile, Waves of dusk unfurled in your hair. I will not forget you, not until I cease to breathe, not until I cease to live… লন্ডন। নায়ক এক চার্চের সামনে টিপিক্যাল শাহরুখীয় ভঙ্গীতে আসমানের পানে চেয়ে দুহাত ছড়িয়ে চেগিয়ে দাড়িয়েছিলেন। তিনি এই চার্চের খাদেম। আরেক নায়িকা ক্যাটরিনা কাইফ; মীরা নিয়মিত সেই চার্চে যীশুখ্রীষ্টের সাথে নানা রকম রংগ রসিকতা করেন।

তার পিতা বিরাট বড়লোক এবং হবু ঘরজামাই একজন ফরেনার। খাদেমগিরি শেষে নায়ক রাস্তায় ভিক্ষা করতে নেমে গেলেন; গিটার বাজিয়ে, গান গেয়ে, কোমর দুলিয়ে নাচেন এবং ভিক্ষা করেন। লন্ডনের বৈরী অর্থনৈতিক আবহাওয়ায় টিকে থাকতে তাকে এরপর আরো হরেক পদের পেশায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে দেখা গেল এবং বারেবার কাকতালীয় ভাবে নায়িকার সাথে দেখা হয়ে যেতে লাগল। এভাবেই একদিন মীরা’র নায়কের তালিমে গান শেখার খায়েশ জেগে উঠলো, গুরুদক্ষিনা হিসেবে ঠিক হোল স্পোকেন ইংলিশের একটা ক্র্যাশ কোর্স উইথ ফনেটিকস। কারন, নায়ক ইংরেজীতে ব্যাপক দূর্বল।

ব্যাস, এই জ্ঞান দেয়া নেয়ার পাশাপাশি ভাইরাস হিসেবে অবুঝ দুটি হৃদয়ও সেন্ড এন্ড রিসিভ হয়ে গেল। ব্লুটুথের যুগ তো! আর নায়কও s@ifur’s এর দাবীকে সত্য প্রমান করে স্পোকেন ইংলিশ শিখেই চাকরীতে উন্নতি করে ফেললেন। যেকোনদিন সাইফুরসের বিজ্ঞাপনে শাহরুখ’কে দেখলে অবাক হবেন না যেন! Meet me in the eye, begin a fire.. Come close a little.. Come, entangle my breaths in yours.. উদ্দাম নাইট ক্লাব। ছোট্ট স্কার্ট, শরীর থেকে উড়ে গেল লাল জ্যাকেট, সাথে লাজুকতা। স্নিগ্ধ সৌম্য মীরা বদলে গেল শিলা মুন্নি’র মিলিত ঝাকানাকায়।

তারপর বলিউডের কিং, আমাদের ঢালিউড কিং শাকিব খানের হিট লেবেল – ‘হি লাভস ক্যাজুয়াল্লি’ থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়া নায়িকাকে ক্যাজুয়ালি বলে ফেলেন – আই লাবলু। ১২ বচ্ছর আগে মীরার মা, বাপ-মেয়েকে ফেলে ভেগে গিয়েছিলেন পর পুরুষের (ঋষি কাপুর) ভুড়ি ধরে। সেই মা মেয়ের পূনর্মিলনী। মায়ের আদর্শে হঠাত উজ্জীবিত হয়ে নায়িকার নায়কের প্রতি ভালবাসা উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে গেল, নিজের বিয়ের কথা ভুলে গেলেন নায়িকা। ‘প্রতিশ্রুতির গুষ্টি কিলাই, দে চুম্মা’।

অবশেষে এই বুড়া বয়েসে এসে নায়ক শাহরুখ, তরুন তুর্কী ইমরান হাসমি’র কাছ থেকে শিক্ষা নিলেন, এবং অন-স্ক্রীণ প্যাশোনেট লিপ কিসের কৌমার্য ভংগ করলেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রমান করে ছাড়লেন, শিক্ষার কোন বয়স নাই!! চুম্মা খেয়ে খুশী হয়ে তিনি গাড়ীর তলে পড়ে গেলেন। এদিকে নায়িকা গ্রাম্য বুড়িদের মত কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে নিজের চুম্মা’কে আনলাকি চুম্মা ধার্য করে নায়ক’কে পরিত্যাগ করলেন। এই দুঃখে আমাদের নায়ক দেশে ফিরে এসে মেজর পদে যোগদান করে ইন্ডিয়ান আর্মিকে ধন্য করে দিলেন। Walk with me only, don't keep any distance in between, mark a boundary, and keep the heart in between. I have to walk under your shade only.. ডিসকভারী চ্যানেল থেকে বিরল প্রজাতির মেজর; বোমা সমরের উপর ডকু বানাতে সেনাক্যাম্পে এসে হাজির সেই আকিরা।

নায়িকার পরনের ছোট্ট প্যান্ট’এর ধাক্কায় সেনাবাহিনীর শৃংখলা বিশৃংখল হয়ে গেল। তারপর সেই বছর বোমার বাম্পার ফলন হওয়ায় বোমাচাষীরা মনের আনন্দে হাস্যমুখর পরিবেশে নৃত্য-গীতের তালে তালে বোমা তুলতে লাগল। এই বোমা তুলতে তুলতে নায়িকা নায়কের প্রেমে ক্র্যাশ খেয়ে গেলেন। এই সিনেমা’র চিরগোলাপী নায়িকা আনুশকা’র উচ্ছলতায় মুগ্ধ হয়ে এবং তার পায়ের কাছে ‘দেশপ্রেমিক’ সেনাসদস্যদের গড়াগড়ি খাওয়া দেখে আশাবাদী হয়ে বলিউডের প্রখ্যাত সুরকার এ.আর.রহমান কম্পোজ করেন বি.এন.পি’র ঐতিহাসিক থিম সং; জিয়ারে...জিয়ারে...। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হলিউডের মারদাঙ্গা পরিচালক মাইকেল বে ঘোষনা দেন, তার পরবর্তী ব্লকবাস্টার ছবি হবে ছাত্রলীগ’কে নিয়ে – ব্যাড বয়েজ ৪।

When my breath met yours I started breathing When you came close, my soul felt your scent How long shall I control my heart, if it has to loose, let it যাইহোক, মেজর সাহেব, ডকুমেন্টারি’র নায়ক হবার টানে মুম্বাই কিম্বা এফডিসি’তে না গিয়ে হাজির হলেন আবারো লন্ডনে। সেই যে বহু বছর আগে কুফা লেগেছিল চুম্মা খেয়ে, তা কিন্তু আজো কাটেনি। ফলশ্রুতিতে তিনি আবারো পড়লেন গাড়ীর নিচে। এবারের গাড়ীটা অবশ্য দামী ছিল বিধায় ধাক্কা খেয়ে তার ব্রেনে’এর হার্টবিট কমে গিয়ে হার্ডডিস্কে ব্যাড সেক্টর পড়ে গেল এবং অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ আকিরাতে ওপেন না হয়ে উইন্ডোজ মিরা’তে চলা শুরু করলো। বাধ্য হয়ে মিরা’র খোজ দ্যা সার্চ, এবং পাইসি দ্যা ফাউন্ড; উইথ ফরেন জামাই এন্ড ডটার!! ইক্যুয়েশন জটিল হয়ে গেল।

ভাবছেন, এ আর এমন কি সমস্যা? আরেকবার গাড়ীর তলে পড়লেই তো সব মিলে যাবে। নেহি, ওস্তাদ যশ চোপড়া’র হাতে এখনো ট্রাম্প কার্ড। আখেরি টুইস্ট (হিন্দী সিনেমায় টুইস্ট? হাহাহা)!! মহাপ্রয়ানে যাওয়া যশ চোপড়া’র প্রতি সম্মান জানিয়ে ক্লাইমেক্সটি ফাঁস করে দিলাম না। (নিশ্চই এখন উত্তেজনায় আপনার আর রাতে ঘুম হবে না!) ভিসা নিয়ে ইন্ডিয়া যান এবং টিকিট কেটে হলে গিয়ে অরিজিনাল প্রিন্টে সিনেমা দেখুন। বলিউড ইন্ডাস্ট্রীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা আমার, আপনার নৈতিক দায়িত্ব।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।