অন্ধদের রাজ্যতে এক চোখা মানুষটি রাজা এবং আমি সেই রাজা। ছোট বেলা থেকে বই পড়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না, মায়ের বকুনির জন্য স্কুলের বই আর নোট বই পড়তাম বাধ্য হয়ে,গল্পের বই কিংবা কবিতা বই জিবনেও পড়ি নাই। সে সময় ক্রিকেট খেলা আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা স্বর্গীয় মনে হত। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় জীবনে প্রেমের অঙ্কুরদ্দম হল, ক্রিকেট টাও খেলতে যাইতাম প্রেমিকার বাড়ির সামনে, তখন মুঠো ফোন তেমন ধরা ছোঁয়ার মধ্যে ছিল তাই চিঠি দিয়ে ভাবে আদান-প্রদান হত, সে প্রায় চিঠিতে কবিতা লিখে পাঠাত, বেশ মজা লাগত চিঠি পড়তে। এক দিন ওর বাড়ির সামনে ক্রিকেট খেলার সময় হঠাৎ দেখি মা লাঠি নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতেছে তাই দেখে ব্যাট নিয়ে ভো-দৌড় দিলাম তারপরের দিন ও চিঠিতে এই নিয়ে একটা কবিতা লিখে দিল যা পড়ে আমি বেশ অপমান বোধ করলাম, এত বড় হইছি আর এখনো মা সবার সামনে লাঠি নিয়ে আমাকে তাড়া করে ! তাও আবার প্রেমিকার বাড়ির সামনে, সেই নিয়ে আবার প্রেমিকা কবিতাও লিখে !!! মান-সম্মান আর থাকল না।
সব চেয়ে বেশী রাগ হইল প্রেমিকার উপর, মা এমন করতেই পারে তাই বলে কি সে কবিতা লিখে হাসাহাসি করবে ?!
ঠিক আছে কবিতার জবাব আমি কবিতা দিয়েই দিবো এই পন করলাম, শুরু করলাম কবিতা লিখা, প্রথম দিকে কবিতার মান এতটাই খারাপ ছিল যে লেখা শেষে নিজে পড়েই নিজে হাসতাম কিন্তু আমিতো নাছোড় বান্দা, কবিতা দিয়ে জবাব দিবো। জবাব দাওয়া হল না আর তার আগেই সে আমার উপর অনাস্থা এনে আমাকে তার জীবন থেকে বহিস্কার করলো।
কষ্টে বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে গেলো, মাঝে কেটে গেলো কিছু মাস। ছ্যেকা খেয়েছি তাই রোমান্টিক গান শুনতে ভালো লাগে না, এই সময় বন্ধু মারফত বাংলাদেশি কিছু আন্ডারগ্রউন্ড ব্যান্ড এবং মেটাল গান শুনলাম, শুনে মাথার তার ছিড়ে গেলো। সারা দিন খালি মেটাল শুনি।
কিছু দিনের মধ্যে বন্ধুরা মিলে ব্যান্ড করে ফেললাম, তুই গিটার, তুই বেস, তুই ভোকাল আর আমি ড্রামস সব ফিক্স কিন্তু গান কে লিখবে? যেহেতু কবিতা লিখার অপপ্রয়াস আমি কিছু দিন আগে করেছিলাম আর সদ্য ছ্যেকা খাওয়া পাবলিক আমি তাই এই গুরু দায়িত্ব সবাই আমাকে দিল, আমিও মজায় মজায় নিয়ে নিলাম, শুরু হল আমার কবিতা কিংবা গান লিখার প্রশিক্ষণ, সেই থেকে লেখালিখি আমার সাথি হয়ে গেলো।
তারপর কেটে গেলো অনেক বছর, ইউনিভার্সিটির ৪র্থ বর্ষের ছাত্র এখন আমি, মাস ছয়েক আগে সামুতে আসলাম কিন্তু কিছু দিনের মাথায় ব্যান খাইলাম !!! তখন এক ছাগু হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) নিয়ে একটা ফালতু পোস্ট করেছিল এবং সামুর নিশ্চুপ আচরনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলাম কঠোর ভাষায় তাই নাস্তিক হওয়া সত্ত্বেও ব্যান খাইলাম। তখন নিক নাম ছিল “নিষিদ্ধ নাগরিক”
ব্যান খাওয়ার পর এই অ্যাকাউন্ট খুললাম।
রাত ১২ টা বন্ধু ফোন দিল-
- দোস্ত কি করিছ? অন লাইনে আয়।
- আমিতো অনলাইনে।
- দোস্ত তরে এফ বি তে পাইতেছি না !
- আরে আমি এফ বি তে না,
- তাহলে তুই কই?
- আমি সামুতে।
- এইডা আবার কি?!
- বাংলা ব্লগ।
- দোস্ত তুই কি লেখালিখি করিছ?
- লেখালিখি করি না সামুতে ফিফা১৩ খেলতেছি। খেলবি?
- দোস্ত সামু কি ডলেনছারের মত? কত করে দেয়?
- (বুঝলাম অপমান করার জন্য বলল) তাই কিছু বললাম না।
- দোস্ত তোর লিখা কি কেউ পড়ে?
- (আবারও অপমান !) কিছু বলতে পারলাম না, কারণ আমার লিখা সে রকম উল্লেখ সংখ্যক পাঠক পড়ে না তাই বললাম আর কিছু বলবি?
- হুম।
- বলে ফেল।
- এফ বি তে আয়, এসাইন্মেন্ট টা এফ বি তে পোস্ট কর।
- ওকে।
কিছুক্ষণ পর কেয়া ফোন করলো- (কেয়া আমার ক্লাসম্যাট কম প্রেমিকা বেশী, মানে আমরা অফিসিয়াললি প্রেমিক-প্রেমিকা নই কিন্তু ওর ভাব খানা প্রেমিকা প্রেমিকা)
- কেমন আছো?
- বেঁচে আছি।
- সেটা তো বুঝতেই পারছি।
তুমি কি খাইছো?
- নাহ, ব্যাস্ত আছি।
- ব্যাস্ত কি নিয়ে? এসাইন্মেন্ট নিয়ে?
- আরে নাহ, আজীবন এসাইন্মেন্ট কপি করে জমা দিলাম, এবারো এর ব্যাতিক্রম হবে না।
- তাহলে ব্যাস্ত কি নিয়ে !?
- সামুতে লিখতেছি।
- কি লিখো?
- কবিতা।
- তুমি কবিতাও লিখো নাকি !
- হুম।
- একটা শুনাও।
- “রগগুলো কেটে ফেলে দাড়াই আয়ানার সামনে, বিকলাঙ্গ এক মানুষ হয়ে, দৃষ্টি আমার ঝাপসা, পচা স্মৃতির বিকট গন্ধ আমার নাকে ধরা, ঘূর্ণিপাক ঘৃণার দূষিত বাতাসে পৈশাচিকতা ডানা মেলে আমার ভেতরে, দানবিক রাক্ষস আমি এসেছি ফিরে পরাজয়ের রাজত্ব থেকে ……” আরও শুনবা?
- নাহ বাবা, ভয়ানক। আচ্ছা তোমার কবিতা কেউ কি পড়ে?
- তোমার কি মনে হয়?
- মনে হয় কেউ পড়ে না।
- ঘটনা সত্য, আমি একজন ফ্লপ ব্লগার। তাই চুপ করে রইলাম।
X
- কি ব্যাপার, কিছু বলছ না কেন।
- ভাবছি।
- কি ভাবো?
- আমি একজন ফ্লপ ব্লগার।
- একটা হাসি দিয়ে বলল এই নিয়ে একটা কবিতা লিখে ফেল “আমি একজন ফ্লপ ব্লগার। “
- এই কথা বলে কেয়া এমন ভাবে হাসতে শুরু করলো যে আমি একটা জোকার ছেড়া প্যান্ট পড়ে ওর সামনে নাচতেছি।
তাই রাগে দুঃখে ফোন রেখে দিলাম।
তারপর কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে ভাবলাম, লিভা (আমার সেই স্কুল জীবনের প্রেমিকা) তোমার লেখা স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হত আর এখন তুমি পড়ছ ঢাকা মেডিকেল কলেজে না জানি তোমার লেখার মান কতই না ভালো হয়েছে আর আমি, সেই আমি, আজও ফ্লপ রেয়েই গেলাম, এখানেই তোমার আমার মধ্যে পার্থক্য রয়ে গেলো, কবিতার জবাব আর কবিতা দিয়ে দেওয়া হল না !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।