আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিজিটাল চুরির মহাপরিকল্পনা

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতিবাজদেরকে অপসারন করুন গত ১২ অক্টোবর ২০১২ তারিখের প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘নতুন নাম্বারপ্লেট সনদ নিতে হবে সব মোটরযানকে’ শীর্ষক খবরটি পড়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। বিভিন্ন পত্রিকায় জানা যায়, বিআরটিএর চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান বলেছেন, প্রতিটি গাড়িতে দু’টি নাম্বার প্লেট থাকবে আর একটি RFID (Radio Frequency Identification) উইন্ডশিল্ড স্টিকার ট্যাগ থাকবে। তা ছাড়া মালিকানা কাগজপত্রও আরএফআইডি (RFID) করা হবে। যা প্রায় চার হাজার ৫০০ টাকা মূল্যে গাড়ির মালিকদের কিনতে বাধ্য করা হবে। বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানের দাবি অনুযায়ী এই সিস্টেম ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে অটোমেটিক্যালি পুলিশকে জানাবে, গাড়ি চুরি বন্ধ করবে ইত্যাদি।

আপনারা কি বাংলাদেশের মানুষকে এতই বোকা মনে করেন? হাইটেক একটা উল্টোপাল্টা ধারণা দিয়ে জনগণের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেবেন এত সহজে? এই পদ্ধতি বাংলাদেশে বর্তমান ট্রাফিক ব্যবস্থায় কোনো কাজে আসবে না। ANPR (Automatic License Plate Recognition) ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকার কিছু দেশে ব্যবহার হয় যেখানে ট্রাফিক অবস্থা খুব ভালো। এএনপিআর মূলত ব্যবহার হয় টোল আদায় পয়েন্টগুলোতে। কোনো গাড়ি টোল না দিয়ে চলে গেলে ক্যামেরার মাধ্যমে নাম্বারপ্লেটের ছবি তোলা হয় ও তার মাধ্যমে পরে জরিমানা সংগ্রহ করা হয়। নাম্বারপ্লেটের ছবি ক্যামেরার মাধ্যমে তোলার পরিবেশ অত্যন্ত অনুকূল আর সেখানে গাড়ির গতি কম থাকে ও এক গাড়ি থেকে আরেক গাড়ির দূরত্ব অনেক থাকে, যাতে করে ক্যামেরাটি গাড়ির নাম্বারপ্লেট স্পষ্ট করে দেখতে পারে।

এক গাড়ি দিয়ে অন্য গাড়ির নাম্বার প্লেট আড়াল হয়ে গেলে বা নাম্বারপ্লেট ময়লা বা নোংরা হলে ক্যামেরা নাম্বারপ্লেট শনাক্ত করতে পারে না। তাহলে একটু ভেবে দেখুন তো ঢাকার রাস্তায় এমন ক্যামেরা দিয়ে সব গাড়ির নাম্বারপ্লেট পড়তে বা দেখতে পারবে কি না? বাংলাদেশের ময়লা কাদা মাটিতে এই নাম্বারপ্লেটের হাল কি হবে তার কথা বাদই দিলাম। অথচ ক্যামেরাগুলো অত্যন্ত মূল্যবান। এগুলো সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা নয়। এসব মূল্যবান ক্যামেরা ঢাকার রাস্তায় লাগিয়ে রাখতে হবে।

আপনারা সাধারণ ট্রাফিক লাইট চালু রাখতে পারেন না তাহলে এসব মূল্যবান ক্যামেরা কিভাবে চালু রাখবেন? কিভাবে এর নিরাপত্তা দেবেন? যে দেশের রাস্তার ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হয়ে যায় সেখানে রাস্তায় লাখ লাখ টাকা দামের ক্যামেরা লাগিয়ে রাখবেন তা কাজে আসুক আর না-ই আসুক? এখন আসুন আরএফআইডি ট্যাগ ও টেকনোলজির কথায়। সব গাড়িতে ১৫০ টাকার ট্যাগ লাগিয়ে গাড়ির মালিকের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নেবেন মানলাম, কিন্তু কাজটা কী হবে? এই ট্যাগ রিড করবেন কিভাবে? আর রিড না করতে পারলে ও তথ্য সংগ্রহ করতে না পারলে এই ট্যাগ দিয়ে কী হবে? এই ট্যাগ রিড করার জন্য রাস্তায় রাস্তায় অতি ম্যূবান আরএফআইডি রিডার ও অ্যান্টেনা লাগাতে হবে। আপনাদের এ সম্পর্কে ধারণা অত্যন্ত দুর্বল নয়তো রাস্তার ওপরে প্রায় ৫.৫ মিটার ওপর থেকে নিচের দ্রুত চলমান গাড়ির ট্যাগ রিড করার জন্য ৭ dbi Antenna specification দিতেন না। এই ট্যাগ ১০০% নির্ভুলভাবে রিড করার জন্য প্রতিটি লেনে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন RFID Reader/Antenna লাগাতে হবে। সাধারণ ট্রাফিক লাইট মেইনটেইন আর ম্যানেজ করতে পারেন না তাহলে প্রায় তিন হাজার থেকে চার হাজার ডলারের এভিআই আরএফআইডি রিডার কিভাবে সামলাবেন? তা ছাড়া গাড়ির কাচ বা উইন্ডশিল্ডে ময়লা কাদা থাকলে ট্যাগ রিড করতে পারবে না।

সুতরাং কি তথ্য সংগ্রহ করবেন। আর কোন তথ্য পুলিশকে দেবেন? ট্যাগ রিড যদি পুরোপুরি নিশ্চিত না করতে পারেন, তাহলে এই প্রজেক্ট তো ব্যর্থ হবে। তাহলে আমরা ১৫০ টাকার ট্যাগ আপনার কাছ থেকে দুই হাজার টাকায় কিনবো কেন? আর এ দিয়ে গাড়ি চুরি কিভাবে বন্ধ করবেন, তা আমার মাথায় আসে না। ধোঁকাবাজির একটা সীমা থাকা উচিত। আমার আরএফআইডি নিয়ে হাতে কলমে প্রায় এক যুগের কাজের অভিজ্ঞতা আর সফটওয়ার প্রযুক্তি নিয়ে দুই যুগের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি যে ঢাকার বর্তমান ট্রাফিক আর আবহাওয়ার অবস্থায় ৫০% ট্যাগও রিড হবে না।

ওপরে উল্লিখিত কথাগুলো যদি ভুল প্রমাণ করতে পারেন আমার কাছ থেকে দ্বিগুণ মূল্য নিতে পারেন। আর নয়তো জনগণের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে টাকা নিয়ে ব্যক্তি বিশেষের ধনী করবেন না। জানা মতে এই প্রজেক্টের মূল হোতা হলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি আগে নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রজেক্টে ছিলেন। আর এখন তিনি তার সূক্ষ্মবুদ্ধি ব্যবহার করে বিআরটিএ ও বিএমটিএফের মধ্যে চুক্তি করিয়ে নিজে ফায়দা লুটতে চাচ্ছেন। সেনাবাহিনীর কাঁধে বন্দুক রেখে শিকারের চেষ্টা করছেন তিনি।

দয়া করে সেনাবাহিনীকে আর কলঙ্কিত করবেন না। সরকার বারবার অন্যের অন্যায় নিজের কাঁধে নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। বিষয়টাকে অন্ধভাবে অনুমোদন দেয়ার আগে ভালো করে যাচাই বাছাই করেন নয়তো এটা ডেসটিনির চেয়েও বড় কেলেঙ্কারি হবে। এভাবে জনগণের টাকা চুরি ও নষ্ট না করে বরং এটাকে ভালো কাজে লাগাতে পারেন। তাই দেশ ও জনগণের মঙ্গলের জন্য নিম্নলিখিত মতামত প্রদান করছি।

গাড়িতে ন্যায্যমূল্যে শুধু ধাতুর আরএফআইডি ট্যাগ লাগান। এই ট্যাগ ব্যবহার করে বিআরটিএতে সহজে রেজিস্ট্রেশন ও নবায়ন করা যাবে। আর এই একই ট্যাগ ব্যবহার করে সারা দেশে টোল সড়ক ও ব্রিজে টোল সংগ্রহ করেন তাতে টোল ব্রিজে চুরি বন্ধ হয়ে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় বাড়বে। এই একই ট্যাগ ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের গাড়ি বহরের পার্কিং ও নিরাপত্তার কাজে লাগাতে পারেন। প্রজেক্টটি আন্তর্জাতিক মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে করেন ও বিশেষজ্ঞদের আশ্রয় নেন।

তাতে কাজের মান ভালো হবে ও মূল্য অনেক কমে আসবে। নয়তো আজ হোক কাল হোক জনগণের কাছে ও দেশের আইনের কাছে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.