আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু

দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম ডেস্ক জার্মানির সুপার মার্কেট ও ডিসকাউন্টারগুলোতে সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় মাছ, মাংস ও তরিতরকারি। তবে এসব ভোজ্যপণ্য কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে মুরগির মাংসের ব্যাপারে ভোক্তারা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। মুরগির মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু পাওয়া গেছে। সম্প্রতি পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা বুন্ডের উদ্যোগে জার্মানির কয়েকটি সুপার মার্কেটের মুরগির মাংসের নমুনা নিয়ে এক পরীক্ষা চালানো হয়েছে।

এতে ফলাফল রীতিমত উদ্বেগজনক। বার্লিন, হামবুর্গ, কোলন, নুরনবার্গ ও স্টুটগার্টের আশপাশের অঞ্চল থেকে নেয়া ২০টি নমুনার মধ্যে ১০টিতেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে বুন্ডের প্রধান হুবার ভাইগার বলেন, ‘বিপদটা হলো এই যে, জীবাণুযুক্ত মাংসের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। মানুষের শরীরেও ঢুকে পড়তে পারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু। ’ প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থাটির মতে, জীবজন্তুর খামারগুলোতে খুব অল্প জায়গায় প্রচুর পশুপাখি ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়।

মুরগির খামারে এক বর্গমিটারে ২৪টি পর্যন্ত মুরগি রাখা হয়। এর ফলে প্রাণিগুলোর অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে অনেক বেশি। শুধু অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে এগুলোকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করা হয়। লোয়ার স্যাকসনি রাজ্যের এক মুরগির খামারের মালিক রাইনার ভেন্ট এ প্রসঙ্গে জানান, ‘এক কিলো মুরগির মাংসে আমার পাঁচ সেন্ট আয় হয়। উত্পাদন খরচটা ধরা হয়নি এতে।

ভোক্তারা সস্তায় মাংস কিনতে চান। উন্নত মানের মাংসের জন্য বেশি খরচ করতে আগ্রহী নন তারা। তাই আমার এছাড়া কোনো উপায় নেই। ’ জার্মানিতে জৈব পদ্ধতিতে মুরগির উত্পাদনের হার এক শতাংশ। জৈব খামারগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয় না।

তবে ‘আমাদের উত্পাদিত মাংসের দামও বেশি’—বলেন ড্যুসেলডর্ফ শহরের এক জৈব খামারের মালিক ফল্কার হফ। দুইশ’র মতো মুরগি রয়েছে তার। প্রাণিগুলো ঘুরে বেড়ায় বড়সড় চারণ ভূমিতে। জৈব খাদ্য পায় তারা। তিন মাস ধরে তরতাজা হয় তাদের শরীর।

‘এ কারণে আমাদের মুরগির দামও ২০ ইউরোর মতো, চার ইউরো নয়’—জানান ফল্কার। জার্মানির ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, শুধু অসুস্থ হলেই জীবজন্তুকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যাবে, অন্যথায় নয়। কিন্তু যেসব খামারে হাজার হাজার পশু পাখি রাখা হয় সেখানে রোগাক্রান্ত কোনো মুরগির সন্ধান পাওয়া সহজ নয়। তাই সবার খাবারের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে দেয়া হয়। বেশি পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে ঢুকলে জীবাণুগুলো এই ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।

ফলে প্রয়োজন হলেও এই ওষুধে আর কাজ হয় না। এই জীবাণু কোনো কাটা ঘায়ের সংস্পর্শে এলে পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। দুর্বল ও অসুস্থ মানুষদের জন্যও এই জীবাণু ভয়ঙ্কর। এ প্রসঙ্গে নর্থ রাইন ওয়েস্ট ফালিয়া রাজ্যের ভোক্তা সুরক্ষা মন্ত্রী ইওহানেস রেমেল বলেন, ‘এ ধরনের জীবাণুকে রোধ করতে হলে পশুর খামারগুলোতে যখন তখন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধু অত্যন্ত জরুরি অবস্থায় ব্যতিক্রম হিসেবে এই ওষুধের ব্যবহার করা যেতে পারে।

’ রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ইউরোপীয় কেন্দ্রের প্রধান মার্ক স্পেন্সারের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে প্রতি বছর ২৫ হাজারের মতো মানুষ নানা সংক্রমক রোগে মারা যায়, শুধু অ্যান্টিবায়োটিক কাজে না লাগার কারণে। চিকিত্সক ও ভোক্তাস্বার্থ রক্ষাকারীরা বহুদিন ধরেই এ ব্যাপারে সোচ্চার। তবে জার্মান মুরগি উত্পাদন সমিতির টমাস ইয়ানিং এক্ষেত্রে অতোটা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে মনে করেন। তার মতে, মুরগির মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু থাকলেই যে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে তা বলা যায় না। কৃষিমন্ত্রী ইলজে আইগনার অবশ্য এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ সর্বনিম্ন মাত্রায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করাতে চান তিনি।

তার খসড়াও পেশ করা হয়েছে। এতে জার্মানিতে কৃষিক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা রাখার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। হামবুর্গের ভোক্তারক্ষা কেন্দ্রের মুখপাত্র আর্মিন ফালেটের মতে, মুরগির মাংসে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব রয়েছে কিনা তা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তাই রান্নাবান্নায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ জোর দেয়া উচিত। জীবাণু মারার জন্য কমপক্ষে ৭০ ডিগ্রি উত্তাপে ১০ মিনিট ধরে রান্না করতে হবে মাংস।

মাংস কাটার পর ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। মাংস ও শাকসবজি কাটার পাত্র, ছুরি আলাদা আলাদা রাখতে হবে। ফালেট মনে করেন, আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে চাইলে জৈব মাংসের দিকে হাত বাড়াতে হবে। কেননা, নানা সমীক্ষায় দেখা গেছে জৈব পদ্ধতিতে উত্পাদিত মুরগির মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। জার্মানির রাজনীতিবিদরাও এখন চিন্তাভাবনায় পড়েছেন।

একদিকে রয়েছে ভোক্তাদের স্বাস্থ্যরক্ষা, অন্যদিকে রফতানিমুখী কৃষি ও মাংস শিল্পের সুযোগ সুবিধার বিষয়টি। এই দুইয়ের মধ্যে একটা ভারসাম্য আনাই এ মুহূর্তে জরুরি হয়ে পড়েছে। তথ্যসূত্র- Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।