আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাড়িয়ালার মেয়েটার আজ বিয়ে !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! দরজা খুলতেই বাড়িয়ালা কে দেখতে পেলাম ! একটু অবাক হতে হল ! এখন মাসে মাঝামাঝি সময় ! বাড়িয়ালা কেবল মাসে প্রথম দিকে হাজির হয় ! বাড়ি ভাড়ার খাতা দিতে ! কিন্তু এই ভদ্রলোক এখানে কি করছে ? এখন কি করছে ? ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো ! বলল -ভাল আছো ? কি রে ভাই ? বাড়িয়ালা আজকে আমার কুশল জানতে চাচ্ছে !! ব্যাপার কি ? আমি একটু হেসে বলল -জি আঙ্কেল ! ভাল আছি ! -তোমার সুমন কোথায় ? -সুমনভাই তো বাসায় নাই । অফিস গেছে !! সুমন ভাই আমাদের এই ফ্লাট টা ভাড়া নিয়েছেন ! আমরা আর কয়েকজন তার সাথে থাকি ! বাড়িয়ালা আঙ্কেল বললেন -আচ্ছা সমস্যা নাই ! এই নাও ! বাড়িয়ালা আমাকে একটা নীল রংয়ের খাম এগিয়ে দিল ! -এটা কি আঙ্কেল ? -এটা আমার মেয়ের বিয়ের কার্ড ! আগামী সপ্তাহে বিয়ে ! তোমাদের পুরো ফ্যামিলির দাওয়াত ! মানে তোমরা যে কয়জন থাকো সবাই !ঠিক আছে ! আমি কিছু সময় যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম ভদ্রলোকের কথা শুনে ! কি বলে এই লোক !! বাড়িয়ালার মেয়ের বিয়ে ! বাড়িয়ালার মেয়ে !! আমাকে ছেড়ে চলে যাবে ? কেমন করে যাবে ? সন্ধ্যার পর আমাদের দেখা হত ছাদে ! আমি হাজির হলাম ঠিক সময়ে ! মনটা এতো বেশি অস্থির ছিল । কিছুতেই স্থির থাকতে পারছিলাম না ! কিছুতেই বিসশ্বাস হচ্ছিল না যে বাড়িয়ালার মেয়ের বিয়ে হতে পারে ! মেয়েটাকে এতো পছন্দ আমার ! আর আমি খুব ভাল করেই জানি মেয়েটিও আমাকে পছন্দ করে ? তাহলে মেয়েটি কেন রাজি হল বিয়েতে ? ওর বাবার কাছে আমার কথা বলতে তো পারতো !! কিন্তু বলে নি ?? কেন বলেনি ? তাহলে এতো দিন আমার সাথে কি টাইম পাস করছে ?? ফাজিল মাইয়া !! আমার সাথে এতো দিন টাইম পাস কইরা এখন বাপের পছন্দ মত বিয়া করতাছে !! আজকাল কার সব মাইয়াই এমন ? এসবই ভাবছিলাম এমন সময় বাড়িয়ালার মেয়েটি এসে হাজির ! আমার কোল ঘেসে দাড়ালো ! চুপ করে দাড়িয়ে রইল কিছুক্ষন ! কিছু যেন বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ! আমি খুব অভিমান নিয়ে দাড়িয়ে আছি মেয়েটির উপর ! সে কেন তার বাবা কে আমার কথা বলে নি ? আমি কিছুক্ষন পর বাড়িয়ালার মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখ মেয়েটির চোখ ভেজা ! কাঁদছে নাকি মেয়েটি ? আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি বলল -তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছো ? মেয়েটির কন্ঠে কিছু একটা ছিল ! আমি কিছু বলতে পারলাম না ! কিছু হয়তো বলারও নেই ! কি হবে বলে !! আমি তাই চুপ করেই রইলাম । মেয়েটি আবার বলল -তুমি রাগ করে আছো আমার উপর ? -নাহ ! রাগ করে কেন থাকবো ? -তোমার নিশ্চই আমাকে খুব খারাপ মেয়ে মনে হচ্ছে ? -না ! কি বলছো ? খারাপ মেয়ে কেন মনে হবে ? মেয়েটি এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল -তুমি কি এটা লক্ষ্য করেছ যে আমি তোমাকে তুমি করে বলছি ? আরে তাইতো মেয়েটি তো আগে আমাকে আপনি করে বলতো ! আজতো তুমি করে বলছে ? মেয়েটি আবার বলল -তুমি কি আমাকে খুব খারাপ মেয়ে মনে করছো ? ভাবছো যে এতো দিন আমার সাথে টাইমপাস করে এখন অন্য ছেলের সাথে বিয়ে করে ফেলছে ! আরে মেয়েটা কি মাইন্ড রিডিং করতে পারে ? আমার মনের কথা গুলো কেমন করে বুঝে ফেলল? আমি বাড়িয়ালার মেয়েকে বললাম -নাহ ! এমনটা ভাববো কেন বল ? এমন টা ভাবি নি ! মেয়েটি এবার আমার মুখোমুখি দাড়ালো ! আমার দুহাত নিজের দুহাতের ভিতর নিয়ে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন ! এই প্রথম মেয়েটি আমার হাত ধরলো ! আমার মন খারাপ হল এই ভেবে যে আর কোনদিন হয়তো মেয়েটির নরম হাত আমি ধরতে পারবো না ! মেয়টি বলল -জানো আমি অনেক বার তোমার কথা বাবাকে বলতে চেয়েছি কিন্তু কি বলবো বল ? বাবা কিছুতেই রাজি হবে না ! উপর দিয়ে তোমার কথা জানতে পারলে তোমাকে এই বাসা থেকে বের করে দিবে !! আমি চুপ করে রইলাম ! মেয়েটি আবার বলল -তুমি বিশ্বাস করবে কি না আমি জানি না তবে আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে কোনদিন ভালবাসি নি ! কোন দিন বাসবোও না ! মেয়েটি আমাকে ভালবাসে ? সত্যি ভালবাসে ? আমি বলতে চাইলাম তাহলে চল আমরা পালিয়ে বিয়ে করি ! কিন্তু বলতে পারলাম না ! পালিয়ে বিয়ে করি বললেই তো আর বিয়ে করা যায় না ! অনেক কিছুহিসাব করতে হয়? আমি চুপ করেই রইলাম ! কিন্তু বাড়িয়ালার মেয়েটি এবার যা করলো তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না ! মেয়েটি আমার আর একটু কাছে এগিয়ে এল ! আমি বুঝতে পেরেই একটু জমে গেলাম আমি ! মেয়েটি আস্তে তার নরম ঠোট দুটি এগিয়ে নিয়ে এল আমার ঠোটের দিকে ! আমাকে চুম খাওয়ার পর বেশ খানিক্ষন আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখলো । আমি বুঝতে পারছিলাম মেয়েটি কাঁদছে ! মেয়েটিকে কি বলবো আমার নিজের চোখও ভিজে আসছিল ! কতক্ষন এভাবে ছিলাম আমি জানি না ! এক সময় বাড়িয়ালার মেয়েটিকে আমাকে ছেড়ে দিল ।

বলল -আমি এখন যাই !! আর মনে হয় আমাদের দেখা হবে না ! বাড়িয়ালার মেয়েটা আমাকে রাখে চলে গেল ! আমি দাড়িয়েই রইলাম ছাদে ! একা !! কদিন বাড়িয়ালার মেয়েটার সাথে আর দেখাই হল না ! দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এল ! আমি ঘরের ভিতরেই বসে রইলাম ! পুরো পৃথিবী যেন আমার কাছে বিবর্ন মনে হতে লাগলো ! মনে যেন সব কিছু ছেড়ে চলে যাই ! এই পৃথিবীটা ছেড়ে চলে যাই ! আচ্ছা ছাদের উপর গিয়া একটা লাফ দেই ! আর বেঁচে কি করবো ! বাড়িয়ালির মেয়ে ছাড়া জীবন যেন বৃথা !! আজ বাড়িয়ালার মেয়ের বিয়ে বয়ে !! টোপর মাথায় দিয়ে !! আমার কি ? আমার কিছু না ! না ! আমার অনেক কিছু !! আম্মু !! আমি বাড়িয়ালার মাইয়ার সাথে বিয়া করুম !! কিন্তু কেমনে করুম !! কেমনে ? কিভাবে কি করা যায় এই রকম সাত পাচ ভাবছি এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল ! নিশ্চই বুয়া এসেছে ! আমি দরজা খুলে দিলাম ! কি রে আজ বুয়া আবার বোরকা পরে এসেছে কেন ? আসুক আমার কি ? আমি দরজা ছেড়ে চিতরে চলে যেতা যাবো এমন সময় বুয়া বলে উঠল -কি ব্যাপার কই যাও ? আমি যে ৮৪০ ভোল্টের একটা সক খাইলাম !! বুয়া আমারে এই কথা কেন বলে ? আর এর কন্ঠ বাড়িয়ালীর মেয়র মত কেমনে হইলো !! -কি বললেন? বুয়া তখন বোরকার নোকাব তুলে বলল -বুঝ না কি বলি ? আরে কোথায় কি ? কোথায় বুয়া ? এটা তো বাড়িয়ালার মেয়ে !! বাড়িয়ালার মেয়ে এখানে কি করে ? আজ না তার বিয়ে !! -তুমি ? এখানে ? -কেন ? তুমি চাও না আমি এখানে থাকি ? চলে যাবো ? -না ! না ! চলে যাবে কেন ? -শুনো ! তোমার কাছে কত টাকা আছে ? -মানে ? -কত টাকা আছে আগে বল ? -এই দুই তিন হাজার ? বাড়িয়ালার মেয়েটি কি যেন ভাবলো ! তারপর বলল -এই টাকা দিয়ে হবে ? - কি হবে ? -আরে আশ্চর্য ! এতো কম টাকায় মেয়ে ভাগানো যায় নাকি ? আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ! এই মেয়ে বলে কি ? মেয়ে ভাগানো মানে কি? আমি বললাম -কি বললে বুঝি নাই ! -তুমি আসলেই একটা গাধা !! বুঝতে পারছো না ! আমি এখানে কেন এসেছি ! আমার বুঝতে একটু সময় লাগলো ! বললাম -তুমি পালিয়ে এসেছো ? -না ! পালিয়ে আসবো কেন? তোমাকে বিয়ের বরযাত্রী করতে এসেছি ! যাও আগে টাকা নিয়ে এসো ! যা আছে সব ! আর একটা ভাল কাপড় পরে এসো ! আমার মাথা কিছু সময় কাজ কটা বন্ধ করে দিল ! কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছু বুঝতেই পারলাম না ! বাড়িয়ালা কথা মত যেখানে যা ছিল সব টাকা নিয়ে এলাম ! পোষাকটাও বদলেও আসলাম ! আমি মেয়েটার সামনে আসতেই মেয়েটা কিছুক্ষন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলো ! -বাহ ! চমৎকার লাগছে তোমাকে ? -মানে কি ? -কোন মানে নেই । চল । মেয়েটা আমাকে নিয়ে ছাদের দিকে এগিয়ে গেল ! আমি বললাম -আরে ছাদে যাও কেন ? মেয়েটি বলল -আমার বাপ বন্দুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে গেটের কাছে ! গুলি করে মারবে তোমাকে ? - কি বল ? আমাকে কেন মারবে ? মেয়েটি বলল -মারবে না তো আদর করবে ! তার মেয়েকে নিয়ে তুমি ভাগতেছ আর সে তোমাকে আদর করবে ! -আমি কোথায় ভাগতেছি ? -আচ্ছা হয়েছে ! এখন চুপ ! আমি বললাম -কিন্তু ছাদে গিয়ে কি হবে ? মেয়েটি বলল -আসো দেখাচ্ছি ! মেয়েটি আমাকে ছাদে নিয়ে গেল ! একটু এদিক ওদিক দেখে মেয়েটা যা করলো আমি মেয়েটার বুদ্ধি দেখে তাজ্জব হয়ে গেলাম । ঢাকার বাড়ি গুলো এমনিতেই খুব কাছাকাছি ! এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে খুব সহজেই যাওয়া যায় । মেয়েটা পাশে পরে থাকা একটা লম্বা আর চওড়া কাঠ দিয়ে দুই ছাদের সাথে একটা সংযোগ সেতু সৃষ্টি করলো ! তারপর কাঠের উপর হেটে চলে গেল পাশের ছাদে ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল -কি ? তোমাকে আমন্ত্রন জানাতে হবে নাকি ! -ও ! হ্যা ! আসছি ! আমি পাশে ছাদে চলে আসলাম ।

এভাবে আমরা আরো কয়টা ছাদে টপকালাম ! তারপর খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিচে নেমে বাসস্টান্ডের দিকে হাটা দিলাম ! আমরা যখন রিক্সার চড়লাম আমার তখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি বাড়িয়ালার মেয়েটার সাথে পালিয়ে যাচ্ছি !! আজ সত্যি সত্যি বাড়িয়ালার মেয়েটার বিয়ে ! তবে আমার সাথে !! হিহিহিহি !! আগের পর্ব গুলো ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।