আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাইনাচের প্রেম এবং সেই রমিজ পাগলা।

বিশ্বাস অনেক বড় জিনিস.......... আকাশের মন ভালো নেই, বাতাসের মন ভালো নেই। তারাদের মন ভালো নেই জোনাকীরও মন ভালো নেই কারণ মাইনাচের মন ভালো নেই। কি কারণ মাইনাচের মন ভালো নেই? কি এমন হলোযে সদা হাসি খুশি মাইনাচের আজ মন ভারাক্রান্ত? কোন দুঃখইতো মানাচকে কাবু করতে পারেনা। তাহলে আজ কি এমন হলো যে রাস্তার পাশের সবুঝ ঘাসে শুয়ে, আছে আকাশ পানে নিরব চেয়ে? সে অনেক কাল পূর্ব ঘটনা। তার কালোত্বের কারণেই প্রেম বিষয়ক ভাবনারা তার কাছ হতে দুরেই থাকতো সবসময়।

সেদিন কি যে হয়েছিলো, কালোত্বের বাধাঁ অতিক্রম করেই সে বলেছিলো ভালবাসি। বলেছিলো একজনকে। ভালবাসার অনবিজ্ঞ খেলোয়াড় বলেই হয়তো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশটাও হয়েছিলো আনাড়ী টাইপের। নতুন একটা মন পেতে হলে কি ভেবে, কি ভাবে, কি রুপে, ঠিক কি বলতে হয় তা তার অজানা বিধায় হুট করে বলেছিলো ”আতোভা। তুআভা?” ছোট্ট একটা কাগজে আরো ছোট্ট শব্দটি লিখে ভিতু মনে তার সামনে ছুড়ে দিয়েছিলো।

ছুড়ে দিয়েই বিজলী বেগে দৌড়। চিরকুটটা যতনা কাজে দিয়েছিলো দৌড়াটা তার চেয়ে বেশি। দৌড় দিতে গিয়ে বেচারা মাইনাচ নিজেই দুনিয়া হতে মাইনাচ হতে হতেই বেচে গেল। কোন্ বেকুব কলা খেয়ে খোসাখানা ফেলেছিলো সেথায়? তার উপরেই স্লিপ খেয়ে পড়ে, কাতর সে ব্যথায়, উফ অসহ্য যন্ত্রনা, নয়কো তার মাথায় সবটি ব্যথা লাগলো জোরে তার কোমল নরম পাছায়। এভাবে পিছলাইয়া ছেরাবেড়া হইয়া দরাম কইরা পড়তে দেখে, তার হবুপ্রিয়া দৌড়ে এলো, তুল্লো তাকে ধরে ব্যথা কি গো বেশ পেয়েছো , শুধায় কাতর স্বরে , সরমেতে বলতে নাহি পারে, ব্যথা যে তার পাছায় ভুল করে তাই হবু প্রিয়া, পানি ঢালে মাথায়।

ব্যথা তার পাছায়, পানি ঢালে মাথায় ভাইরে ব্যথা কি আর যায়? চোখ রাঙিয়ে হবু প্রিয়া বলে, কাগজ ছুড়ে দৌড়ালে কেন? কি এমন আছে যে পালাতে হবে? মাইনাচের যেন দুমুখী গজব। একেতো প্রেমের প্রস্তাবের ভয় তারউপর আবার পাছার ব্যথা। দু মুখী ব্যথায় বেচারার আসলেই কাহিল দশা। তাই বল্লো, না, কিছু না রাতে পইড়ো, ভেবে দেইখো ”লক্ষী সোনা” বলতে গিয়েও কিন্তু বল্ল না। এর পর খোড়াতে খোড়াতে সে সেখান হতে প্রস্তান করলো।

বিকেল বেলা পাছা উপুর করে শুয়ে ছিলো বিছনায়, পাছায় ব্যথা তাই। ভাবনা নয়কো তার পাছার ব্যথায়, ভাবনা তার চিরকুটের ভাষায়। বুঝবেতো সে। সর্ট সংকেতে কি সে বুঝাতে চেয়েছে তাকে? আর বুঝলেও সেকি আপনাবে তাকে? নাকি চোখ রাঙিয়ে দুরে ঠেলে আরো দুরে হারায়। এ সে ভাবনাতে বিভোর ঠিক তখনি একটি মোছড়ানো কাগজ জানালার ফাঁক দিয়ে উড়ে এসে পড়লো তার নাকের ডগায়।

কারো দেখা নেই। মনে হয় ছুড়ে দিয়েই পালিয়েছে সে হাওয়ায়। ভীতু মাইনাচ আরো ভীতু মনে কাগজ খুলে, পড়ে অবাক বিস্ময়ে তড়িৎ উঠে দাঁড়ায়। লিখা সেখানে ”হা, আতোভা”। . . . . . . .. . . . . . . . . সে থেকে তাদের চলছে প্রেমের চাকা।

না, তাদের ভালবাসায় কোন আহাউহু ছিলোনা, কোন নোংরামী ছিলোনা, তোমাকে না পেলে মরেই যাবো টাইপ হালকা কোন ডায়লগ ছিলোনা, কোন প্রকার লুতুপুতুও ছিলোনা, রাত জেগে কথাও বলা হতোনা, একে অপরকে দেখলেই কাত হয়ে যাবার কোন সম্ভবনা ছিলোনা, প্রেমের জন্য রক্ত দিয়ে পত্র লেখাও হতোনা, প্রেমের জন্য পড়ালেখা ছেড়ে দেউলিয়া হতে হতোনা, সারাক্ষন প্রেম প্রেম করে পাগলও হতে হতোনা, রাত জেগে কিংবা রাথরুমে বসে দীর্ঘ প্রেম পত্রও লিখা হতোনা। যেটা হতো সেটা শুধুই মনের মাঝে অনুভব সে তাকে ভালবাসে, তার ব্যথায় সে ব্যথিত হয়, তার হাসিতে সে সুখ পায়। সে হাসলেই চাঁদ হাসে সে হাসলেই তারা খসে সে হাসলেই ফুলের পরে মৌমাছিদের মেলা বসে। সে হাসলে জোনাক জ্বলে সে হাসলেই প্রজাপতি রঙধনুতে পাখনা মেলে। সে হাসলে বৃষ্টি পড়ে সে হাসলে ঝর্ণাতলে অঝর ধারায় শ্রাবন ঝরে ।

সে হাসলে পাখি ডাকে সে হাসলে বয় বাতাস সে হাসলে ঝলমলিয়ে সূর্য্য হয়ে হাসে আঁকাশ সে হাসলে সাগরবুকে উতাল হয়ে ঢেউ খেলে সে হাসলে সবুজঘাসে ভোরের শিশির ঝিলিক হাসে সে হাসলে গায় পাখিরা সে হাসলে বাঁদর নাচে সে হাসলেই নাচে মাইনাচ সুখের সাগরে মাইনাচ ভাসে। কিন্তু --------------------- সুখে আর ভাসা হয়নি বেশি দিন তাদের। তাদের সে প্রেম চিরস্থায়ী হলোনা। একদিন হোস্টেলে তার প্রিয়ার বিয়ের খবর এলো। তার প্রিয়াকে অন্য কেউ সঙ্গী করে নিয়ে যাচ্ছে তার কিছুই করার নেই।

তাকে রুখবার কোন শক্তি নেই, সামর্থ নেই, অসহায় চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোন সম্বলই ছিলোনা সেদিন। সেদিন হোস্টেলের সিটে উপুর হয়ে শুয়ে কেদেঁছিলো, নাহ, পাছার ব্যথায় না, মনের ব্যথায়। আজ এতদিন পর কেন তার কথা মনে করে সন্ধ্যাবেলায় নিরালায় একা বসে তার ভাবনায় বিভোর? জানা নেই। হঠাৎ হঠাৎ কেন যে এসব ভাবনায় উদয় হয় বুঝিনা বাপু। আচমকা ঘুমন্ত দুঃখগুলো কেন যে ফাল দিয়ে চেতন হইয়া উঠে বুঝতে পারিনা।

একটা ইরেজার হতো যদি মন মুছার বেশ হতো। সব দুঃখ দেখে দেখে মুছে দিতাম। সুখ গুলো রেখে দিতাম যত্ন করে। একটা মনের দুঃখ মুছার রাবার বড় প্রয়োজন। এসব ভাবনায় হঠাৎ ছেদ পড়লো চারিদিকের হৈ হৈ রবে।

তার কিছু দুরে সবাই উচ্ছস্বরে চিৎকার করছে, মাইনাচ পালাও মাইনাচ পালাও, রমিজ পাগলা আসছে। আওয়াজ শুনেই ঘাড় বাঁকা করতেই দেখে রমিজ পাগলা পাশে দাড়ানো। বত্রিশ দাঁত খেলিয়ে হেসে বলে, দেয় টাকা দেয়, এক টাকা। সেদিকে মাইনাচের বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। ভয়ে চমকানোর কোন বিন্দুমাত্র লক্ষন নেই।

সে রমিজ পাগলার দিকে অপলক চেয়েই আছে, ঠিক তার চোখ বরাবর। চেয়ে আছেইতো চেয়ে আছে। হঠাৎ কি জানি হলো, রমিজ পাগলা গেল থেমে। বেশ কিছুক্ষন তার দিকে চেয়ে রইলো চুপচাপ। অল্পক্ষন পরেই ”দুঃখ করিস্সা” বলেই তার নোংরা হাতের নোংরা আঙ্গুল দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে আবারও হৈ হৈ করে দৌড়ে চলে গেল ভিন্ন পথে তার মতো করেই যে ভাবে এসেছিলো সেভাবেই।

সেই নোংরা হাতের ভালবাসাটা কিন্তু পবিত্রই ছিলো। ধুর শ্লা, দুঃখ বুঝার কেউ নেই, শেষ মেষ ওই রমিজ পাগলাই বুঝলো। নাকি পাগলে পাগল চিনলো? রমিজ পাগলার কথা এখানে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।