আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাইনিজদের কুসংস্কার, সব সম্ভবের দেশ: চীন- ৪ [বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে]

ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না ১২. যে পরিমাণ কাগজের টাকা পুড়ানো হবে সে পরিমাণ সত্যিকার টাকা পাওয়া যাবে। অশিক্ষিত কিংবা স্বল্পশিক্ষিত চাইনিজরাই যে শুধু এটা বিশ্বাস করে তা নয় বরং অনেক উচ্চশিক্ষিত চাইনিজরাও বিশ্বাস করে যারা কিনা বলে যে আমরা ধর্মে বিশ্বাসী নই। এর প্রমাণ পাওয়া যায় নতুন বছর বা বসন্ত উৎসব চলাকালীন সময়ে, পাড়া মহল্লায় এমন কোন রাস্তা নেই যেখানে এরা কাগজের টাকা না পোড়ায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে রাস্তার মোড়গুলি কাগজ পোড়ানোর ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। আসলে এরা এটা করে ঐতিহ্যগত কারনে মগজের মধ্যে জিনিসটা স্হায়ীভাবে বসে গেছে।

ধর্ম পালন না করলেও টাকার লোভ ছাড়তে পারে নি, যত টাকা পুড়ানো হবে তত পাওয়া যাবে। আর এটা চিন্তা করেই যারা কাগজের টাকা বানায় তারা পরিমাণটা ইচ্ছামতো বসায়, এক একটা নোট বড় বড় অঙ্কের ১ এর পর কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ টা শূন্য। অথচ বাস্তবে ১০০ ইউয়ানের উপরে কোন নোট নেই। আমাদের দেশেও একই, ছোটবেলা থেকেই মাজার ব্যাপারটা দেখতে দেখতে বড় হই বলে মনের মধ্যে একটা বিশ্বাস স্হায়ীভাবে বসে গেছে; মাজারে গিয়ে কিছু চাইলেই পাওয়া যায়, বাবার দরবার থেকে কেউ খালি হাতে ফেরত আসে না। সবার মনোবাসনা পূরণ করেন।

শুধু যে অশিক্ষিত গরীব লোকরাই মাজারে মানত করেন তা কিন্তু না, উচ্চশিক্ষিত বড় বড় লোকজন যেমন- সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক প্রধান বিচারপতি এরকম এলিট সোসাইটির লোকও দেখা যায়। এছাড়াও রাজনৈতিক দলের প্রধানরা ইলেকশন ক্যাম্পেইন শুরু করেন মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে। টাকার লোভে জ্বিনের বাদশাহ্ কাছে কলসি বোঝাই রত্ন ভান্ডারের কথা শুনে অনেকে নগদ টাকা বা গহনা দিয়ে দেন। অনেক চাইনিজ বিশ্বাস করে তাদের পূর্বপুরুষ যারা মারা গেছে তদেরও মৃত্যুর ওপারের জীবন যাপনে কাপড়-চোপড় লাগে, টাকা পয়সা লাগে। তাই এরা জামা-কাপড় আগুনে পোড়ায়, মনে করে যে কাপড়টা পোড়ানো হল যে পূর্বপুরুষের নাম করে, সে পূর্বপুরুষ এটা পাবে ঐপাড়ের জীবনে।

অনেককে দেখা যায় সুন্দর নূতন কাপড় পোড়াতে। আর পূর্বপুরুষের হাত খরচ হিসেবে চলার জন্য নিউজপ্রিন্ট/ভোষকা কাগজ পোড়ায়। এটা শ্রেফ খালি কাগজ, ছাপানো নোট নয়। এদের কিছুদিন পরপর এটা করা অনেকটা বেকার ছেলেকে বাপের দেওয়া হাত খরচের মত। ১৩. এরা pear ফল কখনও কেটে খায় না, গোটাটাই একজন খাবে।

আমি এক ফ্যামিলির বাসায় গেছি, ঐ বাসার বাড়ীওয়ালী আমাকে pear ফল খেতে দিছে। আমি ভাবলাম ফলটা কেটে দুভাগ করে একখন্ড উনাকে দেই, যেই ছুরি দিয়ে কাটতে গেছি তখনই উনি বলে না কাটা যাবে না। এই ফল কাটা মানে তুমি আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতেছ। ১৪. এরা তো ভাত খায় চপস্টিকস্ দিয়ে। বাটিতে বাড়া ভাতে এরা কখনও কাঠি দুটি ঢুকিয়ে খাড়া করে রাখবে না, চপস্টিকস্ একপাশে রেখে দিবে।

আমরা যেমন ভাত রান্না হয়ে গেলে নাকর বা নাড়ানোর কাঠি ভাতের মধ্যে ঢুকিয়ে গেড়ে রাখি। চাইনিজরা মনে করে এটা অমঙ্গল। এছাড়াও চপস্টিকস্ দিয়ে এরা কখনও বাটিতে টোকা দিয়ে টুং টুং শব্দ করবে না। ১৫. চাইনিজদের দাঁত তাদের দেহের ত্বকের মতই হলদে রঙ্গের। অবশ্য অনেকের আবার কালো রং ধারন করে।

এটা জন্মগত কোন বৈশিষ্ট্য নয়। ঐতিহ্যগত কারনে এরা দাঁত ব্রাশ করে না। বেইজিং সহ আমি যে দুই একটা জায়গায় ঘুরেছি কোথাও টুথপেষ্টের বিলবোর্ড দেখি নি। এমনকি চীনা প্রিন্ট মিডিয়া ইলেকট্রনিক মিডিয়া কোথাও টুথপেষ্টের বিজ্ঞাপন দেখি নি , CCTV ১ থেকে ১২ কিংবা ১৬ যে কয়টাই আছে একদিনও টুথপেষ্টের এ্যাড দেখি নি। শুধুমাত্র একদিন আমাদের Foreign student dorm এর নিচতলায় লিফটের পাশের বিজ্ঞাপনের টিভি স্ক্রীনৈ দেখেছি।

Carrefour সুপারশপে ১৭ ইউয়ান দিয়ে Colgate কিনতে দেখে আমার সঙ্গী দুই চাইনিজ ফ্রেন্ড তো অবাক! ১৭ RMB দিয়ে টুথপেষ্ট কেনার কি দরকার? ওদের প্রশ্ন শুনে কি উত্তর দিব ঐসময় বুঝে আসে নি। পরে ওদের জিজ্ঞেস করেছি আচ্ছা এই যে তোমরা যখন কথা বল তখন মুখ থেকে ভক্ করে সুবাস বের হয় এটা কি তোমাদের ভাল লাগে!!!!! সুপারশপগুলোতে টুথপেস্টের তাকের সামনে সবসময় বিভিন্ন কোম্পানির লোক প্রমোশনাল প্যাকেজের কথা কইতে কইতে ফেনা তুলে ফেলে কাস্টমারকে আকৃষ্ট করার জন্য অথচ অন্য প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে কখনও লেকচারারদের দেখা যায় কখনও দেখা যায় না !!! ১৬. আচ্ছা চিন্তা করুন, একটা মানুষ তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোনদিন একবারের জন্যও গুপ্তকেশ, বগলদেশের বনায়ন উজার করে না, তাহলে তাকে আপনার কি মনে হতে পারে? মানুষটা নিশ্চয়ই টারজানের মত জঙ্গলবাসী। কিন্তু না, আপনার ধারনা ভুল, এরা গুহাবাসী মানব নয়, এরা চাইনিজ। বাসে, ট্রেনে চলার সময় যারা স্ট্যান্ড ধরে দাঁড়িয়ে থাকে বিশেষ করে গরমের দিনে মেয়েরা তো স্যান্ডো গেঞ্জি টাইপের জামা পড়ে, চিপসা গরমের মধ্যে তাদের বগলদেশের কালো রশিগুলো সুঘ্রাণ ছাড়িয়ে চারদিক শুভাসিত করে। বগলতলাকে জঙ্গল না বলে সাজানো বাগান বললে মানানসই হয় কেননা এদের কেশের পরিমাণ আমাদের তুলনায় অনেক কম, কেশগুলো একটা একটা করে সহজেই আলাদা করা যাবে তয় রশির মত লম্বা।

অবশ্য শুধু যে চাইনজরাই এরকম তা না, মঙ্গোলিয়ান কোরিয়ান জাপানিজ ভিয়েতনামিজ স্টুডেন্টদেরও দেখি একই মনোভাবাস্পন্ন গুপ্তকেশ আর বগলদেশের ব্যাপারে। আমার ফ্রেন্ডদেরকে এব্যাপারে যদি জিজ্ঞেস করি ওরা বলে, এগুলো কাটব কেন, আমরা কাটি না , আর এটা কাটার কি আছে!!! এটা আমাদের ঐতিহ্য। ওদের উত্তর শুনে আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে যাই, মনে মনে বলি তাইতো এটা কাটবে কেন বোকার মত জিজ্ঞেস করাই ভুল হইছে। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে যখন পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ি তখন লা-জওয়াব হয়ে যায় "তোমরা চাইনিজরা সব কিছুতেই আমেরিকাকে অন্ধের মত অনুসরণ করো বেশ-ভূষা,চলাফেরা, হেয়ার কাট বলতে গেলে পুরো লাইফ স্টাইল তাহলে শুধু দাঁত আর বনায়নের ক্ষেত্রে বাকি থাকবে কেন !!! এগুলো ঐতিহ্য নয়, কুসংস্কার " পর্ব-১ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।