আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৫০ শতাংশ যানজট কমে যাবে, যদি...

ঢাকা মহানগরের যানজট সমস্যা খুব স্বল্প খরচে ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য প্রধান প্রধান সড়কের ক্রসিং পয়েন্টগুলোর বর্তমান ট্রাফিক সিগন্যাল পদ্ধতি উঠিয়ে দিয়ে যানবাহনগুলোকে বাধাহীনভাবে চলাচলের সুযোগ করে দিতে হবে। যেমন করে উড়ালসেতুর ওপর দিয়ে ক্রসিং পয়েন্টবিহীন গাড়ি চলাচল করে। প্রধানত ওয়ানওয়ে পদ্ধতি ও ওভারপাস পদ্ধতির সমন্বয়ে এ ধারণার বাস্তবায়ন করা যাবে। এ জন্য বড় ধরনের উড়ালসেতু নির্মাণের দরকার নেই।

চলে আসি মূল যৌক্তিকতায়। ওয়ানওয়ে পদ্ধতি: বর্তমানে রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে ভাগ করে এক ভাগ দিয়ে গাড়ি যায়, আর অন্য ভাগ দিয়ে গাড়ি আসে। একমুখী (ওয়ানওয়ে) পদ্ধতিতে, রাস্তার মাঝখানে কোনো ডিভাইডার থাকবে না, গাড়ি যাবে এক রাস্তা দিয়ে, আসবে অন্য রাস্তা দিয়ে। যেখানে কাছাকাছি দুটি রাস্তা (দুই-তিন শ মিটার দূরত্বে) আছে সেখানে সহজে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা যাবে। শুধু গাড়ি কোনপথে যাবে এবং কোনপথে আসবে, সেটা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।

একমুখী পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে যাত্রীদের গন্তব্যে যেতেও কোনো সমস্যা হবে না, হয়তো সামান্য কিছুটা পথ ঘুরতে হতে হবে কিন্তু কেউ ট্রাফিক সিগন্যালে পড়বেন না, এটা নিশ্চিত। এতে যানজটে আটকে থাকার সময়ের চেয়ে এক-চতুর্থাংশ কম সময় ব্যয় হবে। পদ্ধতিটি বাস্তবায়ন সহজ এবং স্বল্প সময়ে প্রয়োগযোগ্য। বড় অবকাঠামো নির্মাণের দরকার নেই, শুধু ডিভাইডারগুলো অপসারণ এবং লাইটপোস্টগুলো সরাতে হবে। একমুখী পদ্ধতির রাস্তাগুলোতে মিলিত হওয়া শাখা রাস্তাগুলোর প্রবেশমুখে ইংরেজি ‘টি’ আকৃতির ডিভাইডার স্থাপন করতে হবে, যাতে কোনো গাড়ি আড়াআড়ি পারাপার হতে না পারে।

একমুখী পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে ১০০ কোটি টাকারও কম খরচ হবে। এর ফলে সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকার আনুমানিক ৫০ শতাংশ যানজট নিরসন করা সম্ভব। বাস্তবায়ন করতেও লাগবে মাত্র দু-তিন মাস। এ মুহূর্তে একমুখী পদ্ধতি বাস্তবায়ন সম্ভব—গুলিস্তান, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, হাইকোর্টের সামনের রাস্তা, মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড়, বিজয় সরণি মোড়, ফকিরেরপুল, আরামবাগ, কমলাপুর, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ ক্রসিং, চৌধুরীপাড়া, মগবাজার মোড়, এফডিসির সামনের তিন রাস্তার মোড়, শাহবাগ মোড়, রূপসী বাংলা হোটেল, কাকরাইল মসজিদ, বাংলামোটর, সোনারগাঁও হোটেল, ফার্মগেট, খামারবাড়ি, বিজয় সরণিসংলগ্ন বিমান চত্বর, আইডিবি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংসদ ভবন, পান্থপথ, গ্রিন রোড মোড়, ধানমন্ডি ৩২ থেকে সিটি কলেজ, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত মোড়, কাঁটাবন মোড় পর্যন্ত। ওভারপাস পদ্ধতি: যেসব এলাকার যানজট একমুখী পদ্ধতির সাহায্যে নিরসন করা সম্ভব নয়, ওই সব এলাকায় ওভারপাস পদ্ধতির বাস্তবায়ন করে অবশিষ্ট ৫০ ভাগ এলাকার যানজট নিরসন করা সম্ভব।

ওভারপাস পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য রাস্তাগুলো অবশ্যই সুপ্রশস্ত হতে হবে। যেসব এলাকায় ওভারপাস পদ্ধতি বাস্তবায়ন করে যানজট নিরসন করা যাবে সে এলাকাগুলো হলো: ধানমন্ডি ৩২ থেকে আসাদগেট, শ্যামলী টেকনিক্যাল, মিরপুর-১ ও মিরপুর-১০ থেকে কাজীপাড়া হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত, সাতরাস্তা থেকে মহাখালী, বনানী হয়ে উত্তরা পর্যন্ত, যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এবং গুলশান-১ ও গুলশান-২ পর্যন্ত। ধানমন্ডি এলাকার যানজটও ওভারপাস পদ্ধতিতে নিরসন করা যাবে। আমার প্রস্তাবিত ওভারপাস পদ্ধতিটি এক বিশেষ ধরনের ওভারপাস, যা ইংরেজি ‘ইউ’ বা বড় হাতের ‘এল’ আকৃতির অথবা সোজাও হতে পারে, যা তিন রাস্তার মোড় বা চার রাস্তার মোড়ের আগে ও পরে স্থাপন করতে হবে। ওভারপাসগুলোর সাহায্যে তিন রাস্তার মোড় বা চার রাস্তার মোড়ের ক্রসিং পয়েন্টগুলোতে ট্রাফিক সিগন্যালের সম্মুখীন না হয়ে বাধাহীনভাবে গাড়িগুলো চলাচল করতে পারবে।

ফলে এসব ক্রসিং পয়েন্টে ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে গাড়ি জমে যানজট লাগার আর সুযোগ থাকবে না। এই ওভারপাসগুলো সাধারণত দুই লাইনবিশিষ্ট এবং ৩৫০ মিটারের মতো লম্বা হবে। গড় নির্মাণ খরচ আনুমানিক ২৫ কোটি টাকা। একটি ওভারপাস নির্মাণ করতে অনধিক ছয় মাস সময় লাগতে পারে। এই রকম ৬০ বা ৭০টি ওভারপাস লাগতে পারে অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ এলাকার যানজট নিরসনের জন্য, যা দুই বছর সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

এ ধারণা বাস্তবায়নের জন্য নতুন করে কোনো রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজন নেই। সরকার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করলে ঢাকার রাস্তায় বর্তমানে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে, তার চেয়ে অনেক বেশি গাড়ি যানজটমুক্তভাবে চলাচল করতে পারবে। এ দুটি পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই ঢাকা মহানগরের প্রায় ৮০ শতাংশ যানজট নিরসন করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। রাস্তার মাঝখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো যানজটের অন্যতম কারণ। এটি বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো চলমান বাসগুলোর বর্তমান নকশার বিভিন্ন সিঁড়ি বদলে দেওয়া।

বর্তমান নকশায় বাসের ভেতরে আমরা যেখানে দাঁড়াই, ওখান থেকে সরাসরি যাতে ফুটপাতে নামতে পারি, তার ব্যবস্থা করতে হবে। এর সঙ্গে বাসস্ট্যান্ডের ফুটপাতের উচ্চতা বাড়িয়ে বাসের পা-দানির সমান উঁচু করতে হবে। ফলে বাস থেকে আর রাস্তায় নামা যাবে না এবং বাসগুলোও আর যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠাতে-নামাতে পারবে না। ঢাকা শহরে বাস চলাচলের রাস্তা রিকশা চলাচলের রাস্তার চেয়ে অনেক কম। তাই যেসব রাস্তায় বাস চলাচল করে, ওই সব রাস্তায় রিকশা চলাচল অবশ্যই বন্ধ করা প্রয়োজন।

গাড়ির সঙ্গে রিকশা চলার কারণে গাড়িগুলো রিকশার গতিতে চলতে বাধ্য হয়, ফলে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যানজটের সৃষ্টি করে। ট্রাফিক জ্যামের কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।