আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তখন আর প্রতিবাদ করার কেউ থাকবে না।

সময়টা ১৯৩৯-১৯৪৫। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ভয়াবহতার সময়কাল। জার্মান কবি (Nicmoller) এ ভয়াবহতাকে তুলে ধরেছন তার অমর সৃষ্টি First they came for the Jews কবিতার মাধ্যমে । নিরবতা একটি জাতিকে কিভাবে শেষ করে দেয় তা তিনি তুলে ধরেছেন এভাবে First they came for the Jews And I did not speak out Because I was not a Jew Then they came for the communist And I did not speak out Because I was not a communist Then they came for the trade union And I did not speak out Because I was not a trade unionist Then at last they came for me And there was no one left to Speak out for me. তারা প্রথমে ইহুদীদের ধরতে এসেছিল, কিন্তু আমি প্রতিবাদ করিনি, কারণ আমি তো ইহুদী ছিলাম না। তারপর তারা কমিউনিষ্টদের ধরতে এসেছিল তখনও আমি প্রতিবাদ করিনি কারণ আমি তো কমিউনিষ্ট নই তারপর তারা ট্রেড শ্রমিকদের ধরতে এসেছিল তখনও আমি কথা বলিনি কারণ আমি তো ট্রেড শ্রমিক নই তারপর অবশেষে তারা আমাকে ধরতে এসেছিল তখন আমার পক্ষে কথা বলার আর কেউ অবশিষ্ট ছিল না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই কথাগুলো আজকের বাংলাদেশীদের মানুষদের জন্য ক্রমেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। ফ্যাসিজমের চর্ত্রিই হচ্ছে ধ্বংস করা, কোন কিছু গড়া তার স্বভাব বিরুদ্ধ। তবে ফ্যাসিজম তার চরিত্রকে এক সাথে প্রকাশ করে না। ধীরে ধীরে একের পর এক ভিন্ন মতকে দমন করে একটা পর্যায়ে ফ্যাসিজম স্বরূপে আবির্ভাব হয়। আজ বাংলাদেশের ঘাড়ে ফ্যাসিজম তার বিষাক্ত নিংশ্বাস ফেলছে।

অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে ভিন্ন মতকে নিভিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে। সমস্যাটা হলো ফ্যাসিবাদ বিরোধীরা অন্যের বিপদে নিজেকে গুছিয়ে রাখছে। ঘরপসড়ষষবৎ এর কবিতার মতো কারো বিপদে কেউ এগিয়ে আসছে না। এর পরিণতি কি হবে? সব মত, আদর্শকে দমন করার পর এক সময় সর্বশেষ আদর্শটিকে যখন আঘাত করা হবে , তখন তার জন্য কথা বলার আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। বাংলাদেশের ইসলাম পন্থিদের নানা ইস্যুতে ফ্যাসিবাদীরা নাজেহাল করছে।

ইসলামী তাহজীব –তামাদ্দুনকে শাহজালালের পূণ্যভুমি থেকে উৎখাত করতে চাইছে। বোরকা, হিন্দু-মুসলমান বিয়ে, কোরআন বিরোধী নারী নীতি, সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা তুলে দেয়া , ইসলামের বন্টননীতিসহ শরীয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিধানসমূহে তাগুতী হাতের ছোবল দিচ্ছে ফ্যাসিবাদীরা। উদ্দেশ্য একটাই- ইসলামী চেতনাকে ও আদর্শকে পরাজিত করে ফ্যাসিজমকে বিজয়ী করা। ঠিক এসময় সাংবাদিক , শ্রমিক, বুদ্ধিজীবীরা হাসছে। তারা নিজেদের নিরাপদ ভাবছে।

ভুল। সবই ভুল। সাগর রুনির হত্যাকান্ড, মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশের উপর ফ্যাসবাদী আক্রমণ,ইকরামুল হক ও শীর্ষ নিউজ নিষিদ্ধকরণ, চ্যানেল ওয়ান , যমুনা টিভির লাইসেন্স বাতিল করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ইসলামী শক্তিকে আপাত দুর্বল করে এবার ফ্যাসিজমের নগ্ন থাবা জার্নালিজমকে খামছে ধরেছে। ফ্যাসিজমের সম্প্রসারণে সাংবাদিক সমাজ বড় অন্তরায়। সুতরাং টার্গেট জার্নালিজম।

তখনও হাসছে সুশীল ! বুদ্ধিজীবি সমাজ,বড় রাজনৈতিক দল। ড. মুহাম্মদ ইউনুস, আর স্যার ফজলে হাসান আবেদকে নাকানি চুবানী খাওয়ানোর পর রফিকুল হক সাহেবরা বুঝতে পারলেন “ কত বড় বেকুবের দেশে আছি। ” আমি বলি মশাই- ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই না করলে বেকুব হওয়ার আরও ঢের বাকি আছে। এবার আমি বড় রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবদী দলের কথায় আসি। ইসলামী শক্তি ,ছোট বড় ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার , সীমান্তে হত্যাকান্ড , বিডিআর ধ্বংস, হত্যা ,গুম, আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দেখে জাতীয়তাবাদী শক্তি ভাবছে “ঐ দেখা যায় বঙ্গভবন, ঐ আমাদের গণভবন।

” হরতালের গাড়ি ভাংচুরের মামালায় তাদের ৩৩ জন নেতাকে খোয়াড়ে ঢুকতে হবে কল্পনাও করেনি তারা। আমি বলি এখানেই ফ্যাসিজম সফল। একের পর একটি শক্তিকে ফ্যাসিবাদীরা দমন করছে। বড় দল হিসাবে জাতীয়তাবদীরা আশু বিপদ উপলব্ধি করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। স্বরণ রাখা দরকার ক্ষমতার দ্বন্ধে ফ্যাসিবাদের মূল প্রতিদ্বদ্বী জাতীয়তাবাদী শক্তি।

ফ্যাসিজমকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অব্যশই ন্যাশনালিজমকে পরাজিত করতে হবে। সুতরাং ফ্যাসিজমের মূল টার্গেটকেই তো ন্যাশনালিজম। ন্যাশনালিজমকে চূড়ান্ত আঘাত করার আগে ট্রায়াল ম্যাচে পথের কিছু আবর্জনা পরিষ্কার করলো ফ্যাসিবাদীরা। অপেক্ষায় থাকুন । চূড়ান্ত আঘাত আসছে।

ইলিয়াস আলীকে গুম কারার মাধ্যমে সে আঘাতের সূচনা হয়েছে। ৩৩জন নাবিককে একত্রে বন্দী করলে জাহাজের যাত্রীদের কি হবে –এখনই বুঝা দরকার। চাই সম্মিলিত লড়াই। সাধু সাবধান। নইলে বলতে হবে Then at last they came for me And there was no one left to Speak out for me. ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।