আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যৌন কর্ম যার পেশা

বাংলা আমার দেশ সর্বজন শ্রদ্ধেয়া বেগম রোকেয়ার দেখানো পথে নারী আজ সমাজ বদল আর বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছে। দেশের জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নারী সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে। নারী প্রধানমন্ত্রী পিতৃ পরিচয় ছাপিয়ে নিজের যোগ্যতা দূরদর্শিতা আর প্রজ্ঞায় প্রশংশার দাবি রাখেন। সর্বাধিক লাভজনক পোশাকশিল্প খাতে নারীর ভূমিকা সর্বজনবিদিত। হ্যাঁ, নারীর সাফল্যের পাত্র কাঁণায় কাঁণায় পূর্ণ না হলেও একেবারে শূন্যও নয়।

কিন্তু নারীর সাফল্যের গুণকীর্তন আমার বিষয়বস্তু নয়, আজ আমি এমন নারীর কাহিনী বলবো, যাকে কেচ্ছা বললেও অত্যুক্তি হবে না। বলে রাখা ভালো এটা গবেষণাপত্র হিসেবে প্রকাশিত একটি সামাজিক গবেষণার ফলাফল। জনসংখ্যা বিজ্ঞানের ছাত্রী হিসেবে একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর সামাজিক বৈপরীত্ব দেখার প্রয়াসে গবেষণার বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম ‘নারী’, এবং তা কোনও সাধারণ নারী নয়, জীবন সংগ্রামে সাহসী নারী। হ্যাঁ, আমার গবেষণার নারী হলো যৌনকর্মী নারী। তথ্য মতে, দেশে প্রায় ১ লাখ নারী যৌনকর্মী আছে, অর্ধেকের বয়স ১৮-৩০ এবং ১/২ সন্তানের জননী।

সুপ্রাচীন কাল থেকে এদের উপস্থিতি সমাজে বিদ্যমান থাকলেও কোনও সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় দলিল দস্তাবেজ বা জরীপে এদের পরিচয় আনুপস্থিত। উনিশ শতকের শুরুর দিকে তৎকালীন ভারত সরকারর পরিচালিত বিখ্যাত ডেসিনিয়াল সেন্সাসে যৌন কর্মীদেরকে অদক্ষ অকৃষি শ্রমিক হিসেবে দেখানো হয়েছিল এবং একই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত ২০০১ সালের আদমশুমারীতেও ‘অন্যান্যের’ কোঠায় ভিক্ষুক ও ছিন্নমূল হিসেবে যৌনকর্মীরা স্থান পেয়েছে । চারটি জেলা শহরে বসবাসকারী যৌনকর্মীদের উপর চালানো এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, এরা বয়স গুনতে ও বলতে অপারগ। আনুমানিক বয়স বের করা সম্ভব হলেও বয়সের তুলনায় এদের বেশি বয়সী দেখায়। প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব, অনিয়মিত জীবন যাপন এবং অধিক সংখ্যক গর্ভপাতের ফলে অকাল বার্ধক্য ও শারীরিক জটিল অসুখের শিকার হয় এসব নারী।

যৌনপল্লীতে কর্মরত প্রায় সকল যৌনকর্মীই শরীর মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট সেবন করে। এই ট্যাবলেট সাময়িক স্বাস্থ্যবর্ধক, কিন্তু শরীবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় স্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গবাদী পশুর মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এই মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় । এদের ৪৩ শতাংশ যৌনপেশা শুরু করে মাত্র ১০-১২ বছর বয়সে এবং একটা বড় অংশ সাবালিকা হওয়ার আগেই যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে নিতে বাধ্য হয়, ৮০% যৌনকর্মী ১৮তম জন্মদিনের পূর্বেই নিজেদেরকে যৌনকর্মী হিসেবে পরিচিত করে ফেলে। দারিদ্রের নিষ্পেষণে দরিদ্র নারী অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের মন্ত্র পড়ে, দায়মুক্ত হয় পরিবার।

নিজের পিতামাতার কাছেই যে বোঝা, অন্যের কাছে সে আদরনীয় হবে এটা ভাবা বাতুলতা মাত্র। স্বামী সংসারে নির্মম নির্যাতন আর সীমাহীন অভাব সহ্য করতে না পেরে রোজগারের সহজ পেশা হিসেবে দরিদ্র নারী যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে নেয়। অনেকে দারিদ্র মোকাবিলার জন্য গ্রাম থেকে শহরে আসে, সম্মানজনক উপায়ে দুমুঠো উপার্জন করতে চায়, কিন্তু শহরে জাল পেতে থাকা ধূর্ত দালাল চক্রের খপ্পরে পরে নিজের অজান্তেই একসময় যৌনকর্মী হয়ে উঠে । স্বামী পরিত্যক্তা নারী বারবার প্রেম আর বিয়ের ফাঁদে পরেও যৌনকর্মীর পেশা গ্রহণ করে । এছাড়া কত নারী যে আত্মীয় বন্ধু পরিজন প্রতিবেশীর যৌন লালসার শিকারে ধর্ষিতা হয়ে; সমাজে টিকে থাকার কোনো বিকল্প খুঁজে না পেয়ে যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে নিয়ে ধঁকে ধুঁকে জীবন পার করছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই ।

এমন নারীর সংখ্যাও কম নয় যারা অন্য পেশার পাশাপাশি যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে নিয়ে পরিবারে স্বচ্ছলতা আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এদের ৪০% স্বামী পরিত্যক্তা, ১৮% অবিবাহিতা, ১০% তালাক প্রাপ্তা, ২% বিধবা এবং ৩০% বিবাহিতা। ভাসমান যৌনকর্মীদের একটা গ্র”প শহরে বাসা ভাড়া করে এবং সামাজিক জটিলতা এড়ানোর জন্য একজন পুরুষ সঙ্গীকে সাথে রাখে যে কিনা আদতে তার স্বামী তো নয়ই বরং মাসে মাসে মাসোহারা নেয়। তাছাড়া বিনা খরচে থাকা খাওয়া এবং পুরুষালী প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যমে তার পরিচয় মধ্যসত্ত্বভোগী মুনাফাখোর। অন্যদিকে যৌনপল্লীগুলোতে একশ্রেণীর মধ্যসত্ত্বভোগী মুনাফাখোর রয়েছে, যারা এসব একাকী নারীর একাকীত্বের সুযোগে মিথ্যা আবেগকে পুঁজি করে হাতিয়ে নেয় কষ্টার্জিত সর্বস্ব।

যৌনপল্লীর ভাষায় এদের বলে ‘বাবু’। প্রায় প্রতি যৌনকর্মীর একজন ‘বাবু’র সাথে তথাকথিত মন দেয়া-নেয়ার সম্পর্ক থাকে এবং এই সম্পর্ককে পুঁজি করে এরা ছলে বলে কৌশলে হাতিয়ে নেয় যৌনকর্মীদের গচ্ছিত সকল অর্থ । কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘বাবু’ রা যৌনপল্লীতে কর্মরত নারীদেরকে বিয়ের লোভ দেখিয়ে পল্লীর বাইরে নিয়ে আসে, বিয়ের আশ্বাসে সংসার সাজায়, ব্যবসা করার জন্য টাকা পয়সা আদায় করে এবং সংসারের মিথ্যা স্বপ্নে নারী যখন স্বর্বস্ব দিয়ে দেয় তখন ভালোবাসার ‘বাবু’র আসল রূপ দেখতে পায় । কিন্তু ইতোমধ্যেই নারী তার সর্বস্ব হারিয়ে কপর্দকশূন্য হয়ে আবার যৌনপল্লীতেই ফিরে আসে। যৌনপল্লীতে বসবাসকারী প্রায় ৯০% নারী অক্ষরজ্ঞানহীন।

ভাসমানভাবে কর্মরত যৌনকর্মীদের ৫৫% অক্ষরজ্ঞানহীন, ৩০% প্রাথমিক বিদ্যালয় উত্তীর্ণ হতে পারে নি এবং মাত্র ২% এসএসসি পাশ করতে পেরেছে। সাধারণতঃ কমবয়সী যৌনকর্মীরা বেশি আয় করতে সক্ষম। ২০% যৌনকর্মী জনপ্রতি ২০-৫০ টাকা, ৫৬% যৌনকর্মী জনপ্রতি ৫০-১০০ টাকা এবং মাত্র ১% জনপ্রতি ১০০০ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়। দিনপ্রতি আয় ৩০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে, যদিও প্রতিদিন সমানভাবে আয় করা সম্ভব হয় না । ২৮.৩% যৌনকর্মী দিনে ৩০০ টাকা, ১৩% যৌনকর্মী দিনে ৫০০ টাকা এবং মাত্র ৩% যৌনকর্মী দিনে ১০০০ টাকা উপার্জন করে ।

কষ্টার্জিত উপার্জনের বড় অংশ এরা নেশা বা মাদকের জন্য ব্যয় করে । এই গবেষণায় একজনও যৌনকর্মী খুঁজে পাওয়া যায় নি যে মাদকাসক্ত নয়। যৌনকর্মীদের বিচরণ স্থানগুলোকে কেন্দ্র করে মাদকের জমজমাট বাজার বিদ্যমান এবং একশ্রেণীর মাদক ব্যবসায়ী প্রতিনিয়ত হাতিয়ে নিচ্ছে অসহায় নারীদের উপার্জনের সিংহভাগ। মাদকের ব্যয় নিশ্চিত করার পর উপার্জিত বাকি অর্থ দিয়ে এরা খাদ্য, বাড়িভাড়া, পোশাক ও প্রসাধন এবং যৎসামান্য বিনোদন খরচ মিটিয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, সকল খরচ মিটিয়েও প্রায় সকলে পরিবার, সন্তান এবং বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য নিয়মিত অর্থের যোগান দেয় এবং এই অর্থের যোগান দিতে পারাকে এরা অত্যন্ত গর্বের কাজ মনে করে।

যৌনপল্লী কয়েকজন প্রভাবশালী যৌনকর্মী এবং এদের সুনিয়ন্ত্রিত বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যৌনপল্লীতে আগত নতুন নারীদের অত্যন্ত হীন শর্তে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এরা কিনে নেয়। শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রতিদিন তাদেরকে পরিশোধ করতে হয়, অন্যথায় নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। প্রতিদিনের পাওনা পরিশোধের জন্য গড়ে এরা ১৫-২০ জন পুরুষকে সঙ্গ দেয়। পর্যাপ্ত আয় না হলে অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ নিয়ে দিনের পাওনা পরিশোধ করতে হয়।

এক্ষেত্রে প্রতি ১০০ টাকার জন্য প্রতিদিন দিতে হয় ১০ টাকা সুদ অর্থাৎ সুদের পরিমাণ মাসিক ৩০০%। এভাবে এরা দিনের পর দিন ঋণের জালে জড়িয়ে যেতে থাকে। প্রভাবশালীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর মাধ্যমে সদ্য আগত নারীদের যৌনপল্লী থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং সময়মতো পাওনা ও বখরা আদায় নিশ্চিত করে। সদ্য আগত এসব যৌনকর্মীদের বলা হয় ‘ছুকরী’। এভাবে একেকজন প্রভাবশালী যৌনকর্মী অন্ততঃ ৫০-১০০ জন ‘ছুকরী’ উপর প্রভাব বজায় রাখে বা কিনে নেয় এবং জনপ্রতি দিনে ২০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে।

এভাবে যৌন পল্লীতে পা দেয়া মাত্রই প্রতিটি নারী শোষনের নাগপাশে বন্দি হয় এবং স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে ৫-৭ বছর সময় লাগে। ধীরে ধীরে এরা এ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং এই অভ্যস্ততা একসময় তাদের নিজেদেরকেও নিপীড়িত থেকে নিপীড়কে রূপান্তরিত করে এবং চলতে থাকে নিপীড়ন আর শোষনের পরম্পরা। শহরের আবাসিক হোটেলে কাজ করা যৌনকর্মীদের অত্যাচারের গল্প আরও ভয়াবহ। দালালদের সহযোগিতায় কিছুদিন পর পর ১৫ দিন থেকে ১ মাসের জন্য ১৫-৩০ জনের একটি দল হিসেবে হোটেলগুলোতে এরা আস্তানা গাড়ে। টানা সকাল দুপুর রাত খদ্দেরের উপস্থিতি অনুযায়ী কাজ করতে এরা বাধ্য থাকে।

সাধারণতঃ ১টা বা ২ টা রুম দেয়া হয়, যেখানে এরা গাদাগাদি করে থাকে এবং হোটেল কর্তপক্ষ খাবার সংগ্রহ করে। খদ্দের রুমে প্রবেশ করে তার পছন্দ অনুযায়ী যৌনকর্মী নির্বাচন করে; অনেকটা বাজার থেকে গবাদী পশু সংগ্রহ করার মতো। এভাবে একেকজন যৌনকর্মী দিনে সর্বোচ্চ ৩০ জনকেও সঙ্গ দিয়ে থাকে। খদ্দেরপ্রতি কত টাকা পাওয়া যাবে তা দালালরা নির্ধারণ করে এবং তারাই টাকা সংগ্রহ করে। কোনো যৌনকর্মীই সরাসরি মজুরি গ্রহণ করতে পারে না।

যদি অন্ততঃ ১৫ দিনও হোটেলে অবস্থান করে এবং দিনে গড়ে অন্তত ১০ জন খদ্দেরকেও সঙ্গ দেয়; খদ্দের প্রতি ন্যূনতম ১০০ টাকা করে আয় হলে ১৫ দিনে মোট আয় দাঁড়ায় ১০০*১০*১৫ =১৫ হাজার টাকা । কিন্তু কাজের শেষে এরা পায় মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫০০০ টাকা; গাড়ি ভাড়া, পথের আনুসঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে ১৫ দিন পর অমানুষিক পরিশ্রম আর বাঁধভাঙ্গা ক্লান্তি নিয়ে মাত্র ৪ হাজার টাকা নিয়ে এদের বাড়ি ফিরতে হয় । এদিকে লোভী দালাল আর ধনী হোটেল ব্যবসায়ী হাতিয়ে নেয় অসহায় মেয়েগুলোর অর্জনের বাকি দুই ভাগ। বাড়ি ফিরে মেয়েগুলো নিদারুন ক্লান্তি আর মিথ্যা কৈফিয়তের বোঝা সামলাতে সামলাতে আবার নামে অনিশ্চিত গন্তব্যে। অন্য আরেকটি গ্র”পের যৌনকর্মী আছে, যারা আবাসিক হোটেলেগুলোতে কর্মী হিসেবে কাজ করে; সাধারণতঃ গৃহকর্মের কাজ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং রান্না-বান্নার কাজে এরা নিয়োজিত হয়।

হোটেলে আগত বোর্ডারদের চাহিদা অনুযায়ী যৌনসঙ্গ দিতে এরা বাধ্য থাকে। কিন্তু যৌনকর্মের জন্য আলাদা কোন মজুরি পায় না । একটা মাসিক মজুরির বিনিময়ে এদের নিয়োগ করা হয় এবং এদের উপস্থিতির মাধ্যমে অধিক সংখ্যক বোর্ডার আকৃষ্ট করা হয়। মাত্র ৩% এর ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। মাত্র ২৭% নিজের উপার্জিত টাকা নিজের হেফাজতে নিজ গৃহে রাখতে পারেন, বাকি ২৩% স্বামী বা যার সাথে সে বসবাস করে তার কাছে, ২৬% বন্ধু বা আত্মীয়র কাছে, ৭% বাড়িওয়ালা বা গৃহস্বামীর কাছে, ১৪% দালালের কাছে উপার্জিত অর্থ গচ্ছিত রাখে ।

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, প্রায় ৭০% যৌনকর্মীই শুধুমাত্র সঠিক জায়গায় অর্থ গচ্ছিত রাখার অপারগতার কারনে প্রতারণার শিকার হয় । এরা যদিও ব্যাংককে টাকা সঞ্চয়ের নিরাপদ স্থান হিসেবে মনে করে তথাপি ব্যাংকে নিজস্ব হিসেবে খুলতে আগ্রহী হয় না । এক্ষেত্রে হিসেব খোলার জটিলতা এবং পেশাগত পরিচয় জানার পরে ব্যাংক কতৃপক্ষের অসহোযোগিতাকে এরা কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ব্যাংক হিসেব খোলার সাথে জড়িত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জাতীয় পরিচয়পত্র; প্রায় ৪৩% যৌনকর্মীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। প্রায় ৮৩% যৌনকর্মীর কোনো সঞ্চয় নেই।

পক্ষান্তরে ৪৩% যৌনকর্মী ঋণগ্রস্ত এবং এই ঋণ আত্মীয়, বন্ধু বা অন্য যৌনকর্মীর কাছ থেকে উচ্চ সুদে সংগ্রহ করে থাকে। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, যৌনপল্লীতে ক্ষুদ্র ঋণের কোনো কার্যক্রম খুঁজে পাওয়া যায় নি । যৌনকর্মীরা নিজের নামে জমি কিনতে পারে না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাবা, স্বামী বা ভাইয়ের নামে জমি কিনে প্রতারণার শিকার হয়। দেখা গেছে যে, পরিচয় গোপন করে যদিও এরা জমি কিনে বাড়ি ঘর করে বসবাস শুরু করে কিন্তু পরিচয় প্রকাশ হওয়া মাত্র বিভিন্নভাবে প্রতারিত হয় এবং উচ্ছেদের শিকার হয়।

পৈত্রিক সম্পদের কোনও ভাগই এরা পায় না এবং মাঝে মাঝে পৈত্রিক স্বীকৃতি থেকেও বঞ্চিত হয়। এমনকি মৃত্যুর পর ধর্মমতে সকল আচার অনুষ্ঠান পালনেও সমাজে একধরনের অনীহা দেখা দেয়। ৭৯% যৌনকর্মী এইচআইভি সম্পর্কে জানে। যদিও ৫৩% তাদের সঙ্গীদেরকে কনডম ব্যবহারে রাজি করাতে সফল হয় না । এক্ষেত্রে এরা কনডম ব্যবহারে খদ্দেরের নিরুৎসাহ এবং তাদের নিজেদের মধ্যে খদ্দের হারানোর ভয়কে এই অক্ষমতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

যে যৌনকর্মী সমাজের বিকৃতির খোরাক, যারা দাসপ্রথার ঝাণ্ডা উড়ায় যৌনদাসী হিসেবে, তাদের নিয়ে আর কতদিন চুপ করে থাকা, দেখেও না দেখার ভান করা? আর কতদিন এদেরকে ঝেটিয়ে এক আস্তানা থেকে অন্য আস্তানায় পাঠানো , কতদিন এইচআই ভি’র নামে শুধু কনডম সরবরাহ করা? আসুন, সমস্যার গভীরে যাই, এদের শিক্ষিত ও সচেতন করি, কর্মক্ষম মানব সম্পদে পরিণত করার চেষ্টা করি। এদের চারপাশ থেকে ঘূর্ণায়মান মুনাফাখোর দালাল চক্র আর মাদক ব্যবসায়ীদের হঠাতে হবে। শুনতে হোক যত কর্কশ, এরা কিন্তু আমাদেরই বোন, কন্যা। এরাও কিন্তু বাংলায় কথা বলে, হাসিনা খালেদা এরশাদ কাউকে ভোট দেয়, মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টানের মতো ধর্ম পালন করে। এরাও কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধুই বলে, এদের শরীরে রক্তের রঙ লাল, লাল সবুজে এরাও কিন্তু আবেগাপ্লুত হয়।

পুনশ্চ: দেশের ১৩টি রেজিস্টার্ড যৌন পল্লীতে বছরে প্রায় ২০ হাজার শিশু জন্ম নেয়। এই হতভাগ্য শিশুদের পিতৃ পরিচয় নেই বটে কিন্তু এদের রাষ্ট্রীয় পরিচয় আছে- এরা বাংলাদেশী। জন্মমাত্র ‘আজন্ম’ পাপ’ নিয়ে জন্মানো এই মানব সন্তানদের দায়িত্ব কার , কোন মন্ত্রণালয়ের? হ্যাঁ, আমরা অনেকেই হয়তো ভাববো, এই শিশুরা বড় হয়ে সমাজকে কলুষিত করবে, সমাজে সন্ত্রাস বাড়াবে ইত্যাদি ইত্যাদি……. কিন্তু সংবিধান এখানে কী বলে, মানবতা কি এখানে নিশ্চুপ? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৫৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।