আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোমায় অনেক ভালবাসি

পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় বস্তু হচ্ছে নিজের মন... সবার আগে নিজের মনকে চিনুন... নিজের মনের কাছে অচেনা থাকবেন না ... জানো,সবাই আমাকে বড্ড সেকেলে বলে। কারন আর কিছু নয়... মানিব্যাগে তোমার ছবি রাখি বলে। মনটা খারাপ হয়ে গেলে...খুব হতাশ হয়ে গেলে তোমার ওই ছবিটাই আমার শেষ ভরসা। তুমি হয়তো অন্যদের চোখে সুন্দরী নও কিন্তু আমার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সুন্দরী। তুমিই আমার জীবনে প্রথম নারী যে আমাকে হাতে-কলমে ভালবাসতে শিখিয়েছে।

তোমার কি মনে আছে আমার স্কুল বেলার কথা?দুজন হাতে-হাত রেখে স্কুলে যেতাম। আমার ব্যাগটা তোমার হাতে দিয়ে নেমে যেতাম ক্রিকেট খেলতে। আমার বাবা উচ্চপদস্ত সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় প্রতিবেশী কারো সাথে তেমন মিশতে পারতাম না। তুমিই ছিলে আমার শত্রু তুমিই আমার বন্ধু। আচ্ছা তোমার গালে আমার সেই আঁচড়ের দাগটা কি আছে?ওইযে সাপ খেলায় হেরে গিয়ে গালে তোমার গালে খামছে দিয়েছিলাম।

তোমার কি মনে আছে ক্লাস ফাইভে থাকতে একবার আমার যে প্রচণ্ড জ্বর হল। সারাটা দিন তুমি আমার হাত ধরে বসে থাকতে। মেডিকাল কলেজের প্রফেসরের সামনে তোমার সেই কান্না এখনও আমার কানে বাজে। তোমার সাথে প্রায়ই অকারনে খারাপ ব্যাবহার করতাম। তুমি মুখ বুঝে সহ্য করতে।

কিন্তু ওই জ্বরের পরে টের পেয়েছি তুমি আমায় কতোটা ভালবাস। সেইদিনই প্রতিজ্ঞা করেছি আর কোনদিন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না। তোমার কি মনে আছে ক্লাস এইটের বৃত্তি পরিক্ষার রেজাল্টের দিনের কথা?তুমি আর আমি একসাথে রেজাল্ট আনতে গিয়েছিলাম। তুমি টেনশনে আমার হাত ধরে বসেছিলে। ভিড়ের মাঝে কিছুতেই আমি রেজাল্ট খুজে পাচ্ছিলাম না।

শেষপর্যন্ত তুমিই খুজে পেলে আমার রেজাল্ট। এরপর তুমি যা করলে তা ভাবলে আমি এখনও শিহরিত হই। আমার সব বন্ধুদের মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলে। তুমিই যে আমার প্রথম ভালবাসা এটা বুঝানোর জন্য আসলে এতোকিছু বলার দরকার ছিল না। তোমার কাছে আমি কোন কিছুই লুকোতাম না।

যে স্কুলে ছিলাম তা ছিল শুধু ছেলেদের। তাই কলেজ লাইফের প্রথম দিনে এতোগুলো সুন্দরী মেয়ে দেখে রোমাঞ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম। তোমার কাছে কাকে কেমন লাগলো খুলে বললাম। ভেবেছিলাম তুমি আমার কথা শুনে অনেক কষ্ট পাবে। আমার কথা তুমি হাসিমুখে মনোযোগ দিয়ে শুনলে।

তোমার প্রতি আমার মুগ্ধতা আর ভালবাসা আরও বেড়ে গেল। যে মানুষটা আমাকে এতো বিশ্বাস করে তার বিশ্বাসের অমর্যাদা করি কি করে। অনেকে বলে তোমার সাথে নাকি আমার চেহারার অদ্ভুত মিল। তোমার হাসির সাথে নাকি আমার হাসির অনেক মিল। আমাদের পাড়ার অনেকেই বলতো আমি নাকি দেখতে মডেল নোবেলের মতো।

আমি নোবেলের মতো হতে চাই না...আমি হতে চাই শুধু তোমার মতো। তোমার সাথে বোধহয় একসাথে কখনই খাওয়া হয়নি। আমাকে সামনে বসিয়ে নিজ বেড়ে আমায় খাওয়াতে। বসে বসে পরম মমতা নিয়ে দেখতে আমি কিভাবে খাই। রোজার ঈদের শপিং এর কথা মনে পরে?আমি নীল রঙ পছন্দ করি বলে তুমি সবসময় নীল রঙের জামা কিনতে।

যেদিন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবার জন্য ঢাকা চলে আসি,সেদিনই টের পেলাম তোমাকে আমি কতোটা ভালবাসি। তুমি কি জানো,ঢাকায় এসে প্রতিটা ক্ষনে আমার চোখ তোমায় খুজে বেড়াতো। আর তোমার কথা কি বলব?প্রতিটা দিন ফোন করে কাঁদতে। বুয়েট ও মেডিক্যাল দুটোতেই চান্স পেলেও তোমার মনের ইচ্ছাটাই গুরুত্ত দিলাম। মেডিক্যালের কষ্টের দিনগুলোতে তোমাকে খুব বেশী মনে পরতো।

মন খারাপ হলেই তোমার সাথে গল্প জুড়ে দিতাম। তুমি বুঝতে আমি কি চাই। আর তাইতো প্রতিদিনকার প্রতিটি ঘটনা খুব মনযোগ দিয়ে শুনতে। তুমি জানতে আমি আলসেমি করে রাতের বেলা মশারী না টানিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাই। আর তাইতো নিজ হাতে একটা কাঁথা সিলিয়ে দিলে।

মাঝে মাঝে ভাবি...যেই আমি তোমাকে একদিন না দেখলেই উন্মাদ হয়ে যেতাম সেই আমি ২-৩ মাসেও তোমার দেখা পাইনা। এই ডিজিটাল যুগেও প্রতি সাপ্তাহে তুমি আমাকে একটা করে চিঠি লিখ। এতো ব্যস্ততার মাঝে হয়তো তোমার প্রত্যেক চিঠির উত্তর দেয়া হয় না... কিন্তু মাঝে মাঝে যখন মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়,তখন চিঠিগুলো খুলে পরতে শুরু করি। তোমার চিঠির লেখাগুলি স্পর্শ করে দেখি...মনে মনে ভাবি এখানেই আছে তোমার হাতের ছোঁয়া। তারপর যখন তোমার নিজ হাতের বোনা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরি,তখন মনে হয় তুমি আমায় জড়িয়ে ধরে আছো।

তোমাকে কখনই শাড়ি পরতে না। একবার কোন একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে তোমাকে প্রথম শাড়ি পরতে দেখি। শাড়ি পরলে যে তোমাকে এতো অপরূপা লাগে তা আগে কখনই টের পাইনি। তোমার কি মনে আছে ইন্টার্নীর প্রথম বেতন পেয়ে আমি নিজেই পছন্দ করে তোমাকে একটা শাড়ি কিনে দিলাম। তোমাকে কিনে দেবার পর বুঝতে পারলাম শাড়ির রঙটা কতই না খেত ছিল।

অথচ তুমি তোমার বান্ধবীদের গর্বভরে আমার দেয়া শাড়িটা তাদের দেখালে। ২০১১ সালে জানুয়ারিতে প্রথম চান্সেই একটা ভাল সরকারি চাকরী পেয়ে গেলাম। আমি যখন নিয়োগপত্র পেলাম তখন তুমি আমার চেয়ে অনেক দুরে। খুব ইচ্ছা করছিল তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার টোল পরা গালটায় অনেকগুলো চুমু খাই। মাগো...আগে হয়তো তোমার সমান লম্বা ছিলাম না,তাই তোমার গালের নাগাল পেতাম না।

এখন আমি অনেক লম্বা হয়েছিগো মা...এখন তুমিই আমার গালের নাগাল পাবে না। মাগো...আজ আমি তোমার কাছ থেকে কতো দূরে...যেই আমি ক্লাস নাইন পর্যন্ত তোমার বুকে মুখ গুজে ঘুমিয়েছি...সেই আমি আজ কোলবালিশের মাঝে তোমায় খুজে ফিরি...খুজে খুজে ফিরি তোমার বুকের সেই অদ্ভুত সেই মিষ্টি গন্ধটা। মাগো...তোমার ছেলে এখন আর জ্বর হলে প্রলাপের মাঝে তোমাকে খুজে না...চুপটি করে শান্ত ছেলের মতো শুয়ে থাকে। তোমার ছেলে এখন ঠিক ঠিক মশারি টানিয়ে ঘুমায়...সে জানে,না টাঙ্গিয়ে ঘুমালে কেউ তার মশারি গুজে দেবে না। মাগো...আজ হয়তো পেশাগত কারনে অনেক ব্যস্ত থাকি...কিন্তু তোমাকে প্রতিটা মুহূর্তে অনেক মিস করি।

এখানে সেখানে কতোজায়গায় দাওয়াত খাই কিন্তু তোমার রান্না করা খাবারের অমৃত কিছুতেই খুজে পাইনা। মাগো...আমি আবার সেই দিন-গুলোতে ফিরে যেতে চাই যেদিন তুমি নিজে ভাত মাখিয়ে আমাকে খাইয়ে দিতে। মাগো...আমি কি অনেক বড় হয়ে গেছি?তুমিইতো বলো আমার মুখে নাকি এখনও তোমার দুধের গন্ধ রয়ে গেছে। মাগো...আমি সারাজীবন তোমার কাছে সেই ছোট্ট খোকাটি হয়েই থাকতে চাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।