আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Wing and a Prayer (1944) এবং Midway (1976) WW2এ প্যাসিফিকে মার্কিনদের ঘুড়ে দাড়ানো!

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর পার্ল হারবার তথা যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্যে জাপানীদের হঠাৎ আক্রমণে মার্কিন নৌ ও বিমান বাহিনী অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও নিপ্পনদের আসল লক্ষ্যই পূরণ হয়নি। কয়েকটি যুদ্ধ জাহাজ, ডেষ্ট্রয়ার, ক্রুজার ও সাবমেরিন এবং বেশ কিছু ফাইটার জেট ধ্বংস হলেও ঐ দিন কোন বিমানবাহী রণতরী পার্ল হারবার অথবা এর কাছে ছিল না। আধুনিক সুমুদ্রের যুদ্ধে কোন বিমানবাহী রণতরী ধ্বংস বা ডুবিয়ে দেওয়া মানে জ্যাকপট! পার্ল হারবারে জাপানী হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েও কেবল এই সমস্ত বিমানবাহী রণতরী গুলোর উপর ভিত্তি করে ওয়াশিংটন ডিসি ও মার্কিন সমরবিদদের আশা ছিল পরবর্তী জাপানী যেকোন হামলা রুখে দিবে। যাতে মূল ভূখন্ড পশ্চিমের তথা প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল সহ হাওয়াই রক্ষা করা যায়। অন্যদিকে জাপানের এই ধরণের হঠাৎ আগ্রাসী তৎপড়তায় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ফ্রান্কলিন রুজভেল্ট ক্ষিপ্ত হন।

তারই চাপে মার্কিন সমরবিদরা এপ্রিল ১৯৪২ জাপানের রাজধানী টোকিওতে একটি হামলা চালায়। এই নিয়ে এই বছরের জানুয়ারীতে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম; Destination Tokyo (1943) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানে প্রথম পাল্টা মার্কিন হামলা! Click This Link টোকিটওতে হামলার পর এটাও জাপানী সম্রাট হিরোহিতো সহ তাদের সমরবিদ( Japanese Marshal Admiral and the commander-in-chief of the Combined Fleet during World War II) Isoroku Yamamotoকে অবাক ও ভীষণ ক্ষিপ্ত করে তুলে। Isoroku Yamamoto এই ইসোরুকু ইয়ামামোটোই পার্ল হারবারে আক্রমণের ছক কষে ছিল তথা মাষ্টারমাইন্ড। শুধু তাই নয় উক্ত হামলার পর ইয়ামামোটো চেয়েছিল আরো আক্রমণের মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরের(পূর্বে) বিভিন্ন মার্কিন দ্বীপ ও সামরিক ঘাটি দখল করে এগিয়ে যাওয়া অথবা প্রশান্তের এশিয়া অঞ্চলে আসতে বাধা দেওয়া। কিন্তু জাপানী সম্রাট হিরোহিতো তা দেয়নি।

হিরোহিতো চেয়েছিল ফিলিপাইন, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশ সমূহ দখল করে আরো পশ্চিমে অগ্রসর হওয়া। যেহেতু সম্রাট রাজী ছিল না তাই ইয়ামামোটোর পক্ষে সেটা হয়ে উঠেনি। কিন্তু টোকিওতে হামলার পর পরই সম্রাট হিরোহিতো তাকে পুনরায় প্রাথমিক পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়। এরপর আবার ইয়ামামোটো বড় ধরণের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। এবার শুধুই আক্রমণ বা হামলা বরং হাওয়াইয়ের কাছাকাছি কোন মার্কিন দ্বীপ দখল করে নেওয়া।

ইয়ামামোটো জানতেন যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশ দূর্বল। ৫টি বিমানবাহী রণতরীর একটি ইউএসএস লেক্সিংগটন সোলোমান দ্বীপের যুদ্ধে হামলায় আক্রান্ত হয়ে ডুবে যায় এবং প্রাথমিক ভাবে জানত অপর একটি ইউএসএস ইয়র্কটাউনও ডুবে গেছে। যদিও ইয়র্কটাউন সলোমোনের যুদ্ধে রক্ষা পায় এবং এটা অভিযানের সময় জানতে পারে। তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস সারাটোগা জাপানী সাবমেরিনের টর্পোডোর হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ডকইয়ার্ডে মেরামত হচ্ছিল। মাত্র ২টি বিমানবাহী রণতরী মনে করে ইয়ামামোটো প্রায় ২০০ জাহাজের বহর নিয়ে পূর্বে অগ্রসর হয়।

এখানে ৪টি বিমানবাহী রণতরী, ২টি যুদ্ধ জাহাজ, ১৫টি সাপোর্ট শীপ, ২৪৮টি জঙ্গী বিমান এবং ১৬টি সি-প্লেন ছিল। সেই সাথে বহু স্থল সেনা ছিল যারা দ্বীপ সমূহ প্রাথমিক হামলার পর দখল করে নিবে। নৌ, সেনা ও বিমান বাহিনী সহ প্রায় লক্ষ জাপানী সামরিক সদস্য ছিল। ইয়ামামোটো মার্কিন দ্বীপ Midway মিডওয়েকে মূল লক্ষ্য করে অভিযান শুরু করে। মিডওয়ে দ্বীপ হাওয়াই হতে ১৩০০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত।

এটাকে কঠোর গোপন রাখার চেষ্টা করাতো হয়ই উপরন্ত বিশাল নৌ-বহরের একটি ছোট অংশ আশে পাশের অন্যান্য দ্বীপে হামলা চালিয়ে যেন ডাইভার্সণ করে তথা মার্কিনিদের বিভ্রান্ত করা যায় সেই পরিকল্পনাও নেওয়া হয়। বড় এই সামরিক অভিযানে বিশাল নৌবহরের মূল গন্তব্য মার্কিনিদের কাছে প্রাথমিক গোপন রাখার বিষয়ে চেষ্টার কোন ত্রুটি করেনি ইয়ামামোটো। মনে প্রবল জেদ ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে অভিযান শুরু করে ইয়ামামোটো! ঐ দিকে মার্কিন পক্ষ বিশেষ করে পশ্চিমাংশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামরিক নেতৃত্বের অধিনায়ক Chester William Nimitz চেষ্টার উইলিয়াম নিমিটজও জানতেন যে টোকিওতে হামলার জবাবে জাপানীরা আবার একটি বড় ধরণের হামলা চালাবে মার্কিন অবস্থানের উপর। Chester William Nimitz ইয়ামামোটোর বিশাল নৌবহর নিয়ে পূবে অগ্রসর হওয়ার খবর ঠিকই জানতে পারে মার্কিনিরা তাদের গোয়েন্দা সুত্রে এপ্রিল (১৯৪২) মাসের শেষ ভাগে। টোকিওতে হামলার পর মার্কিন গোয়েন্দা সুত্র গুলি জানায় যে মার্শাল দ্বীপে জাপানী নৌবাহিনীর অনেক জাহাজের আনাগোনা বেড়েছে এবং জমায়েত হচ্ছে।

স্পষ্টতই বড় ধরণের অভিযানে বেরুতে চায় জাপানীরা। কিন্তু জাপানীদের এই অভিযান বিষয়ে জানলেও নিমিটজ ও তার সমরবিদদের পক্ষে প্রাথমিক ভাবে জানা সম্ভব ছিল না যে ঠিক কোথায় ইয়ামামোটো মূল হামলাটা করবে। কারণ ১৯৪১এর ৭ই ডিসেম্বর পার্ল হারবারে জাপানী হামলা তাদের জন্য মোটেই সুখকর অভিজ্ঞতা ছিল না। যদিও এইবার তারা প্রস্তুত ছিল কিন্তু বিশাল বহর এবং সেই ইয়ামামোটো এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে তাই কিছুটা হলেও বিচলিত হয়ে পরে। তার কাছে ৩টি বিমানবাহী রণতরীর ২টি ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ ও ইউএসএস হরনেট মজুদ ছিল।

অপর ইউএসএস ইয়র্কটাউন মেরামত চলছিল যা কয়েক মাসের আগে সার্ভিসে ফিরে আসার সম্ভাবনা ছিল না। অন্যান্য যুদ্ধ জাহাজ, ডেষ্ট্রয়ার, ক্রুজারও জাপানীদের তুলনায় সংখ্যায় কম এমনকি জঙ্গী বিমানও কম । তাই জাপানীদের সঠিক গন্তব্য ছাড়া মোকাবেলা করতে গেলে অনেক ঝুকি হয়ে যায়। একাধিক হামলা ক্ষেত্র অথবা ডাইভার্সনে তার বহরের বড় ক্ষতি হলে মার্কিন মূল ভুখন্ড তথা পশ্চিম উপকূল সম্পূর্ণ রুপে অরক্ষিত হয়ে পড়বে। তাই হামলা রুখতে তার সামরিক কৌশল নির্ধারণই খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিল।

কিন্তু ঐ সময়ই প্রমাণিত হয় প্রযুক্তি নির্ভর গোয়েন্দাগিড়ি কত বড় গুরুত্বপূর্ণ। নিমিটজ সহ মার্কিন সমরবিদ এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে সামরিক ও রাজনৈতিক নীতি নির্ধারকরা যখন অনেক দ্বিধা-দ্বন্দে ছিল তখনই জাপানী নৌবাহিনীর রেডিও কোড ইন্টারসেপ্টশন থেকে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যায় যে ইয়ামামোটোর বহর মিডওয়েতেই হামলা চালাবে। জাপানী নৌবাহিনীর এই কোডটির নাম JN-25b http://en.wikipedia.org/wiki/JN-25b এখানে মজার কথা হল টোকিওতে হামলার আগে ১৯৪২ সালের বসন্তের শুরুতে রণাঙ্গনের অন্যান্য ক্ষেত্রে রেকর্ড করা জাপানীদের কোড AFকে মিডওয়েই বলেই জানত মার্কিন সামরিক নেতৃবৃন্দ। যদিও জাপানীরা মার্কিনিদের ম্যাসেজে বুঝতে পেরে তারাও বিভ্রান্তিকর কোড দিতে থাকে কিন্তু তাতে আর মার্কিনিদের ধোকা দেওয়া যায়নি। এই কোড বিষয়ে যে পারদর্শিতা দেখান তিনি হলেন ক্যাপ্টেন Joseph Rochefort জোসেফ রচেফোর্ট।

জাপানী নৌবহর ও তাদের হেভী কোড কমিউনিকেশন এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকেই রচেফোর্ট একেবারেই নিশ্চিত ছিলেন যে ইয়ামামোটো মিডওয়েতেই হামলা চালাবে। Joseph Rochefort রোচেফোর্টের কৌশল, কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতার জন্য নিমিটজ তার উপর নির্ভর করেন। তবুও নিমিটজ সিদ্ধান্ত নেন যে একাধিক reconnaissance রিকনাসেন্স বিমান পালাক্রমে মিডওয়ের প্রায় ৭০০ মাইল ব্যাসার্ধে চক্কর দিয়ে সাগরে নজড় রাখবে। একেতো ২০০র মত জাপানী নৌবাহিনীর জাহাজ এবং তার উপর ইয়ামামোটোর মত জাদরেল কমান্ডার এই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে তখন ওয়াশিংটনে সামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা এক বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে। এরই সত্যিকার পটভূমিতে দুই বছর পর ১৯৪৪ সালে Wing and a Prayer নির্মিত হয়।

১৯৪২ এপ্রিল মাসের শেষের দিকে মার্কিন সমরবিদরা মনে করেন যে এত বড় নৌবহরের সাথে সরাসরি যুদ্ধ অনেক ঝুকিপূর্ণ তাই তারা Element of surprise তথা শত্রুকে আচমকা হতবাক করে আক্রমণ করার কৌশল অবলম্বন করে। তারা ঠিক করে হাওয়াই থেকে বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস ইয়র্কটাউন, কয়েকটি ডেষ্ট্রয়ার ও সাপোর্ট জাহাজ সহ ডিকয় হিসেবে Behind enemy line তথা জাপানীদের দখলকৃত সুমুদ্র এলাকা ও দ্বীপ পুঞ্জের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করানো হবে। প্রথমে ২৮শে এপ্রিল মার্শাল দ্বীপের কাছে জাপানীরা তার প্রাথমিক অবস্থান জানবে কিন্তু ইয়র্কটাউন তাদের মুখোমুখি না হয়ে গিলবার্ট দ্বীপের দিকে চলে যাবে। সেখানেও ৩রা মে জাপানীদের নজরে আসলেও সেটা ওশান দ্বীপের কাছে চলে যাবে। যা ৮ই মে জাপানীরা আবার এর অবস্থান জানবে।

এরপর সেটা দক্ষিণের গোয়াডাক্যানালে ১৫ইমে পুনরায় জাপানীদের নজরে আসবে। ইয়র্কটাউনকে নির্দেশ দেওয়া আছে যে তার কোন জঙ্গী বিমান কোন জাপানী এলাকায় শত্রু বিমানের দ্বারা আক্রান্ত হলেও পাল্টা হামলা করবে না। এভাবে চলতে থাকলে জাপানীরা মনে করবে যে মার্কিনিরা এখন ভাঙাচুরা এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে তাদের অধিকৃত কোন অবস্থানে স্পেশাল ষ্ট্রাইক করতে চায়। তখন ইয়ামামোটোর মূল বহর হতে অন্তত একটি বিমানবাহী রণতরী সহ একটি অংশ মার্কিন বহরকে মোকাবেলা করতে চাইবে। তাতে মূল বহর হতে একটা অংশ আলাদা হয়ে গেলে কৌশলগত ভাবে মার্কিন ও জাপানীদের জাহাজ, যুদ্ধ বিমান সংখ্যায় কাছাকাছি হবে।

এই মূভিতে দেখা যায় কিভাবে মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে কমান্ডারদের ধৈহ্য, অবিচল ভাবে পাইলট ও ক্রুদের ক্ষোভ মোকাবেলা করে মিশনের মূল উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ গোপ ন রাখা হয়। তারা জানত তাদের কোন ধরণের ভুল শুধুই তাদের জন্য নয় বরং মিডওয়ে, হাওয়াই সহ পুরো পশ্চিম আমেরিকার উপকূল জাপানী আক্রমণের মুখে পড়বে। ছবিটাতে বাস্তব যুদ্ধাভাব সহ অভিনয়কে সত্যিকারের মতই মনে হয়েছে। এই মূভিটি আইএমডিবি এর রেটিং ৬.৮; Click This Link কিন্তু একটু দুঃখের বিষয় হল এই মূভিটির টরেন্ট ডাউনলোডে সাইজ ৩.৫ গিগা এবং মাত্র একটি সিড আছে। আমি সব সময় পিসি ব্যাবহার করতে পারি না বিধায় দীর্ঘ সিডিং করা সম্ভব না।

তবে আরেকটি বিকল্প হল; Click This Link এখান থেকে সরাসরি মূভিটি ডাউনলোড করা যায়। এখানে এর সাইজ মাত্র ৭০০ মেগা। আর মূল সেক্টরের যুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয় Midway (1976)। নিমিটজের সাথে ওয়াশিংটন মোটামুটি একমত হলেও মিডওয়েতেই হামলা হবে এই বিষয়ে পুরোপুরি নির্ভর করতে পারছিল না। প্রায়ই জিজ্ঞাসা তথা খবরদাড়ি ও জেরা করত অন্য কোন দ্বীপ বা হাওয়াই অথবা পশ্চিম উপকূলে জাপানীরা বড় ধরণের হামলা চালাবে কিনা! তাই তাকে রিকননাসেন্স বিমানের স্কাউটিংও সমানে চালাতে হয়।

মে মাসের শেষ হতে চলল কিন্তু এখনও জাপানীরা কোন আক্রমণ শুরু করেনি। চলে টেনশনের মুহুর্ত। ঠিক করা হয় এন্টারপ্রাইজ ও হরনেটকে হাওয়াই হতে সরিয়ে মিডওয়ের দুই পাশে শতাধিক মাইল দূরের অবস্থানে রাখা হবে। আর ঐদিকে ইয়র্কটাউনের ডিকয় যাত্রায় সে সলোমান দ্বীপের কাছে হামলায় হয়ে ডকে মেরামত হচ্ছিল। প্রায় যেখানে মাসাধিকাল সময়ের পর ঠিক হওয়ার কথা সেখানে ৩ দিনের মধ্যে কোনমতে সুমুদ্রে ভাসার উপযোগী করার নির্দেশ দেয় নিমিটজ।

আর পক্ষান্তরে ইয়ামামোটো সিদ্ধান্ত নেয় যে তাদের জাপানী সী রিকননাসেন্স বিমান হাওয়াই দ্বীপের আশে পাশে কয়েকদিন বিরতিহীন ভাবে আকাশে উড়ে চক্কর কেটে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী দুটির অবস্থান নির্ণয় করবে। এতে যখন মিডওয়ে দখলের হামলা শুরু করবে তাতে যেন মার্কিনিদের জঙ্গী বিমান গুলো যেন বাধ না সাধে। সী প্লেন গুলোকে সুমুদ্রের নির্দিষ্ট জায়গা হতে দুটি জাপানী সাবমেরিন সময়মত জ্বালানি তেল সরবারাহ করবে। কিন্তু পরে দেখা গেল নির্দিষ্ট স্থানে কয়েকটি মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ থাকায় জাপানী সাবমেরিনের পক্ষে সেখানে উপস্থিত থাকা সম্ভব না। এই প্রথম একটি ধাক্কা খেল ইয়ামামোটো।

কারণ সে জানত যে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী দুটিকে সময়মত রুখা না গেলে তাদের অনেক ক্ষতি হতে পারে। ইতিমধ্যে জাপানীরা মিডওয়ের আশে পাশে ওলন্দাজা হারবার সহ অন্যানা দ্বীপেও হামলা শুরু করে ডাইভার্সন সৃষ্টির জন্য। এই খবর জানার পর নিমিটজ বলে ওয়াশিংটন এখনও সঠিক হতে পারে। কিন্তু এর কিছু পরেই মিডওয়ের ৭০০ মাইল দূরে মার্কিন রিকননাসেন্স বিমান জানায় যে জাপানীদের নৌবহরের একটি অংশ মিডওয়ের কোর্সেই যাচ্ছে। এটা ছিল জাপানী এডমিরাল নাগুমোর বহরের অগ্রবর্তী দল।

Chūichi Nagumo পিছনেই নাগুমো তার মূল অংশকে নিয়ে এগিয়ে আসছে। তাকে যথারীতি নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা করছিল চীফ ইয়ামামোটো। নাগুমো সম্পূর্ণ রেডিও যোগাযোগ(প্রেরণ) বন্ধ রেখে এগুচ্ছিল যেন মার্কিনিরা তার বহরকে আগে ভাগে নির্ণয় করতে না পারে। নাগুমো এই আশায় ছিল যে ইয়ামামোটোর নির্দেশিত সী প্লেনের স্কাউটিং মার্কিন বিমানবাহিনী রণতরী দুটির অবস্থান নির্ণয় করবে এবং এতে তার জাপানী বিমানবাহিনীর রণতরী হুমকি মূক্ত থাকবে। কিন্তু হাওয়াইতে নজরদাড়ি ব্যার্থতার কারণ ইয়ামামোটোর পর্ষদ রেডিওর মাধ্যমে নাগুমোকে জানাতে রাজী হয়নি।

তাদের ধারণা ছিল যদি তারা রেডিওতে নাগুমোকে জানিয়ে দেয় তাহলে মার্কিনিরাও এটা ইন্টারসেপ্ট করবে। তারা চেয়েছিল Elements of surprise এর মাধ্যমে মিডওয়েতে মার্কিনিদের কাবু করা। ইয়ামামোটোর এক জুনিয়র অফিসার দাবী করে জাপানী ইন্টিলিজেন্সদের তথ্য মোতাবেক যে মার্কিনিরা তাদের বিমানবাহী রণতরী দ্বয়কে হাওয়াই হতে সরিয়ে মিডওয়ের দিকে নিবে এমন ভাবার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। যখন রিকনাসেন্স বিমান হতে নাগুমোর বহর নির্ণিত হয় তখন তারাও রেডিও ম্যাসেজ ইন্টারসেপ্ট করতে পারে যে মার্কিনি বিমান তাদের সমন্ধে তথ্য দিয়েছে। নাগুমোর অগ্রবর্তী দল এবার রেডিও নীরবতা ভেঙে ইয়ামামোটোকে এই খবর জানিয়ে দেয়।

আর এই দিকে ইয়ামামোটো ও জাপানী ইন্টিলিজেন্সের অপেক্ষায় না থেকে নাগুমো নিজেই নিশ্চিত হওয়ার জন্য মিডওয়েতে যখন জাপানী জঙ্গী বিমান হামলা করবে তখনই মিডওয়ের আশে পাশে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে একাধিক রিকননাসেন্স বিমান পাঠিয়ে দেখবে যে মার্কিনিরা তাদের বিমানবাহী রণতরী ধারের কাছে অবস্থান করছে কিনা! মোট ৫টি স্কাউটিং প্লেন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নাগুমো। কিন্তু যখন তারা রাওনা হবে তখন জানা ৫টির মধ্যে ৪র্থ নাম্বারটি কিছু যান্ত্রিক সমস্যা যা তার ফ্লাইটকে আধা ঘন্টা দেড়ি করিয়ে দেয়। নাগুমো প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয় যে তার বিমানবাহী রণতরীর অর্ধেক বিমান বোমা বষর্ণ বাকী গুলো টর্পোডো সজ্জিত থাকবে যদি সুমুদ্র রণাঙ্গনে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী উদয় হয়। প্রথমে তরুণ জাপানী পাইলটদের পাঠিয়ে মিডওয়ের জঙ্গী বিমান, ঘাটি সহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করা হবে বলে নির্ধারিত হয়। তারপর জাপানীদের মিডওয়ের প্রথম বিমান আক্রমণে নিজেরা মাত্র ৭টি বিমান হারানোর বিনিময়ে উড়ন্ত ও রানওয়েতে থাকা ৪৪টি মার্কিন বিমান ধ্বংস করে।

এই বিষয়ে যখন নাগুমো ম্যাসেজ পান তখন তার জুনিয়র ওসাকা বলেন আমাদের মিডওয়ের বিমান ঘাটির রানওয়ে অক্ষত রাখা চলবে না। কারণ এখান থেকে বিমান হামলা হলে আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হব। তাই ওসাকার মতে বাকী বিমান গুলোকে টর্পোডোর বদলে ডাইভ বোমায় সজ্জিত করে রানওয়ে ধ্বংস করার জন্য জলদি প্রেরণ করা হউক। কিন্তু নাগুমো প্রথমে রাজী হন নাই। তার মতে ৫টির ৪টি কেবল জানিয়েছে যে রেঞ্জের মধ্যে কোন মার্কিন বিমানবাহী রণতরী নাই।

অন্যটি ৩০ মিনিট দেড়ীতে উড়ায় সে নিশ্চিত না হয়ে দ্বিধা দ্বন্দে ছিল। কিন্তু তার জুনিয়র ওসাকা ও বিমান কমান্ডার গেন্দার পরামর্শে ক্যারিয়ারের বাকী প্রায় ৯৩টি জঙ্গী বিমানকে টর্পেডোর পরিবর্তে ডাইভ বোমায় সজ্জিত করার নির্দেশ দেয়। মিডওয়েতে প্রাথমিক হামলার সময় জাপানীদের এই একটি স্কাউট প্লেনের দেড়ী হওয়ায় এবং টর্পোডোর পরিবর্তে ডাইভ বোমাতে জঙ্গী বিমান গুলোকে সজ্জিত করার কারণে তাদের মিডওয়েতে বিশাল পরাজয়ের কারণ হয়ে দাড়ায়। মিডওয়েতে যখন জাপানী জঙ্গী বিমান গুলো হামলা করছিল তখন ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ এবং হরনেট নাগুমোর দুইটি ক্যারিয়ারের প্রায় ১৩৫ মাইল রেঞ্জের মধ্যে চলে আসে। যা মার্কিনি জঙ্গী বিমানের জন্য জাপানী বহরের উপর হামলা চালিয়ে ফিরে আসার যথেষ্ঠ জ্বালানি ছিল।

ইতিমধ্যে মার্কিনিরা সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা নাগুমোর বহরে হামলা করবে বিশেষ করে ক্যারিয়া গুলোকে ধ্বংস করে দিবে। এরপর যখন জাপানীদের দেড়ীতে ছাড়া ৪র্থ স্কাউট বিমানটি মার্কিন ক্যারিয়ারের অবস্থান জানতে পারে তখন অনেক দেড়ী হয়ে গেছে। যদিও নাগুমো জেনে ডাইভ বোমার পরিবর্তে টর্পোডোতে সজ্জিত করার নির্দেশ দেয় ততক্ষণে মার্কিন জঙ্গী বিমান গুলো কয়েকটি গ্রুপে উড়ে অর্ধেক পথে এগিয়ে গেছে। ঐ দিকে জাপানীদের প্রাথমিক হামলায় অংশগ্রহণ করা বিমানগুলো ফিরে আসছে যাদের না আছে রসদ না আছে উড়ার মত যথেষ্ঠ জ্বালানি। তারা সময়মত রিফিউলিং না করতে পারলে সাগরে পতিত হবে।

ফলে নাগুমোর ও জাপানী ৩টি ক্যারিয়ার সহ কয়েকটি যুদ্ধ জাহাজকে মার্কিন জঙ্গী বিমান গুলোর কাছে সিটিং ডাকে পরিণত হতে হয়। এরপরে যদিও নাগুমোর সহকারী ৪র্থ ক্যারিয়ারের কমান্ডার মার্কিন ইয়র্কটাউনকে জাপানী জঙ্গী বিমান দ্বারা হামলা ও নিমজ্জিত করে কিন্তু তাতেও তার জাহাজের শেষ রক্ষা হয়নি। মার্কিনারা জাপানীদের এই অভিযানের ৪র্থ ও সর্বশেষ ক্যারিয়ারটিকে ডাইভ বোমার মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়। এখন জাপানীরা ২০০ জাহাজের মধ্যে জ্যাকপট গুলোকে হারিয়ে কার্যত বাকী পুরো বহর সিটিং ডাকে পরিণত হয়। এতে প্রায় লক্ষ জাপানী সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিল।

এই কথা বিবেচনা করে ইয়ামামোটো রণে ভঙ্গ দিয়ে বহরকে জাপানে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মার্কিনিদের ৩টি বিমানবাহী রণতরীর মধ্যে ইয়র্কটাউনকে হারায়। এ ছাড়া Destroyer USS Hammann, ১৪৫টি জঙ্গী বিমান এবং ৩৪০ জন মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হয়। পক্ষান্তরে জাপানীদের ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশী। চারটি ক্যারিয়ার Aircraft Carrier Akagi, Aircraft Carrier Kaga, Aircraft Carrier Soryu, Aircraft Carrier Hiryu হারায়।

এ ছাড়াও হেভী ক্রুজার মিকুমা, ২২৮ জঙ্গী বিমান এবং প্রায় ৩০৫৭ জন জাপানী সামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হয়। জাপানের ৩৫০ বছরের নৌযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে পরাজয়। সমর ইতিহাসবিদ জন কিগানের মতে এটা মানব ইতিহাসের নৌযুদ্ধে সবচেয়ে চমকপ্রদ এবং ফলাফল নির্ধারণী যুদ্ধ। Click This Link http://en.wikipedia.org/wiki/Battle_of_Midway মিডওয়ের যুদ্ধে বিজয়ের পর কমান্ডার নিমিটজ তার জুনিয়র রোচেটকে বলেন যে আমরা ইয়ামামোটো হতে শ্রেয়তর নই বরং ভাগ্য আমাদের সাহায্য করছে। বহুলাংশেই তাই।

কারণ পার্ল হারবারে এত দূরে এসে মার্কিনিদের বড় একটা আঘাতের জন্য জাপানীদের মেধা, পরিশ্রমই নয় বরং ভাগ্যও সহায় ছিল। পার্ল হারবার মার্কিনিদের জন্য বিশাল ধাক্কা ছিল। কিন্তু মিডওয়েতে শুধু ভাগ্য নয় এটাকে সৌভাগ্য বলা যায়। তবে এও সত্য যে পার্ল হারবারে আক্রান্ত হয়ে সাথে সাথেই মার্কিনিরা মাথা গরম করে বড় ধরণের ও দীর্ঘ মেয়াদী হামলা চালায়নি। আইএমডিবি তে Midway এর রেটিং হল ৬.৬; http://www.imdb.com/title/tt0074899/?ref_=sr_1 বেশ কয়েকজন মেগা হলিউড তারকা মূভিটিতে অভিনয় করেন।

এতে Henry Fonda, Charlton Heston, Robert Mitchum। মূভিটি ডাউনলোডের জন্য টরেন্ট লিংক; Click This Link আজকে ৭ই জুন ঠিক ৭১ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরের এই লড়াই শেষে মার্কিন মূল ভূখন্ড জাপানী হামলার আশংকা মূক্ত হয়। এর পরে অব্যাহত ভাবে ছোট ও বড় আক্রমণ করে জাপানকে দূর্বল করা সহ এশিয়া প্যাসিফিকের অনেক বিশাল এলাকা জাপানী জবর দখল মূক্ত করে মার্কিনিরা।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।