আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কর্ণেল তাহেরের জবানবন্দি এবং দুটি প্রশ্ন

কর্ণেল তাহেরের জবানবন্দি এবং দুটি প্রশ্ন http://www.col-taher.com/statment.html জবানবন্দি থেকে কিছু চুম্বক অংশ “যে সরকারকে আমিই ক্ষমতায় বসিয়েছি, যে ব্যক্তিটিকে আমিই নতুন জীবন দান করেছি, তারাই আজ এই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আমার সামনে এসে হাজির হয়েছে। “ “পঁচাত্তরের সাতই নভেম্বর বিচারপতি সায়েমের যে সরকারকে আমরা ক্ষমতায় বসিয়েছি তারা এসব ভালভাবেই জানে। “ “আমাদের যুদ্ধকৌশলের দুর্বলতাগুলো খুব সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব ছিল। প্রথমত আমরা সমস্ত জাতি এক যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়েছিলাম। অথচ আমাদের সামনে কোন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিল না।

রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া গেরিলা যুদ্ধ কখনো বিকাশ পেতে পারে না। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এই সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের রাজনৈতিক দিক-নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। “ “মুজিব সরকার সেনাবাহিনী গঠনের ব্যাপারটা উপেক্ষা করে কুখ্যাত আধা-সামরিক শক্তি রক্ষীবাহিনী গড়ে তোলায় মন দেয়। ভারতীয় উপদেষ্টা ও অফিসারেরা এই রক্ষীবাহিনী গঠনে সরাসরি জড়িত ছিল। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে আমার পূর্ণ বিরোধিতার কথা জানালাম” “১৯৭৫ সালের পনেরই আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার কি ভূমিকা পালন করেছে তা দেশবাসী সবারই জানা।

কিভাবে একের পর এক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছিল ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছিল তার এখন দলিলের বিষয়। এক কথায় বলা যায়, আমাদের লালিত সব স্বপ্ন, আদর্শ ও মূল্যবোধগুলো এক এক করে ধ্বংস করা হচ্ছিল। গণতন্ত্রের অসম্মানজনক কবর শয্যা রচিত হয়েছিল। মানুষের অধিকার মাটি চাপা পড়েছিল। আর সারা জাতির ওপর চেপে বসেছিল এক ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্র।

“ “এটা খুবই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক যে এ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের অন্যতম প্রধান পুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান শেষ পর্যন্ত একনায়কে পরিণত হয়েছিলেন। “ “১৯৭৫ সালের পনেরই আগস্ট। একদল সামরিক অফিসর আর সেনাবাহিনীর একটা অংশবিশেষ শেখ মুজিবকে হত্যা করে। সেদিন সকালে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারির এক অফিসার আমাকে টেলিফোন করেন। তিনি বলেন, মেজর রশীদের পক্ষ থেকে তিনি আমাকে টেলিফোন করেন।

তিনি বললেন, 'বাংলাদেশ বেতার' ভবনে যেতে বললেন। তিনি আমাকে শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের খবরও দিয়েছিলেন। আমাকে জানানো হয় যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতির একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী খন্দকার মোশতাক আহমেদ এই অফিসারদের নেতৃত্বে রয়েছেন” “সকাল নটায় বেতার ভবনে গেলাম। মেজর রশীদ আমাকে একটা কক্ষে নিয়ে গেলেন। সেখানে আমি খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মেজর ডালিম আর মেজর জেনারেল এম. খলিলুর রহমানকে দেখতে পাই।

খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে আমি কিছুক্ষণ আলোচনা করলাম। আমি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে এই মুহূর্তে জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা করাটাই সবচেয়ে জরুরী। মেজর রশীদ আমাকে আরেকটা কক্ষে নিয়ে গেল ও জানতে চাইল আমি মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে উৎসাহী কিনা। আমি তাকে পরামর্শ দিলাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে অবস্থা পর্যালোচনা করে এটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে। “ “খন্দকার মোশতাকের সামনে বিবেচনার জন্য আমি বেশ কয়েকটা প্রস্তাব রেখেছিলাম।

(১) অবিলম্বে সংবিধান স্থগিত করণ, ২) দেশব্যাপী সামরিক শাসন ঘোষণা ও তার প্রবর্তন, ৩) দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি দান, ৪) বাকশালকে বাদ দিয়ে একটা সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার গঠন করা, ৫) জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটা জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। খন্দকার মোশতাক আমার সব কথা মন দিয়ে শুনলেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন। “ “মোশতাক সরকারের ব্যর্থতার সুযোগ আমাদের জাতীয় স্বার্থকে বিপন্ন করার জন্য একটা ষড়যন্ত্র গড়ে ওঠে। এই চক্রান্তের নায়ক ছিলেন উচ্চাভিলাষী ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্রমূলক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পঁচাত্তরের তেসরা নভেম্বর খালেদ মোশাররফ ক্ষমতায় আসেন।

“ “তেসরা নভেম্বরের পর কি ভয়ার্ত নৈরাজ্য জনক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এ জাতির জীবন অতিবাহিত হচ্ছিল তা সবারই জানা। কিভাবে আমাদের জাতীয় আত্মসম্মানবোধ লঙ্ঘন করা হচ্ছিল তার নিশ্চয় বিস্তারিত বিবরণের দরকার পড়ে না। এটা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে খালেদ মোশাররফের পেছনে ভারতীয়দের হাত রয়েছে। “ “আর জিয়াউর রহমান? সে তখন খালেদের হাতে বন্দি, অসহায়ভাবে ভয়ে ঠক ঠক করে কাঁপছিল। “ “চৌঠা নভেম্বর বিকেলে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে আমার কাছে খবর পাঠানো।

জিয়ার অনুরোধ ছিল আমি যেন সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আমার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তাকে মুক্ত করি ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করি। আমি তাকে শান্ত থাকতো ও মনে সাহস রাখতে বলেছিলাম। আমি তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে ও সব ধরনের অপকর্মের অবসান ঘটানো হবে। এদিকে সেনাবাহিনীর সজাগ অফিসার ও সৈন্যরা আমাকে বিশ্বাসঘাতক খালেদ মোশাররফ চক্রকে উৎখাত করার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিতে অনুরোধ করে আসছিল। “ “ছয়ই নভেম্বর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হয়।

সাতই নভেম্বর ভোর রাত একটায় সিপাহি অভ্যুত্থান শুরু হবে। আমাদের সিদ্ধান্তগুলো ছিল- ১) খালেদ মোশাররফ চক্রকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা, ২) বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা, ৩) একটা বিপ্লবী সামরিক কমান্ড কাউন্সিল গঠন করা, ৪) দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি দান, ৫) রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, ৬) বাকশালকে বাদ দিয়ে একটা সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার গঠন করা, ৭) বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার বারো দফা দাবি মেনে নেয়া ও তার বাস্তবায়ন করা। “ “ভোর রাত্রে জিয়াকে মুক্ত করে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারির সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার বড় ভাই ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের সঙ্গে আমি ভোর তিনটার দিকে সেনানিবাসে যাই। সঙ্গে ছিল ট্রাক ভর্তি সেনাদল।

জিয়াকে আমি তার নৈশ পোশাকে পেলাম। সেখানে ব্রিগেডিয়ার মীর শওকত সহ আরো ক'জন অফিসার ও সৈনিক ছিল। জিয়া আমাকে আর আমার ভাইকে গভীরভাবে আলিঙ্গনাবদ্ধ করলেন। পানি ভর্তি চোখে তিনি আমাদের তার জীবন বাঁচানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানালেন। তার জীবন রক্ষার জন্য জাসদ যা করেছে তার জন্য জিয়া আমার প্রতি ও জাসদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললেন আমরা যা বলবো তিনি তাই করবেন।

“ “সরকারের ধারাবাহিকতার প্রশ্নে একটা আইনগত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। সবাই চাচ্ছিলেন বিচারপতি সায়েম দেশের রাষ্ট্রপতি হবেন। (সায়েমকে খালেদ মোশাররফ পাঁচ নভেম্বর নিয়োগ করেছিলেন। ) আমি তা মেনে নিলাম কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম জিয়া হবেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হতে জিয়ার আপত্তির কারণে কিছুক্ষণ আলোচনার পর ঠিক হলো জিয়া, তাওয়াব আর এম.এইচ. খান প্রত্যেকেই উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হবেন।

“ “জিয়া শুধু আমার সঙ্গেই নয়, বিপ্লবী সেনাদের সঙ্গে, সাত নভেম্বরের পবিত্র অঙ্গীকারের সঙ্গে, এক কথায় গোটা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমাদের পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। খালেদ মোশাররফের সঙ্গে তুলনায় জিয়া মুদ্রার অন্য পিঠ বলেই প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের জাতির ইতিহাসে আর একটাই মাত্র এরকম বিশ্বাসঘাতকতার নজীর রয়েছে, তা' হচ্ছে মীর জাফরের। বাঙালি জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে সে গোটা উপমহাদেশকে দু'শ বছরের গোলামীর পথে ঠেলে দিয়েছিল।

ভাগ্য ভালো যে এটা সতের শ' সাতান্ন সাল নয়। উনিশ শ' ছিয়াত্তর। আমাদের আছে বিপ্লবী সিপাহি জনতা, তারা জিয়াউর রহমানের মতো বিশ্বাসঘাতকদের চক্রান্তকে নির্মূল করবে। “ “যারা আওয়ামী লীগ সবকারের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন তাদের স্পষ্ট মনে আছে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে দেশের কি অবস্থা হয়েছিল। গণ নিপীড়ন, আমলাতান্ত্রিক অর্থনীতি, অরাজকতা আর গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার লঙ্ঘন ছিল প্রতিদিনকার ঘটনা।

আইন শৃঙ্খলার কোন বালাই ছিল না। এরকম প্রতিকুল রাজনৈতিক পরিবেশে জাসদ ও অন্যান্য গণসংগঠন গুলো একটা ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। দেশপ্রেমের নায়ক.রাজারা তখন কোথায় ছিলেন? কোথায় ছিল জিয়াউর রহমান? কোথায় ছিল মোশাররফ খান আর এম.জি. তাওয়াব? কি করছিল তারা?” “জাতীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ও জাতিকে একটা নতুন পথের দিশা দিতে আমরা বিপ্লবী সিপাহি জনতার সঙ্গে মিলে বিশ্বাসঘাতক খালেদ মোশাররফ চক্রকে উৎখাত করেছিলাম। “ ******খালেদ মোশাররফ চক্র কার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো ? এবং খালেদ মোশাররফ চক্র বিশ্বাসঘাতক হয়ে থাকলে ফারুক – রশিদ গং কার দোস্ত ছিল ? http://www.col-taher.com/statment.html ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.