আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিক্সাঘুম থেকে আশ্চর্যপতন.....অতঃপর দাগ-দ্যা স্পট

*~*জীবনে যত কম প্রত্যাশা থাকবে ... .. . তত বেশী ভালো থাকা যাবে*~* রিক্সাঘুম কতজন কতভাবে ঘুমায় তা জানিনা কিন্তু রিক্সায় উঠলেই ঘুম পায়। বাসে ও ঘুম পায় কিন্তু আজকাল বাসে ভীড় আর মানুষের ঠেলাঠেলি, গালাগালিতে শান্তিতে ঘুমাতে পারিনা। কিচেনঘুম অনেক প্রিয় মানে সারারাত বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকি যখনই রান্নাঘরে(কিচেনে) কাজে যাই দুনিয়ার সব ঘুম চোখ জুড়ে বসে। অনেক সময় রান্না-বান্না বাদ দিয়াই ঘুমাই এখন কথা হলো এই বদস্বভাব রিক্সাঘুমের অভ্যাস করাইছে আমারই আরেক দুশমনরুপী দোস্ত কণা। কলেজে কণার আর আমার রোল আগে-পড়ে এই হিসাবে যতটা না আমাদের খাতির হয়েছে তারচেয়ে বেশী খাতির হয়েছে যখন ও কলেজ বাসে আমি ঘুমাইলে মহামানবীর মতন তার কাঁধটা এগিয়ে দিয়ে বলতো " পড়ে যাবি তো,আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমা...নামার সময় ডেকে দিবো"....তখন মনে হত আহা দুনিয়াতে এত ভালো মেয়ে হয় ক্যামনে? খুশীতে চোখে পানি আসার বদলে ঘুমে পুরা দুনিয়াটা আন্ধার মনে হতো।

কলেজ ছুটির পরে ক্যান্টনমেন্ট থেকে মিরপুর হয়ে সারা দুনিয়া চক্কর দিয়া বাসায় ফিরতে প্রায় দু'ঘন্টা তো লাগতোই। কলেজ বাসে যাবার সময় উঠতাম সবার পরে আবার নামতাম ও সবার পরে...এরপরে শিক্ষাজীবনের বাকিটা সময় ও কণা আসা-যাওয়ার পথে আমার রিক্সাকাম ঘুমসঙ্গী হয়ে সুখে-দু:খে পাশেই ছিলো। রিক্সায় উঠেই পাঁচ মিনিট না যেতেই বলতাম "ঐ আমি ঘুমাবো"...সে কপট রাগ দেখাবে,গালি দিবে তারপর আহলাদ করে বলবে "ওড়না ঠিক মতন গুছাইয়া ঘুম দে"....এমনিকি তার বিয়ের পর ও ভাইয়া যখন অতি রোমান্টিক হয়ে ছুটির পরে তারে আনতে যেত সে তখন রোমান্টিকতার গোষ্ঠী উদ্ধার করে মুখ ঝামটা দিয়ে বলতো " আমি যাবো না তোমার সাথে। এই বদ রিক্সায় ঘুমায়,পড়লে তো ওর নাক মুখের নক্সা বেসাইজ হয়ে যাইবো"। আমরা দু'জনে রিক্সায় উঠে হাহা হিহি করছি আর একটু পর পিছন ফিরে যখন দেখতাম ভাইয়া বাইক নিয়া মুখভোঁতা করে আমাদের পিছনে আসছে হাসির পরিমাণ তখন কয়েক ডিগ্রি বেড়ে যেত।

আশ্চর্যপতন ব্লগিং লাইফের প্রথম দিকে আশ্চর্যপতন নামের একটা পোস্ট লিখেছিলাম। এই শব্দটা অনেক প্রিয়। ধপাধপ এখানে সেখানে পড়ে যাই এরপর প্রথমে যেটা মনে হয় আরিইইইই আমি পড়লাম কি করে? কেউ কি পিছন থেকে ধাক্কা দিছে নাকি? যত ভাবি ততই আশ্চর্য হতে থাকি। যেমন সিঁড়ি দিয়ে নামছি হাতে সময় কম দু-তিনটা ধাপ একসাথে পার হতে গিয়ে দেখি একদম সিঁড়ির নীচে গিয়ে পড়ে আছি। ইদানিং যেটা হয় ফ্যান মুছতে গেলাম তখন চেয়ারের উপরে মোড়া তারপর জলচৌকি বসাইয়া মুছতে থাকি কাজ শেষ না হতেই নিচে পড়ে আছি দেখি।

প্রতিবারই ভাবি আর পড়বোনা আমার ধারণারে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে পড়ে যাই সাথে ফ্রি গিফট হিসেবে হাতে-পায়ে ব্যাথা পাই সেই সাথে মাথার আনাচে-কানাচে ছোট সাইজের আলুর ও জন্ম হয়। দাগ -দ্যা স্পট গতমাসের প্রথমদিকে মেডিনোভাতে কয়েকবার বিভিন্ন টেস্টের জন্য যেতে হলো। সবচেয়ে রাগ লাগতো ব্লাড টেস্টের সময়। মানুষরুপী মশাগুলা ইয়া বড় বড় সিরিন্জ নিয়া বসে থাকে আর ব্লাড নিতেই থাকে। কি বুড়া কি বাচ্ছা কাউরে রেহাই দেয় না ....আমার ইচ্ছা আছে গরুরে বড় বড় সুঁই দেয় না সেই সাইজের সুঁইয়ের থেরাপী এদের কাউরে দিবোই।

যাইহোক,দুপুরের দিকে ভাত খেয়ে বের হলাম রির্পোটগুলা আনতে,ফেরার সময় রিক্সায় উঠে যথারীতিতে দিলাম ঘুম। একহাতে ব্যাগ আর রির্পোট আরেক হাত দিয়া রিক্সার সাইডে ধরে বসলাম যাতে পড়ে না যাই। কিছুদূর আসার পর খালি বুঝলাম পুরা আমি রিক্সার পাশে পড়ে আছি খালি বা-পাটা রিক্সায় আছে। রিক্সাওয়ালা ধরতে আসলো পরে তারে ব্যাগটা আগে ধরতে বললাম কারণ ব্যাগ চুরি হলে তো তারে ভাড়াও দিতে পারবো না। বাকিটা রাস্তায় খালি মনে হয়ে হয়েছে কপালের সাইডে বুঝি আবারো নয়া আলু জন্ম নিছে।

বাসায় এসে দেখি পুরাই পার্বতীমার্কা দাগ -দ্যা স্পট হয়ে রুপ উপচাইয়া পড়তেছে। দেবদাস মুভিতে দেখাইছিলো না পার্বতী বিয়ের আগে দেবদাসের সাথে ক্যাচরক্যাচর ঝগড়ার সময় দেবুবাবু বড়শী না কন্চি কি দিয়া জানি মাথায় বারি মারছে পর পাবর্তীর কপালে বাকি মুভিতে ঐ দাগই ছিলো...সেটাই হলো পার্বতীমার্কা দাগ। বাসায় জনে জনে কাহিনী বয়ান করার পরও তারা মায়া করলে বদলে উল্টা ঝাড়ি দিলো। এরপরে এই দাগ নিয়া একেকজনরে একেক কাহিনী বলি। অনেকে শুনে এমন সন্দেহ করে যেন রাস্তাঘাটে মারপিট করে কপালে এমন কালো দাগ বানাইছি।

একসপ্তাহ পর কপালের দাগ কালো হয়ে গেছে চুল দিয়া ঢেকে রাখি...একদিন রাতে ঘুমের ঘোরে কপালে হাত দিয়া মনে হলো কি জানি বসে আছে....একটু পর পর খালি খুঁটতে থাকি আবার হাত দিয়া সরাতে চাই। সকাল বেলা উঠে দেখি কপালের অবস্হা আরো খারাপ। একসাইডে কালো আরেক সাইডে লাল আবার মাঝে মাঝে হালকা সাদা ও হয়ে আছে। এইবার দেখে মনে হবে কেউ যেন খুন্তি দিয়া কপালে ছ্যাঁকা দিছে। কাঁচি দিয়া সামনের চুল ছোট ছোট করে ঢেকে রাখলাম।

ঈদের আগে কণার সাথে শপিং এ গেলাম সে সামনের চুল কাটা দেখে কিছু জানতে না চেয়েই বললো "ঈষিতার (নাটক করে যে) না হয় ঠাশকপাল(বড়কপাল) বলে পুলাপাইনের মতন সামনে কপালের চুল কেটে রাখে ,তোর ঢং করার কারণ কি".......মনের দুঃখে বলতেও পারলাম না তুই রাস্তাঘাটে এমন ঘুমানোর অভ্যাস করাইলি,সেজন্য পাবর্তীমার্কা দাগ কপালে নিয়া ঘুরতাছি। (অনেকরে দেখি বাসে ঘুমিয়ে পড়ে। নানা বিপট ঘটে ...টাকা-পয়সা,মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ও ঘটে। সবচেয়ে বড় কথা নামার কথা শাহবাগ ঘুমের কারণে বাস মিরপুর ঘুরে শাহবাগ হয়ে আবার মতিঝিল ও চলে আসে তবুও পাবলিকের ঘুম ভাঙ্গে না। রাস্তাঘাটে ঘুম তাড়ানোর উপায় ও বের করছি টম ব্যাটারে দেখে...সবচেয়ে ভালো হয় টম এ্যান্ড জেরীর কার্টুন চরিত্র টমের মতই ম্যাচের কাঠি দিয়ে চোখের পাতা ঠেকিয়ে রাখবেন...তারপর বাসায় গিয়ে যত ইচ্ছা ঘুম,নো টেনশন) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.