আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনে পড়ে যায় কত স্মৃতি হায় মধুর জীবন শুক্রবারে আমার স্কুলে যাওয়া

সব কিছুর পর ও জীবন টা অনেক সুন্দর! সকাল ৯টা থেকে আপুর সাথে প্রচন্ড রকম ঝগড়া শুরু হইছে ময়-মুরুব্বী সবাই আমার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সবার কথা একটাই আজ শুক্রবার, স্কুল বন্ধ । আমারও এক দফা এক দাবী গতকাল ক্লাসে হেডস্যার বলেছেন প্রতিদিন স্কুলে আসতে হবে । প্রতিদিন মানে তো প্রতিদিনই স্যার তো বলেননি শুক্রবার আসতে হবেনা । আমি আজ স্কুলে যাবই যাব । ফ্যাবিকলের আটা দিয়েও আমাকে আটকাতে পারবেনা ।

অবশেষে আপুনি আমার কাছে হার মানলেন তবে শর্ত সাপেক্ষ । স্কুলে যাবি ঠিক আছে ১২ টার আগে আসতে পারবিনা । যুদ্ধে জয়ী হয়ে নিজেকে টিপু সুলতান ভাবতে ভাবতে স্কুল অভিমুখে রওয়ানা হলাম কিন্তু ব্যাপার খানা কি সবাই কি স্কুলে আগেই চলে গেল নাকি । প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় কত জনের সাথে দেখা হয়, আজ একজনও নাই । হাঁটার গতি কমে গেল ।

কপালে চিন্তা রেখা মোটা হতে লাগল তাইলে কি আপুনির কাছে পরাজীত হব । পরাজয়ে ডরেনা বীর এ ভাবনা থেকে আবারো দ্রুত হাঁটা দিলাম । যথাসময়ে স্কুলের বারান্দায় উপস্থিত এবং শুধুমাত্র আমি । ১২ টার আগে বাড়ী যাওয়া যাবেনা আর কোন অবস্থায়ই আপুকে বলা যাবেনা যে, স্কুল বন্ধ ছিল। নিজের মান সম্মান বলে একটা কথা আছে না স্কুলটা ছিল বাজারের কাছাকাছি এবং স্কুলের সামনে দিয়ে বাজারে যাওয়ার রাস্তা ।

স্কুলের বারান্দায় বসে থাকা নিরাপদ নয়, কেউ দেখে ফেলতে পারে। বইপত্র স্কুলের পিচনে কচু গাছের নীচে লুকিয়ে রাখলাম । কিন্তু এত্ত সময় পাস করুম কেমনে, বাজারেও যাওয়া যাবেনা চাচার দোকান আছে। স্কুলের পিছন দিয়া হাঁটাহাঁটি করতেছি হঠাৎ ক্লাস ফাইভের ভিতর মনুষ্য কন্ঠ শুনতে পেলাম । একটা জানালা টান দিতেই খুলে গেল।

জানালা খুলতেই বিড়াল দেখলে ইদুর যেভাবে গায়েব হয় সেভাবে বেঞ্চের নীচে, ব্লাকবোর্ডের পিছনে সবাই গায়েব হয়ে গেল । ভিতরে ঢুকতেই আবার সবাই বের হয়ে আসল । দেখলাম ক্লাস থ্রি এবং ফোরের ছাত্র । মোট ৫ জন । মার্বেল খেলতেছে ।

আমি বললাম আমাকে খেলায় নিতে হবে না হলে স্যারকে বলে দিব সবাই আমাকে ২টা করে মার্বেল দিল আর বলল প্রতি শুক্রবারে এখানে মার্বেল নিয়ে আসতে । ভাবলাম হেডস্যার মনে হয় এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে মার্বেল খেলতেন তাই আমাদেরও শুক্রবারেও স্কুলে আসতে বলেছেন মনে মনে হেডস্যারের জন্য দোয়া করলাম । ভালুই সময় কাটছিল। কিন্তু কথায় আছে না- সুখের পরে দুঃখ হঠাৎ দেখলাম দানবের মত এক বেটা জানলা দিয়া ঢুকতেছে যে যেদিকে পারলাম দৌড়। কোনরকমে জানলা দিয়ে বের হয়ে বই নিয়ে দৌড়।

এক দৌড়ে বাড়ীত। বাড়ীতে যাইয়া এমন ভাব নিলাম যে, বিরাট লেখাপড়া করে আসছি আজকে আপু তো একদম চুপ। পরের দিন স্কুলে যাইতে সময় দেখি আমার ইংলিশ খাতা নাই স্কুলে যাইয়া কচু গাছের নীচে খোঁজ দ্যা সার্চ করেও পেলাম না । সন্ধ্যায় পড়তে বসছি এমন সময় আপু এল। বলল হ্যাঁ রে গতকাল স্যার কি পড়াইছে।

আমার ঝটপট উত্তর ইংলিশ। কারন হেডস্যার ইংলিশ ক্লাস নিতেন। তা দেখি তোর ইংলিশ খাতাটা। শীতের রাইতে ঘাম দিয়ে জ্বর শুরু হল কিন্তু হার মানা যাবেনা । বললাম - এখন দেখাতে পারবোনা সজীবের কাছে রেখে এসেছি, কাল আনব ।

আপু খাতাটা বের করল। দেখতো এটা কার খাতা । কান্দনের ভাব নিয়ে বললাম আসলে খাতাটা আমি হারাই ফেলছিলাম তা কই হারাইছো গো ভাই, কচু গাছের নীচে। শুক্রবারে স্কুলে যাইয়া মার্বেল খেল আর কও হেডস্যার কইছে যাইতে । যে লোক দৌড়ানি দিছিল সে আমাদের স্কুলের দারোয়ান।

বুঝলাম কট খাইবার আর বাকী নাই আমাদের প্রাইমারী আর হাইস্কুল ছিল পাশাপাশি। আমি পড়তাম ক্লস টু' তে আর আপু পড়ত সেভেন-এ । বুঝলাম ঐ দৈত্য মত লোকটা ছিল আপুর স্কুলের দারোয়ান। কি আর করা মনে মনে প্রতিশোধের শপথ নিয়ে পরাজয় মেনে নিলাম। তারপর তাইক্কা প্রতি শুক্রবার আসলে আপু বলত – কি রে স্কুলে যাবিনা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।