আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেসেজ

কাল শুক্রবার ছুটির দিন। রাতুলের প্রিয় একটা রাত হল বৃহষ্পতিবার রাতের সময়টা। প্রায় সারা রাত গান শুনে, বই পড়ে, নিজের একান্ত একটা জগৎ গড়ে তুলে। এটা সে ইচ্ছে করে ক্রিয়েট করে, তার ভাল লাগে ধূয়াসা একটা জগৎ গড়ে তুলতে। শুক্রবার অফিস নেই তাই অনেক লেইট এ ঘুম থেকে উঠা যায়।

রাতুল এর খুব পছন্দ অঞ্জন দত্ত এর গান, "চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো/ এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা/ সমন্ধটা এবার তুমি ভেস্তে দিতে পার/ মাকে বলে দাও বিয়ে তুমি করছনা....। " মোবাইলটা নড়ে উঠলো, মেসেজ আসল একটা, এত রাতে কে পাঠাল আবার মেসেজ! খুলেই দেখা যাক..." তুমি কি আজ নিউ মার্কেট গিয়েছিলে? অনেকদিন পর দেখলাম তোমাকে। " কে পাঠাল মেসেজটা! নাম্বারটাতো নূতন। মোবাইলটা রেখে দিল রাতুল, কেউ হয়তো ভুল নাম্বারে পাঠালো। রাতুল আবার ঢুকে পড়লো গানের জগতে, তখন চলছিল অঞ্জন এর এই গানটা..." আমি বৃষ্টি দেখেছি, বৃষ্টির ছবি একেছি, আমি রোদে পুড়ে ঘুরে ঘুরে অনেক কেঁদেছি, আমার আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার বেলা থামেনি, শুধু তুমি চলে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি......।

" আবার নড়ে উঠে মোবাইলটা, মেসেজ আসলো আবার। " আমাকে ক্ষমা করবেন, লাস্ট ডিজিট ভুল করে আপনার কাছে একটা মেসেজ চলে গেছে, দয়া করে মুছে দেবেন। " রাতুল এবার রিপ্লাই দিল, "ইট্স অকে, ডিলিটেড। " পরের বৃহষ্পতি ঘটনার পুনরাবৃত্তি, এবার আসলো ফোন, "হ্যালো তৌহিদ তুমি কি এটা ঠিক করেছ? আজ না তোমার বাসায় আসার কথা নোট নিয়ে, আমি অপেক্ষায় থাকলাম, তুমি আসনি কেন?" একটা মেয়েলি কন্ঠ, এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল, রাতুল বলল, " সরি আপনার ভুল হচ্ছে আমি তৌহিদ নই, আপনি কি চেক করে দেখবেন ঠিক নাম্বারে ফোন করেছেন কি-না?" "ও সরি বলে কেটে দিল লাইনটা" রাতুল এর সন্দেহ হল, এটা কি গত সপ্তাহের সেই নাম্বারটা? যেটা থেকে মেসেজ এসেছিল, কি জানি, ওটাতো সেইভ করে রাখা হয়নি, মেসেজটাও মুছে দেয়া গেছে। এবার আর ভুল করা চলবেনা, সেইভ করে রাখা হল, কি নামে রাখা যায়? অনামিকা? নাকি মিস্ডকল নামে।

অনামিকাই ভাল হবে। আবার বেজে উঠলো মোবাইলটা, " সরি বলতে ফোন করলাম, কিছুক্ষণ পূর্বে ভুল করে আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম, তবে আরো একটা কারন আছে আপনাকে ফোন করার, কেন বলুনতো? কেন? আমারতো জানার কথা না, কেন জানতে পারি কি? কারন হলো আপনার কন্ঠটা খুব সুন্দর তাই? হুম, আপনার সাথে কথা বলার পর মনে হল আরো একটু কথা বলি, আচ্ছা আপনার কন্ঠ এতো সুন্দর কেন? কি করে বলব, আমার তো জানা ছিলনা আমার কন্ঠ এতো সুন্দর, আজকে প্রথম শুনলাম। হতেই পারেনা, আপনি মিথ্যে বলছেন, আপনার একটা সুন্দর কন্ঠ অথচ কেউ আপনাকে এ কথা বলেনি, এটাও কি আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? আমি একটু বিরক্ত হচ্ছি, আপনি কি ফোনটা রাখবেন? আর ভুল করে কিংবা জেনেশুনে ফোন না করার জন্য দয়া করে আমার নাম্বারটা আপনার মোবাইল থেকে মুছে দেবেন! কোন উত্তর পাওয়া গেলনা, লাইন কেটে গেল। ক্যাশ এর জবটা খুব রিস্কি, অনেক রিকোয়েস্ট করে ব্রাঞ্চ মেনেজার খালেদ ভাইকে বুঝিয়ে ওখান থেকে রেহাই পেল রাতুল, এখন সে ক্লিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এ যোগ দিল নোমান ভাই এর আন্ডারে, এটাই ভাল, বেক অফিস, তবে মাঝের মধ্যে দুপুরের শেষের দিকে কাষ্টমার সার্ভিসে গিয়ে বসে, খালেদ ভাই বলেছেন, রাতুল কাস্টমার সার্ভিসের সবাই একসাথে লাঞ্চে গেলে তুমি একটু বস ওখানি, ক্লায়েন্ট বসিয়ে রাখলে হেড অফিস নোটিশ পাঠাবে, বলাতো যায়না কে কোনদিকে আবার রিপোর্ট করে দেয়। ঠিক আছে খালেদ ভাই, আমি বসব ওই সময়টাতে, রাতুল উত্তর দেয়, তাও করতে রাজি আছে তবুও ভাল ক্যাশ কাউন্টার থেকে, এইতো মাস তিনেক আগের ঘটনা, সায়মা গচ্ছা দিল পঞ্চাশ হাজার টাকা।

দিন শেষে হিসেব করে দেখে মিলছেনা পঞ্চাশ হাজার টাকার গড়মিল, প্রথমে রাতুলকে বলল সায়মা, রাতুল আমার হিসেবটা একটু দেখবে? আমার মিলছেনা হিসেব,পঞ্চাশ হাজার টাকা মেলাতে পারছিনা, হাত পা কাঁপছে আমার ধ্যুর, ড্রয়ারে দেখ, আমারও সেদিন অমন হয়েছিল, একশ টাকার একটা বান্ডেল ড্রয়ার এর কোনায় একদম ভেতরে ঢুকে চুপটি মেরে বসেছিল, পরে ঘাম ঝরিয়ে অনেক খুঁজে বের করলাম, তুমি ড্রয়ার চেক কর পেয়ে যাবে না রাতুল দেখলামতো নেই কোথাও সত্যি সত্যি পাওয়া গেলনা, খালেদ ভাইকে জানানো হলো, খালেদ ভাই সিসি ক্যামরাতে ভিডিও ব্যাকআপ এ ঘেটে দেখছেন ক্যাশ কাউন্টার এর ক্লাইন্ট এর মুভমেন্ট গুলো, রাতুল আর হিশামকে বললেন সায়মার পোস্টিংগুলো ক্রস চেক করারা জন্য। কিছু পাওয়া গেলনা, শুধু একটু সন্দেহ হচ্ছে একটা এন্টারপ্রাইজ এর মাঝ বয়েসি এক ভদ্র লোককে। জিঞ্জাসা করা যেতে পারে, সকাল এগারটা চুয়াল্লিশ মিনিটে ভদ্রলোক পাঁচ লক্ষ টাকা তুলেছেন। এদিকে ডে ক্লোজড এর ব্যাপার আছে, যা করার রাত হলেও আজকের মধ্যেই করতে হবে, অনলাইন ব্যাংকিং এর অনেক কিছু হেড অফিস থেকে কন্ট্রোল করা হয়, ডে ক্লোজড করে মেইলে রিপোর্ট দেবার একটা ব্যাপার আছে, খালিদ ভাই অবশ্য মেইলে হেড অফিসে জানিয়ে রেখেছেন আজ একটু লেইট হবে, একটা রং ট্রানজেকশান আছে, চেক করা হচ্ছে। এন্টারপ্রাইজ এর একাউন্ট টা ফ্রিজ করে রাখা হল, খবর দেয়া হল ভদ্রলোককে, সরাসরি বলা হল, সকালে ভুল করে আপনানে পাঁচশ টাকার একটা বান্ডেল বেশী দেয়া গেছে, আপনি কি ওটা রিটার্ন দেবেন? ভদ্রলোক বললেন কই নাতো? ও টাকা তুলে আমি তো আমার একটা ক্লাইন্ট এর পেমেন্ট দিয়ে দিয়েছি, বেশী তো ছিলনা, আমি একটা কাজ করতে পারি, ক্লাইন্টকে জিঞ্জেস করে দেখে আপনাকে জানাতে পারি।

দয়া করে এখনই ফোন করে দেখবেন? এই নিন এই মোবাইল এটা থেকে করুন না ঠিক আছে আমি করছি। রিং পড়ছে বাট রিসিভ হচ্ছেনা, অনেকবার ট্রাই করা গেল, না রিসিভ হচ্ছেনা, ভদ্রলোক চলে গেল, ক্লইন্ট এর সাথে কথা বলে জানাবে বলে গেলেন। ওটার আর সমাধান হলনা, খালেদ ভাই নিজের একাউন্ট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে ডে ক্লোজড করা হল। পরের দিন সায়মার বাবা এসে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে গেলেন, সায়মার বাবা সায়মার জন্য কিছু টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখেছিলেন ওর বিয়েতে লাগবে তাই, সেখান থেকে এনে দেয়া হল। সেই থেকে রাতুল এর মনে ভয় ঢুকে গেছে, মাঝের মধ্যে দু-চার, পাঁচশত টাকা গড়মিল হয়, ওটা নিজ পকেট থেকে দিয়ে চুপচাপ থাকা যায় কিন্তু পঞ্চাশ হাজার বা লাখ টাকার ব্যাপার হলে তো সামাল দেবে কি করে রাতুল, তার কাছে জমানো কোন টাকাই নেই, খুব বেশীদিন হয়নি তার চাকরীর বয়েস, বাবার রিটায়ার্ড এর পর তার উপর নির্ভর পুরো পরিবার।

তাই খালেদ ভাইকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রাতুল ক্লিয়ারিং সেকশানে চলে গেল। ইদানিং প্রায়ই রাতে মেসেজ আসছে রাতুলের মোবাইলে, কি করছেন? কেমন আছেন? কথা বলা যাবে? খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে আপনার সাথে ইত্যাদি। রাতুল পড়ে ডিলিট করে দেয়, রিপ্লাই দেয়া হয়না। আজকে কেন জানি রিপ্লাই দেয়া হল মেসেজ এসেছিল, কি করছেন? গান শুনছি কার গান? লোপামুদ্রা মিত্রের বেনীমাধব গানটা? ওটা একটু আগে শেষ হয়ে গেছে এখন চলছে,ছেলে বেলার বৃষ্টি আচ্ছা আপনার নামটাতো জানা হলনা দেখুন,আমার ভাল লাগছেনা আপনার সাথে এভাবে মেসেজ বা ফোনে যোগাযোগ, দয়া করে আমাকে আর বিরক্ত না করলেই ভাল হয়.. সেই রাতের পর আর মেসেজ কিংবা ফোন আসেনি রাতুল এর মোবাইলে, রাতুলের ও আর মনে ছিলনা। আজও রাতুল কাষ্টমার সার্ভিস ডেস্কে সার্ভিস দিচ্ছিল রাতুল, লাঞ্চ আওয়ার এর টাইমটাতে কাস্টমার একটু কম থাকে, দু'একটা ফোন কল আসছিল, নতুন একাউন্ট ওপেন আর কার লোন কোয়েরি সম্পর্কিত, জবাব দেয়া হয়েছে, এক ভদ্রমহিলা ঢুকল ব্যাংকে, রাতুলের চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে ফেলে রাতুল, কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে, আবার তাকাল রাতুল, মহিলাটাও এগিয়ে আসছে রাতুল এর দিকে, সামনে এসে দাঁড়াতেই রাতুলকে প্রশ্ন করল, রাশেদ সাহেব নেই? ওনি কোথায়? রাতুল এবার কনফার্ম হল, এ হলো মিরু, একসাথে পড়ত কলেজে, আরে আপনি মিরু না? হুম, কেমন আছ রাতুল? তুমি এই ব্যাংকে আছ? জানতামনাতো? তো কি কাজে আসলে? আমি একটা একাউন্ট করব, সেদিন এসে রাশেদ সাহেব এর কাছ থেকে ফরম নিয়ে গিয়েছিলাম আজ ফিলআপ করে জমা দিতে আসলাম তাই, দাও আমাকে দাও, আমি করে দিচ্ছি, রাতুল ফর্মটা হাতে নিল, চেক করে নিল সব কিছু ঠিক আছে কিনা, কযেকটা ইনফরমেশান ঘর খালি ছিল, ফিলআপ করা হয়নি করফিউশান ছিল বলে, রাতুল নিজে করে দিল সব।

তারপর কি খবর, কেমন আছ? ইত্যাদি টুকটাক কথা হয়েছিল, মিরু চলে গেল আবার দেখা হবে ইত্যাদি বলে। রাতুল গিয়ে বসল তার নিজের সিটে, পরের দিন সকালের ক্লিয়ারিং হাউজ এর চেক পোষ্টিং দিতে হবে এখন, রাতুলের হঠাৎ খটকা লাগল, যখন সে মিরুর ফর্মটা চেক করছিল, ওখানে কন্টাক্ট নাম্বার যেটা লিখা আছে কেমন জানি পরিচিত মনে হচ্ছে, না মাথায় ওটা ঘোরপাক খাচ্ছে, আবার গিয়ে দেখা যাক নাম্বারটা মিলিয়ে, সিট হতে উঠে গেল রাশেদ সাহেব এর কাছে রাশেদ ভাই, ওইযে ওই ফর্মটা একটু দেবেন? আমি রিসিভ করেছিলাম, আপনি তখন লাঞ্চে ছিলেন হুম, নাম্বার মিলে গেছে, যেই নাম্বার থেকে রাতুল এর কাছে মেসেজ আসতো এই নাম্বারটা সেটাই.... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।