আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন-চিত্রনাট্য-খসড়া

স্বপ্নবাজ। একটা রাতের রংধনুর স্বপ্ন দেখি...। -কিঙ্কর আহ্সান জীবন-চিত্রনাট্য-খসড়া কিঙ্কর আহ্সান ১. মাঝনদীতে পৈাছে গেছে লঞ্চ। রাত গভীর হয়নি এখনও। তবে নিকষ,কালো আঁধারে ঢেকে আছে চারপাশ।

কালো মেঘ আর আঁধারের দাপটে হারিয়ে গেছে আকাশের কোন এক কোনায় লুকিয়ে থাকা চাঁদ,চাঁদের আলো। একটা তারাও দেখা যাচ্ছেনা কোথাও। বৃষ্টি হচ্ছে খুব। ঝড়ো হাওয়ায় বেসামাল হয়ে উঠছে লঞ্চটা। লঞ্চের রেলিং এর একপাশে দাড়িয়ে নদীর কালো জল দেখতে থাকে সুজন।

আঁধারের আড়াল হতে জলকে আলাদা করে দেখাটা কঠিন কাজ। তবুও তাকিয়ে থাকে সে। সময় কাটানোর জন্যে তাকিয়ে থাকা। এমন আবহাওয়ায় লঞ্চে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হলোনা। কিন্তু যেতেই হবে।

মায়ের কড়া আদেশ। নিজের বোনের মেয়ের আকীকার অনুষ্ঠানে নতুন বউ নিয়ে সুজন থাকবেনা এটা কেমন কথা! সুজন বুকপকেটে থাকা শেষ সিগারেটটা বের করে ধরায়। কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে,ন্যাতান্যাতা হয়ে আছে সিগারেটটা। ঝড়ো হাওয়ায় দেয়াশলাইয়ের কাঠিটা জ্বালাতে কষ্ট হয় খুব। ধোয়া ভেতরে যেতেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে মন।

একটু আগে বউয়ের সাথে হওয়া কঠিন ঝগড়াটার কথা ভুলে থাকার চেষ্টা করে সে। আজ একা হলে অবশ্য বাসে করে বরিশালে যেত সুজন। কিন্তু সাথে বউ আছে। নতুন বউ। তাই যত বিপত্তি! সড়কপথে মেয়েমানুষ নিয়ে এতটা দুরে যাত্রা করাটা নিরাপদ না।

তাছাড়া লঞ্চের ছিমছাম, দারুন কেবিনের ভেতর বন্দী হয়ে ভালোবাসাবাসি করার লোভটা সামলাতে পারেনি সে। তবে লাভ হয়নি। লোভটা বেশি ছিলো বলেই হয়ত ভালবাসাবাসির মুখে ছাই দিয়ে রাগ করে কেবিন বন্ধ করে বসে আছে বউটা। সুজনকে ঢুকতে দিচ্ছেনা কেবিনের ভেতরে। এই ঝড়বৃষ্টি,শীতল হাওয়ার ভেতরেও তাই তাকে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বাইরে।

বউয়ের নতুন চাকরি। তিন কি সাড়ে তিন মাস হয়েছে অফিসে যাচ্ছে সে। এর মাঝেই ছুটি নেওয়ার ইচ্ছে ছিলোনা বউটার। কিন্তু মায়ের কথাতো ফেলার উপায় নেই। মায়ের মন রক্ষা করতে গিয়েই বউয়ের সাথে লেগেছে ঝগড়াটা।

ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর মা’ই অমানুষিক পরিশ্রম করে সুজন আর তার একমাত্র বোনটিকে বড় করেছে। কখনও বুঝতে দেয়নি সংসারের কষ্ট। মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করার একটা ব্যাপার আছে তাই। তাছাড়া সে মাকে ভয় পায়। অবশ্য এ ভয়ের সাথে মিশে আছে ভালবাসাও।

এত বড় হয়ে গেল তারপরও মায়ের আদেশ অমান্য করার সাহস সুজনের হয়নি। হোক চায়ওনা সে। এজন্যে যদি বউয়ের সাথে লড়াই হয় তো হোক। ‘চলো। ভেতরে যাবে চলো।

বৃষ্টিতে ঠান্ডা লেগে যাবে। ’ মিষ্টি কন্ঠ শুনে পেছনে ফিরে তাকাতেই সুজন দেখতে পায় বউকে। মনটা ভালো হয়ে যায়। হাতের সিগারেটটা ছুড়ে ফেলে সে নদীতে। বউ সিগারেট খাওয়া পছন্দ করেনা তার।

‘যাবোনা আমি ভেতরে। ঠান্ডা লাগে লাগুক। জ্বর হোক, নিউমোনিয়া হোক, ক্যান্সার হোক। মরে যাই আমি। আমি মরলেই তো তুমি খুশি।

’ একসাথে এতগুলো কথা বলে থেমে যায় সুজন। কথাগুলোতে আবেগ মনে হয় একটু বেশি বেশি হয়ে গেল। সিনেমার মতন। ভুল হয়ে গেল। বড় ভুল।

মেয়েরা ছেলেদের অতি আবেগ পছন্দ করেনা। ‘বৃষ্টিতে ক্যান্সার হয় বলে শুনিনি কখনও। যাহোক, তোমার মায়ের কথামতোই যাচ্ছি আমি। এখন আর দয়া করে ব্যাপারটা নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরোনা। কেবিনের ভেতরে চলো।

বৃষ্টি বেগ বাড়ছে। ’ ‘না যাবোনা। কক্ষনো যাবোনা। আজ সারারাত এই জায়গায়ই থাকবো। ’ ‘না গেলে আমার খুব একটা ঝামেলা কিন্তু হবেনা।

বরং আরাম করে ঘুমাতে পারবো। শেষবারের মতো বলছি ভেতরে চলো। ’ হঠাৎ বাজ পড়ে কাছাকাছি কোথাও। সিনেমার মতন করে ভয় পেয়ে সুজনকে জাপটে ধরে তার বউ। সুজনের মনটা ভালো হয়ে যায়।

মেয়েদের এই হুটহাট ভয় পাওয়াটা খুবই পছন্দের তার। লঞ্চের করিডরে লোকজন কেউ নেই তেমন একটা। শুধু পাশের কেবিন থেকে সোমত্ত একটা মেয়ে বের হয়ে একটু দুরে লঞ্চের কেবিন ধরে দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা না থাকলে বউটাকে আরাম করে জড়িয়ে ধরা যেত। ‘দোহাই লাগে তোমার।

চলো, ভেতরে চলো। বাইরে ভয় লাগছে খুব। ’ ‘ভয়ের কি, আমি আছি না। ’ সুযোগ পেয়ে নিজের পৈারুষত্তের প্রমান টা দিয়ে নেয় সুজন। হঠাৎ করেই সবকিছু ভালো লাগতে শুরু কে তার।

এই ঝড়, লঞ্চের দুলুনি, বৃষ্টি। সব। সবকিছু। বউকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে কেবিনের ভেতর ঢুকে যায় সুজন। এই মুহূর্তে শুধু বউকে নিয়েই ভাবতে চায় সে।

পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও, নদী জল ডাঙ্গায় উঠে আসলেও, আঁধার ভেঙে লঞ্চের গায়ে পড়লেও কোন কিছুকে পরোয়া করেনা এখন আর সে। এখন ফুল ফুটবে। হুশ লোপ পাবে। আর হয়তবা জন্ম হবে নতুন কোন গল্পের। ২ আমেনার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

ইচ্ছে করছে ডাক ছেড়ে হাউমাউ করে বিলাপ করতে করতে কাঁদতে। কিন্তু উপায় নেই। এখন কান্নার সময় হলেও তাদের কাঁদা নিষেধ। কাঁদলেই বিপদ। ভয়ঙ্কর বিপদ।

পাশেই তার বসে আছেন বড় ভাইজান। সে সবাইকে সামাল দিয়ে রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে উতলা হয়ে উঠছেন নিজেই। একটু পর পরই ফোঁপাতে ফোঁপাতে ধরা গলায় সবাইকে বলছেন,‘ চোপ। একদম চোপ। কাঁদবিনা কেউ।

কাঁদবিনা। কেবিনের ভেতর লাশ আছে বাইরের লোকজন যেন জানতে না পারে। জানলেই সর্বনাশ। ’ ভাইজানের কথায় খুব একটা লাভ হচ্ছেনা। ছোট বোনটা বারেবার হেঁচকি তুলছে।

কান্না থামানোর জন্যে সে কি প্রানান্তকর চেষ্টা তার ! মা কাঁদছেন। বড়ভাই এর নিষেধ অগ্রাহ্য করেই,‘ক্যান গেলা? কি কারনে গেলা? কই গেলা?’এসব অগোছালো প্রশ্ন করে যাচ্ছেন মৃত বাবাকে উদ্দেশ্য করে। অধিক শোকেই মনে হয় কিছুটা অস্বাভাবিক আচরন করছে সবাই। বাইরে যাতে আওয়াজ না যায় তাই কেবিনের দরজা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে চালু করা হয়েছে টেলিভিশনটা।

সেখানে হিন্দী সিনেমার গান বাজছে। গোবিন্দ নামের এক খর্বাকায় অভিনেতা গেয়ে যাচ্ছে,‘আখিয়োছে গুল্লি মারো..লেরকি কামাল কা। ’ আমেনা বের হয়ে এল কেবিনের বাইরে। কানে এসে লাগল বাতাসের শো শো শব্দ। বৃষ্টি হচ্ছে খুব।

বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে লঞ্চের গায়ে। দুলছে লঞ্চটা। লঞ্চের রেলিং ধরে দাড়াতেই বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিল আমেনাকে। সে এসব নিয়ে ভাবল না। রাতের দুর দুর অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আঁধারের শূন্যতাকে ঈশ্বর ঠাউরে মনে মনে শুধু বারবার বলতে লাগল,‘হে দয়ার সাগর, তুমি আমাদের রক্ষা করো।

সর্বশক্তিমান, এ বিপদ থেকে যেন রক্ষা পায় আমার বাবা। ’ ভিজে যাচ্ছে আবার আমেনার চোখ। তবে এখন কাঁদার জন্যে রাখঢাক না রাখলেও চলবে। এই বৃষ্টিতে সবাই যার যার কেবিনে ঢুকে দিয়েছে ঘুম। আশেপাশের কোথাও মানুষের সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা তেমন একটা।

শুধু তাদের পাশের কেবিনে ওঠা এক দম্পতি একজন আরেকজনের কোমর জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে কিছুটা দূরে। তাদের মধ্যকার ঝগড়া,আহ্লাদ,অভিমানের গুটিকতক আপত্তিকর শব্দ কানে এলেও আমেনা এসব উপেক্ষা করে ভাবতে লাগল মৃত বাবার কথা। আজ দুপুরেও ঠিকঠাক ছিলো লোকটা। পুরো এক গ্লাস দুধ পাউরুটি দিয়ে ভিজিয়ে ভিজিয়ে কারও সাহায্য ছাড়া খেয়েছিল সে নিজে নিজেই। খাওয়া শেষে মায়ের সাথে মেতে উঠেছিল গল্পে।

মজা করে মাকে বলছিলেন,‘ চন্দনা, তোমার যত বয়স বাড়ছে ততই সুন্দর হচ্ছ। দু-দুটো আইবড় মেয়ে তোমার। এই বয়সে এত সুন্দর হওয়া ভালো না। বুঝলা?’ বিকেলের দিকে দু বোনকে ডেকে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিয়েছিল মাথায়। যাতে তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়,যাতে টেকো জামাই না পায় এবং জীবনে সুখী হতে পারে এজন্যেই মাথায় ফু দিয়ে দোয়া করা।

আসলে গত এক সপ্তাহ ধরেই শরীরটা ভালো যাচ্ছিল লোকটার। তার সুস্থতা দেখে খুশি হয়ে উঠেছিল চিকিৎসকও। লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তি নেই এটা জেনে হাল ছেড়ে দেওয়া সবাই হয়ে উঠল আবার আশাবাদী। বড় ভাইজান চিকিৎসকে অনুরোধ করে সুস্থ থাকা অবস্থায় রোগীকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাইল। অসুস্থ হয়ে ঢাকায় এসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই বাড়িতে যাওয়ার জন্যে পাগল হয়ে উঠেছিল লোকটা।

বাড়ির জন্যে খুব মন কাঁদত তার। রোগীকে নিয়ে খোশমেজাজে থাকা চিকিৎসকটাও কেন জানি আপত্তি করলেন না। তার কথামতো সবকিছু ঠিকঠাক করে,মেনে করা হল লঞ্চের কেবিনের টিকিট। পারাবাত,জলকপোত,দ্বীপরাজ বরিশাল যাওয়ার এসব লঞ্চগুলোর কেবিন যেন এক একটা রাজকামরা। এসি,টেলিভিশন,আয়না,আলমারি,খাট আরামে থাকার সবকিছুই আছে এতে।

তাই বাবাকে নিয়ে লঞ্চের কেবিনে করে বরিশালে যেতে দুশ্চিন্তায়ও ছিলোনা কেউ তেমন। আজ সন্ধ্যের দিকে অবশ্য একটু ঝামেলা শুরু হয়। ইলশেগুড়ি বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর পুরো আকাশটা ঢেকে যায় কালো মেঘে। একটু পর পর শোনা যাচ্ছিল মেঘের গর্জন। এই আবহাওয়ায় না যাওয়াই উচিৎ এমনটা ভেবে যাওয়া নিয়ে দোনামোনা করছিলেন ভাইজান।

তবে তার বাবার উৎসাহ,আনন্দ দেখে এসব আর ধোপে টিকল না। সাড়ে আটটার কিছু পরে মারা যান আমেনার বাবা। কেবিনের টেলিভিশনে একটা বাংলা নাটক দেখছিলেন তিনি। হাসির নাটক। হা হা, হো হো, করে হেসে উঠছিলেন একটু পর পরই।

হাসতে হাসতেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। আমেনাকে তাড়াতাড়ি কাছে ডেকে বলে,‘ মাগো শ্বাস নিতে পারিনা। দম বন্ধ হয়ে যায়। কেবিনের বাইরে নিয়া যা আমারে। বাইরে নিয়া যা।

’ কথাটা কোনরকমে শেষ করতে না করতেই লুটিয়ে পড়েন তিনি বিছানায়। এক ন্যানো সেকেন্ডেরও কিছু কম সময় লাগে জীবিত থেকে পরিনত হতে মৃত মানুষে। এরপর আসে আরেক বিপদ। কেবিনে লাশ নিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই। লাশ নিতে হয় লঞ্চের ছাদে।

কিন্তু এই বৃষ্টির ভেতর ছাদে লাশ নিতে দিতে নারাজ তিন ভাই বোন। লঞ্চের লোকগুলো জানলেই শুরু হবে ঝামেলার। কোন যুক্তি মানতে নারাজ এই গোয়ার লোকেরা। জোর করে তারা এই বৃষ্টির ভেতরেও লাশ যে ছাদে তুলবে এতে সন্দেহ নেই কোন। তাইতো শোক লুকানোর চেষ্টা সবার।

বুক ভরা হাহাকার,কান্নাকে আড়াল করে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা। বৃষ্টির বেগ বাড়তেই থাকে। বুড়ো হয় রাত। ভাবনার জগত থেকে ফেরে আমেনা। একটু জোরে কান্নার আওয়াজ শুনে আবার কেবিনের ভেতর যায় সে।

দেখতে পায় মাকে কাঁদতে নিষেধ করছে বোন আর বড় ভাইজান। বড় অসহায় লাগে তার। সে অপেক্ষা করতে থাকে রাত শেষ হবার জন্যে। ভোর হলেই হবে হয়ত যন্ত্রনার অবসান। ডাক ছেড়ে কাঁদতে পারবে আমেনা।

পারবে হাউমাউ করে বিলাপ করতে করতে কাঁদতে। ৩. দুটো জোনাক পোকা উড়তে থাকে লঞ্চের করিডর ধরে। লঞ্চের বাইরে গেলেই বৃষ্টিতে ভিজে যাবে ডানা। কপালটাই মন্দ তাদের। নইলে এমন ঝড়,বৃষ্টির রাতে কেউ কি আটকা পরে লঞ্চের ভেতর! উড়ে উড়ে তারা ফাঁকফোকরের ভেতর দিয়ে ঢুকে যায় লঞ্চের কেবিনগুলোতে।

একটা কেবিনে ঢুকে তারা শুনতে পায় মানুষের শীৎকার। আলো নেভানো হলেও তারা বুঝতে পারে আনন্দময় শীৎকারের কারন। মানুষ তাদের যতটা বোকা ভাবে ততটা বোকা তারা নয়। কোন এক দম্পতির ভালোবাসায় আজই হয়ত ডিম্বানুর সাথে শুক্রানুর মিলনে সৃষ্টি হবে কোন ভ্রƒনের। কোন এক মানব শিশু হয়তবা বছর ঘুরে আসবে পৃথিবীতে।

মন ভালো হয়ে যায় পোকাদুটোর। তবে পাশের কেবিনে যেতেই আবার থমকে যেতে হয়। একটু পর পর সামান্য শব্দে কেঁদে উঠছে কে যেন। এখানেও নেভানো রয়েছে আলো। পোকাদুটো নিজেদের সামান্য আলো দিয়ে দেখতে পায় কয়েক জোড়া চোখ।

ঘুমায়নি ঘরের কেউ। বাতি নিভিয়ে বালিশে মুখ চেপে কাঁদছে তারা। লাশটা চোখ এড়ায়না পোকাদুটোর। কেবিনে লাশ রাখার কারনটা তাদের ছোট্ট মাথার অল্প বুদ্ধি দিয়ে বের করতে পারেনা কেউই। তবে কষ্ট হয়।

ভালো থাকা মনটা আবার হয়ে যায় খারাপ। কষ্ট ভোলার জন্যে পোকা দুটো করিডরে বের হয়ে উড়তে থাকে আবার। কাছাকাছি বাজ পড়ে কোথাও। সৃষ্টিকর্তা আর প্রকৃতির নির্মমতা দেখে অস্থির লাগে জোনাক দুটোর। মৃত্যু আর জীবনের এমন পাশাপাশি বসবাস মেনে নেওয়াটা কঠিন।

তালগোল পাকিয়ে যায় সব। মাথাটা ঠিক করার জন্যে উড়তে ইচ্ছে করে নদীর ওপর দিয়ে। ঝড়ো বাতাসের ভেতর দিয়ে। কিন্তু এমন পাগলামী করলে মৃত্যু নিশ্চিত। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও দূরের আঁধারকে তাক করে নদীর ওপর দিয়ে উড়তে শুরু করে তারা হঠাৎই।

ভিজল’ই না হয় ডানা। মরন’ই না হয় হোলো আজ। অল্পদিনের জীবন তাদের। বেঁচে থাকার জন্যেই মাঝে মাঝে পাগলামীটা দরকার। খুব করে দরকার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।