আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাগেরহাট ও খুলনায় তিন দিন

তুই ভালো থাকিস, আমি সুন্দর থাকবো যাব ৮ জন, বাসের টিকেট কাটা হইছে ৬ টা; রওয়ানা দিব ঈদের পরদিন রাত ১০ টায়। বাবু ভাই আর নিহাদের পরদিন অফিস আছে বলে তারা একদিন পরে এসে আমাদের সাথে খুলনায় মিলিত হবে । কিন্তু এক-ই সাথে যাবার জন্য অফিসে ম্যানেজ করে যাবার দিন দুপুরে তাড়াহুড়া করে গিয়ে নিহাদ বাসের ২ টা টিকেট কেটে নিয়ে আসে। ঈদের পরদিন যাচ্ছি বলে লোকজন কম থাকায় ভাগ্যক্রমে আমাদের বাসেই পিছনের দিকে ২ টা টিকেট পেয়ে গেল। কিন্তু সন্ধ্যায় শিমুল জানায় সে যাচ্ছেনা, হোচট খেয়ে পায়ের অবস্থা কেরোসিন।

কাজেই নিহাদ, বাবু ভাই সহ মোট ৭ জন একই সাথে রওয়ানা দিলাম এবং পিছন থেকে ১ টা সিট বিক্রি করে দিলাম। ভোগে নয়, ত্যাগেই সুখ। কিন্তু এই সুখের রেশ সবসময় আনন্দ দেয় না। বাসে উঠার ঠিক আগ মুহূর্তে গেলাম ত্যাগ করতে, আমি আসতে আসতে বাকি ৬ জন সামনের ৬ সিটে এক সাথে বসে পড়েছে, আর আমাকে একা একা চলে যেতে হলো চতুর্থ স্বর্গে (এইচ ৪)। ত্যাগের কি মহিমা সেটা এখন বাসের প্রতিটি ঝাকুনির সাথে সাথে হাড়ে হাড়ে টের পেতে লাগলাম।

ফেরীঘাটে এসে এক নতুন অভীজ্ঞতা হলো। পাটুরিয়া ফেরীঘাটে এসে আমাদের ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো। আমরা ১০ মিনিট অপেক্ষা করলাম ফেরীতে উঠে কারন গাড়ী না থাকায় ফেরীতে এখনো অনেক জায়গা খালি পড়ে আছে, তাই ফেরী ভর্তি করার জন্য অপেক্ষা। ফেরী না ভরা পর্যন্ত ফেরী ছাড়বে না। ফেরী পার হবার পর আমাকে একাকীত্বের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে মুজাহীদ ভাই (বাবু ভাই) পিছনের স্বর্গে চলে গেল।

(আমাকে মুক্তি দিতে গেছে নাকি ভাবী-র সাথে কথা বলতে গেছে সেটা নাইবা বললাম। ) ভোর ছয়টার দিকে বাস থেকে নেমে পড়লাম ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে। নেমেই পাশের এক টং দোকান থেকে রঙ চা নিলাম ঘুম কাটানোর জন্য। দোকানদার ভাইজান আমাদের চা নামক যেই নীম পাতার রস খাওয়ালো তাতে এক চুমুক দিয়েই মাথা থেকে পা পর্যন্ত একটা ধাক্কা খেলাম। ঘুম পালালো একইসাথে চা খাবার ইচ্ছার ও বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেল।

রাস্তার পাশেই সুন্দরঘোণা গ্রামের সিঙ্গাইর মসজিদ। সিঙ্গাইর মসজিদ পঞ্চদশ শতকে নির্মিত বর্গাকার এই মসজিদের দৈর্ঘ্য সবদিকে ১২.০৪ মিটার। ২.১২ মিটার চওড়া দেয়াল বিশিষ্ঠ মসজিদটির চারকোনায় রয়েছে চারটি বুরুজ। সিঙ্গাইর মসজিদের ৩০০ গজ উত্তর পশ্চিম দিকে অবস্থিত বিখ্যাত ষাট গম্বুজ মসজিদ। ষাট গম্বুজ মসজিদ ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বৃহত্তম আকার বিশিষ্ঠ এই মসজিদটির (১৬০’ X ১০৮’)নাম ষাট গম্বুজ হলেও গম্বুজ রয়েছে ৭৭ টি।

মসজিদের চারকোনার বুরুজের উপরের চারটি গম্বুজসহ হিসেব করলে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১ টি। ১৪৫৯ খ্রীস্টাব্দের কিছু পূর্বে খানুল আজম উলুখ খান জাহান (রাঃ) এই মসজিদটি নির্মান করেন। বর্তমানে মসজিদটি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা ভুক্ত একটি সংরক্ষিত প্রত্ন নিদর্শন। মসজিদের পশ্চিম দিকে রয়েছে বিশালাকার ঘোড়া দিঘি। ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে বের হয়ে রওয়ানা দিলাম বিবি বেগনি মসজিদের দিকে, প্রায় আধা কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিয়ে ঘোড়া দিঘির অপর পাশে এক গম্বুজ বিশিষ্ট বিবি বেগনি মসজিদের সামনে এসে দাড়ালাম।

এই মসজিদটির নির্মানশৈলী সিঙ্গাইর মসজিপদের অনুরূপ। বিবি বেগনি মসজিদ এখান থেকে আরো সামনে রওয়ানা দিলাম চুনাখোলা মসজিদের দিকে, বিচ্ছিরি রকমের খারাপ রাস্তা পার করে যখন দূর থেকে মসজিদের দেখা পেলাম তখন আমি আর মঞ্জু ছাড়া আর কেউ রাজি হলোনা মসজিদের সামনে যাবার জন্য। কর্দমাক্ত রাস্তা আর হাটু সমান পানি পেড়িয়ে এক খোলা মাঠের মাঝখানে চুনাখোলা মসজিদ, মসজিদের চারপাশে নিচু জমির ধানক্ষেত এখন পানির নিচে, এখানে লোকজন কিভাবে নামাজ পড়তে আসে সেটাই এক বিস্ময়। একগম্বুজ বিশিষ্ঠ মসজিদটি চুনাখোলা গ্রামে অবস্থিত। মসজিদের পূর্বদিকে ৩ টি, উওর ও দক্ষিন দিকে ১ টি করে প্রবেশ পথ রয়েছে, মসজিদটির কার্নিশ সামান্য বাকা এবং গম্বুজটি মসজিদের ঠিক মাঝখানে না থেকে একটু উত্তরদিকে।

চুনাখোলা মসজিদ আরো কয়েকটা মসজিদ ঘুরে (রনবিজয়পুর মসজিদ, রেজাখোদা মসজিদ, জিন্দাপীর মসজিদ; সবগুলো মসজিদের নির্মান একি রকম বলে আর কিছু লিখলাম না, রনবিজয়পুর মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ঠ মসজিদের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড়) এসে দাড়ালাম খান জাহান আলী (রাঃ) এর মাজারের সামনে। রনবিজয়পুর মসজিদ জিন্দাপীর মসজিদ খান জাহান আলী (রাঃ) কে ৮৬৩ হিজরির ২৭ এ জিলহজ্জ (১৪৫৯ খ্রীষ্টাব্দ ২৬শে অক্টোবর) সমাহিত করা হয়। বর্গাকারে নির্মিত এই সমাধিসৌধের প্রত্যেক বাহু ৪৬ ফুট লম্বা, ৪ কোনায় ৪ টি গোলাকার মিনার আছে। মাজারের সামনেই এক বিশাল দিঘী, যে দিঘীতে এক সময় ঐতিহাসিক কালা পাহাড় আর ধলা পাহাড় নামক কুমিরের বাস ছিলো। সেই কুমির গুলো মারা যাবার পর মাদ্রাজ থেকে আরো কিছু কুমির এনে দিঘীতে ছাড়া হয়।

দিঘী-র পাশ দিয়ে কিছুদুর গেলেই নয় গম্বুজ মসজিদ, সেই মসজিদে যাবার পথেই এক জায়গায় মানুষের ভীর দেখে ঘটনা কি দেখতে গিয়ে খান জাহান আলী-র কুমির ও দেখা হয়ে গেল। খান জাহান আলী-র কুমির নয় গম্বুজ মসজিদ আরো কিছুক্ষন ঘুরে ঠান্ডা পীরের দরবারের সামনে এসে এক টং দোকানে বসলাম। পীচ ঢালা রাস্তার এক পাশে মাজার, অন্যপাশে টং দোকান। দোকানে বসে নীম পাতার পানি খেতে শুরু করার সাথে সাথে শুরু হলো বৃষ্টি। দোকানে বসে রাস্তায় কিছু বাচ্চার উদ্যাম দাপাদাপি দেখতে শুরু করার আগেই মঞ্জু টেম্পুতে উঠে আর কামরুল টং দোকানের চৌকিতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

দিগম্বর বাচ্চাদের উন্মাতাল নাচানাচি, বাশঁপাতায় বাতাসের শন শন শব্দ, টিনের চালে বৃষ্টি-র রিমঝিম, দোকানের সামনের আঙ্গিনায় বৃষ্টি পড়ে পানির বুদবুদ আর ২ কাপ নিম পাতার রস এইনিয়ে ঘন্টা খানেক কাটানোর পর বৃষ্টি কমলে আমরা রওয়ানা দিলাম কাটাখালি মোড়ের দিকে। টেম্পুতে উঠলাম এটা মনে আছে, নামলাম সেটাও মনে আছে, মাঝের কিছু কারো মনে নাই, কারন ঘুম.....................। কাটাখালি মোড় থেকে আরেকটা টেম্পু নিয়ে চলে গেলাম মংলা পোর্টের দিকে। টেম্পু থেকে নামার আগেই আবার বৃষ্টি। এবার আর যেন তেন বৃষ্টি না, বিড়াল-কুকুর বৃষ্টি বললেও কম বলা হয়ে যাবে, ড্রাগন-ডাইনোসর বৃষ্টি বলা যেতে পারে।

বিলুপ্তপ্রায় এক বৃষ্টি-র দেখা পেলাম, একটানা একি গতিতে আনবরত ঝড়েই যাচ্ছে, বৃষ্টি-র ফোটা গায়ে পড়লে ছোটবেলার পিঠ জালান্তিস খেলার কথা মনে পরে, বৃষ্টি-র কয়েক ফোটা মাথায় পড়াতে মনে হচ্ছিল মাথায় আলু গজিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশ্রয় নিলাম এক খাবার হোটেলে। সবাই ইলিশ মাছ বা ইলিশের ডিম দিয়ে ভাত খেলেও সবুজ নিয়ে বসলো তিমি মাছের মাথা। এক বিঘা লম্বা মাথা যতটা লম্বা তার চেয়ে বেশি চওড়া, ছোট ছোট ধারালো দাত আর মার্বেলের সমান একেকটা চোখ। কোন আক্কেলে খাবার জন্য সবুজ এই জিনিস নিছে সেটা না বুঝলেও খেতে খুব একটা খারাপ না।

শেষ পর্যন্ত লোকসান হলো শুধু সবুজের-ই। খেতে ভালো শোনার পর সবাই একটু করে চেখে দেখাতে তিমি মাছের মাথা সবুজ ছাড়া সবাই খেলো । সবকিছুর-ই শেষ আছে, এটা প্রমানিত বলে বাধ্য হয়েই মনে হলো এক সময় বৃষ্টি থামলো। বৃষ্টি থামলেও আকাশ দেখে মনে হলো না বৃষ্টি থেকে যাওয়াতে সে একটু ও খুশি হয়েছে। মেঘলা ঘুমোট আকাশ, নদী তীরের উদ্যাম বাতাস আর বাতাসের কাছে রেখে যাওয়া বৃষ্টি-র জলকনাকে উপেক্ষা করেই এক ইঞ্জিনের নৌকা ঠিক করলাম করমজল যাবার জন্য।

অনেক সাহস নিয়ে ঠিক করতে হলো কারন জামাল আর কামরুল ছাড়া আর কেও সাতার জানেনা। করমজল যেতে সময় লাগলো প্রায় ঘন্টাখানেক। নৌকার সবচেয়ে আনন্দদায়ক অংশ হচ্ছে তার টাট্টিঘর। নৌকার পিছন দিকে দুইফুট উচ্চতার ঘরটাকে ঢুকতেই হয় বসে, দাঁড়ানোর মত কোন অবস্থা নাই। ঘরের দিকে মুখ করে ভিতরে ঢুকলে আর পিছনে ফেরা যাবেনা, দরজাও আটকানো যাবেনা, তাই ঢুকতে হয় উল্টা হয়ে।

ভিতরে ঢুকে নিচে তাকালে দেখা যায় মেঝেতে একটা বড়সড় ছিদ্র, আপনি যাই ত্যাগ করেন সরাসরি চলে যাবে নদীগর্ভে। যাবার পথে নৌকা আড়াআড়ি নদী পার হয়ে দ্বীপের মতো লম্বাটে এক গুচ্ছগ্রামের পাশ দিয়ে তীর ঘেষে চলতে লাগলো। উচু নদীর পাড়, ৮-১০ ফুট চওড়া এক রাস্তা আর রাস্তার অপরপাশে ঝুপড়ি দেয়া ঘর আর দোকান পাট। পুরো গ্রামটাই দেখলাম কর্দমাক্ত, মোটামুটি সবাই গামবুট আর অদ্ভুত জামা কাপড় পরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বা বসে আছে। করমজলে নেমেই চলে যেতে থাকলাম বনের ভিতরের দিকে।

বনের ভিতর দিয়ে ঘুরে আসার জন্য প্রায় দেড় মাইলের মতো বাশ, কাঠ, গাছের গুড়ি আর কোথাও কথাও সিমেন্টের পিলার দিয়ে একটা সাকো টাইপ রাস্তা করা হয়েছে। কিছুদুর যাবার পরেই দেখি সাকো-র উপর এক বানর। ছবি তোলার জন্য পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে কিছুটা সামনে গিয়ে ২ টা ক্লিক করার আগেই দাত মুখ খিচিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসতে গিয়েও কি মনে করে বাঁদর মহাশয় লাফিয়ে এক গাছে উঠে ভেংচি কাটতে লাগলো। আমাদের মাঝে তখন ঠান্ডা প্রতিযোগিতা চলছে কার চেয়ে কে বেশি বাঁদরামি করতে পারে। এরি মাঝে বাঁদরটা পরাজয় মেনে নিয়ে দু হাত দিয়ে তার সম্ভ্রম ডাকার চেষ্টা করতে লাগলো যখন আমাদের একজন তার ডান হাতের মধ্যমা উচিয়ে বাঁদরটাকে দেখালো।

আমরা-ও নিশ্চিত হয়ে গেলাম এটা একটা মেয়ে বানর (এতক্ষন বাঁদর বাঁদর করতেছিলাম, এখন সম্মান দেখিয়ে বানর বলছি)। এপথে আর সামনে না গিয়ে আবার উল্টা পথে ফিরে এসে হরিন ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের দিকে যেতে লাগলাম। আমরা যখন হরিন দেখায় ব্যাস্ত জামাল আর সবুজ তখন ব্যাস্ত কার আগে কে টাট্টিঘরে ঢুকবে সেটা নিয়ে। হরিন, কুমির দেখে আবার সেই সাকোতে উঠলাম তবে এবার অন্য মুখ দিয়ে। প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের ছানা ৪০ মিনিট পর আগের মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলাম নদীপাড়ের এক দোকানে, এবার মঞ্জু গেলে ছোট ঘরে (এতো ত্যাগ করার আগ্রহ যে কোথায় পায় কে জানে?)।

দোকান থেকে সবাই প্রায় ৪/৫ লিটারের মতো মধু কিনলাম। ফেরার পথে কয়েকটা শুশুক দেখলাম লাফালাফি করছে, আফসোস একটার ও ছবি তুলতে পারলাম না। ফেরার পথে যখন আবার সেই গ্রামের পাশ দিয়ে আসতে লাগলাম তখন একটা সাইনবোর্ড দেখে জানতে পারলাম এই সেই বিখ্যাত বানিশান্তা। সন্ধ্যায় করমজল মংলা নেমে বাসে চড়ে এরপর সরাসরি খুলনা শহরে। গত ছয় বছরে অনেকবার আসতে চেয়েও একবার-ও আসা হয়নি, আর গত ৫ মাসে এই নিয়ে ২য়বারের মতো আমি খুলনায়।

হোটেলের ৩ রুমে আমরা ৭ জন, প্রথম রাতে কার্ড খেলে আর বার্সা-রিয়ালের এল ক্লাসিকো দেখে ঘুমাতে গেলাম ভোর হবার পর। বার্সা ৩ – ২ রিয়াল সকালে উঠে এরশাদ সিকদারের স্বর্নকমলের কিছু ছবি তুলে সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে এসে নাস্তা করলাম। ৮/১০ জন সি,এন,জি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করার পর একজন জানলো সে রূপসা বাগমারা চেনে। আধাঘন্টা ঘুরে সে আমাদের যেখানে আনলো সেটা এক আবাসিক এলাকা, এবং ড্রাইভারের বক্তব্য হচ্ছে, “আমি ২৪ বছর ধরে খুলনাতে গাড়ি চালাই, এই বাগমারা ছাড়া আর কোন বাগমারা খুলনাতে নাই। ” আরো দশমিনিট ঘুরিয়ে আমাদের এনে নামিয়ে নামিয়ে দিল রূপসা ফেরিঘাটে এবং সবচেয়ে অবাক হলাম যখন দেখলাম নদীর অপর পাড়ের নাম-ই হচ্ছে বাগমারা ।

নদীর পাশেই চির নিদ্রায় শায়িত বাংলার বীর সন্তান বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলের পর 'পদ্মা', 'পলাশ' এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি গানবোট 'পানভেল' খুলনার মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌ-ঘাটিঁ পি.এন.এস. তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করে । ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে গানবোটগুলো খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে এলে অনেক উচুঁতে তিনটি জঙ্গি বিমানকে উড়তে দেখা যায়। শত্রুর বিমান অনুধাবন করে পদ্মা ও পলাশ থেকে গুলি করার অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু অভিযানের সর্বাধিনায়ক ক্যাপ্টেন মনেন্দ্রনাথ ভারতীয় বিমান মনে করে গুলিবর্ষণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন।

এর কিছুক্ষণ পরে বিমানগুলো অপ্রত্যাশিত ভাবে নিচে নেমে আসে এবং আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করে। গোলা সরাসরি 'পদ্মা' এর ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে ইঞ্জিন বিধ্বস্ত করে। হতাহত হয় অনেক নাবিক। 'পদ্মা'-র পরিণতিতে পলাশের অধিনায়ক লে. কমান্ডার রায় চৌধুরী নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেন। রুহুল আমিন এই আদেশে ক্ষিপ্ত হন।

তিনি উপস্থিত সবাইকে যুদ্ধ বন্ধ না করার আহ্বান করেন। কামানের ক্রুদের বিমানের দিকে গুলি ছুড়ঁতে বলে ইঞ্জিন রুমে ফিরে আসেন। কিন্তু অধিনায়কের আদেশ অমান্য করে বিমানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। বিমানগুলো উপূর্যপুরি বোমাবর্ষণ করে পলাশের ইঞ্জিনরুম ধ্বংস করে দেয়। আহত হন তিনি।

কিন্তু অসীম সাহসী রুহুল আমিন তারপর-ও চেষ্টা চালিয়ে যান পলাশ কে বাঁচানোর। অবশেষে পলাশের ধ্বংশাবশেষ পিছে ফেলেই আহত রুহুল আমিন ঝাঁপিয়ে পড়েন রূপসায়। প্রাণশক্তি-তে ভরপুর এ যোদ্ধা একসময় পাড়ে-ও এসে পৌছান। কিন্তু ততক্ষণে সেখানে ঘৃণ্য রাজাকারের দল অপেক্ষা করছে তার জন্য। আহত এই বীর সন্তান কে তারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে রূপসার পাড়ে-ই।

তাঁর বিকৃত মৃতদেহ বেশকিছুদিন সেখানে পড়ে ছিলো অযত্নে, অবহেলায়। বাংলার বীর সন্তান বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন এখানেই চির নিদ্রায় শায়িত এখান থেকে রওয়ানা দিয়ে গেলাম রবীন্দ্রনাথের পৈত্রিক ভিটায় রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে। বাগমারা থেকে টেম্পুতে যেতে লাগলো ৩০ মিনিট, ভিটায় রবীন্দ্রনাথের একটা ভাস্কর্য ছাড়া দেখার মতো আর তেমন কিছু নাই। পিঠাভোগ গ্রামে রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য ফিরলাম আবার আগের পথেই, আসার সময় বাবু ভাই একটা উপাধি পেল। উনার অফিসিয়াল পদবী এ,ভি,পি পরিবর্তন হতে হতে হয়ে গেলো এ,বি,সি (আমাদের বাবু চাচ্চু)।

উনি আমাদের চেয়ে না হয় একটু বড় ছিলেন তাই বলে জামাল সবার সামনে তাকে চাচ্চু বলে ডাকবে, এটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না। বাবু ভাই কে রক্ষা করতেই আমি নদীর তীরে এসেই এক সেলুনে ঢুকে দাড়ি ফেলে শুধু গোফ রেখে দিলাম যাতে বাবু চাচ্চুকে আমার চেয়ে ছোট লাগে আর বেয়াদপ ছেলেপেলে গুলো তাকে চাচ্চু বলে না খেপায়। বাবু চাচ্চুর প্রতি যে আমার এতো ভালবাসা সেটা শুধু বাবু চাচ্চু-ই বুঝলোনা। আফসোস। রূপসা পার হয়ে গেলাম খুলনা জেলা প্রশাসকের বাংলোর বকুলতলায়।

ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত এই বাংলোর বকুলতলায় বসেই বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ উপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম প্রেমের উপন্যাস ‘কপালকুন্ডলা’। ১৮৬০-১৮৬৪ সাল সময়কালীন খুলনার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর থাকাকালীন সময়ে এই বাংলোই ছিল তাঁর বাসস্থান। বকুলতলা শহরে এসেই চলে গেলাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই ময়ূর নদীর তীরে গল্লামারী বধ্যভূমি। খুলনা শহর মুক্ত হবার পর গল্লামারী খাল ও এর আশেপাশের স্থান থেকে প্রায় পাঁচ ট্রাক ভর্তি মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় পাওয়া যায়।

ধারণা করা হয় ঐ স্থানে আনুমানিক ১৫০০০ মানুষ হত্যা করা হয়। গল্লামারী থেকে ফিরে আসার সময় মনে হচ্ছিল এখনি কিছু না খেলে আমাদেরকেই বধ্যভূমিতে থেকে বধ্যভুমির সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গল্লামারী বধ্যভূমি সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসে কিছু খেয়েই আবার রওয়ানা দিলাম ফুলপুরের দক্ষিন ডিহি গ্রামে রবীন্দ্রনাথের শ্বশুর বাড়ির দিকে। ২২ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ বিয়ে করেন বেনীমাধব রায়ের ১১ বছরের মেয়ে ভবতারিনী দেবীকে। বিয়ের পর ভবতারিনী দেবী-র নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মৃণালিনী দেবী।

বেনীমাধব রায়ের দোতলা বাড়ীটিকে জাতীয় ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে পরবর্তিতে “রবীন্দ্র কমপ্লেক্স” নামে নামকরন করা হয়। রবীন্দ্র কমপ্লেক্স ফেরার পথে ফুলতলা থেকে পান কিনলাম খাবার জন্য, এখানকার পান নাকি বিখ্যাত ?!?!? কয়েকটা বাস পার হয়ে গেলেও ভীরের জন্য বাসে উঠতে পারছিলাম না, এরি মাঝে এক তন্বী মেয়েকে দেখতে গিয়ে আমাদের একজন ভ্যানের নিচে চলে যাচ্ছিল (নাম বলে মাইর খাবার কোন ইচ্ছা নাই, তাই নাম বললাম না)। বাসের ভিতরে উঠতে না পেরে এর পর যে বাস আসলো তার ছাদে চড়ে বসলাম, এমন সময় আজমল ভাই এর ফোন। - “ফুলতলার পান কেমন লাগে?” - “ভাল, আপনি কোথায়?” - “মেসি-র জার্সি গায়ে দিয়েতো খুব ঘুরতেছেন, আমি আপনার আশে পাশেই আছি। “ - “আমি তো বাসের ছাদে, আপনি কোথায়?” - “আমি বাসের ভিতরে”।

আজমল ভাই ঈদের ছুটি কাটাতে খুলনা আসছে, দুপুরে নিজের বাপের বাড়ি থেকে বৌ এর বাপের বাড়িতে যায় উনার বাপের পুত্র বধুকে নিয়ে, একা ফেরার পথে সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য ক্রমে আমাদের সাথে দেখা। তা দেখা যখন হয়েই গেল, ভাল করে দেখা না করে তো আর যাওয়া যায়না। দৌলতপুর এসে আমি, জামাল আর মঞ্জু বাস থেকে নেমে গেলাম আজমল ভাইদের সাথে আড্ডা দেবার জন্য। বাকি চারজন বাসের ছাদে চড়েই রওয়ানা দিল খুলনা শহরের দিকে। বি, এল কলেজে কিছুক্ষন ঘুরে রেললাইনের পাশে এক চায়ের দোকানে বসে ঘন্টাখানেক আড্ডা দেই, ইতিমধ্যে জামাল-ও তার ভার্সিটির (রাজশাহী ইউনিভার্সিটে)দুইজন বন্ধু যোগার করে নিয়ে এসেছে।

ভাগ্য ভালো বেশিক্ষন আড্ডা দেই নাই, না হলে আমার, আজমল ভাইয়ের, জামালের; সবার-ই কিছু না কিছু গোমর ফাঁস হয়ে যেত। মতিয়ার ভাইকে এ সময় অনেকবার ফোন করলাম, ফোন বন্ধ। হোটেলে ফেরার পর আমি, কামরুল আর বাবু চাচ্চু হোটেলেই রয়ে গেলাম, বাকিরা সিনেমা দেখতে গেল। রাতে খেয়ে কিছুক্ষন কার্ড খেলেই শুয়ে পরলাম এবং সকালে ঘুম থেকে উঠতে আজকে ও দেরী হলো, নাস্তা করে রওয়ানা দিলাম চুকনগরের দিকে, কোন রকমে জুম্মার নামাজের ২/৩ মিনিট আগে এসে চুকনগর নামতে পারলাম। নামাজের পর ২০০ টাকা দিয়ে এক নসিমন ঠিক করলাম চুকনগর বধ্যভুমি যাবার জন্য।

১০ মিনিটের মাথায় আমাদের নামিয়ে দিয়ে বলে চলে আসছি, এইযে বধ্যভূমি, কিন্তু ভাড়া করার আগে বলছিল প্রায় ৬/৭ কিঃমিঃ রাস্তা। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় অবস্থিত এই গ্রাম চুকনগর। ভারতীয় সীমান্তবর্তী এই গ্রামে ১৯৭১ সালের ২০মে খুলনা ও বাগেরহাট থেকে ভদ্রা নদী পার হয়ে আসা ভারত অভিমুখী হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানী বাহিনী। সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা না গেলেও চুকনগরে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। বধ্যভূমি দেখে নসীমনের ড্রাইভারকেই সবুজ ধরলো এক পুকুর খুঁজে বের করে দেবার জন্য।

আরো ১০/১৫ মিনিট চলে এক গ্রামের ভিতর গিয়ে এক পুকুর পাওয়া গেল, এবার মনে হলো ২০০ টাকা উসুল হইছে। সবুজ, মঞ্জু, জামাল আর কামরুল কিছুক্ষন পুকুরে দাপাদাপি করার পর গেলাম আব্বাসের দোকানে খাবার জন্য। আব্বাসের দোকানের কথা আমার আগের এক ভ্রমন কাহিনীতে লিখেছিলাম, খাসির গোসতের জন্য এই দোকানটি বেশ বিখ্যাত। চুকনগর বধ্যভুমি আমাদের বাসের টিকেট যদিও আমরা আসার আগে থেকেই খুলনা থেকে কাটা ছিল কিন্তু প্ল্যান কিছুটা পরিবর্তন করে ঠিক করলাম খুলনা থেকে না উঠে বাসে উঠবো যশোর থেকে। নতুন প্ল্যান মোতাবেক এক মাহিন্দ্র নিয়ে রওয়ানা দিলাম গদখালী-র দিকে।

ততক্ষনে তিনটা বাজিয়ে ফেলেছি, দিনের আলো থাকা অবস্থায় গদখালী যেতে না পারলে কিছুই দেখতে পাবোনা, তাই ড্রাইভার চাচাও আমাদের প্রায় উড়িয়ে নিয়ে চললো। গদখালী নামটা মাথায় ছিলো, কার কাছে শুনেছি সেটাও ভুলে গেছি, কাজেই একটু টেনশনে ছিলাম। টেনশনে থাকলেও এই ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম যদি দেখি ভুল গ্রামে চলে এসেছি, ৬ জনের ২৪ পিস হাত আর পায়ের সর্বোত্তম ব্যাবহারটা আমার উপরেই হবে। ধুলো বালি মেখে ভুত সেজে যখন গদখালী এসে নামলাম সন্ধ্যা হতে তখন সামান্যই বাকি। আলো থাকতে থাকতেই তাড়াহুড়ো করে কিছু ছবি তুলে নিলাম।

আমাদের বাস খুলনা থেকে ছাড়বে রাত সাড়ে দশটায়, যশোর আসতে আসতে বাজবে রাত বারোটা। হাতে যেহেতু এখনো অনেক সময় আছে ভাবলাম বেনাপোল থেকে ও একটু ঘুরে আসি, কাজেই আবারো প্ল্যান পরিবর্তন করে রওয়ানা দিলাম বেনাপোলের দিকে। প্রায় পুরোটা রাস্তাই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আসলাম, এই ঘুমানোর মাঝেই বলে নেই, গদখালী হচ্ছে ফুলের গ্রাম। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই ফুলের গ্রামটিকে মনে হবে বি-শা-ল বড় একটা ফুলের বাগান। তবে ফুল দেখতে আসার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে শীতকাল।

গদখালী... ... ...শীতে আবার আসছি। রাতের বেলা মানুষ যে কি দেখতে বেনাপোল আসে কে জানে? বেহুদা সময় নষ্ট করলাম। খুলনা থেকে এ,কে ট্রাভেলস এর টিকেট কাটা ছিলো, বেনাপোলের কাউন্টারে টিকেট দেখানোর পর কোন ভাড়া ছাড়াই তারা আমাদের যশোর পর্যন্ত নিয়ে আসলো। যশোরে চলে আসলাম রাত নয়টার মধ্যে, যেহেতু কিছু করার নাই তাই এবার সদলবলে মুনের বাসায় এসে উঠলাম গোসল করার জন্য, যদিও রাতের খাবার টা এখানেই খেয়ে গেলাম। আমরা বার বার মানা করছিলাম এতো ঝামেলা করে এখন এতোরাতে রান্না করার কোনো দরকার নাই, আর যেহেতু এতো কষ্ট করে রান্না করেই ফেলছে না খেয়ে তো উনাদের আবার কষ্ট দিতে পারিনা, তাই যা রান্না করছে সব শেষ করেই উঠলাম।

বারোটার আগেই বাস কাউন্টারে চলে এলাম, এসেই পরলাম বিপদে, বাস নাই। সাড়ে আটটার বাস-ই এখনো আসে নাই আমাদের টা কিভাবে আসে? কিছুক্ষন পরে ফোন করে কোথা থেকে এক বাস যোগার করে নিয়ে আসা হলো কিন্তু ড্রাইভার নাই, আবার ফোন টোন করে এক ড্রাইভার যোগার করে সাড়ে আটটার বাস ছাড়লো রাত দেড়টায়। ততক্ষনে বাবু চাচ্চু কাউন্টারের ৪ সিট একাই দখল করে ঘুমের রাজ্যে চলে গেছে। সবুজ আর জামাল মিলে বিভিন্ন বাস কাউন্টার থেকে কয়েকটা পত্রিকা যোগার করে আনলো, কাউন্টারের সামনের খোলা যায়গায় পত্রিকা বিছিয়ে মশার কামড় আর চানাচুর খেতে খেতে ইন্টারন্যাশনাল ব্রীজ খেলে রাত পার করে দেবার ধান্দা করলেও আমাদের হতাশ করে তিনটার দিকে বাস চলে আসলো। হুড়াহুড়ি করে বাসে উঠেই ঘুম দিলাম, উঠলাম সাতটায় রাস্তার সাথে স্কীড করা টায়ারের কর্কশ শব্দ আর প্রচন্ড ঝাঁকুনি খেয়ে।

আমাদের বাস তখন রাস্তার একপাশে খালের কিনারে আর অপর পাশে একটা পিকআপ ভ্যান রাস্তা ছেড়ে জমিতে উঠে গেছে। পিকআপের সামনের দিক থেতলানো আর ড্রাইভার নিরুদ্দেশ। রাস্তার উপরে থামিয়ে রাখা এক ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে পিকআপ তার নাক ঢুকিয়ে দিয়েছিল আমাদের বাসের পেটের মধ্যে। ২০ মিনিট এখানে কাটিয়ে বাসে উঠে আবার ঘুম, এরপর যখন ঘুম ভাংলো তখন আমরা গাবতলী। পরবর্তী ভ্রমনঃ রাতারগুল জলের বন ও টাঙ্গুয়ার হাওর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.