আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চার ভাগ হয়েছে জালিয়াতি করে নেয়া হলমার্কের টাকা

চার ভাগ হয়েছে সোনালী ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে নেয়া হলমার্কের টাকা। রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই তানভীর, তুষার ও জেসমিন দিয়েছেন বলে জানা গেছে জিজ্ঞাসাবাদ সংশ্লিষ্ট সূত্রে। ওই সূত্রে জানা গেছে, ঋণের নামে হলমার্কের এলসি জালিয়াতি ছিল মূলত একটি চক্রের লুটপাটের ষড়যন্ত্র। অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশল হিসেবেই তারা সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখাকে বেছে নেয় এবং সফলভাবে তা বাস্তবায়ন করে লুটে নেয় বিপুল অঙ্কের টাকা। কিভাবে কারা হলমার্কের জালিয়াতির টাকার ভাগ নিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদে ওইসব তথ্য দিয়েছেন হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদ, জিএম তুষার আহমেদ ও চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম।

সূত্র মতে, তানভীর মাহমুদ তদন্ত কর্মকর্তাদের নানা কৌশলী জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন এবং বিস্তারিতভাবে বলেছেন, ঋণের নামে হাতিয়ে নেয়া টাকা প্রায় সমান সমান চার ভাগে ভাগ করে দিতে হয়েছে তাকে। ওই চার ভাগ হচ্ছে সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা সাবেক শেরাটন শাখার ম্যানেজার এ কে এম আজিজুর রহমানসহ ওই শাখার ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ূন কবীরসহ ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিষদের প্রায় একডজন কর্মকর্তা, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের প্রভাবশালী কয়েকজন সদস্য এবং দু’জন রাজনৈতিক ক্ষমতাধর প্রভাবশালী ব্যক্তিকে যারা তানভীরের ঋণ পেতে ও তাকে রক্ষা করতে বিশেষভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ওই দুই রাজনৈতিক নেতার দু’জনই কখনও কোন কাগজে সুপারিশ করেননি, তারা ফোনে কথা বলেছেন। দুদক সূত্রে জানা গেছে, এ কে এম আজিজুর রহমানের বাড়ি একটি বিশেষ এলাকায় হওয়ার কারণে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে শুরু করে প্রধান কার্যালয় পর্যন্ত তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তার ক্ষমতা ও প্রভাব জাহির করতে তিনি অনেক সময় ওই বিশেষ এলাকাকে ব্যাবহার করেছেন।

সূত্র মতে প্রভাবশালী ওই দুই রাজনৈতিক নেতার নাম বলেছেন তানভীর মাহমুদ ও এ কে এম আজিজুর রহমান। সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের কোন কোন প্রভাবশালী সদস্যকে টাকা দিতে হয়েছে তাদের নামেও প্রকাশ করেছেন তানভীর মাহমুদ। হলমার্ক গ্রুপ ঋণের নামে জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখা থেকে ২৬৮৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওই টাকার মধ্যে ১৫০০ কোটি টাকা ফান্ডেড মানে অন্যান্য ১০টি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে তানভীর মাহমুদ ওই পরিমাণ টাকা তুলে নিয়েছে এবং সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখা অন্যান্য ব্যাংকের ওই সকল শাখাকে টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি ১১৮৫ কোটি টাকা হচ্ছে নন-ফান্ডেড মানে এলসি জালিয়াতি করে অন্যান্য বা্যংকের ১৮টি শাখা থেকে তানভীর ওই টাকা তুলে নিলেও সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখা এখন পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ওই সকল ব্যাংকের শাখাকে অর্থ পরিশোধ করেনি।

সে হিসাবে তানভীর মাহমুদ মোট ২৬৮৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে কেবলমাত্র ফান্ডেড ১৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে। দুদক সূত্র মতে যদিও ইতিমধ্যেই চার ভাগ হয়ে গেছে হলমার্কের নেয়া পুরো টাকা। দুদকের দায়ের করা ১১টি মামলায় বর্তমানে দুদকের রিমান্ডে আছে হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদ, জিএম তুষার আহমেদ, হলমার্কের চেয়ারম্যান তানভীরের স্ত্রী জেসমিন ইসলাম ও সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখার সাবেক ম্যানেজার এ কে এম আজিজুর রহমান। রিমান্ডে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ সংশ্লিষ্ট দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ ও সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখার সাবেক ম্যানেজার এ কে এম আজিজুর রহমানকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে হলমার্ক কেলেঙ্কারির টাকা কাদের পকেটে। জেসমিন ভাবতেই পারেননি টাকা ফেরত দিতে হবে হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান তানভীরের স্ত্রী জেসমিন ইসলাম ভাবতেই পারেননি যে জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয়া বিপুল অঙ্কের টাকা কোনদিন ফেরত দিতে হবে। ভাবতেও পারেননি টাকা ফেরতের জন্য কোনদিন এমন দুর্দশা হবে তাদের, টাকার জন্য পালিয়ে বেড়াতে হবে, জেল খাটতে হবে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে- দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে এমন ভাবেই জেসমিন কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। হলমার্ক গ্রুপের বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। রাজধানীর রমনা থানায় দুদকের দায়ের করা ১১টি মামলার প্রতিটিরই ২ নম্বর আসামি হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম।

তাকে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সোনালী ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া ২৬৮৫ কোটি টাকার একটি অংশ রয়েছে জেসমিনের জিম্মায়। দুদক সূত্রে জানা গেছে, জেসমিন ইসলাম জানিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জেসমিন রেখেছে তার চার ভাই, বোন ও বোনের স্বামী তুষারের কাছে। রাজধানীর মিরপুর এলাকা সহ মানিকগঞ্জে তাদের নামে জমি কিনেছেন। নিজের নামেও আছে টাকা ও ভূসম্পদ।

সূত্র মতে, জেসমিন ইসলাম দামি গাড়ি, বিলাসী বাড়ি ও সোনার গহনা সহ নিজের ও নিকট আত্মীয়স্বজনের ভোগবিলাসে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করেছেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে জেসমিন ইসলাম প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন কপর্দকহীন চাচাতো ভাই তফছিরকে। তানভীরের পিতা কালু মিয়া হাঁড়িপাতিলের ব্যবসা করলেও জেসমিনের পিতা ছিলেন একটি অফিসের এমএলএসএস। অভাব-অনটনে জর্জরিত দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হওয়া, সংসার জীবন পেরিয়ে আসা জেসমিন ২০০৯ সালে হঠাৎ করে বিপুল অর্থের মালিক হয়ে যাওয়ায় অনেকটা দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তেমন ধরনের জবাব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রমতে তানভীরের হলমার্ক গ্রুপে প্রভাবশালী কাদের যাতায়াত ছিল, ব্যাংকের কারা যাতায়াত করতেন, ঋণ পেতে কাদেরকে জালিয়াতির টাকার ভাগ দিতে হয়েছে- আলাদা জিজ্ঞাসাবাদে সে সব তথ্য দিয়েছেন জেসমিন ইসলাম। তানভীরের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক যাচাই করবে ওই সব তথ্য- এমনটাই জানা গেল দুদক সূত্রে। সূত্র ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।