আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবশেষে ঢাবিতে হিযবুত তাহরীর!!!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিরাত কমিটির আড়ালে জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক। তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠনটিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। জড়িত শিক্ষকরা বলছেন এটা একটি ধর্মীয় ফোরাম আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কোনো সংগঠন তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুমতি নেয়নি। আর সংগঠনের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন ঢাবি প্রক্টর ড. আমজাদ আলী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ইসলামি দিবস পালন করতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক একটি ফোরাম করেছেন, যার নাম সিরাত কমিটি। এটি মূলত জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের একটি সংগঠন। সম্প্রতি বিষয়টি গোয়েন্দাদের নজরেও আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, আরবি, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, উর্দু বিভাগসহ আরো বেশ কয়েকটি বিভাগে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন শিক্ষক রয়েছেন-যারা গোপনে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। শিক্ষকরা হুমকি দিয়ে, নম্বরের ভয় দেখিয়ে, ছলে-বলে শিক্ষার্থীদের মাথায় ওসব সংগঠনের আদর্শ ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রমতে, ফেসবুকে কোরান অবমাননার প্রতিবাদে আসন্ন দুর্গাপূজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পূজামণ্ডপ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালীমন্দিরে নাশকতা সৃষ্টি করা হতে পারে বলে গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। অভিযোগপত্রে বিভাগের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে সিরাত কমিটির আড়ালে হিযবুত তাহরীরকে পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিরাত কমিটি নামের সংগঠনের আড়ালে হিযবুত তাহরীর জঙ্গি সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. তৌফিকুল হায়দার। তবে মানবকণ্ঠের কাছে তৌফিকুল হায়দার তার জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

মানবকণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা যায়, তৌফিকুল হায়দারের সঙ্গে সিরাত কমিটির নামে হিযবুত তাহরীরে জড়িত রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কিছু শিক্ষক। তাদের মধ্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান মিয়াজী, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ওমর ফারুক, সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ অন্যতম। তারা বিভিন্ন সময় জামায়াত-শিবির ও হিযবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন বলে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানবকণ্ঠ-কে জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘ড. তৌফিক বিভিন্ন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিযবুত তাহরীরের অনুষ্ঠান করেছেন। এতে তিনি তার বিভাগের শিক্ষার্থীদের সেসব অনুষ্ঠানে জোর করে নম্বরের ভয় দেখিয়ে উপস্থিত হতে বাধ্য করতেন।

সর্বশেষ গত রমজান মাসে তিনি টিএসসি মিলনায়তনে বিভাগের চেয়ারম্যানের প্যাডে বিভাগের ইফতার অনুষ্ঠানের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে মিলনায়তন ভাড়া নিয়ে সিরাত কমিটির আড়ালে হিযবুত তাহরীরের অনুষ্ঠান করেছেন। ’ ওই সময় টিএসসিতে বিভাগের কোনো অনুষ্ঠান হয়নি বলে একাধিক শিক্ষার্থী মানবকণ্ঠ-কে জানিয়েছেন। এসব বিষয় নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. তৌফিকুল হায়দারের কাছে জানতে চাইলে তিনি হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে মানবকণ্ঠ-কে বলেন, ‘আমি হিযবুত তাহরীরের সর্বোচ্চ বিরোধী। এ ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠনের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাছাড়া সিরাত কমিটি একটি ধর্মীয় ফোরাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, ব্যবসায় ও আইবিএ অনুষদের প্রায় ৬০-৭০ জন শিক্ষক বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে থাকে। আমার বিভাগের কিছু শিক্ষক গত রমজান মাসে সিরাত কমিটির একটি প্রোগ্রাম করতে চাইলে আমি তাদের বিভাগের চেয়ারম্যানের প্যাডে সুপারিশ করে দিয়েছিলাম, যাতে তারা স্বল্প খরচে প্রোগ্রামটি সম্পন্ন করতে পারে। এ কমিটির বিভিন্ন প্রোগ্রামে অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, অধ্যাপক আতাউর রহমান মিয়াজী, মাহফুজুল ইসলামসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশ নিয়ে থাকেন। ’ এদিকে সিরাত কমিটির সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা নেই। আমরা কিছু বলতে পারব না; বরং তারা পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, এটা কি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন? এটা থাকলে দোষের কী? এটা কি অ্যালার্জিক কিছু? বিশ্ববিদ্যালয়ে এত এত কমিটি, সেখানে সিরাত কমিটি থাকা দোষের কিছু নয়।

সিরাত কমিটির আড়ালে প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় কি না-জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. আমজাদ আলী মানবকণ্ঠ-কে বলেন, ‘সিরাত কমিটির ব্যাপারে আমরাও এ ধরনের কথা শুনেছি। তারা বিভিন্ন ধর্মীয় দিবসে এর তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করলেও একপর্যায়ে তাদের কথা অন্য দিকে চলে যায়। যেটা মূলধারার বিপরীত। ’ সিরাত কমিটি নামে ঢাবিতে কোন সংগঠনের কথা জানা নেই উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মানবকণ্ঠ-কে বলেন, এ ধরনের কোনো কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়েছে বলে মনে হয় না। এ ধরনের ভুয়া সংগঠনের আড়ালে যদি কেউ কোনো ধরনের সরকারবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তদন্তসাপেক্ষে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেবে।

ঢাবিতে শনাক্ত হচ্ছে হিযবুত তাহরীরের কর্মী : সারাদেশের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নামে-বেনামে এখন সক্রিয় হচ্ছে হিযবুত তাহরীর। গোপনে বা প্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে তাদের কার্যক্রম। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের শক্ত ভিত গড়ে তোলার চেষ্টায়ও মরিয়া তারা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলে অভিযান চালিয়ে শিবির ও হিযবুত তাহরীরের কর্মী শনাক্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলে হিযবুত তাহরীর শনাক্ত হওয়ায় তিন জনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

তারা হলেন, আলমাস (ইসলামের ইতিহাস, তৃতীয় বর্ষ), শামীম (সমাজকল্যাণ, তৃতীয় বর্ষ), মেহেদী (ম্যানেজমেন্ট, চতুর্থ বর্ষ)। এর আগে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গভীর রাতে সূর্যসেন হল থেকে আবদুল হাই রাজু (ফিন্যান্স, তৃতীয় বর্ষ, ক-২৫১), মুহসীন হোসেন (হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ, ক-৬৩৭), ফাহাদ বিন রশিদ নয়ন (ব্যবস্থাপনা বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ, ক-১০৬) ও রাকিবুল ইসলাম পরশ (ফিন্যান্স, প্রথম বর্ষ) গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে বই, ম্যাগাজিন ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা বইয়ের মধ্যে ছিল খেলাফত একমাত্র সমাধান, পাকিস্তানি ম্যাগাজিন মুক্ত আওয়াজ এবং সরকারবিরোধী লিফলেট। হিযবুত তাহরীরের মাধ্যমে অন্য জঙ্গি সংগঠন থেকে আসা সদস্যরা দেশে বড় ধরনের নাশকতা করতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে।

তথ্যসূত্র মানবকণ্ঠ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।